• বাংলাদেশ প্রিমিয়ার লিগ
  • " />

     

    উত্তরের প্রথম লড়াইয়ে রাজা রংপুর

    উত্তরের প্রথম লড়াইয়ে রাজা রংপুর    

    বিপিএল, ম্যাচ ২, সিলেট 
    কিংস ১৫৪/৮, ২০ ওভার (রনি ৪৭, স্যামি ২৯, ফ্র্যাঙ্কলিন ২৬, মিরাজ ১৫, অপু ২/২০, মালিঙ্গা ২/৩৪, মাশরাফি ১/১৮)
    রাইডার্স ১৫৫/৪, ১৮.৫ ওভার (মিঠুন ৪৬, বোপারা ৩৯*, নাফিস ৩৫, পেরেরা ২০*, মিরাজ ১/৩১, ফরহাদ ১/৩০) 
    ফল : রাইডার্স ৬ উইকেটে জয়ী  


    আগেরদিনই মাশরাফি বিন মুর্তজা বলেছিলেন, সিলেটের উইকেট হবে ধীরগতির। তার ওপর আছে শিশিরের প্রভাব, দ্বিতীয় ম্যাচে তাই টসটাও ছিল গুরুত্বপূর্ণ। সেই টসটা জিতলেন মাশরাফি, সেই ধীরগতির উইকেটকে বেশি ভালভাবে কাজে লাগালেন মাশরাফির বোলার ব্যাটসম্যানরাই। উত্তরাঞ্চলের দুই দলের প্রথম লড়াইয়ে বিজয় নিশান উড়লো রংপুর রাইডার্সেরই। 

    টসে হেরে ব্যাটিংয়ে নামা রাজশাহী কিংসের ইনিংসে গুরুত্বপূর্ণ নাম তিনটি- রনি তালুকদার, ড্যারেন স্যামি, মেহেদী হাসান মিরাজ। তিনজনের তিন রকমের ইনিংসই সাহায্য করলো রাজশাহীর ইনিংস গড়তে। রনি লাসিথ মালিঙ্গা বা থিসারা পেরেরার মতো ডেথ ওভার বিশেষজ্ঞদের পেয়েছেন শুরুর দিকে, মালিঙ্গাকে মিড-উইকেট দিয়ে ছয়ের আগে দুইটি চার, পেরেরাকেও ওই একই জায়গা দিয়ে ছয় মেরে সিলেটের উইকেটে ব্যাটিংকে বানিয়ে ফেলেছিলেন খুব সহজ। 

     

     

    ড্যারেন স্যামিকে তিনটা ফুলটস উপহার দিয়েছিলেন রুবেল হোসেন, কিংস অধিনায়ক কাজে লাগিয়েছেন দুইটি। রুবেল ১৮তম ওভারে ইনিংস সর্বোচ্চ ১৮ রান দিয়েছেন, শেষ ওভারে দিয়েছেন ১৪ রান। এই শেষ ওভারে মিরাজ নিয়েছেন ১১, সব মিলিয়ে ৫ বলে করেছেন ১৫। 

    এ তিনজন ছাড়া একপ্রান্ত আগলে ছিলেন জেমস ফ্র্যাঙ্কলিন, যার একটা রান-আউটের সিদ্ধান্ত দিতে টিভি আম্পায়ার যে সময় নিলেন, ফ্র্যাঙ্কলিন সে সময়ে চা-বাগানের কোথাও গিয়ে একটু ঘুরেও আসতে পারতেন! শেষ পর্যন্ত আউট হননি, রান-আউট হয়েছেন ফরহাদ রেজা, আর শেষ বলে মিরাজ।

    রাজশাহীর ইনিংসের শুরুতে স্পিনে বড় শট খেলতে মরিয়া মুমিনুল দ্বিতীয় ওভারে সোহাগ গাজীকে তৃতীয়বার স্লগ সুইপ করতে গিয়ে ক্যাচ দিয়েছিলেন। লুক রাইটও বড় শট খেলতে গিয়েছিলেন, মুশফিকুর রহিম অতি আত্মবিশ্বাসী হয়ে রিভার্স সুইপ করতে গিয়ে ক্যাচ দিয়েছেন নাজমুল অপুর বলে। 

