• বাংলাদেশ-অস্ট্রেলিয়া
  • " />

     

    ফতুল্লার দুঃখ ভোলাল মিরপুর

    ফতুল্লার দুঃখ ভোলাল মিরপুর    

    বাংলাদেশঃ ২৬০ ও ২২১
    অস্ট্রেলিয়াঃ ২১৭ এবং ৭০.৫ ওভারে ২৪৪ (ওয়ার্নার ১১২, স্মিথ ৩৭, সাকিব ৫/৮৫, তাইজুল ৩/৬০, মিরাজ ২/৮০)
    ফলঃ বাংলাদেশ ২০ রানে জয়ী
    ম্যাচসেরাঃ সাকিব আল হাসান




    শেষ হয়েও যেন হচ্ছিল না শেষ। মেহেদী হাসান মিরাজের এক ওভারে দুই ছক্কা মারলেন প্যাট কামিন্স, হঠাৎ করেই অস্ট্রেলিয়ার জয়ের সঙ্গে দূরত্বটা এসে দাঁড়াল ২১ রানে। শেষ পর্যন্ত সেই মুহূর্ত এলো তাইজুলের হাত ধরে, তাঁর বলেই এলবিডব্লু হয়ে গেলেন হ্যাজলউড। বাংলাদেশ ২০ রানে জিতল ম্যাচ, ১১ বছর পর ফতুল্লার দুঃখ ভোলাল মিরপুর।

     
    যে আশা নিয়ে সকালে জেগেছিল বাংলাদেশ, তার অনেকটুকুই বেদনার বালুচর হয়ে যাচ্ছিল সকালে। স্টিভেন স্মিথ ও ডেভিড ওয়ার্নারের মিরপুরকে মনে করাচ্ছিলেন মেলবোর্ন, সাকিব-মিরাজদের খেলছিলেন, স্বাচ্ছন্দ্যেই। তৃতীয় দিন শেষে অস্ট্রেলিয়ার দরকার ছিল ১৫৬ রান, বাংলাদেশের দরকার ছিল ৮ উইকেট। দুজন মিলে ৫০ রানও যোগ করে ফেলেছিলেন। যখনই ম্যাচটা বের হয়ে যাচ্ছে বাংলাদেশে হাত থেকে, তখনই আঘাত সাকিবে। ওয়ার্নার ১১২ রান করে আউট হয়ে গেলেন, বাংলাদেশ পেল প্রথম উদযাপন।



    ওয়ার্নার অবশ্য অনেক অপেক্ষার সেই তিন অঙ্ক পেয়ে গেছেন আগেই। উপমহাদেশে এর আগে সর্বোচ্চ স্কোর ৭১,  স্পিনের বিপক্ষে ভুগতে হয়েছে বরাবর। ক্যারিয়ারের ১৯তম সেঞ্চুরিটা শুধু ম্যাচ বাঁচানো হয়, হতে পারে এখন পর্যন্ত তাঁর ক্যারিয়ার সেরাও। সেঞ্চুরির পর মুষ্টিবদ্ধ হাতে লাফিয়ে বুনো উদযাপন আর স্মিথকে জড়িয়ে ধরে আলিঙ্গনে বুঝিয়ে দিলেন, এই ইনিংস তাঁর কাছে 'ভেরি ভেরি স্পেশাল'।


    তবে আউট হতে পারতেন ৯৮ রানেই। সাকিবের বলটা সুইপ করতে গিয়ে উঠে গিয়েছিল ক্যাচ, মুশফিক ধরেই আবেদন করলেন। রিভিউ নিয়েও লাভ হয়নি, বল ওয়ার্নারের ব্যাটে নয়, প্যাডেই লেগেছিল। 



    আউট হতে পারতেন স্মিথও, ২৯ রানে ডাউন দ্য উইকেটে খেলতে এসে ক্যাচ তুলে দিয়েছিলেন। কিন্তু সামনের দিকে ঝুঁকে লাফিয়েও বলে হাত ছোঁয়াতে পারেননি তামিম, হয়ে গেছে চার। শেষ পর্যন্ত সেই আফসোস দূর করেছেন সাকিবই। সাকিবের বলেই কাট করতে গিয়ে ব্যাটের কোণায় লেগেছে স্মিথের, অস্ট্রেলিয়ান অধিনায়ক ফিরে গেলেন ৩৭ রানেই। 


    অস্ট্রেলিয়ার ধসের শুরুটাও তখন। লাঞ্চের আগে ৬৮ বলের মধ্যে ৩৭ রানেই হারিয়েছে ৫ উইকেট। স্মিথের পর ফিরে গেছেন হ্যান্ডসকম্ব। তাইজুলের বল কাট করেছিলেন ভালোমতোই, স্লিপে সৌম্য উড়ে যাওয়া বলে হাত লাগিয়ে ফেলেছিলেন। দারুণ রিফ্লেক্সে আবার লাফিয়ে বলটা ধরে ফেলেছেন, আগের দিনের সেই ক্যাচ মিসের আক্ষেপও যেন ভোলালেন দারুণ ওই ক্যাচে। ১৫ রান করে ফিরলেন হ্যান্ডসকম্ব। 


    ক্রিজে এলেন ওয়েড, সাকিবের বলটা লাগল স্টাম্পের সামনে। প্রথম ইনিংসে রিভিউ নিলে আউট হতেন না, কিন্তু এবার রিভিউ নিয়েও লাভ হলো না। ফিরে গেলেন ৪ রানেই।


     


    ম্যাক্সওয়েলের সঙ্গে জুটি বেঁধেছেন অ্যাশটন অ্যাগার, বাংলাদেশকে প্রথম ইনিংসে যিনি ভুগিয়েছেন বিস্তর। এবার তাঁর আয়ু ১৩ বল, তাইজুলের বলে তাঁকেই সহজ ক্যাচ দিলেন। টেস্টে ৫০তম  উইকেটও হয়ে গেছে তাইজুলের। 

     


    তবে লাঞ্চের পর প্রথম বলেই সাকিবকে কাট করতে গিয়ে ইন সাইড এজে বোল্ড হয়ে গেছেন ম্যাক্সওয়েল। অস্ট্রেলিয়ার তখনও দরকার আরও ৬৫ রান, বাংলাদেশ তীব্রভাবেই পাচ্ছিল জয়ের সুবাস। কিন্তু কামিন্স আর লায়ন মিলে ঠিক করলেন, সেই সুবাসটা আরেকটু দেরিতে পৌঁছাবে। নবম উইকেটে দুজন মিলে গড়লেন প্রতিরোধ, গড়লেন ২৯ রানের জুটি। শেষ পর্যন্ত মিরাজ এসেই ভাঙলেন জুটি, সুইপ করতে গিয়ে ক্যাচ তুলে দিলেন লায়ন। 


    কিন্ত কামিন্স ছিলেন একদিকে, একটু একটু করে গড়ে দিচ্ছিলেন ব্যবধান। শেষ পর্যন্ত তাইজুলের হাত ধরেই এলো সেই মুহূর্ত, প্রথমবারের মতো অজি-জয় করল বাংলাদেশ।