জর্জ বেস্ট- এল বিটল অফ ফুটবল
পোস্টটি ৩৯৭৩ বার পঠিত হয়েছে১৯৬১ সাল। বেলফাস্ট এর এক গলিতে খেলছিলেন জর্জ বেস্ট। ভাগ্যক্রমে সেখানে উপস্থিত ছিলেন ম্যানচেস্টার ইউনাইটেড এর তৎকালীন স্কাউট বব বিশপ। ১৫ বছর বয়সী বেস্ট এর খেলা তাকে এতোটাই মুগ্ধ করেছিল যে তিনি তখনই ইউনাইটেড ম্যানেজার ম্যাট বাসবি কে জানান, "আমি একজন জিনিয়াসের সন্ধান পেয়েছি।"
১৯৫৮ সালের মিউনিখ ট্রাজেডির পর নতুনভাবে ক্লাবকে সাজিয়ে পুনরায় আগের স্থানে নিয়ে যাওয়ার চেস্টায় ছিলেন স্যার ম্যাট বাসবি। স্কাউটের কাছ থেকে বেস্টের ব্যাপারে জানতে পেরে তিনি আর দেরি করেননি। বেস্ট কে ম্যানচেস্টার ইউনাইটেড এর ট্রায়ালের জন্য ডাকেন তিনি। ইতোপূর্বে বেস্ট এর লোকাল ক্লাব গ্লেনটোরান তার উচ্চতা এবং ওজনের জন্য তাকে প্রত্যাখান করেছিল। লোকাল ক্লাব গ্লেনটোরান এর মতো বেস্ট এর প্রতিভা চিনতে ভুল করেনি ম্যানচেস্টার ইউনাইটেড। অফিশিয়াল ট্রায়ালের মাধ্যমে চিফ স্কাউট কে নিজের প্রতিভার পরিচয় দিয়ে ১৫ বছর বয়সী বেস্ট জায়গা করে নেন ম্যানচেস্টার ইউনাইটেডে।
সে সময়ে নিয়ম ছিল নর্দান আইরিশ কাউকে সরাসরি সিনিয়র দলের জন্য নিতে পারবে না কোনো ইংলিশ ক্লাব। সেজন্য জর্জ বেস্টকে শুরুর ২ বছর কাটাতে হয় ম্যানচেস্টার ইউনাইটেড এর বয়সভিত্তিক দলে।
অবশেষে ১৭ বছর বয়সে বেস্ট প্রথমবারের মতো সুযোগ পেল ম্যানচেস্টার ইউনাইটেড এর সিনিয়র দলের হয়ে খেলার। ১৪ সেপ্টেম্বর ১৯৬৩, ওয়েস্ট ব্রমউইচ এর বিপক্ষে ওল্ড ট্রাফোর্ড এ প্রথমবারের মতো সিনিয়র দলের হয়ে মাঠে নামেন বেস্ট।
এর ঠিক ৩ মাস পরে, ১৯৬৩ সালের ডিসেম্বরে দ্বিতীয়বারের মতো মূল দলে সুযোগ পান। এই ম্যাচেই মূল দলের হয়ে প্রথম গোল পান তিনি। তার পারফরম্যান্সে মুগ্ধ হয়ে তখনই তাকে মূল দলের নিয়মিত সদস্য করার সিদ্ধান্ত নেন ম্যাট বাসবি। ইউনাইটেড এর হয়ে প্রথম সিজনে তিনি ২৬ ম্যাচ খেলে ৬ গোল করেন।
শুরুর সিজনে মূল দলের হয়ে কোনো ট্রফি জিততে না পারলেও তার অধিনায়কত্বে ম্যানচেস্টার ইউনাইটেড জিতে নেয় ইয়ুথ এফএ কাপ। তবে সেই সিজনে ম্যানচেস্টার ইউনাইটেড লীগ রানার্স আপ হয় এবং এফএ কাপের সেমি ফাইনালে যায়।
