• কোপা আমেরিকা
  • " />

     

    কোপা কাহিনী - পর্ব ২ঃ উরুগুয়ে আর্জেন্টিনার ক্লাসিকো

    কোপা কাহিনী - পর্ব ২ঃ উরুগুয়ে আর্জেন্টিনার ক্লাসিকো    

    আর্জেন্টিনা-ব্রাজিল চিরপ্রতিদ্বন্দ্বী! এটাই আমরা সবসময় শুনে আসছি। কিন্তু আদতে আর্জেন্টিনার ঐতিহাসিক চিরপ্রতিদ্বন্দ্বী তাদের দক্ষিণ আমেরিকার প্রতিপক্ষ উরুগুয়ে।এবং এই প্রতিদ্বন্দ্বীতার ইতিহাস শুরু আজ থেকে প্রায় ৯০ বছর আগে। এই দুই প্রতিপক্ষ এবং তাদের কোপা আমেরিকার লড়াই নিয়ে লিখেছেন ইমতিয়াজ আজাদ

     


    আরো পড়ুনঃ

    কোপা কাহিনী - পর্ব ১


     

    ১৯২৬ সালে কোপা আমেরিকার ১০ম আসর বসলো চিলির সান্তিয়াগোতে। এই আসরেই প্রথমবারের মতো অংশ নেয় বলিভিয়া। বলিভিয়াকে নিয়ে কনমেবলের সদস্য সংখ্যা হয় ৬ টি। কিন্তু ব্রাজিল দ্বিতীয়বারের মতো কোপা থেকে নিজেদেরকে প্রত্যাহার করে নিলে অংশগ্রহণকারী দলের সংখ্যা দাঁড়ায় ৫ এ। চ্যাম্পিয়ন হয় উরুগুয়ে। রানার্সআপ কে বলুন তো? ঠিক ধরেছেন। আর্জেন্টিনা। চিলি ৩য় হলেও নিজের দেশের মাটিতে ৭ গোল করে টুর্নামেন্টের টপ স্কোরার হন চিলির ডেভিড আরেলানো। সেরা খেলোয়াড় হন চ্যাম্পিয়ন দল উরুগুয়ের হোসে লিওনার্দো আন্দ্রাদে।

     

    ১৯২৭ সালে পেরু সপ্তম সদস্য হিসেবে কনমেবলের অন্তর্ভুক্ত হয়। কিন্তু ব্রাজিল, চিলি আর প্যারাগুয়ে না খেলায় কোপা সীমাবদ্ধ থাকে ৪ দলের মধ্যেই। এ আসরের চ্যাম্পিয়ন এবং রানার্সআপ পরের বছরে নেদারল্যান্ডের আমস্টারডামে অনুষ্ঠিত সামার অলিম্পিকে আমন্ত্রণ পায়। পাশার দান উল্টে যায় এবারে। উরুগুয়েকে রানার্সআপ বানিয়ে চ্যাম্পিয়ন হয় আর্জেন্টিনা। ২ জন আর্জেন্টাইন এবং ৩ জন উরুগুইয়ান মিলে মোট ৫ জন এ আসরে টপ স্কোরার হন। বেস্ট প্লেয়ার অব দ্য টুর্নামেন্ট হন আর্জেন্টিনার ম্যানুয়েল সিওয়ান।   

     

    ১২তম কোপা হওয়ার কথা ছিল ১৯২৮ সালে। কিন্তু সামার অলিম্পিকের জন্য সেটি পিছিয়ে চলে যায় ১৯২৯ সালে, আর্জেন্টিনাতে। প্যারাগুয়ে ফিরে আসলেও ব্রাজিল আর চিলির সাথে এবার কোপা বর্জন করে বলিভিয়া। চার দলের এই টুর্নামেন্টে চ্যাম্পিয়নের মুকুট ধরে রাখে আর্জেন্টিনা। প্যারাগুয়ে ২য় স্থান লাভ করে। কোপা আমেরিকার ইতিহাসে প্রথমবারের মতো কোন প্যারাগুইয়ান খেলোয়াড় টুর্নামেন্টের টপ স্কোরার হন এ আসরে। তাঁর নাম অরেলিও গঞ্জালেজ। সেরা খেলোয়াড়ের পুরস্কার জোটে আর্জেন্টিনার ম্যানুয়েল ফেরেইরার ভাগ্যে।

