২২ গজের সেলুলয়েড : ভুতূড়ে ৯৫, মুশফিকের ভুল
ছবির পরে ছবি চলে নাকি তৈরী হয় সিনেমা। ক্রিকেট ম্যাচও তো তাই। টুকরো টুকরো অসংখ্য ছবি জন্ম নেয় যেখানে। ২২ গজ আর সবুজ ওই উদ্যানের ছবিগুলোকে যদি ধরা যেত সেলুলয়েডে!
চাঁদের কলঙ্ক
তেঁড়েফুঁড়ে আসা তামিম, এদিন নিয়মিত দেখা গেল এই দৃশ্য। কখনও কাভারের ওপর দিয়ে ছয়, পড়লো গিয়ে দর্শকস্ট্যান্ডে। কখনও মিড-অন দিয়ে চার, যেন বন্দুক থেকে ছোড়া বুলেট! সেই বন্দুকের ভরবেগের সামলাতে রীতিমতো ঘূর্ণি লেগে গেল তামিমের! সেই তামিমই একবার এগিয়ে আসলেন, সেটা দেখেই কিনা বাউন্সার দিলেন কামিন্স। হলোও মনমতো, তীক্ষ্ণ বাউন্সারটা তামিমকে বাধ্য করলো বসে যেতে, খেলার চেষ্টাই করলেন না! সেই কামিন্সের আরেকটা বলেই এগিয়ে আসলেন, মারতে গিয়েও লাগলো না বল। বারদুয়েক পুল করতে গিয়ে মিসটাইমিং হয়ে গেল। আর শেষ ‘মিস-হিট’-এ তো আউটই হয়ে গেলেন, বল ব্যাটের কিনারে লাগার সময়ই তামিমের মুখচ্ছবি বলে দিচ্ছিল, এবার আর পার পেলেন না!
কার শঙ্কা, কে আউট!
পরপর দুই বলে ছয়। একটা আরেকটার থেকে দূরে। পরের বলে ডট, পরের বলে আবার বড় শট খেলতে গেলেন তামিম। বিপদেই পড়ে যেতেন আরেকটু হলে, বল পড়লো ফিল্ডারের একটু সামনে। ‘এক শট বারবার, বেশিবার’ এর তত্ত্ব মেনে তামিম শঙ্কায় পড়ে গেলেন উইকেট হারানোর। তামিম সে যাত্রায় বাঁচলেন, উলটো সেই ওভারেই আউট হয়ে গেলেন সাকিব!
কেন নয়, মুশফিক?
হেনরিকসের বলে ‘প্লামব’ হলেন মুশফিকুর। আড়াআড়ি সিমের আড়াআড়ি বল, স্কিড করে প্যাডে। আম্পায়ার আউট দিলেন, ভবিতব্য মেনে নিয়ে হাঁটা দিলেন মুশফিকও। পরে রিপ্লে দেখালো, প্যাডে আঘাত করার আগে ছুঁয়েছে ব্যাট, আল্ট্রাএজেও মিললো স্পাইকের দেখা! অথচ মুশফিক জানলেনই না, নিজের ব্যাটের খবর! নাকি মুশফিক এটাই জানতেন না, রিভিউয়ের ব্যবস্থা আছে টুর্নামেন্টে, রিভিউ বাকি আছে তখন বাংলাদেশের ইনিংসেও! সেই রিভিউটা পরে ব্যবহার করলেন সাকিব, ‘আম্পায়ারস কল’-এর ফাঁদে পড়ে হলেন আউটই!
ভুতূড়ে ৯৫
স্টার্ককে হাঁটু তুলে পুল করতে গেলেন। তামিমের এই শটটা অন্যতম পরিচায়ক তার, সেই শটই কাল হয়ে দাঁড়ালো। নিজের ১০ম ওয়ানডে সেঞ্চুরি থেকে ৫ রান দূরে থামলেন বাংলাদেশী ওপেনার। এই নিয়ে তিনবার কাটা পড়লেন নড়বড়ে নব্বইয়ে, তিনবারই আউট হলেন ওই ৯৫-এ। টেস্টে একবারই কাটা পড়েছিলেন নব্বইয়ের ঘরে গিয়ে। অনুমান করতে পারছেন কতো রানে সেটা? হ্যাঁ, ৯৫!
দৌড়িয়েই চার
বাংলাদেশ ইনিংসে তিন রান নেই একটিও। আর অস্ট্রেলিয়া প্রথম ওভারেই দৌড়েই নিল চার রান! মুস্তাফিজের বলটা প্যাডের ওপর থেকে ফ্লিক করেছিলেন ওয়ার্নার, বাউন্ডারির আগে গিয়ে ধীর হয়ে গেল তা। ফিল্ডারের ফিল্ডিং সম্পন্ন করার আগেই ওয়ার্নার-ফিঞ্চ মিলে দৌড়ালেন চারবার। পরের বলে ফুললেংথের বলে ডিপ এক্সট্রা কাভারে খেললেন ওয়ার্নার, এবার হলো তিন রান।
ব্যাটসম্যান মুস্তাফিজ
জেরমি টেইলরের নামটা আসছিল। চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফিতে একমাত্র হ্যাটট্রিক তো তারই। স্টার্ক সে সম্ভাবনা জাগালেন, কিন্তু হ্যাটট্রিক বলটা স্ট্যাম্প মিস করে গেল কিভাবে, সেটা বিস্ময়। আর পরের ওভারে স্টার্কেরই একটা বল কিভাবে ব্যাটে লাগলো, মুস্তাফিজ যেন নিজেও জানেন না! গেল পয়েন্টে। দর্শকদের চিৎকার সঙ্গে সঙ্গেই। পয়েন্টের ফিল্ডারের সামনে ড্রপ পড়লো একটা, ধরতে পারলেন না ঠিকঠাক। ডাবলসের সুযোগ তৈরী হলো, মুস্তাফিজ তখনও বোধহয় ওই এক রানের বিস্ময়ই কাটাতে পারেননি। হেসেই উড়িয়ে দিলেন। পরের বলেই বোল্ড মিরাজ!
ওয়ার্নারের চার হাজার
মাশরাফিকে বিহাইন্ড দ্য স্কয়ারে খেলে দুই রান। ক্যারিয়ারে ৪০০০ রান পূর্ণ হয়ে গেল ওয়ার্নারের। লাগলো ৯৩ ইনিংস। সমান সংখ্যক ইনিংস লেগেছিল বিরাট কোহলিরও। এই দুইজনের আগে আছেন আরও দুইজন। ভিভ রিচার্ডসের ৪০০০ পূর্ণ করতে লেগেছিল ৮৮ ইনিংস। আর ৮১ ইনিংসে এই মাইলফলক ছুঁয়ে রেকর্ডটা হাশিম আমলার।
এবং বৃষ্টি
বৃষ্টির সাথে সখ্যতা বাড়ছেই শুধু চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফিতে। এজবাস্টনে অস্ট্রেলিয়া-নিউজিল্যান্ড ম্যাচ ভেসে যাওয়ার পর বৃষ্টি হানা দিল ওভালেও। বৃষ্টি যেন লুকোচুরি খেলা শুরু করে দিল, এই যায় তো এই আসে ফিরে! অস্ট্রেলিয়া প্রথম ম্যাচে বৃষ্টির জন্য পার পেয়ে গিয়েছিল, দ্বিতীয় ম্যাচে দেখতে হলো মুদ্রার অন্য পিঠ।