বিসিবি বসের কথাবার্তা: সাইকোলজিক্যাল ডিফেন্স মেকানিজম না কি চতুরতা?
পোস্টটি ১৬৩৬ বার পঠিত হয়েছেসাইকোলজিক্যাল ডিফেন্স মেকানিজম নামক ব্যাপারটা কী? ডিফেন্স মেকানিজম মানুষের এমন একটি সহজাত আচরণ যা মানুষ করে থাকে নিজের অপছন্দনীয় কোনো কিছু থেকে নিজেকে দূরে রাখতে, নিজেকে মুক্ত রাখতে, নিজেকে দোষী না করতে। গত কিছুদিন যাবৎ সোশ্যাল মিডিয়াতে হৈচৈ হচ্ছে বিসিবি প্রেসিডেন্ট নাজমুল হাসান পাপনের কিছু কথা নিয়ে। হৈচৈ হওয়ারই কথা। এক প্রকার নিজের তৈরি স্কোয়াড, নিজের তৈরি ক্যাপ্টেন যখন বিশ্বকাপ মঞ্চে খারাপ করছে তখন বিশ্ব আসর চলাকালীনই তাদের নিয়ে সমালোচনায় মাতছেন প্রেসিডেন্ট সাহেব। তবে তার এই মাতামাতির কারণ কী? এটা কি শুধুই সাইকোলজিক্যাল ডিফেন্স মেকানিজম না কি তিনি এসব করছেন সব জেনে বুঝে?
সাইকোলজিক্যাল ডিফেন্স মেকানিজম আসলে কী তা নিয়ে সামান্য ধারণা দেয়ার চেষ্টা করেছি একদম শুরুতেই। মানুষের মাঝে অনেক গুলো ডিফেন্স মেকানিজম কাজ করে, তার মধ্য থেকে দুটি বিষয় নিয়ে একটু আলোচনা করব।
প্রথমটি হচ্ছে Denial। নিজেকে খুশি রাখতে গিয়ে বাস্তবতাকে সরাসরি অস্বীকার করে ফেলাই হচ্ছে Denial। বাংলাদেশ দলের প্রত্যেকটা সিদ্ধান্তেই যে বিসিবি প্রেসিডেন্টের প্রভাব থাকে তা সবারই জানা, তিনি নিজেই অকপটে স্বীকার করেন এসব। এটা বলাই যায় যে বাংলাদেশের বিশ্বকাপ স্কোয়াড সেলেকশন, বিপ্লবকে ফিরিয়ে আনা, প্রথম ম্যাচ পর সৌম্যর জায়গায় নাইমকে খেলানো, টি২০ ক্যাপ্টেন হিসেবে মাহমুদুল্লাহ রিয়াদকে সেলেক্ট করা- এই প্রত্যেকটা সিদ্ধান্তই আসলে নাজমুল হাসান পাপনেরই। এই প্রত্যেকটা সিদ্ধান্ত কি ঠিক ছিলো? হয়তো ছিলো। কিন্তু এই দল নিয়ে আমরা বিশ্বমঞ্চে ভালো করতে পারবো? এই যে পারবো না- এই ব্যাপারটাই বাস্তবতা। এটাকে অস্বীকার করে নিজের দোষ ঢাকাটাই Denial Defense Mechanism এর একটা উদাহারণ হতে পারে।
দ্বিতীয়টি হচ্ছে Projection; সোজা কথায় বলতে গেলে “নিজের দোষ অন্যের উপর চাপানো”, যে কাজটা বিসিবি বস শুরু থেকেই করে আসছেন। তার সিদ্ধান্তে দল ভালো করলে সব ক্রেডিট তার আর খারাপ করলে সব দোষ দলের, কোচের এবং অন্যান্যদের; তার কোনো দোষ নেই। বিশ্বকাপের মাঝপথে দলের অধিনায়ক পরিবর্তনের হুমকি, সাকিব-রিয়াদ-মুশফিকের প্রথম ম্যাচের ব্যাটিং এপ্রোচ, রিয়াদদের কমিটমেন্ট এসব নিয়ে প্রশ্ন তুলে বসলেন মিডিয়ার সামনে। প্রত্যেকটা প্রশ্ন যৌক্তিক, প্রত্যেকটা কথা যৌক্তিক। তবে তার এই কথা গুলো ইভেন্ট চলাকালীন কেন? এমনকি বিশ্বকাপের আগে তামিমের নেয়া সিদ্ধান্তও তিনি আগে পরে উল্লেখ না করে বিশ্বকাপ চলাকালীন উল্লেখ করলেন, সাথে আরও এক ক্রিকেটার খেলতে চাননি এমন কথাও। এসবের পেছনে আসলে কী?
