'বাংলাদেশ পরের বিশ্বকাপের দাবিদার হিসেবে প্রস্তুতি শুরু করতে পারে'
প্রথমবারের মতো সেমিফাইনালে উঠেছে বাংলাদেশ, ভারতের কাছে হেরে বিদায় নিয়েছে শেষ চার থেকে। বাংলাদেশের এই যাত্রা নিয়ে আইসিসির ওয়েবসাইটে কলাম লিখেছেন কুমার সাঙ্গাকারা। সেটি এখানে সংক্ষেপিত আকারে অনূদিত হলো
কে ভেবেছিল টুর্নামেন্টের আগে ভারত-পাকিস্তান ফাইনাল হবে? আয়োজকদের জন্য অবশ্য সেটা পোয়াবারো। তিনটি এশিয়ান দল সেমিফাইনাল খেলবে, সেটাও অপ্রত্যাশিত ছিল। আর ভারত-পাকিস্তান তো তেমন একটা কেউ আশাই করেনি।
এই ক'সপ্তাহে এশিয়ার দলগুলো কন্ডিশনের সঙ্গে নিজেদের আরও বেশি ধাতস্থ করতে পেরেছে। যখনই সুযোগ এসেছে, নিজেদের প্রমাণ করেছে, সত্যিকারের সামর্থ্য ও শক্তি দেখিয়েছে। বাংলাদেশকে শেষ পর্যন্ত সব বিভাগেই হেরে গেছে, তবে অস্ট্রেলিয়ার সঙ্গে পরের সিরিজের জন্য মাথা উঁচু করেই বিদায় নিতে পারে।
গত কয়েক বছরে চন্ডিকা হাথুরুসিংহের কোচিংয়ে দলটা অনেক উন্নতি করেছে। ক্রিকেট বোর্ডের সহায়তায় এবং সাকিব আল হাসানের মতো কিছু দারুণ সিনিয়রদের দেখানো পথে এগিয়েছে অনেক দূর। পর পর দুইটি আইসিসি ইভেন্টের নক আউট পর্যায়ে উঠেছে। এখন দুই বছর শিরোপার জন্য তারা সত্যিকারের দাবিদার হিসেবে পরিকল্পনা শুরু করতে পারে।
বাংলাদেশ নিজেদের লড়াই করার প্রমাণ দেখিয়েছে। অস্ট্রেলিয়ার সঙ্গে বৃষ্টিতে বেঁচে গেছে। তবে নিউজিল্যান্ডের সঙ্গে ম্যাচটা ১৯৯৬ সালের শ্রীলঙ্কাকে মনে করিয়ে দিয়েছে, খুদেরা যেভাবে বড়দের আড়াল করে দেয়।
ভারতের সঙ্গে ম্যাচটা বাংলাদেশের জন্য খুবই কঠিন হওয়ার কথা ছিল। ভারত খুবই শক্তিশালী এবং ভারসাম্যপুর্ণ একটা দল। ওদের ব্যাটসম্যানরা দারুণ ফর্মে আছে। সবচেয়ে বড় কথা, ওদের ফিল্ডিং এখন পর্যন্ত টুর্নামেন্টের সেরা।
বাংলাদেশের আসলে এরকম হাই প্রোফাইল নক আউট ম্যাচের জন্য আরেকটু অভিজ্ঞতার দরকার ছিল। ১৫৪ রানে ২ উইকেট নিয়ে বাংলাদেশ খুবই ভাল অবস্থানে ছিল। কিন্তু কোহলি কেদার যাদবকে আনার পরেই ম্যাচ বদলে যায়। তামিম ও মুশফিক দুজনকেই সে ফিরিয়ে দিয়েছে। একটাই ব্যাখ্যা, বাংলাদেশ ৩০০র বেশি তাড়া করতে গিয়েছিল। সেজন্যই হয়তো উইকেট ধরে রেখে শেষে মেরে খেলার বদলে আগেই মারা উচিত হবে- এরকম একটা ধারণা তাদের মাথায় জেঁকে বসেছিল। আর এরপর বুমরা দেখিয়েছে, কেন সে শেষ ওভারে বিশ্বসেরা।
কোহলিকে দেখে সব সময়ই মনে হয়েছে, সব ওর নিয়ন্ত্রণে আছে। বোলারদের খুব বুদ্ধিমত্তার সাথে কাজে লাগিয়েছে, কেদারকে আনাটা তো ছিল দুর্দান্ত একটা চাল। সেটার প্রতিদান সে পেয়েছে। মাশরাফি শেষ দিকে কিছু রান করেছে বটে। কিন্তু এই উইকেটে ২৬৫ রান ভারতকে পরীক্ষায় ফেলার জন্য যথেষ্ট ছিল না। বাংলাদেশের শুরুতে উইকেটের সাথে ভারতকেও খেই হারিয়ে ফেলার দরকার ছিল।
কিন্তু ভারতের টপ অর্ডার পুরো টুর্নামেন্টজুড়েই ছিল দুর্দান্ত। শিখর ধাওয়ান ও রোহিতের ওপেনিং আরও একবার ম্যাচ বের করে নিয়েছে। ধাওয়ান খুবই ভালো একজন খেলোয়াড়। বাংলাদেশের যেটুকু আশা ছিল, দুজন সেটা নষ্ট করে দিয়েছে। বাংলাদেশ অবশ্যই এই অর্জন নিয়ে গর্বিত হতে পারে। তবে ইংল্যান্ডের পরের বিশ্বকাপের জন্য তাদের বোলিংয়ে আরও বৈচিত্র্য বাড়াতে হবে। কয়েকজন খেলোয়াড় আছে, যাদের ওপর ভিত্তি করে তারা সাফল্য পেতে পারে। বলা যায়, দেশে ও দেশের বাইরে তাদের আরও রোমাঞ্চকর সময় আসছে।