• ক্রিকেট

টিটুয়েন্টি বিশ্বকাপ ২০২২ঃ নবজাগরণে সেরা বিশ্বকাপের স্বপ্ন

পোস্টটি ৭১৯ বার পঠিত হয়েছে
'আউটফিল্ড’ একটি কমিউনিটি ব্লগ। এখানে প্রকাশিত সব লেখা-মন্তব্য-ছবি-ভিডিও প্যাভিলিয়ন পাঠকরা স্বতঃস্ফূর্তভাবে নিজ উদ্যোগে করে থাকেন; তাই এসবের সম্পূর্ণ স্বত্ব এবং দায়দায়িত্ব লেখক ও মন্তব্য প্রকাশকারীর নিজের। কোনো ব্যবহারকারীর মতামত বা ছবি-ভিডিওর কপিরাইট লঙ্ঘনের জন্য প্যাভিলিয়ন কর্তৃপক্ষ দায়ী থাকবে না। ব্লগের নীতিমালা ভঙ্গ হলেই কেবল সেই অনুযায়ী কর্তৃপক্ষ ব্যবস্থা নিবেন।

অবশেষে আজকে থেকে বাংলাদেশের টিটুয়েন্টি বিশ্বকাপ মিশন শুরু।

মোটামুটি বেসিক জিনিসগুলো ঠিক থাকলেও এটাই এখন পর্যন্ত বাংলাদেশের ইতিহাসের সেরা টিটুয়েন্টি বিশ্বকাপ হবার কথা।

দলের রিসোর্স আছে, মেন্টালিটি আছে, তবে 'ইম্প্যাক্ট, ইন্টেন্ট' কার্যকর করতে গেলে কিছু কিছু ব্যাপার আরেকটু ফাইন টিউনিং করতে হবে! এটা যদি কার্যকর করা যায় তাহলেও ভালো।

যেমন, দল এই ব্যাপারে অ্যাডামেন্ট যে তাঁরা শান্ত-সৌম্যকে ওপেনিং করাবে, লিটন ওয়ান ডাউনে নামবে। এখন শান্ত-সৌম্য যেন নিয়মিত ভালো করে সেই ব্যাপারে দোয়া করা ছাড়া অন্য কোন উপায় নাই।

শান্তর মধ্যে টিম ম্যানেজম্যান্ট সবসময় যেই স্পার্ক দেখতে পায়, সেই স্পার্ক সাধারণ দর্শক এখনও সেটা খুব একটা দেখে নাই। আজকে নেদারল্যান্ডের সাথে শুরুটা ভালোই করেছে। কোয়ালিটি বোলিংয়ের বিপক্ষে আমাদের সাধারণ দর্শক চোখ বলে যে সে খুব ভার্নারেবল।

শান্ত যদি এমন ফিক্সড ওপেনার হিসেবে না খেলতো তাহলেও আমি লিটনকে হয়তো তিনেই নামানোর পক্ষে থাকতাম। সাকিব চারেই খেলতো। তাঁরা স্পিন ভালো নেগোশিয়েট করতে পারে। তাই তাঁরা তিনে-চারে খেললেই এখন বেটার।

এখন বিভিন্ন স্ট্যাটিস্টিক্স বলে যে আফিফ স্পিনে সেরকম ভালো খেলেন নাই এখন পর্যন্ত। এমনকি ঘরোয়া পর্যায়েও আফিফ স্পিন বলতে গেলে খেলেনই নাই, এমন স্ট্যাট আছে। সেট হতে একটু সময় নেন। আবার বিপিএল-এও আফিফ ওপেনিংয়ে ভালো করেছেন- সেই রেকর্ড আছে। সেসব বিবেচনায় আমি হয়তো আফিফ-সৌম্যকে ওপেনিং করাতে চাইতাম! তারপর লিটন, সাকিব, ইয়াসির, মোসাদ্দেকরা আসতেন। কিন্তু এখন যেহেতু শান্ত ওপেনিংয়েই ফিক্সড, তাই তাকে ধরে রেখেই আফিফকে পাঁচে খেলবেন। যদিও আফিফের স্পিনের রেকর্ড এখন পর্যন্ত ভালো না, কিন্তু সে স্পিন ভালো খেলতে পারে না, এইটা আবার আমি বিশ্বাস করি না। তাঁর টেকনিক সেটা বলে না।