প্রথম সিজনেই ১৭ বছর বয়সী বেস্ট এর টেকনিক্যাল এবিলিটি প্রতিপক্ষ ডিফেন্ডারদের ব্যাপক ভুগিয়েছে। তাই বেস্টকে আটকানোর উপায় হিসেবে তারা রাফ ট্যাকল করতো এবং ফিজিক্যালি টার্গেট করতো বেস্টকে। এজন্য তখন থেকেই ট্রেনিং সেশনে হার্ড ড্রিলস এর মাধ্যমে সেসব ভয়ানক ট্যাকল কীভাবে সহ্য করা যায়, সেটি শিখিয়ে বেস্টকে প্রস্তুত করে তোলা হচ্ছিল মূল দলের জন্য।
১৯৬৪-৬৫ সিজন ম্যানচেস্টার ইউনাইটেড মূল দলের পূর্ণ সদস্য হিসেবে বেস্ট এর প্রথম সিজন ছিল। সেই সিজনে বেস্ট ম্যানচেস্টার ইউনাইটেড এর হয়ে প্রথমবারের মতো ট্রফি জিতেন। মিউনিখ ট্রাজেডির পর সেবারই প্রথম প্রিমিয়ার লীগ শিরোপা ঘরে তুলে ম্যানচেস্টার ইউনাইটেড। সেই সিজনে সব ধরণের প্রতিযোগিতা মিলিয়ে ৫৯ ম্যাচে ১৪ গোল করেন বেস্ট৷ তবে তার ভূমিকা গোল এসিস্ট দিয়ে বিবেচনা করা নিছক বোকামি। বেস্ট এর গতি এবং ড্রিবলিং বরাবরই হুমকি ছিল প্রতিপক্ষের জন্য। নিজের ন্যাচারাল টেকনিক্যাল এবিলিটি দিয়ে নিমিষেই ডিফেন্ডারদের ভড়কে দিয়ে গোলের সুযোগ তৈরি করা এবং গোল করা ছিল তার খেলার ট্রেডমার্ক।
১৯৬৫-৬৬ সিজনে ম্যানচেস্টার ইউনাইটেড কোনো বড় ট্রফি জিতেনি। তবে সেই সিজনেও আগের সিজনে ফেলে আসা পারফরম্যান্স ধরে রেখেছিলেন বেস্ট। সিজনের শেষদিকে প্রেস্টনের এক ডিফেন্ডারের বাজে ট্যাকল এর কারণে ইঞ্জুরিতে পড়েন বেস্ট। ফলে ইঞ্জুরির কারণে সেই সিজনে আর তেমনভাবে মাঠে নামা হয় না তার। সেই সিজনে তিনি ৪৩ ম্যাচে ১৭ গোল করেন। তবে ঐ সিজন থেকেই চার্লটন ডেনিশ ল এর সাথে বেস্ট এর গড়া ত্রয়ী আলো ছড়ানো শুরু করেছিল, যে ত্রয়ী পরবর্তীতে ইউনাইটেডকে বানিয়েছিল ইউরোপ সেরা।
তবে ১৯৬৫-৬৬ সিজনে ১৯ বছর বয়সী বেস্ট ইউরোপিয়ান কাপের কোয়ার্টার ফাইনালে বেনফিকার বিপক্ষে যা করেছিলেন, তা ছিল অবিশ্বাস্য। ইউসেবিও, কলুনা, সিমোয়েসদের বেনফিকার বিপক্ষে বেনফিকার মাঠেই ২ গোল করে সমস্ত লাইমলাইট কেড়ে নেন বেস্ট।
এই ম্যাচের পরই পর্তুগিজ মিডিয়া তাকে তার সুপরিচিত "এল বিটল" নিকনেইম দেন।
অল্প বয়সেই মাঠে এমন খেলা দেখানো পাশাপাশি লম্বা চুলওয়ালা স্টাইলিশ লুক। মাঠের পাশাপাশি মাঠের বাইরেও বেস্ট এর খ্যাতি তাড়াতাড়ি ছড়িয়ে পড়তে থাকলো। প্রথমবার ১৫ বছর বয়সী লাজুক যে বেস্ট ম্যানচেস্টারে এসেছিল, খ্যাতি এবং লাইমলাইট পেয়ে সেই বেস্ট আস্তে আস্তে অন্যরকম হতে থাকলো।
