• অ্যাশেজ ২০১৭-১৮
  • " />

     

    এ কেমন পিচ!

    এ কেমন পিচ!    

    ‘জঘন্য’। বিপিএল চলার সময় মিরপুরের পিচ নিয়ে তামিম ইকবালের মতামত ছিল এমনটাই। এজন্য অবশ্য পরবর্তীতে জরিমানাও গুণতে হয়েছে। মেলবোর্নে অ্যাশেজ চলার সময় পিচ নিয়ে প্রশ্ন তুলেছিলেন খোদ অস্ট্রেলিয়ান অধিনায়ক স্মিথসহ বাকি সবাই। গতকালই প্রথম অস্ট্রেলিয়ান পিচ হিসেবে ‘নিম্নমানের’ রেটিং পেয়েছে মেলবোর্ন। ক্রিকেট ইতিহাসে পিচ নিয়ে এমন অভিযোগ নতুন নয়। 

     

     

     

    ২০০৬ সাল থেকে আইসিসি শুরু করে পিচ রেটিং। এই ১১ বছরে ১২ টি পিচকে নিম্নমানের কিংবা তার চেয়েও খারাপ রেটিং দেওয়া হয়েছে। ১২ টি পিচের ৫ টি সহযোগী দেশ কানাডার। বাকি ৭ টি পূর্ণ সদস্য দেশের পিচ, এর মাঝে ৪ টিই ভারতের।

     

    কানপুর (২০০৭-০৮)

     

    ভারত- দক্ষিণ আফ্রিকা সিরিজের দ্বিতীয় টেস্টের পিচ নিয়ে বিতর্ক হয়েছে ম্যাচ চলার সময়েই। অতিরিক্ত শুষ্ক ও স্পিন সহায়ক পিচ বানানোর কারণে আইসিসির পক্ষ থেকে নিম্নমানের রেটিং পেয়েছিল কানপুর। ম্যাচের স্থায়িত্ব ছিল মাত্র তিনদিন।

     

    ম্যাচ রেফারি রোশান মহানামা জানিয়েছিলেন, পিচ নিয়ে একদমই সন্তুষ্ট ছিলেন না তিনি, “পিচ কোনভাবেই টেস্ট ম্যাচের জন্য উপযুক্ত ছিল না। ভয়াবহ শুষ্ক ছিল পিচ, প্রথম দিন থেকেই স্পিন ধরছিল।” দক্ষিণ আফ্রিকা কোচ মিকি আর্থারও পিচ নিয়ে ক্ষোভের কথা জানিয়েছিলেন ম্যাচ শেষে।  পরবর্তীতে আইসিসি কানপুরের পিচের জন্য বিসিসিআইকে সতর্ক করে। 

     

    দিল্লী (২০০৯-১০)

    ভারত- শ্রীলংকা ওয়ানডে সিরিজের শেষ ম্যাচে সেদিন দিল্লীর পিচ যেন আক্ষরিক অর্থেই হয়ে উঠেছিল ‘খেলার অযোগ্য।’ আমচমকা বাউন্সে ব্যাটিং করাই সম্ভব হচ্ছিল না। শেষ পর্যন্ত ম্যাচের ২৩ তম ওভারের মাথপথে দুই আম্পায়ার খেলা বন্ধের নির্দেশ দেন।

     

    এই ঘটনার পর দিল্লীর ফিরোজ শাহ কোটলা স্টেডিয়ামের কমিটিকে বরখাস্ত করে। এক বছরের জন্য এই ভেন্যুকে আন্তর্জাতিক ক্রিকেট থেকে নিষিদ্ধ করে আইসিসি।

     

    সেন্ট কিটস (২০১০)

     

    ওয়েস্ট ইন্ডিজ-দক্ষিণ আফ্রিকা সিরিজের এই টেস্ট নিয়ে সেবার আলোচনা সমালোচনা কম হয়নি। অতিরিক্ত ব্যাটিং সহায়ক পিচ বানানোয় ম্যাড়ম্যাড়ে ড্র হয়েছিল টেস্টটি। পাঁচদিনে সব মিলিয়ে উইকেট পড়েছিল মাত্র ৯ টি! এরকম পিচের জন্য অবশ্য কোনো ধরণের জরিমানা করা হয়নি ওয়েস্ট ইন্ডিজকে। তবে নিম্নমানের পিচ তৈরির কারণে ডিমেরিট পয়েন্ট পায় ভেন্যুটি। 

