• ক্রিকেট

তবু সে আশায় বাঁধি খেলাঘর

পোস্টটি ৭৫৪৫ বার পঠিত হয়েছে
'আউটফিল্ড’ একটি কমিউনিটি ব্লগ। এখানে প্রকাশিত সব লেখা-মন্তব্য-ছবি-ভিডিও প্যাভিলিয়ন পাঠকরা স্বতঃস্ফূর্তভাবে নিজ উদ্যোগে করে থাকেন; তাই এসবের সম্পূর্ণ স্বত্ব এবং দায়দায়িত্ব লেখক ও মন্তব্য প্রকাশকারীর নিজের। কোনো ব্যবহারকারীর মতামত বা ছবি-ভিডিওর কপিরাইট লঙ্ঘনের জন্য প্যাভিলিয়ন কর্তৃপক্ষ দায়ী থাকবে না। ব্লগের নীতিমালা ভঙ্গ হলেই কেবল সেই অনুযায়ী কর্তৃপক্ষ ব্যবস্থা নিবেন।

জানি এ লেখা যখন পড়ছেন তখনো হয়তো কারো চোখে জল টলমল করছে, হয়তো কারো গালে অশ্রুর রেখা এখনো শুকায় নি। কেউ হয়তো নির্ঘুম রাত কাটিয়ে কালকে আবার সকাল সকাল অফিস-আদালতে যাবার প্রস্তুতি নিচ্ছেন। হয়তো কেউ একলা ঘরে সিলিং এর দিকে তাকিয়ে রাত পার করে দিচ্ছেন। এবারও যে হলো না, হতে হতেও হলো না!

বিধাতার বিধান এমনই বৈ কি! ৪৮ ঘন্টা আগেও এরকম সমীকরণ মিলেছিল, এবারও মিলেছে, কিন্তু বেদনার শেল হয়ে এই সমীকরণের প্রত্যেকটা অংক বুকে এসে বিঁধেছে। আমাদের সাথেই কেন এমন হয়?

অনেক কাটাছেড়া হবে এখন, কোথায় ভুল ছিল তা নিয়ে হাজারটা কথা হবে। মুস্তাফিজের অবিশেষণীয় ওভারের পর, রুবেলের রানপ্রসবা ওভারকে নিয়ে হাজারো কটূক্তি হবে। কি হতে কি হলো না তা নিয়ে আফসোস হবে। কিন্তু এ ব্যথার উপশম কিসে হবে সেটা জানা নেই! বিশ্বকাপে ইংল্যান্ডকে বাড়ি পাঠিয়ে দেয়ার ওই ওভারটা আজ হয়নি, নিখুঁত ইয়র্কারে মিলসের স্টাম্প উড়িয়ে দেয়ার মতো ঘটনাও আজকে ঘটেনি। মিরপুরের মুরালিধরন আজ ভর করেছিলেন কার্তিকের উপর, জানুয়ারির বিকালের সেই মত্ত হাওয়া আজ উড়ে এসেছিল প্রেমাদাসায়- রুবেল তাতে আবারও পুড়েছেন। কলম্বোর রাত নিশ্চিতভাবেই আজ রুবেলের কাছে দীর্ঘ মনে হবে।

ফাইনাল বরাবরই আমাদের কাছে দুঃখ হয়ে আসে কেন ভাবছেন? কিন্তু বাংলাদেশ দল যে এখন উপমহাদেশের প্রায় সব কয়টা টুর্নামেন্টেই ফাইনাল খেলে সেটা ভাবছেন না? দেশের মাটিতে মাত্র কিছুদিন আগে হযবরল খেলা বাংলাদেশ দল ফাইনালে যাবে এটা কে চিন্তা করতে পেরেছিল? টুর্ণামেন্টের শেষ বল পর্যন্ত শিরোপায় হাত রেখে বাংলাদেশ দল লড়াই করবে এই চিন্তাটাই তো সপ্তাহ খানেক আগে ছিল অবিশ্বাস্য!

ভারতীয়দের সাথে শিরোপার সুবাস যে লঙ্কান সমর্থকেরাও নিচ্ছেন সেটা তো গ্যালারির দর্শক সমর্থন থেকেই পরিষ্কার। সোশ্যাল মিডিয়াতে উত্তপ্ত দু দিনের পর শ্রীলঙ্কার সমর্থকেরা নিশ্চিতভাবেই আজ আনন্দে ঘুমাতে যাবেন। যে দলের সাথে খেলা মানেই জয় ‘গ্র্যান্টেড’ ছিল, সে দলের সাথে টানা দু’ম্যাচ হেরে ফাইনালে দর্শক থাকলে আপনি-আমিও এমনই করতাম, তাই আজকের লঙ্কান উচ্ছ্বাসে উচ্চকিত হবার কিছু নেই। হাজার হাজার দর্শকের বিরুদ্ধাচরণের মুখে দাঁড়িয়ে বাংলাদেশ দল যে সাহস দেখিয়ে আজ লড়াই করল- এই দক্ষিণাটাই তাই এ বেদনার মুহুর্তে বিরাট পাওনা।

২০০৯ এ সাকিব-তামিম-মুশফিকরা ছিলেন নবীন। এরাই এশিয়া কাপে ধাক্কা খেয়েছেন, শাণিত হয়েছেন আরো। বেঙ্গালুরুর দুঃস্বপ্নের শাপমোচন মুশফিক-রিয়াদরা এই নিদাহাস ট্রফি টুর্ণামেন্টেই করেছেন। আজ সৌম্যের অশ্রু তাই কেবল জল নয়, এটা একটা বারুদের ফোয়ারা- আমি নিশ্চিত এই বারুদ আগত সময়ে স্ফুলিঙ্গ হয়ে জ্বলবে। আজকে হতাশার আগুনে পোড়া সৌম্য-সাব্বির-মুস্তাফিজরা আগামিতে এনে দিবেন শিরোপা।

ভারত দলের ব্যাটিং শ্রেষ্ঠত্ব অবিসংবাদিত ছিল সেসময়, দুনিয়ার সেরা তিন ওয়ানডে ব্যাটসম্যান খেলতেন সে দলে। গাঙ্গুলির নেতৃত্বে ভারত তখন চোখ তুলত অসিদের দিকে, আঙ্গুল নাচাতো লর্ডসের ব্যালকনিতে, তেরঙ্গা উড়াতো জোহানেসবার্গের আঙ্গিনায়। কিন্তু কেন জানি ফাইনাল জিততে পারতো না। ফাইনাল জুজু কাটিয়েছিলেন ধোনি এসে, টি২০ বিশ্বকাপ জিতানোর পর ভারতকে তিনিই এনে দিয়েছিলেন বিশ্বকাপের শিরোপা, চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফি। গাঙ্গুলি শিখিয়েছিলেন ফাইনাল খেলা, পরের প্রজন্ম শিখেছে ফাইনাল জেতা। বাংলাদেশ দলের হতাশ হবার কিছু নেই, অচিরে হয়তো আমাদেরও সেই দিন আসবে। আমরাও হয়তো জিতব, আকাশ কাঁপিয়ে বাংলাদেশ, বাংলাদেশ বলে চিৎকার করব। হৃদয়ের রক্তক্ষরণ আজ সেই আশাবাদ দিয়েই বন্ধ হোক!