মাঠের বাইরে খ্যাতিমান লাইফস্টাইল, মাঠের মধ্যে ডিফেন্ডারদের বোকা বানিয়ে একের পর এক গোল। ২০ পেরোনোর আগেই বেস্ট এর জীবন চলছিল স্বপ্নের মতো। এক সিজন পর আবারও প্রিমিয়ার লীগ জিতে নেয় ম্যানচেস্টার ইউনাইটেড। সব ধরণের প্রতিযোগিতা মিলিয়ে ৪৫ ম্যাচে ১০ গোল করে বেস্ট তার ধারাবাহিকতা বজিয়ে রাখেন।
১৯৬৭-৬৮ সিজন, সম্ভবত বেস্ট এর ক্যারিয়ারের শ্রেষ্ঠ সিজন, মনে রাখার মতো একটি সিজন। সেই সিজনে সিটির কাছে ২ পয়েন্টের ব্যবধানে লীগ টাইটেল হারলেও প্রথম ইংলিশ ক্লাব হিসেবে ইউরোপিয়ান কাপ জিতে নেয় ম্যানচেস্টার ইউনাইটেড। এই ইউরোপিয়ান কাপ জয়ের ক্ষেত্রে সামনে থেকে ভূমিকা রাখেন বেস্ট।
সেমি ফাইনালে রিয়াল মাদ্রিদের বিপক্ষে প্রথম লেগে ১৫ গজ দূর থেকে শট নিয়ে করেন গোল, দ্বিতীয় লেগে ম্যাচ উইনিং গোলে করেন এসিস্ট। বেস্ট এর একক আধিপত্যেই ৬ বারের ইউরোপিয়ান কাপ জেতা রিয়ালকে হারিয়ে ফাইনালে উঠে ম্যানচেস্টার ইউনাইটেড।
ফাইনালেও অপ্রতিরোধ্য ছিলেন বেস্ট। ৪-১ গোলে বেনফিকা কে হারানোর সেই ম্যাচে ম্যানচেস্টার ইউনাইটেড এর হয়ে প্রথম গোল আসে তার পা থেকেই।
১৯৬৭-৬৮ সিজনে ৫৩ ম্যাচ খেলে ৩২ গোল করেন বেস্ট। এরকম পারফরম্যান্স এর পুরস্কারস্বরূপ ১৯৬৮ সালের সেরা ইউরোপিয়ান ফুটবলার নির্বাচিত হোন বেস্ট। ড্রাগান জালিচ এবং বেকেনবাওয়ারকে পেছনে ফেলে জিতে নেন ব্যালন ডি অর।
এরপরের সিজনে ছন্দপতন ঘটে ইউনাইটেড এর। নতুন প্লেয়ারগুলো আশানুরূপ পারফর্ম না করায় গত সিজনের লীগ রানার্সআপ ইউনাইটেড কে সিজন শেষ করতে হয় ১১ নাম্বারে থেকে। তবে ইউনাইটেড এর এমন বাজে সিজনেও উজ্জ্বল ছিলেন বেস্ট। সব ধরণের প্রতিযোগিতা মিলিয়ে সেই সিজনে বেস্ট ৫৫ ম্যাচে ২২ গোল করেন। তবে টিমের বাকিদের পারফরম্যান্সে বেস্ট এতোটাই হতাশ ছিলেন যে একদম প্রকাশ্যেই বলে ফেলেন, " এই দলকে যেন আমি একাই টানছি।"