     

    গল (২০১১)

    অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে ওই টেস্টে অতিরিক্ত টার্নিং পিচের কারণে আপত্তি তুলেছিলেন ম্যাচ রেফারি ক্রিস ব্রড। চারদিনে শেষ হওয়া ওই টেস্টে স্পিনাররাই পেয়েছিলেন সিংহভাগ উইকেট। অজি অধিনায়ক রিকি পন্টিং বলেছিলেন, প্রথম দিনেই তাঁদের মনে হচ্ছিল পিচ পঞ্চম দিনের!

     

    ম্যাচ রেফারির রিপোর্টে গলকে সতর্ক করে আইসিসি। পরবর্তীতেও অবশ্য গলের পিচ বোলারদের অনুকূলেই ছিল।

     

    নটিংহাম (২০১৪)

     

    ভারত-ইংল্যান্ড টেস্টের পিচটি ছিল অতিরিক্ত ব্যাটিং সহায়ক। দুই দলের লেজও পেয়েছে প্রচুর রান। ম্যাচ রেফারি ডেভিড বুন আইসিসির কাছে রিপোর্ট করার পর ইংল্যান্ড ক্রিকেট বোর্ডকে সতর্ক করে আইসিসি। পরবর্তীতে পিচের অবস্থা ভালো করে আইসিসিকে জানানোর জন্য বলা হয়।

     

    নাগপুর (২০১৫-১৬)

     

    দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে ভারতের সেই টেস্টের প্রথম দিন থেকেই পিচে স্পিন ধরছিল, সাথে ছিল অসম বাউন্স। প্রথম ইনিংসে মাত্র ৭৯ রানেই অলআউট হয় দক্ষিণ আফ্রিকা, তিন দিনেই শেষ হয় টেস্ট।

     

     

     

    ম্যাচের পর নাগপুরের পিচকে নিম্নমানের রেটিং দিয়ে বিসিসিআইকে সতর্ক করে আইসিসি। যদিও বিসিসিআই এই সিদ্ধান্ত মানতে নারাজ ছিল।  

     

    পুনে (২০১৬-১৭)

     

     

    সাম্প্রতিক সময়ে পিচ নিয়ে যত বিতর্ক হয়েছে, পুনের এই টেস্ট তার উপরের দিকেই থাকবে। ম্যাচের প্রথম দিন থেকেই ধুলো উড়ছিল পিচে। নিজেদের বানানো পিচে অবশ্য নিজেরাই নাকানি চুবানি খেয়েছে ভারত।

     

    প্রথমে ব্যাট করায় অস্ট্রেলিয়া পুরো ম্যাচেই সুবিধা পেয়েছে। অজি স্পিনারদের ফাঁদে পড়ে দাঁড়াতেই পারেনি ভারত। প্রথম ইনিংসে ১০৫ ও দ্বিতীয় ইনিংসে ১০৭ রান করে ভারত, ৩৩৩ রানের বিশাল জয় পায় অস্ট্রেলিয়া। স্পিনার স্টিভ ওকিফ পান ১২ উইকেট। ম্যাচের পর নিম্নমানের পিচ বানানোর কারণে ভারতকে সতর্ক করে আইসিসি।

     

    মেলবোর্ন(২০১৭)

     

     

    চতুর্থ অ্যাশেজ টেস্টের পিচ নিয়ে অস্ট্রেলিয়া, ইংল্যান্ড দুই পক্ষেরই ছিল আপত্তি। পাঁচ দিনে পড়েছে ২৪ উইকেট। ড্রপ ইন পিচে ম্যাড়মেড়ে ড্র নিয়েই সন্তুষ্ট থেকেছে দুই দল। ম্যাচের পর মেলবোর্নের পিচকে 'নিম্নমানের' বলে আইসিসি।

     

    প্রথমবারের মতো অস্ট্রেলিয়ার কোনো পিচকে নিম্নমানের রেটিং দেওয়া হয়েছে। দুই সপ্তাহের মাঝে কারণ দর্শানোর নির্দেশও দেওয়া হয়েছে ক্রিকেট অস্ট্রেলিয়াকে।