এখানে দুটো বিষয় থাকতে পারে। এক. এটা আসলেই Projection যা মানুষ করে থাকে নিজের অজান্তে। আর দুই. এখানে আসলে কাজ করছে নিজেকে বাঁচিয়ে নেয়ার দুষ্টবুদ্ধি।
বাংলাদেশ দলের এমন করুণ অবস্থার পেছনে নাজমুল হাসান পাপনের দায় যে অনেক বেশি, সেটা সবারই জানা। ঘরোয়া ক্রিকেটের বাজে অবস্থা, অনূর্ধ্ব ১৯ এর তারকা ক্রিকেটারদের ঠিকভাবে গড়ে তুলতে না পারা, এতো বছরেও সাকিব, মুশফিকদের জায়গায় খেলার মতো প্লেয়ার তৈরি করতে না পারা, লিটন-সৌম্য টানা ব্যর্থ হওয়ার পরও তাদের জায়গায় অন্য কাউকে আনতে না পারা, গামিনী ডি সিলভাকে জামাই আদর করে এতো বছর রেখে দেয়াসহ আরও অসংখ্য দোষই দেয়া যাবে বিসিবি প্রেসিডেন্টকে। তার নিজের সেলেক্ট করা দলের এই বাজে অবস্থা দেখে সমর্থকরা যে তাকে মাথায় তুলে নাচবে না- তা তিনি জানেন ভালো করেই। তাই হয়তো বাফুফের কাজী সালাউদ্দিনের মতো নাজমুল হাসান পাপনও সমর্থকদের বোকা বানানোর পন্থাই অবলম্বন করলেন।
স্রোতে গা ভাসিয়ে দেয়া এদেশের সমর্থক গোষ্ঠী যখন ক্রিকেটারদের যেই দোষগুলো নিয়ে কথা বলছে, ঠিক তখনই সেই দোষগুলো নিয়ে নিজে কথা বলে নিজেকে হয়তো রাখতে চাচ্ছেন সেফ জোনে! হয়তো এমনটাই হচ্ছে, তবে নিশ্চিত করে বলা সম্ভব না। কেন সম্ভব না? কারণটা স্বাভাবিক, মাঝে মধ্যেই অনেকেরই মনে হয় নাজমুল হাসান পাপন আসলে এতোটাও চতুর না- চতুরতা থাকলে দলকে কিভাবে নিয়ন্ত্রণ করে তা মিডিয়ায় এসে বারবার অকপটে স্বীকার করতেন না। হয়তো এসব তিনি না জেনে বুঝেই করছেন, হয়তো এসবই হচ্ছে Psychological Defense Mechanism এর কারণে। তবে যে কারণেই হোক না কেন- উভয় ক্ষেত্রেই লক্ষ্য এবং প্রক্রিয়া দুটোই এক। লক্ষ্যটা নিজেকে দোষমুক্ত রাখা আর প্রক্রিয়াটা অন্যের ঘাড়ে দোষ চাপানো। পার্থক্যটা কেবল জেনে বুঝে করা আর না বুঝেই সহজাত আচরণ করা।
- 0 মন্তব্য