• ওয়েস্ট ইন্ডিজ-ইংল্যান্ড সিরিজ
  • " />

     

    ক্যারিবিয়-প্রত্যাবর্তনে বিধ্বস্ত ইংলিশ-দুর্গ

    ক্যারিবিয়-প্রত্যাবর্তনে বিধ্বস্ত ইংলিশ-দুর্গ    

    হেডিংলি টেস্ট 
    ইংল্যান্ড ২৫৮ ও ৪৯০/৮ 
    ওয়েস্ট ইন্ডিজ ৪২৭ ও ৩২২/৫ (হোপ ১১৮*, ব্র্যাথওয়েট ৯৫)
    ফলঃ ওয়েস্ট ইন্ডিজ ৫ উইকেট জয়ী, সিরিজ ১-১ 


     

    দশ দিন। দশদিন আগে এজবাস্টনে এই দলটা রীতিমতো চূর্ণ-বিচূর্ণ হয়েছিল। দশদিন আগে এই দলটার বর্তমানে টেস্ট খেলার যোগ্যতা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছিল, দশদিন আগে এই দলটা মুখ লুকিয়েছিল। দলটা যেন ছোট কোনো বাচ্চা, বড়দের ভীড়ে চাপা খেয়ে চুপসে গেছে একেবারে! দশদিনে কিছু একটা হয়েছে। বাচ্চাটা পরিণত হয়েছে। ১৭ বছর ধরে যা হয়নি, সেই বাচ্চা তা করে দেখিয়েছে। হেডিংলিতে ইংল্যান্ড ১৭ বছর পর দেশের মাটিতে একটা দলের কাছে টেস্ট হেরেছে। 

    সুপ্রিয় পাঠক, হেডিংলিতে ৩২২ রান তাড়া করে জিতেছে ওয়েস্ট ইন্ডিজ। পঞ্চম দিনের উইকেটে তারা তুলেছে ৩১৭ রান। সিরিজে এনেছে সমতা। প্রিয় পাঠক, ওয়েস্ট ইন্ডিজের নতুন দিনের আগমণী বার্তা কি পৌঁছাচ্ছে আপনার কানে? 

    এই বার্তার সবচেয়ে উচ্চকিত ঘোষকযুগলের নাম হোপ-ব্র্যাথওয়েট। প্রথমজন দুই ইনিংসেই করেছেন সেঞ্চুরি, দ্বিতীয়জন দ্বিতীয় ইনিংসে সেঞ্চুরি মিস করেছেন ৫ রানের জন্য। 

    আগের দিনের বিকেলটা ছিল ব্র্যাথওয়েট-পাওয়েলের টিকে থাকার লড়াই। সে লড়াইয়ে জিতে ফিরেছিলেন, আজ সকালটা ছিল নতুন লড়াইয়ে জেতার পালা। ৪৬ রানে প্রথম সৈন্যকে হারিয়ে ফেলে ক্যারিবীয়রা, ব্রডের বলে ক্যাচ দেন পাওয়েল। কাইল হোপ এরপর রান-আউট, যুদ্ধের ময়দানে গিয়ে সতীর্থের গুলিতেই যেন আহত আরেকজন! 

    শাই হোপ ও ক্রেইগ ব্র্যাথওয়েটের জুটি এরপর। দুজন মিলে আঘাত সামলালেন, প্রতি আক্রমণ করলেন, প্রতিপক্ষের মনোবল চূর্ণ-বিচূর্ণ করে দিলেন। প্রথম ইনিংসে গড়েছিলেন ২৪৬ রানের জুটি, এবার গড়লেন ১৪৪ রানের। চা বিরতির আগে আগে ম্যাচে জোড়া সেঞ্চুরি থেকে নিজেকে বঞ্চিত করলেন ব্র্যাথওয়েট, বিজয় দূর্গের কাছে এসে যেন দ্রুত ঘোড়া ছোটাতে গিয়ে হড়কালেন পা! 

    হোপ অবশ্য আশার নিশান হাতে রইলেন। রসটন চেজের সঙ্গে ৪৯, জারমেইন ব্ল্যাকউডের সঙ্গে ৭৯ রানের জুটিতে নিশ্চিত করে দিলেন, ওয়েস্ট ইন্ডিজকে হারাতে হলে ইংল্যান্ডকে করতে হবে অতিমানবীয় কিছু। ইংলিশ দলে অতিমানব হতে পারলেন না কেউ, উলটো স্লিপে দীর্ঘদিনের পরীক্ষিত ফিল্ডার অ্যালেস্টার কুক হোপের দুইবার ক্যাচ ফেললেন, শেষে এসে ডিপ মিড-উইকেটে ফেললেন দলের অন্যতম সেরা ফিল্ডার বেন স্টোকসও! 

    হোপ তার আগেই ম্যাচে দ্বিতীয় সেঞ্চুরি করেছেন, হেডিংলিতে প্রথম ব্যাটসম্যান হিসেবে প্রথম শ্রেণির ম্যাচে করেছেন জোড়া সেঞ্চুরি। শেষ রান এলো তার ব্যাট থেকে। ফিরে আসার অদম্য লড়াইয়ে, প্রত্যাবর্তনের অনন্য ইতিহাস রচনার অনেক বড় দায় তো তার ওই ব্যাটেরই! 

    সে ব্যাটে, হোপের ব্যাটে, সঙ্গে ব্র্যাথওয়েটের ব্যাটে লিখা থাকবে ইতিহাস। এক ক্যারিবীয় আখ্যান। যে আখ্যানে থাকবে ধূসর হয়ে যাওয়া মেরুনে রঙ ফিরে আসার দারুণ এক গল্প।