• ফুটবল

বিদায় ফুটবল ঈশ্বর

পোস্টটি ৯০৫ বার পঠিত হয়েছে
'আউটফিল্ড’ একটি কমিউনিটি ব্লগ। এখানে প্রকাশিত সব লেখা-মন্তব্য-ছবি-ভিডিও প্যাভিলিয়ন পাঠকরা স্বতঃস্ফূর্তভাবে নিজ উদ্যোগে করে থাকেন; তাই এসবের সম্পূর্ণ স্বত্ব এবং দায়দায়িত্ব লেখক ও মন্তব্য প্রকাশকারীর নিজের। কোনো ব্যবহারকারীর মতামত বা ছবি-ভিডিওর কপিরাইট লঙ্ঘনের জন্য প্যাভিলিয়ন কর্তৃপক্ষ দায়ী থাকবে না। ব্লগের নীতিমালা ভঙ্গ হলেই কেবল সেই অনুযায়ী কর্তৃপক্ষ ব্যবস্থা নিবেন।

দিয়েগো ম্যারাডোনা - রহস্যময় এক চরিত্র। মাঠের ফুটবলে যেমন দুর্দান্ত, মাঠের বাইরে যেন ততটাই ছন্নছাড়া। ডোপ টেস্টে পজিটিভ হওয়া, ট্যাক্স ফাঁকি দেওয়া, বিশৃঙ্খল জীবনযাপন এসবকিছুর জন্য হয়ত ম্যারাডোনাকে আপনি অপছন্দ করতেই পারেন। কিন্তু এতকিছুর পরেও ম্যারাডোনাকে আপনি বাতিলের খাতায় ফেলে দিতে পারবেন না। ম্যারাডোনা একটা প্রজন্মের কাছে ফুটবলের সেরা নক্ষত্র। ম্যারাডোনা বিশ্বজয়ী তারকা - কোনো সন্দেহ দ্বিধাদ্বন্দ্বের লেশমাত্র নেই।

বুয়েনস এইরেসের বস্তি থেকে ম্যারাডোনার উঠে আসাটাই ছিল একটা রূপকথার গল্প। এরপরে ৮৬ এর সেই রূপকথার বিশ্বকাপ জয়, হ্যান্ড অফ গড কিংবা একের পর এক ডিফেন্ডারকে কাটিয়ে শতাব্দীর সেরা গোল - এইসবকিছুই ম্যারাডোনাকে নিয়ে গেছে অনন্য উচ্চতায়। একটা প্রজন্মের কাছে ফুটবল মানেই যেন ম্যারাডোনা। ৯০ এর দশকের ফুটবল দেখে বড় হওয়া যে কাউকে সেরা ফুটবলারের কথা জিজ্ঞাসা করলেই চলে আসে ম্যারাডোনার কথা। তাকে খেলতে দেখেই একটা প্রজন্ম হয়ে গেছে আর্জেন্টিনার সমর্থক। ম্যারাডোনা যে ভক্তদের কতটা আপন, কতটা কাছের সেটা আর কি আর বলার অপেক্ষা রাখে?

তবে পথচলা সর্বদা মসৃণ ছিল না। বার্সায় গিয়ে মন টেকাতে পারেন নি ম্যারাডোনা। কিন্তু সেই ম্যারাডোনাই আবার রাজা হয়ে গেছেন নেপলসে এসে। ইতালির দক্ষিণের এক গেঁয়ো শহর নেপলস, যার নাম শুনলেই তুচ্ছ তাচ্ছিল্য করত তুরিন, মিলানের লোকজন। সেই নেপলসের ক্লাব নাপোলি ম্যারাডোনাকে নিয়ে এলো দলবদলের বিশ্বরেকর্ড গড়ে। ম্যারাডোনাকে অভ্যর্থনা জানাতে স্তাদিও সান পাওলোতে ছিল দর্শকের ঢল। প্রায় ৮৫ হাজার মানুষ চলে এসেছিলেন ম্যারাডোনাকে স্বাগত জানাতে।

পরবর্তীতে সেই নাপোলকেই জিতিয়েছিলেন দুইটি সিরি আ। বার্সায় মন বসাতে না পারলেও নেপলস তাকে দিয়েছে দু হাত ভরে। এতটাই যে নেপলসে গিয়ে রাস্তায়, রাস্তায় ম্যারাডোনার ছবি আর প্রতিকৃতি দেখে আপনি অবাক হতে বাধ্য। অচেনা, অজানা একদেশে এতটা অকৃত্রিম ভালোবাসা কজন ফুটবলার ই বা পেয়েছেন? ম্যারাডোনার সম্মানে ১০ নম্বর জার্সিটা চিরতরে তুলে রেখেছেন নাপোলি ফুটবল ক্লাব। ম্যারাডোনার মৃত্যুর খবর শুনে নাপোলির স্টেডিয়ামের নামও পরিবর্তন করে রাখা হচ্ছে ম্যারাডোনারই নামে। এই নেপলসের রাজা, নেপলসের ঈশ্বর ম্যারাডোনার নাপোলি থেকে বিদায়টা সুখকর ছিল না। ডোপিং, নারী কেলেঙ্কারিতে নিষিদ্ধ হওয়ার পর ইতালি ছেড়ে ফিরে যান নিজ দেশে। নাপোলি এখনো তাকে রাজার আসনেই রাখে, কিন্তু অমন বিদায় কি চেয়েছিলেন ম্যারাডোনা? আবার ভাগ্যের কী পরিহাস, মাথার উপর ট্যাক্স ফাঁকির দন্ড ঝোলায় আর কখনোই ফেরা হয় নি ইতালিতে।

মানুষটা ম্যারাডোনা বলেই হয়ত এতশত আকর্ষণীয়তায় ভরপুর তার জীবন। ক্যারিয়ারের শেষে কোচিংয়েও এসেছিলেন। দেশকে নিয়ে বিশ্বকাপে গিয়েছিলেন। সেখানে অবশ্য দেখাতে পারেন নি কিছুই। যেটুকু দেখানোর সেটা তাবৎ দুনিয়া দেখে ফেলেছে তার আগেই। এতকিছুর পরেও ম্যারাডোনা ঈশ্বর হয়েছেন, মানুষ তাকে আপন বানিয়ে নিয়েছে, স্থান পেয়েছেন ভক্তদের হৃদয়ে।

ম্যারাডোনা নিষিদ্ধ হয়েছেন, আবার ফিরেও এসেছেন। ম্যারাডোনা হেরে গিয়ে সমালোচিত হয়েছেন, আবার জিতে গিয়ে মানুষের হৃদয়ের রাজাও বনে গেছেন। ভক্তদের হাসিয়েছেন, কাঁদিয়েছেন, আনন্দে ভাসিয়েছেন। কিন্তু এবার চিরতরে কাঁদিয়ে চলে গেলেন না ফেরার দেশে।

দিয়েগো আরমান্দো ম্যারাডোনা- আপনাকে অভিবাদন। ফুটবল ভক্তরা আপনাকে কখনোই ভুলবে না।