১৯৬৭-৬৮ মৌসুমের পর ইউনাইটেড এর হয়ে আর কোনো ট্রফি জেতা হয়নি বেস্টের। তবে প্রতি সিজনেই নিজের ইন্ডিভিজুয়াল পারফরম্যান্স দিয়ে ইউনাইটেড কে একা টেনে নিয়ে যাচ্ছিলেন তিনি। ১৯৬৮-৬৯ মৌসুমে ২৩ গোলের পর এর পরের মৌসুমে ৪৮ ম্যাচে ২১ গোল করেন। তবে তখন থেকেই মাঠে নিজের আচরণ এবং মাঠের বাইরে নিজের কাজের জন্য সমালোচিত হওয়া শুরু হোন বেস্ট। মাঠের মধ্যে বাজে আচরণের জন্য তাকে এফএ এর পক্ষ থেকে করা হয় জরিমানা, এমনকি এক ইংলিশ নায়িকার সাথে ছুটি কাটানোর জন্য ট্রেনিং মিস করায় ম্যানচেস্টার ইউনাইটেডও তাকে জরিমানা করে। ১৯৭১-৭২ মৌসুমই হয়তো বেস্টের ক্যারিয়ারের সর্বশেষ বেস্ট সুলভ মৌসুম ছিল। সেই সিজনে বেস্ট ৫৩ ম্যাচে ২৬ গোল করে টানা ষষ্ঠ মৌসুমের জন্য ম্যানচেস্টার ইউনাইটেড এর সর্বোচ্চ গোলদাতা হোন।
ম্যানচেস্টার ইউনাইটেড এর বাজে ফর্মের জন্য হোক অথবা মাঠের বাইরে খামখেয়ালি লাইফস্টাইলের জন্য হোক, ফুটবলের উপর থেকে বেস্ট এর মনোযোগ যে হারিয়ে যাচ্ছিল তার প্রমাণ তিনি দেন ১৯৭২ সালে মাত্র ২৭ বছর বয়সে আকস্মিকভাবে অবসরের ঘোষণা দিয়ে। যদিও অবসরের ঘোষণা দেয়ার কিছুদিন পরই অবসর ভেঙে আবার ম্যানচেস্টার ইউনাইটেড এর হয়ে মাঠে নামেন, তবে ফুটবলের প্রতি তার যে একদমই মনোযোগ ছিল না, তিনি নিজেকে হারিয়ে খুঁজছিলেন সেটি তার মাঠের পারফরম্যান্সই বলে দিচ্ছিল। আগের মৌসুমে ২৬ গোল করা বেস্ট এই মৌসুমে ২৩ ম্যাচ খেলে মাত্র ৬ গোল করেন।
যদিও সেটি আরো একটি ট্রফিলেস মৌসুম ছিল ইউনাইটেড এর জন্য, তবে এর আগের মৌসুমগুলোতে ইউনাইটেড কোনো শিরোপা না জিততে পারলেও বেস্ট এর পারফরম্যান্স মুগ্ধতা ছড়াতো সবার মাঝে, মুগ্ধ করতো সব দর্শককে। সেই মৌসুমে বেস্ট যেন বারবার নিজেই নিজেকে নিজের মাঝে খুঁজছিলেন। ১৯৭৪ সালের ১ জানুয়ারি বেস্ট সর্বশেষ ইউনাইটেড এর হয়ে মাঠে নামেন।
একের পর এক নিয়ম পরিপন্থী কাজ করায় এবং দলের ট্রেনিং সেশন মিস করতে থাকায় তৎকালীন ইউনাইটেড ম্যানেজার টমি ডোচার্টি বাধ্য হোন তাকে ড্রপ করায়। ১৯৭৩-৭৪ মৌসুম শেষে ম্যানচেস্টার ইউনাইটেড রেলিগেট হয়ে যায় দ্বিতীয় ডিভিশনে, ফলে ক্লাব ছাড়েন জর্জ বেস্ট। ১১ বছরের ইউনাইটেড ক্যারিয়ারে জর্জ বেস্ট ৪৭০ ম্যাচ খেলে ১৭৯ গোল করেন, জিতেন ৫ টি ট্রফি।
ইংল্যান্ড এর বাইরে বেস্ট এর প্রথম গন্তব্য ছিল দক্ষিণ আফ্রিকা। দক্ষিণ আফ্রিকান ক্লাব জেউইশ গিল্ড এর হয়ে বেস্ট খেলেছিলেন মাত্র ৫ ম্যাচ, তবে এক জর্জ বেস্টকে খেলতে দেখার জন্য স্টেডিয়ামে ভীড় জমিয়েছিল হাজার হাজার দর্শক। ইংল্যান্ড থেকে বেরোলেও বিতর্ক থেকে নিজেকে বের করতে পারেননি বেস্ট। সেখানে গিয়েও একের পর এক ট্রেনিং সেশন মিস করতেন তিনি, ফলে দক্ষিণ আফ্রিকায় দীর্ঘস্থায়ী হতে পারেননি।