এখন আফিফ-ইয়াসির-মোসাদ্দেকের ক্ষেত্রে একটা কথা বলা হয় যে তাঁরা নেমেই মারতে পারেন না, তাঁদের সেট হতে একটু সময় নেন। এটা আসলে সমস্যা। এই এক্সকিউজ দেবার উপায় নাই। টিটুয়েন্টি ক্রিকেটে যারা ৫-৬-৭ এ নামবেন, তাঁদের ক্ষেত্রে বেশিরভাগ দিনেই দলের আশাই থাকবে যে তাঁরা এসেই মারার চেষ্টা করবেন। সেট হতে খুব বেশি হলে ৩-৪ বল নিতে পারেন, এর বেশি না।

কারণ আপনি দলের টপ অর্ডারের কাছ থেকে আশা করবেন যেন তাঁরা ন্যূনতম ১২-১৩ ওভার পর্যন্ত খেলে দেয়। দলের রান যদি ১০ ওভারে ৭০/২ থাকে, তাহলেও শেষ ১০ ওভারে আপনার টার্গেট থাকবে আরও ১০০-১১০ করে রানটাকে ১৭০-১৮০ তে নিয়ে যাবার। অন্যান্য দলগুলো প্রতি ম্যাচে তাই করছে।

এখন যদি ৩/৪ উইকেট পাওয়ারপ্লে বা ৭,৮ ওভারের মধ্যে পড়ে যায়, তাহলে হয়তো দলের ৫, ৬, ৭ নাম্বারে যারা নামবেন যেমন আফিফ, ইয়াসির, মোসাদ্দেকেরা একটু সময় নিয়ে সেট হয়ে বিপর্যয় সামাল দিবেন। তারপর মারবেন।

কিন্তু সেটা তো আপনার আশা থাকবে না। আপনার আশা থাকবে ট্রাই সিরিজের বাংলাদেশ বনাম নিউ জিল্যান্ড ম্যাচের মতো। সাকিব-লিটন যেমন ধরে রেখে ১৫ ওভারে ১২৯ করলো, সেখান থেকে আফিফ, ইয়াসির, সোহানেরা সেরকম টানতে পারে নাই দেখে ২০ ওভারে রান হলো ১৭৩! অথচ রান হবার কথা ছিল ১৯০।

ভারত-পাকিস্তান ম্যাচে যেমন ২ উইকেট পড়ার পরে শান মাসুদ আর ইফতিখার ইনিংসটাকে ১২ ওভার পর্যন্ত টেনে নিয়ে গেলো। এরপর যারা আসবে তাঁদের কাজ এক্সেলারেট করার। সেখানে শাদাব আর হায়দার আলী লেজেগোবড়ে না করলে পাকিস্তানের রান হতো ১৭৫! শ্রীলংকা যেমন এই ব্যাপারটা মেইনটেইন করছে।

মিডল অর্ডারকে এই ব্যাপারে ফ্লেক্সিবল থাকতে হবে। বিপর্যয়ের দিনে একটু ধরে খেলতে হবে, আবার যেদিন প্ল্যাটফর্ম ভালো থাকবে, সেদিন কম বলে ওই ভালো প্ল্যাটফর্মকে কাজে লাগিয়ে বড় স্কোর করতে হবে! তাই আফিফ-ইয়াসির-মোসাদ্দেকদের ব্যাপারে সেট হতে সময় লাগে- এই ধরনের অজুহাত/যুক্তি টিটুয়েন্টিতে গ্রহণযোগ্য না।

যাই হোক, মিডল অর্ডারের পরে আসে বোলিং ডিপার্টমেন্ট! এখানে কিছু কথা বলার আছে। আপনি যদি একদম জেনুইন ৪ বোলার নিয়ে খেলেন তাহলে আসলে কিছু রিস্ক থেকেই যায়।

