স্বপ্ন ছাড়ানো জয়...
পোস্টটি ২৮২৫ বার পঠিত হয়েছেভেন্যুটা হয়ত বেঙ্গালুরু না, কিন্তু দিল্লিটাতো সেই ভারতেই! আবারো সেই মাহমুদুল্লাহ, মুশফিক! ইতিহাস কখনো কখনো এমনভাবে প্রতিদান দেয়,তখন সেটাকে আর বাস্তব বলে মনে হয় কিভাবে! বাংলাদেশের দিল্লি জয়ে ছয়দিনের নরকবাস শেষে যেন স্বর্গোদ্যানের দেখা পেল ষোল কোটি মানুষ, বিশ্বাস ফিরিয়ে আনার আহবানে কি দারুনভাবেইনা সাড়া দিল গোটা দল! অবিশ্বাস্য এক জয়, তাঁর থেকেও অবিশ্বাস্য যেই ব্র্যান্ডের ক্রিকেটটা খেলেছি আমরা। পুরোদস্তুর ক্লিনিক্যাল ক্রিকেটের ফসল ওঁদের বিপক্ষে টিটোয়েন্টি জয়, আহত বাঘের আক্রমণ কতটা ভয়ংকর হয়, সেটা নিশ্চয়ই টের পেয়ে গিয়েছে দুইশ কোটির ভারত!
বাংলাদেশের ক্রিকেটে কখন কি হবে, সেটা বোঝা বড্ড কঠিন! সাকিবকে ছাড়াই এভাবে জিতে যাবে দল, সেটা অনুমান করাই ছিল বেশ কঠিন! কিন্তু সেখান থেকেই ক্রিকেটাররা বিশ্বাস করেছেন, জয়টাকে ছিনিয়ে এনেছেন। সাকিবকে ছাড়া প্রথম ম্যাচেই জয়, এক বছর কি হবে সেই দুশ্চিন্তাটা একটু হলেওতো কমবে!
বেঙ্গালুরু বাংলাদেশ ক্রিকেটের চিরন্তন কান্নার নামই হয়ে থাকবে, বছর ঘুরে সেই আফসোসগুলো আরো বেড়েই চলেছে কখনো দুবাইতে, কখনো এজবাস্টনে কিংবা কলম্বোতে। এই একটা জয়ের মাহাত্ম্য তাই অনেক বেশি, ভারতের মাটিতে ভারতীয় অহমকে টেনে হিঁচড়ে যেভাবে মাটিতে নামিয়ে আনল ১১ বাঘের দল, সেটা আমাদের ক্রিকেটের জন্য খুব দরকার ছিল৷ যেই পরিস্থিতি মোকাবেলা করতে হয়েছে এই দলটাকে গত কয়েকদিনে, দলের সেরা সাকিবকে ছাড়া দল জেতার বিশ্বাসটাই যে করেছে সেটাই অনেক বড় প্রাপ্তি। এই বিশ্বাসের ফসলটাই দেশের টিটোয়েন্টি ইতিহাসের অন্যতম সেরা জয়টা, হয়ত একটা নতুন পথের সন্ধানই এনে দিবে আজকের ভারতবধ।
টস থেকে ম্যাচের শেষ বলটা, পুরো মোমেন্টামটাই আজকের যেন বাংলাদেশের হয়ে খেলেছে। শুরুতেই শফিউল দারুন এক ইন্সুইঙ্গারে রোহিত শর্মাকে ফিরিয়ে দিয়ে বধের সূচনা করেছেন, আর সেখানে দাঁড়িয়ে ভারতের জাত্যভিমানকে একেবারে তুলোধুনো করেছেন আমিনুল বিপ্লব নামের এক বাংলার বিপ্লবী সন্তান! একটা লেগস্পিনারের জন্য কতদিনের আক্ষেপইনা ছিল বাংলার ক্রিকেটের, সেই লেগি এসেই যেন রাজত্ব করা শুরু করে দিয়েছেন বাংলার ক্রিকেটে। পুরো কোটার বোলিংটা করার হয়ত সুযোগ হয়নি, কিন্তু ৩ ওভারে ২২ রান দিয়ে ২ উইকেট- নিজের কাজটা অবিশ্বাস্যরকমের ভালভাবেই করে রেখেছেন তিনি। মিড ওভার্সে এই জায়গাটাতে উইকেট না নেয়ার একটা দূর্বলতা ছিল বাংলাদেশের, সেই দূর্বলতা আজকে ঘুচিয়ে দিয়েছেন এসেই রাহুল আর খানিক বাদেই ভয়ংকর হয়ে উঠতে থাকা শ্রেয়াস আয়ারের উইকেটটা নিয়ে। বাংলাদেশের জয়ের ভিতটা ওখানেই গড়া হয়ে গিয়েছে, বাকি কাজটা মাহমুদুল্লাহর দারুন ক্যাপ্টেন্সি আর আফিফের দারুন ইকোনমিক্যাল বোলিংয়ে। আফিফ সাকিবের অভাবটা ঘুচিয়ে দিবেন কিছুটা হলেও, এই ভরসাটা রাখতে চাই। আজকে বোলিংয়ে এসেই দারুন চাপে রেখেছেন পান্ট আর ধাওয়ানকে, সাথে শিভাম দুবের উইকেটে ফ্লাইং ক্যাচ- ফ্যান্টাস্টিক ফ্রম হিম!
