• ওয়েস্ট ইন্ডিজ-ইংল্যান্ড সিরিজ
  • " />

     

    কুক-রুটে দিশেহারা ওয়েস্ট ইন্ডিজ

    কুক-রুটে দিশেহারা ওয়েস্ট ইন্ডিজ    

    এজবাস্টন টেস্ট (দিবা-রাত্রি), প্রথম দিনশেষে
    ইংল্যান্ড ৩৪৮/৩, ৯০ ওভার (কুক ১৫৩*, রুট ১৩৬, মালান ২৮*, রোচ ২/৭২, কামিন্স ১/৬১) 


    ‘আই আই ও, আই আই আই ও…’

    এজবাস্টনে সমস্বরে তখন উঠছে এ সুর। একটু পরপরই ঘুরেফিরে আসছে, এক ঐতিহাসিক টেস্টের প্রথম দিনটা শেষ হচ্ছে ইংলিশদের ঠিক মনের মতো করে, দর্শকরা তো সুর ধরবেনই! যুক্তরাজ্যের মাটিতে হওয়া প্রথম দিবা-রাত্রির টেস্টের প্রথম দিনেই রানের পাহাড়ে চড়ার রাস্তাটা ধরে ফেলেছে ইংল্যান্ড, অ্যালেস্টার কুক ও জো রুটের সেঞ্চুরিতে। 

    বিকেলে টসে জিতে ব্যাটিং নিয়েছিলেন রুট। গোলাপি বলে সুইংয়ের স্থায়ীত্ব লাল বলের তুলনায় কম, তবে সেই কম সময়েই বিপর্যয়ের মুখে পড়েছিল ইংল্যান্ড। কুকের আরেকবার বদল হওয়া ওপেনিং সঙ্গী এবার অভিষিক্ত মার্ক স্টোনম্যান, তিনি রীতিমতো ভ্যাবাচাকা খেয়ে গেলেন ওয়েস্ট ইন্ডিজ দলে ফেরা কেমার রোচের বলে। মিডলস্টাম্পে পড়ে সড়ে গেল বল, স্টোনম্যানের ব্যাটকে পাথর বানিয়ে আঘাত করলো অফস্টাম্পের চূড়ায়! 

    স্টোনম্যানকে অনুসরণ করলেন টম ওয়েস্টলি। এবার ঘাতক মিগুয়েল কামিন্স। ভেতরে ঢোকা বল লেগেছিল ওয়েস্টলির হাঁটুর নীচে, আম্পায়ার মারাই এরাসমাস আউট দেননি প্রথমে। ওয়েস্ট ইন্ডিজের রিভিউ সফল হলো, উল্লাসে মাতলেন জ্যাসন হোল্ডাররা। এজবাস্টনে প্রথম দিনে এমন উল্লাসের উপলক্ষ্য আর তেমন পেলেন না ক্যারিবীয়রা! 

    আরেকবার ইংল্যান্ডকে বিপর্যয় থেকে রক্ষা করার দায়িত্ব নিলেন কুক-রুট। প্রথম ৬ ওভারের আগেই ৩৯ রান তুলে ফেলেছিল ইংল্যান্ড, দ্রুত দুই উইকেট আটকে দিল রানের চাকা। সেটা সচল করলেন, ২৭ ওভারে ১০৮ রান নিয়ে লাঞ্চে গেল ইংল্যান্ড। পরের ২৭ ওভারে ১০৭ রান তুললেন দুজন, রুটের ফিফটি হয়ে গেছে, টানা ১১ ম্যাচে ফিফটি বা তার বেশি স্কোরের ইংলিশ রেকর্ড হয়ে গেছে, এরপর হয়ে গেছে ১৩ নাম্বার সেঞ্চুরিও। কুক অপেক্ষায় নিজের ৩১ নাম্বারের। 

    চা-বিরতি থেকে ফিরে সেটা করে ফেললেন কুক। রসটন চেজের লেগস্টাম্পের বাইরের বলে চার মেরে সেঞ্চুরি করেছিলেন রুট, কুক করলেন তাকেই স্কয়ার কাটে সিঙ্গেল নিয়ে। ওয়েস্ট ইন্ডিজের একমুখি বোলিং লাইন-আপকে নিয়ে দুজন খেললেন, ২৪৮ রানের জুটি ভাঙলো রোচের দ্বিতীয় সাফল্যে। ফুললেংথের বলে সোজা খেলতে গিয়ে বোল্ড রুট, দ্বিতীয় নতুন বলের জন্য উইন্ডিজের তখনও ৩৪ বলের অপেক্ষা। 

    এজবাস্টনের আকাশে আঁধার নেমেছে তখন, ফ্লাডলাইটে আলোতে গোলাপি নতুন বলের কারুকার্য দেখার অপেক্ষাতেই হয়তো তখন সবাই। কিন্তু হোল্ডার ৮০ ওভার শেষ হয়ে গেলেও তা নিলেন না, সে ওভারটা আবার পূর্ণ করতে পারলেন না চোট পেয়ে উঠে যাওয়ায়। অসমাপ্ত ওভার শেষ করলেন স্পিনার, চেজ। পরের ওভারে এলেন আরেক স্পিনার, ব্র্যাথওয়েট। ড্রেসিংরুমে কোচ স্টুয়ার্ট ল আর সহ্য করতে পারলেন না, বার্তা পাঠালেন মাঠে। 

    নতুন বল নিল ওয়েস্ট ইন্ডিজ, কিন্তু পেসাররা হতাশ করলেন আরেক দফা। এলোমেলো লাইনে বল, কুক-মালান পূর্ণ সুবিধা নিলেন সেসবের। ‘ড্যাডি হান্ড্রেড’ হয়ে গেল কুকের, এ নিয়ে ১০বার। স্যার লেন হাটন, ওয়ালি হ্যামন্ড ও কেভিন পিটারসেনের ইংলিশ রেকর্ডে ভাগ বসালেন। দিনশেষে অভিনন্দন পেলেন ওয়েস্ট ইন্ডিজের, এজবাস্টনের।
     
    ‘আই আই ও’-এর সুর তখন মিলিয়ে যাচ্ছে ধীরে ধীরে। তবে কাল সেটার জোর বাড়তে পারে আরও, কুকরা এনে দিতে পারেন সে উপলক্ষ্য! এজবাস্টনে প্রথম দিনে তাদের পারফরম্যান্স তো সেটাই বলে!