যেমন ট্রাই সিরিজে নিউ জিল্যান্ডের সাথে খেলায় বাংলাদেশ মূলত তিন পেসারের সাথে চার নাম্বার বোলার সাকিবের সাথে সৌম্য, মোসাদ্দেককে দিয়ে বাকি ৪ ওভার করাবে বলে ভেবেছিলো। এখন ওই ম্যাচে নিউ জিল্যান্ডের ব্যাটাররা সেট হয়ে গিয়েছিলো আসলে সৌম্য আর মোসাদ্দেকের চার ওভারেই। ওই ৪ ওভারে তাঁরা করে ৪৫ রান। কিন্তু রান দেবার চেয়েও ওই সময়টায় কনওয়েরা সেট হয়ে যায়।

মাঝে মাঝে পার্টটাইম বোলারদের বলে ব্যাটাররা রান না করলেও সেট হয়ে যায়! এরপর ভালো বোলারদের বলে চার-ছক্কা মারা শুরু করে! আপাতদৃষ্টিতে মনে হয়, পার্টটাইমার তো খারাপ করে নাই। উইকেট পায় নাই, কিন্তু ৪ ওভারে মাত্র ২৮ রান দিয়েছে। ওইদিকে মূল বোলার তো ৪ ওভারে ৪০ দিয়েছে! কিন্তু মূল বোলারের বলে শেষ ২ ওভারে ৩০ রান নেবার জন্য ব্যাটারকে সেট করে দিয়েছে ওই পার্টটাইমার।

এজন্যেই আমার কাছে মনে হয়, বোলিং ডিপার্টমেন্টে পাঁচজন নিয়মিত বোলারের পরে একজন সিক্সথ বোলার জরুরি। গতকালই যেমন পাকিস্তান দলে নেওয়াজকে দেয়া ছাড়া বাবরের হাতে উপায় ছিল না। যদি পাকিস্তানের হাতে হার্দিক পান্ডেয়ার মতো একজন থাকতো তাহলে বাবরকে চিন্তা করতে হতো না। ভারত যেমন আক্সার পাটেল ব্যর্থ হবার পরেও হাতে অপশন পেয়েছে।

এ জায়গায় বাংলাদেশ একজন বোলার কম নিয়ে খেলছে। অবশ্য উপায়ও নাই। বাংলাদেশের ব্যাটিং অর্ডার যেভাবে তাসের ঘরের মতো নিয়মিত ভেঙে পড়ে তাতে নিচের দিকে একজন বাড়তি ব্যাটার খেলানো ছাড়া ভরসা কীভাবে পাবে!

এই ভয়টা না পেলে চার পেসারের সাথে সাকিবকে ধরে বাকি ছয়জন ব্যাটারকে খেলানোই হতো আদর্শ! আবার একজন স্পিনার বেশি খেলালে সেখানে নাসুমকে ধরতে পারতো। অথবা মিরাজ আর মোসাদ্দেকের টিটুয়েন্টি বোলিংয়ে কিছু পার্থক্য আছেই। মিরাজ অবশ্যই বেটার বোলার। একদম পার্টটাইমার না। মিরাজকে ব্যাটার হিসেবেও ধরা যেতো শেষে।

পেসারদের মধ্যে তাসকিনকে নিয়ে খুব একটা চিন্তা করি না। মনের ভিতরে এখনও বিশ্বাস করি, সামর্থ্যের দিক থেকে মুস্তাফিজই বাংলাদেশের সেরা। কিন্তু তাঁর নিবেদন বা চেষ্টা এগুলো তো খুব ভালোভাবেই প্রশ্নবিদ্ধ। মুস্তাফিজ যদি তাঁর সেরাটা দিতে পারেন তাহলে তাসকিন-মুস্তাফিজ সাথে হাসান মাহমুদ/ইবাদত/শরীফুলদের নিয়ে পেস অ্যাটাকটা খুব ভালো হবে।

শেষ কথা, একাদশ যেমনই হোক, যারা খেলবে তাঁরা ভালো খেলুক! ব্যাটাররা ভালো করলে অনেক প্রশ্নই থাকবে না। সাকিব ২০১৯ এর অতিমানবীয় পারফরম্যান্স রিপিট না করতে পারলেও কাছাকাছি কিছু করুক।

আপাতত সাকিবের কথার সাথে তাল মিলিয়ে সেরা বিশ্বকাপের আশাই করি!

#T20WorldCup2022 #BangladeshCricket