     

    এরপর পার হয়ে গেলো ৬ টি বছর। এই ৬ বছরে কোন কোপা আমেরিকা অনুষ্ঠিত হল না। কেন হল না তা জানতে হলে আমাদেরকে ফিরতে হবে ১৯৩০ সালের বিশ্বকাপে।

     

    ঐ বিশ্বকাপের ফাইনালে মুখোমুখি হয়েছিল আর্জেন্টিনা এবং উরুগুয়ে। এই ম্যাচের শুরু থেকেই উত্তেজনা ছড়িয়ে পড়ে। আর্জেন্টিনা এবং উরুগুয়ে উভয় দলই নিজেদের বল ছাড়া খেলতে অস্বীকৃতি জানায়। পরে দুই হাফে দুই দলের বল দিয়ে খেলিয়ে এ সমস্যার সমাধান করা হয়। এই ম্যাচে উরুগুয়ে ৪-২ গোলে আর্জেন্টিনাকে পরাজিত করে প্রথম বিশ্বচ্যাম্পিয়ন হয়। ঝামেলার শুরু হয় এখান থেকেই। হেরে গিয়ে আর্জেন্টিনা উরুগুয়ের বিরুদ্ধে ‘শারীরিক’ খেলার অভিযোগ আনে। সেই সাথে সম্পর্ক ছিন্ন করে উরুগুয়ের সাথে। কনমেবলের সদস্য সংখ্যা তখন ৮ হলেও যেহেতু ব্রাজিল এবং চিলির নিয়মিতভাবে “কোপা বর্জন কর্মসূচি” চলছিল, তখন আর্জেন্টিনা আর উরুগুয়ের এই বিরোধে কোপা আমেরিকা বন্ধ থাকলো ৬ বছর।

     

    অবশেষে বরফ গললো। ৬ বছর পরে, ১৯৩৫ সালে ১৩ তম কোপা ফিরল পেরুর লিমাতে। যদিও এই আসরের চ্যাম্পিয়নকে কোন ট্রফি দেওয়া হয়নি তবুও এটি কনমেবল কর্তৃক স্বীকৃতি পায়। আর্জেন্টিনা, চিলি, উরুগুয়ে আর পেরুকে নিয়ে অনুষ্ঠিত এ টুর্নামেন্টে ৯ বছর পরে চ্যাম্পিয়ন হয় উরুগুয়ে। রানার্সআপ দলের নাম অবশ্যই আর্জেন্টিনা। টুর্নামেন্টের টপ স্কোরার হারমিনিও মাসানতোনিও নামে একজন আর্জেন্টাইন। চ্যাম্পিয়ন দলের সদস্য হোসে নাসাজ্জি হন বেস্ট প্লেয়ার অব দ্য টুর্নামেন্ট।

     

    কোপা '৩৫ এর সেরা খেলোয়াড় হোসে নাসাজ্জি

     

     

    ১৯৩৭ সালে কোপার ১৪ তম আসরে বেশ কিছু গুরুত্বপূর্ণ ঘটনা ঘটলো। এটিই প্রথম আসর যেখানে ৬টি দল অংশগ্রহণ করে। এ বছরেই কোপা আমেরিকাতে ফিরে এলো ব্রাজিল। বলিভিয়া এবং ১৯৩৬ সালে হওয়া নতুন সদস্য কলম্বিয়া অংশগ্রহণ করেনি। ৬ দলের এই টুর্নামেন্টে আর্জেন্টিনা এবং ব্রাজিল সবচেয়ে বেশি পয়েন্ট পায়। প্লে-অফে আর্জেন্টিনা দে লা মাতা’র জোড়া গোলে ব্রাজিলকে পরাজিত করে ৫ম বারের মতো শিরোপা জেতে। চিলি পয়েন্ট টেবিলের পঞ্চম স্থানে থাকলেও রাউল তোরো নামে এক চিলিয়ান ‘কামাল’ করে দেন। ৭ গোল করে হন টুর্নামেন্টের টপ স্কোরার। আর্জেন্টিনার ভিসেন্তে দে লা মাতা সেরা খেলোয়াড়ের পুরস্কার জিতে নেন।