শেষ দুই ওভারটা অবশ্য ভয় ছাড়িয়ে দিয়েছিল, ১৩৫ এর আশেপাশের একটা লক্ষ্য যেখানে ছিল, সেখান থেকে ১৪৯ বেশ কঠিনই মনে হচ্ছিল। ঘরপোড়া গরু সিঁদুরে মেঘ দেখলেই ডরায়, আমরাইবা ব্যাতিক্রম হব কেন! কিন্তু আজকে যে বাংলাদেশের দিন! নাইম শেখ স্লো কিন্তু স্টেডি একটা শুরু এনে দিয়ে যান, লিটনের শুরুতেই ফিরে যাওয়ার পর যেটা সবচেয়ে বেশি দরকার ছিল। মাঝে দীপক চাহারের বলে দারুন এক ফ্লিকে স্কোয়ার লেগ দিয়ে নাইমের ছক্কাটা চোখ জুড়িয়ে দিয়ে যায়, কিন্তু হুট করে থেমে যাওয়াটা তাঁকে আক্ষেপে পোড়াবেই৷ সৌম্য স্লো উইকেটের সাথে মানিয়ে নিয়ে দারুন একটা ইনিংস খেলে দিয়ে গিয়েছেন, শুধু ফিনিশিংটা ছাড়া সবকিছুই বোধহয় করেছে সে!
কিন্তু নায়ক তো একজনই, সেই মুশফিকুর রহিম! অবশ্য আঠারোতম ওভারের তৃতীয় বলে যখন স্লগ সুইপটা আকাশে ভাসিয়ে দিলেন, তখন ক্ষনিকের জন্য হলেও হৃদস্পন্দনটা বোধহয় থেমেই গিয়েছিল! কিন্তু আজকে আমাদের আফসোসের দিন নয়, ক্যাচ মিসে চার, ওখানেই আমাদের পকেটে এসে পড়ে ম্যাচটা! কি অবিশ্বাস্যভাবেইনা ভারতকে অতীত কষ্টগুলো ফিরিয়ে দিলেন লিটল জিনিয়াস, ৪৩ বলে ৬০ রানের ইনিংসটা ২০০ কোটির অহংকারকে মাটিয়ে নামিয়ে লুটোপুটি খাওয়ালো!
মুশফিকের সঙ্গী সেই মাহমুদুল্লাহ, কিন্তু বেঙ্গালুরু ফিরে আসলোনা দিল্লিতে, দিল্লি হয়ে রইল নতুন ইতিহাস। দারুন প্লেসমেন্টে এক্সট্রা কাভার দিয়ে যখন চাহালকে বাউন্ডারিতে পাঠিয়ে উৎসবের সূচনা করলেন রিয়াদ, তখনোতো চারিদিকে অবিশ্বাসের ঘোর!
সেই অবিশ্বাসের ঘোরটা কেটে যায় পরের ওভারে, বাংলার স্বপ্নের নায়ক হয়ে সেটা কাটিয়ে দেন বেঙ্গালুরুর খলনায়ক, দিল্লির মহানায়ক! তিন নাম্বার বলে দারুন পুলে লংলেগ দিয়ে চার, পরের বলটা স্কুপে পাঠালেন ফাইন লেগ দিয়ে! অবিশ্বাসের ঘোরটা আর ভালভাবে কেটে যায় পরের দুই বলেই পয়েন্ট দিয়ে বাউন্ডারিতে, কিন্তু ২ ফ্রম ৩ তখনো যে মনের ভেতরে!
এবার আর ভুল করেন না মাহমুদুল্লাহ, শেষ ওভারের ওয়াইড লং অন দিয়ে যখন ওড়ালেন, তখনো একটা ভয় ছিল! কিন্তু পরক্ষনেই যখন সেটা সীমানার ওপারে, তখন সবকিছুই যেন মোহময়, স্বপ্নের থেকেও সুন্দর!
ইতিহাসের অন্যতম সেরা জয়, সেটা আবার ইতিহাসের সেরা নায়ককে ছাড়াই! রাজকোট, উই আর কামিং!
সাকিবের ব্যানের ষষ্ঠ দিন, আরো ৩৫৯ দিন...
- 0 মন্তব্য