    আর মালিঙ্গার প্রতি ভরসা রেখে প্রথম ওভারে ১৫ রান দেয়ার পরও তাকে বোলিংয়ে এনেছিলেন মাশরাফি, সামিট প্যাটেলকে অসাধারণ ইয়র্কারে এলবিডাব্লিউ করে তার প্রতিদান দিয়েছেন শ্রীলঙ্কা থেকে বাদ পড়া ভয়ঙ্কর মালিঙ্গা। ১৯তম ওভারে দিয়েছেন মাত্র ৬ রান, উইকেট নিয়েছেন ড্যারেন স্যামির। আর রনির উইকেটটা নিয়েছেন মাশরাফি নিজে, আরেকবার উইকেট পেয়েছেন কাটারে। 

    শিশিরের প্রভাব পড়তে শুরু করেছে ততক্ষণে সিলেটে। রংপুর ইনিংসের দ্বিতীয় বলেই উইকেট হারিয়েছিল, লাইথের শটটা কাভারে সোজা ক্যাচ গেল, গত বিপিএলে নয় ম্যাচে প্রথম ওভারেই উইকেট পেয়েছিলেন মিরাজ, এবারের বিপিএলে নিজের প্রথম ম্যাচের প্রথম বলেই পেলেন উইকেট। চতুর্থ ওভারে চতুর্থ বোলার হিসেবে এসে উইকেট নিলেন ফরহাদ রেজাও, ধীরগতির উইকেটে ভেতরের দিকে ঢোকা বলে নাগাল না পেয়ে এলবিডাব্লিউ জনসন চার্লস। 

    রংপুরের তখন জুটি দরকার ছিল একটা, যেটা গড়লেন শাহরিয়ার নাফিস ও মোহাম্মদ মিঠুন। কেসরিক উইলিয়ামসকে শুধু ব্যাটটা আড়াআড়ি করে চার মারলেন শাহরিয়ার নাফিস, মিরাজকে শুধু টাইমিংয়ের ওপর ভর করে মারলেন ছয়। টাইমিংয়ের ওপর নির্ভর করে খেলেছিলেন গুরুত্বপূর্ণ এক ইনিংস, ফ্র্যাঙ্কলিনের বলে বোল্ড হলেন ওই টাইমিংয়ে গড়বড় হয়েই।  মিরাজ ৩.৪ ওভার পর্যন্ত দিয়েছিলেন ১৯ রান, শেষ দুই বলে দুই ছয় মেরে মিঠুন সে ফিগারটাকে বদলে দিলেন। 

     

     

    মিঠুন আউট হলেন লুক রাইটের অসাধারণ এক ক্যাচে, ব্যাকওয়ার্ড পয়েন্টে ডানদিকে ঝাঁপিয়ে পড়ে নেওয়া ক্যাচেই ভেঙ্গেছিল নাফিসের সঙ্গে মিঠুনের ৭৫ রানের জুটি। সেই রাইটই পরে একই জায়গায় ছাড়লেন বোপারার সহজতম ক্যাচ। 

    লং-অফে পরে পেরেরার সহজ ক্যাচ ছেড়েছেন প্যাটেল, উলটো হয়েছে চার। ম্যাচে ফেরার ক্ষীণতম আশাটাও তখন শেষ হয়ে গেছে রাজশাহীর। অসাধারণ টাইমিং ও ক্রিজের ব্যবহারের প্রদর্শনীতে রংপুরকে জয়ের প্রান্তে নিয়ে গেছেন বোপারাই। সিলেটের গ্যালারি তখন অনেকটাই ফাঁকা, তাতে অবশ্য রংপুরের বিজয় নিশানে ছেদ পড়ছে না কোনও!