     

    '৩৭ এর কোপা বিজয়ী আর্গেন্টিনা দল

     

    ইকুয়েডর কনমেবলের সদস্য হয়েছিলো ১৯২৭ সালে। কিন্তু তারা প্রথমবার কোপাতে অংশগ্রহণ করে ১৯৩৯ সালে। পেরুর লিমাতে বসা এই আসর ছিল কোপার ১৫ তম আসর। সদস্য হওয়ার পর টানা দ্বিতীয়বার কোপা থেকে নিজেদেরকে প্রত্যাহার করে নিলো কলম্বিয়া। সাথে আরও যোগ দিলো ব্রাজিল, আর্জেন্টিনা এবং বলিভিয়া। ৫ দল নিয়ে হওয়া এই টুর্নামেন্টে দেশের মাটিতে প্রথমবারের মতো চ্যাম্পিয়ন হওয়ার স্বাদ পায় পেরু। রানার্সআপ দলের নাম উরুগুয়ে। সবচেয়ে বেশি ৭ গোল করে টুর্নামেন্টের টপ স্কোরার এবং সেরা খেলোয়াড় হন পেরুর টিওডোরো ফার্নান্দেজ।

     

    চিলির রাজধানী সান্তিয়াগোর প্রতিষ্ঠার ৪০০ বছর উপলক্ষে চিলি ১৯৪১ সালে ১৬তম কোপা আমেরিকা আয়োজন করে। এ কারণে এ আসরের বিজয়ীকে কোন ট্রফি দেওয়া হয়নি। ৫ দল নিয়ে আয়োজিত এ টুর্নামেন্টে উরুগুয়েকে রানার্সআপ বানিয়ে চ্যাম্পিয়ন হয় আর্জেন্টিনা। টপ স্কোরারের নাম আর্জেন্টিনার জুয়ান মারভেজ্জি। সেরা খেলোয়াড়ের তকমা পান চিলির সার্জিও লিভিংস্টোন।

     

    দীর্ঘ ১৮ বছর পরে, ১৯৪২ সালে কোপা আমেরিকার স্বাগতিক হল উরুগুয়ে। বলিভিয়া এবং কলম্বিয়া অংশগ্রহণ না করা সত্ত্বেও এটা ছিল ৭ দলের সমন্বয়ে প্রথম কোপা। এই আসরেই আর্জেন্টিনা ১২-০ গোলে পরাজিত করে ইকুয়েডরকে যেটা এখন পর্যন্ত কোপা আমেরিকার ইতিহাসে সবচেয়ে বড় ব্যবধানে জয়। দেশের মাটিতে ৮ম টাইটেল জেতে উরুগুয়ে। আর্জেন্টিনা দ্বিতীয় হলেও সর্বোচ্চ ৭ গোল করে ‘সান্ত্বনা’ পুরস্কার পান আর্জেন্টিনার হোসে ম্যানুয়েল মরেনো এবং হারমিনিও মাসানতোনিও। সেরা খেলোয়াড় উরুগুয়ের অবদুলিও ভারেলা।

     

    কোপা '৪৫ এর সর্বোচ্চ গোলদাতা নরবার্টো মেন্ডেজ

     

    ১৯৪৫ সালের কোপাতে প্রথমবারের মতো অংশগ্রহণ করলো কলম্বিয়া। উরুগুয়ে, প্যারাগুয়ে, ইকুয়েডর এবং পেরু নিজেদের প্রত্যাহার করে নিলে টুর্নামেন্ট হয়ে যায় ৫ দলের। ৭ম বারের মতো চ্যাম্পিয়ন হয় আর্জেন্টিনা। চতুর্থবারের মতো রানার্সআপ হয় ব্রাজিল। আর্জেন্টিনার নরবার্টো মেন্ডেজ এবং ব্রাজিলের হেলেনো ডি ফ্রেইতাস ৬ গোল করে টপ গোলস্কোরার নির্বাচিত হন। সেরা খেলোয়াড় হন ব্রাজিলের ডোমিঙ্গোস ডি গায়া।

     


    আরো পড়ুনঃ

    কোপা কাহিনী - পর্ব ৩