কয়েক মাস পরেই ফের ইংলিশ ফুটবলে প্রত্যাবর্তন বেস্ট এর, কিছু সময়ের জন্য খেলেন চতুর্থ বিভাগের ক্লাব স্টকপোর্ট কাউন্টির হয়ে। সেখান থেকে আইরিশ লীগের ক্লাব কর্ক শেল্টিকে যোগ দেন তিনি। বেস্টের ব্যর্থতার গল্প সেখানেও অবিরত থাকে, যে কয়টি ম্যাচ তাদের হয়ে খেলেছেন, গোল তো পাননি বরং প্রত্যাশা মতো খেলতেও পারেননি তিনি।
ম্যানচেস্টার ইউনাইটেড ছাড়ার পর বেস্ট যে ক্লাবেই গিয়েছেন, ব্যর্থ হয়েছেন। একের পর এক ব্যর্থতার গল্প রচনা করতে করতে ততদিনে বেস্ট এর বয়স ৩০ ছুঁয়ে ফেলে। তাই এবার ভাগ্য পরিবর্তনের জন্য বেস্ট পাড়ি জমান ইউরোপের বাইরে, যোগ দেন আমেরিকান ক্লাব লস এঞ্জেলেস এজটিকসে। সেখানে গিয়ে নিজেকে কিছুটা হলেও ফিরে পেতে শুরু করেন তিনি। মার্কিন ক্লাব এজটেকস এর হয়ে ২৩ ম্যাচে ১৫ গোল করার পর বেস্ট এর মাঝে পুনরায় আত্মবিশ্বাস জাগে তিনি ইউরোপের ফুটবলে পুনরায় মানিয়ে নিতে পারবেন, তাই এরপর যোগ দেন ইংলিশ ক্লাব ফুলহামে।
ফুলহাম তখন দ্বিতীয় ডিভিশনে খেলতো। ৩১ বছর বয়সী বেস্ট তার গতি হারিয়ে ফেললেও তার পায়ের স্কিল তখনো কিছুটা হলেও ছিল, এই আত্মবিশ্বাসই তাকে ইংল্যান্ডে দ্বিতীয়বারের মতো প্রত্যাবর্তন করার অনুপ্রেরণা জাগায়। ফুলহামের হয়ে দুই মৌসুমে ৪৩ ম্যাচ খেলে ৮ গোল করলেও সেখানেও সমালোচনার জন্ম দেন তিনি। ফুলহামের হয়ে এক ম্যাচে মাঠের মধ্যে নিজের টিমমেটকে ইচ্ছাকৃতভাবে ট্যাকল করায় ক্লাবের পক্ষ থেকে তাকে পেতে হয় শাস্তি।
ফুলহাম থেকে আবারও আমেরিকায় পাড়ি জমান বেস্ট, প্রথম আমেরিকান ক্লাব এজটেকস এর হয়েই খেলেন আরেক সিজন। প্রথম সিজনের মতো পরের সিজনেও এজটেকস এর হয়ে উজ্জ্বল ছিলেন তিনি, সেবার তিনি জিতে নেন লীগসেরা মিডফিল্ডারের পুরস্কার। পরের মৌসুম আরেক আমেরিকান ক্লাব ফর্ট লডেরডাইল স্ট্রাইক এ এক মৌসুম খেলার পর আবারও যুক্তরাজ্যে ফিরে আসেন বেস্ট। প্রিমিয়ারশীপ থেকে রেলিগেশনের মুখে থাকা স্কটিশ ক্লাব হিবেরনিয়ান বেস্ট কে "পে পার প্লে" চুক্তিতে দলে ভেড়ায়। যদিও বেস্ট তাদের রেলিগেশন এড়াতে ব্যর্থ হয়, ১৭ ম্যাচে মাত্র ৩ গোল করে তবে বেস্ট এর উপস্থিতি প্রথম কয়েক ম্যাচে দর্শকদের মাঠে এসে খেলা দেখাতে উদ্বুদ্ধ করে। এমনকি বেস্ট আসার পর প্রথম কয়েক ম্যাচে দর্শক সংখ্যা সাধারণ সময়ের চেয়ে চারগুণ বৃদ্ধি পেয়েছিল। তবে ক্যারিয়ারের ক্রান্তিলগ্নে এসেও বিতর্ক এবং সমালোচনা থেকে সরে আসতে পারেননি তিনি, নিয়ম ভেঙেছিলেন হিবেরনিয়ানের হয়ে খেলার সময়েও। হিবেরনিয়ানে যে সময়ে তিনি খেলতেন, তখন ফরাসি রাগবি দল এবার স্কটল্যান্ডে এসেছিল। তিনি ফরাসি রাগবি দলের সাথে মদপানের আসর বসান। ফলে তৎক্ষণাৎভাবেই তাকে বরখাস্ত করে ক্লাব কর্তৃপক্ষ।
হিবেরনিয়ান থেকে বেস্ট পুনরায় পাড়ি জমান আমেরিকায়, এবার খেলেন সান জোসে আর্থকুয়েক এর হয়ে। আমেরিকান ফুটবলে আবারও সফলতার দেখা পান তিনি, ৩৪ বছর বয়সী বেস্ট সান জোসের হয়ে এক বছরে ৫৬ ম্যাচ খেলে করেন ২১ গোল।
১৯৮২ সালে হংকং এর দুই ফুটবল ক্লাব সি বি এবং হং কং রেঞ্জার্স এর হয়ে অতিথি প্লেয়ার হিসেবে ৩ টি ম্যাচ খেলেন বেস্ট। ততদিনে বেস্টের অর্থনৈতিক অবস্থা এত বেশি বাজে হয়ে যায় যে হংকং এ এক ম্যাচে ২০ মিনিট খেলে যে অর্থ পান তিনি, সেটি দিয়ে তিনি তার একটি ইনকাম ট্যাক্স পরিশোধ করেন।
১৯৮৩ সালে তৃতীয় বিভাগে খেলা ইংলিশ ক্লাব বোর্নমাউথ তাকে দলে ভেড়ায়। বোর্নমাউথের হয়ে ৫ ম্যাচ খেলার পর সেই বছরই ৩৭ বছর বয়সী বেস্ট তার দীর্ঘ ২০ বছরের প্রফেশনাল ফুটবল ক্যারিয়ারের ইতি টানেন।
আন্তর্জাতিক পর্যায়ে বেস্ট নর্দান আয়ারল্যান্ড জাতীয় দলের প্রতিনিধিত্ব করেন। ১৯৬৪ থেকে ১৯৭৭ এই ১৩ বছরে বেস্ট নর্দান আয়ারল্যান্ডের হয়ে ৩৭ ম্যাচে ৯ গোল করেন।
পেলে, ম্যারাডোনা, ক্রুইফ সবাই বেস্ট এর প্রশংসায় পঞ্চমুখ হয়েছেন। হয়তো মাঠের বাইরে বেস্ট নিজেকে নিয়ন্ত্রণ করতে পারলে মাঠের বেস্টের গল্প হতে পারতো আরো সমৃদ্ধ। পুরো দুনিয়া তাকে যেমনই ভাবুক, নর্দান আইরিশদের কাছে তিনি সর্বকালের সেরা। কোনো তর্ক ছাড়াই তাকে সর্বকালের সেরা নর্দান আইরিশ ফুটবলার মনে হয়, তবে নর্দান আয়ারল্যান্ডবাসী বেস্টকে সর্বকালের সেরা ফুটবলার মনে করেন। "Maradona good, Pele better, George BEST" এজন্যই বেলফাস্টের মানুষের মুখে এখনো এই উক্তিটি প্রচলিত।
- 0 মন্তব্য