২২ গজের সেলুলয়েডঃ সেই কার্ডিফ, এই কার্ডিফ
আটকালেই কী হয়!
প্রথম বলটা করতে এলেন, গাপটিল প্রস্তুত ছিলেন না বলে আটকিয়ে দিলেন আম্পায়ার। তাসকিনকে ব্রেকথ্রু এনে দেয়া থেকে অবশ্য আটকানো গেল না। বাংলাদেশ ইনিংস; ৪৬তম ওভার। প্রথম বলটা করতে গিয়েও করলেন না মিলনে। মিলনেরাও আটকাতে পারলেন না, বাংলাদেশের ঐতিহাসিক জয়কে!
কার মরণে কে মরে সই গো!
সাকিবের বল লাগলো আসলে টেইলরের স্ট্যাম্প-লাইনের বাইরে থাকা বুটে। সাকিব আবেদন করতে লাগলেন, টেইলর নিতে গেলেন রান। ফিরলেন আবার, শর্ট ফাইন লেগ থেকে মোসাদ্দেকের থ্রো সরাসরি লাগলে আউটই হতেন টেইলর। টেইলর এ যাত্রায় বাঁচলেও ওই ওভারের শেষ বলে বাঁচলেন না উইলিয়ামসন। ওই শর্ট ফাইন লেগ থেকেই সিঙ্গেল চুরি করতে গিয়েছিলেন, একটু দৌড়ে ভুলটা বুঝতে পারলেন টেইলর। ফিরলেন ক্রিজে, তবে উইলিয়ামসন ফেরার সুযোগ পেলেন না। সেই মোসাদ্দেকের থ্রো ধরে ঘুরে স্ট্যাম্প খুঁজে নিলেন সাকিব, উইলিয়ামসন খুঁজে নিলেন ড্রেসিংরুমের পথ।
‘২য়’ (সফল) জাদু, ‘১ম’ (ব্যর্থ) জাদু
তাসকিন প্রথম ওভারে দিলেন ৭ রান, দ্বিতীয় ওভারের প্রথম বলেই উইকেট। রুবেলের প্রথম ওভারে এসেছিল ১ রান, তিনি উইকেট নিলেন দ্বিতীয় ওভারের পঞ্চম বলে। এই দুজনকেও ছাড়িয়ে গেলেন মোসাদ্দেক। ৪২তম ওভারে তাকে নিয়ে এলেন মাশরাফি, প্রথম ওভারে দিলেন ৫ রান। দ্বিতীয় ওভারের প্রথম বলে তিনিও পেলেন উইকেট। থামলেন না, এক বল পরেই পেলেন আরেকটি। কিউইরা অবশ্য দ্বিতীয় ওভারের অপেক্ষা করলেন না। ইনিংসের প্রথম ওভারেই সফল সাউদি, প্রথম পরিবর্তিত বোলার হিসেবে আসা মিলনেও উইকেট পেলেন প্রথম ওভারেই! বোল্ট পেলেন নিজের শেষ ওভারে, উইকেট পেলেন না আর কেউ, বিদায় নিল নিউজিল্যান্ড!
রিভিউ-হতাশা
তামিম কি রিভিউটা না নিলেও পারতেন? হয়তো ভেবেছিলেন লেগস্ট্যাম্পের বাইরে পড়েছে, হয়তো ভেবেছিলেন বাইরে দিয়ে যাবে বল। হলো না কিছুই, বল পড়লো লেগস্ট্যাম্পের ভেতরেই, ভেঙ্গে দিতো লেগস্ট্যাম্পই। সৌম্যকেও ওই সাউদির বলেই এলবিডাব্লিউ দিলেন ইয়ান গৌল্ডই। সিদ্ধান্ত নিয়ে সন্দেহ ছিল, তবে সুযোগ ছিল না রিভিউয়ের। রিপ্লে দেখালো, বল যেতো স্ট্যাম্পের ওপর দিয়ে, রিভিউয়ের সুযোগ থাকলে বেঁচে যেতেন সৌম্য! হতাশার ভাগটা সৌম্য কাকে দেবেন? তামিম, নাকি ভাগ্যকে?
বাইরে দিয়ে যাও, নাকি ভেতরে থাকো?
৩৯তম ওভারের দ্বিতীয় বল। অফস্ট্যাম্পের বেশ বাইরে, তাড়া করলেন মাহমুদউল্লাহ। নাগাল পেলেন না। ইয়ান গৌল্ড ওয়াইড দিলেন, কিউইরা হতাশ হলো। ৪২তম ওভারের ৩য় বল, অফস্ট্যাম্পের বেশ বাইরে আবার। এবার মাহমুদউল্লাহ দাঁড়িয়েই রইলেন, ওয়াইড দিলেন নাইজেল লং। কিউইদের কিছু বলার থাকলো না। ৪৩তম ওভারের প্রথম বল। সাউদি দিলেন এবার টানা দুই ওয়াইড, লেগস্ট্যাম্পের বাইরে দিয়েই। এবারও ব্যাটসম্যান মাহমুদউল্লাহই। ৪৫তম ওভারের শেষ বল, এবার বোল্ট। অফস্ট্যাম্পের বেশ বাইরে, সাকিব যেন ছুড়ে দিলেন ব্যাট। নাগাল পেলেন না, গৌল্ড এবার দিলেন না ওয়াইড।
ডাক-জয়
ক্যারিয়ারের ১৬তম ডাক খেলেন তামিম ইকবাল। এর আগের ১৫ বারের মধ্যে বাংলাদেশ জিতেছিল শুধু ৩ বার। ২০০৯ সালে ওয়েস্ট ইন্ডিজের সঙ্গে বাংলাদেশ জিতেছিল ৫২ রানে, ২০১০ সালে জিম্বাবুয়ের সঙ্গে ৬৫ রানে, ২০১১ সালে নেদারল্যান্ডসের সঙ্গে ৬ উইকেটে। তামিম চাইলেই আগের ম্যাচগুলো ভুলে যেতে পারেন, মনে রাখতে পারেন শুধু আজকেরটাই!
জুটি ঐতিহাসিক
২০১৪ সালে সাকিব-মুশফিকের ৫ম উইকেটে ১৪৮ রানের জুটিই ছিল সর্বোচ্চ। মাহমুদউল্লাহ-সাকিব কাটিয়ে গেলেন সেটা। সব উইকেট মিলিয়ে সর্বোচ্চ রানের জুটি ছিল ১৭৮ রানের, ২০১৫ সালের পাকিস্তানের সঙ্গে সেই জুটিতে মুশফিকের সঙ্গে ছিলেন তামিম ইকবাল। এ জুটি কাটিয়ে গেল সেটাকেও, প্রথমবারের মতো ২০০ রানের জুটি দেখলো বাংলাদেশ, থামলো ২২৪-এ গিয়ে।
চির উন্নত মাশরাফি
বোলিংয়ের ফলোথ্রুতে পড়ে গেলেন ট্রেন্ট বোল্ট। পড়ে গেলেন একবার অ্যাডাম মিলনেও। হোঁচট খেয়েছিলেন মাশরাফি। কিন্তু ওই হাঁটু জোড়া সামলিয়ে নিল ভার। মাশরাফি পড়লেন না। চাইলেই দৃশ্যটাকে নিতে পারেন প্রতীকি হিসেবে।
সেই কার্ডিফ, এই কার্ডিফ
২০০৫ সাল। কার্ডিফ। প্রতিপক্ষ অস্ট্রেলিয়া। ‘দ্য মাইটি অস্ট্রেলিয়া’। ২০১৭ সাল। কার্ডিফ। প্রতিপক্ষ নিউজিল্যান্ড। ‘দ্য মাইটি নিউজিল্যান্ড’। সেই জয়ে নাকি গড়েছিল ক্রিকেটের অন্যতম ‘অঘটন’। এই ২০১৭ সালে নিউজিল্যান্ডের সঙ্গে ম্যাচটা অঘটন নয়, ইতিহাস। যে ম্যাচে জয়ী দলের নাম, ‘দ্য মাইটি বাংলাদেশ।’