• ফুটবল

থিয়াগো আলমাদা- দ্য নিউ মিডফিল্ড জেম অফ আর্জেন্টিনা

পোস্টটি ৫১৩ বার পঠিত হয়েছে
'আউটফিল্ড’ একটি কমিউনিটি ব্লগ। এখানে প্রকাশিত সব লেখা-মন্তব্য-ছবি-ভিডিও প্যাভিলিয়ন পাঠকরা স্বতঃস্ফূর্তভাবে নিজ উদ্যোগে করে থাকেন; তাই এসবের সম্পূর্ণ স্বত্ব এবং দায়দায়িত্ব লেখক ও মন্তব্য প্রকাশকারীর নিজের। কোনো ব্যবহারকারীর মতামত বা ছবি-ভিডিওর কপিরাইট লঙ্ঘনের জন্য প্যাভিলিয়ন কর্তৃপক্ষ দায়ী থাকবে না। ব্লগের নীতিমালা ভঙ্গ হলেই কেবল সেই অনুযায়ী কর্তৃপক্ষ ব্যবস্থা নিবেন।

সাম্প্রতিক সময়ে আলোচিত আর্জেন্টাইন খেলোয়াড়দের মধ্যে থিয়াগো আলমাদার নাম উপরের দিকেই থাকবে। ক্লাব ও জাতীয় দলের হয়ে দুরন্ত ফর্ম বজায় রাখতে পারলে আসন্ন সামার ট্রান্সফারে ইউরোপের বড় কোনো ক্লাবে মুভ করা হবে সময়ের ব্যাপার। মাত্র ২১ বছর বয়সী এই তারকা আর্জেন্টিনার উজ্জ্বল সম্ভাবনাময়দের একজন। বর্তমানে আর্জেন্টিনা দলের পাইপলাইনে বেশকিছু গতিশীল, আনপ্রেডিক্টেবল এবং আনপ্লেয়েবল মিডফিল্ডার রয়েছে। এই লেখায়  আমি আলমাদার খেলার টেকনিক্যাল দিকগুলোকে বিশদভাবে তুলে ধরার চেষ্টা করব যে কেন তাকে আর্জেন্টিনা মিডফিল্ডের এক্সাইটিং প্রসপেক্ট বলা হয়।

থিয়াগো আলমাদা আসলে কতটা ভালো??

প্রথম দেখায় আলমাদাকে অনেকেই দক্ষিণ আমেরিকার আরেকটি অসাধারণ প্রতিভা হিসেবে বিবেচনা করেন। আলমাদা বুয়েন্স এইরেসের সিউডেলায় জন্মগ্রহণ করেন। সেখান থেকেই উঠে এসেছে কার্লোস তেভেজের মতো তারকা। আলমাদার জন্মের মাত্র ছয় মাস পর বোকা জুনিয়র্সের হয়ে মূল দলে অভিষেক ঘটে তেভেজের। আলমাদা তার নিজ শহর ফুয়ের্তে অ্যাপাছিতে বেড়ে উঠেছিলেন। ছোট বেলায় তিনি বোকা জুনিয়র্সের সমর্থক ছিলেন। এক সাক্ষাৎকারে তিনি বলেছেন ফিফা গেম খেলার সময় তিনি ম্যানসিটির তেভেজকে বেছে নিতেন। এল অ্যাপাছির (কার্লোস তেভেজের ছদ্মনাম) মতো তিনিও আর্জেন্টিনার মূল্যবান প্রতিভা। মাত্র পাঁচ বছর বয়সে ভেলেজ সার্সফিল্ডের ইয়ুথ সিস্টেমে যোগ দেন আলমাদা। আলমাদাকে ডাটা ভিজ্যুয়ালাইজেশন দ্বারা প্রমাণ করা যাবে না যে সে আসলে কতটা ভালো। তবে এই খেলোয়াড়ের অপরিসীম গুণ রয়েছে। দক্ষিণ আমেরিকার অনূর্ধ্ব-২৪ খেলোয়াড়দের মধ্যে সবচেয়ে মূল্যবান খেলোয়াড় তিনি। ট্রান্সফারমার্কেটের তথ্যানুসারে, আলমাদার বর্তমান মূল্য ২০ মিলিয়ন ইউরো এবং দ্বিতীয় স্থানে থাকা উরুগুয়ের নিকোলাস ডে লা ক্রুজের মূল্য ১৮ মিলিয়ন ইউরো। এই অ্যাটাকিং মিডফিল্ডার বেশ কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ পজিশনে খেলতে পারেন। গত এক বছরে ক্লাব ও দেশের হয়ে লেফট উইঙ্গার, রাইট উইঙ্গার, সেন্টার ফরোয়ার্ড, নাম্বার এইট ও নাম্বার টেন পজিশনে খেলেছেন। চূড়ান্তভাবে তাকে তার ন্যাচারল পজিশনেই ফিরিয়ে আনা হয় এবং এই পজিশনেই ভেলেজ সার্সফিল্ডে পুরো সময় জুড়ে সবচেয়ে বেশি খেলেছেন।

পজিশন এবং খেলার স্টাইল-

সহজ ভাষায় থিয়াগো আলমাদা একজন অ্যাটাকিং মিডফিল্ডার এবং সাপোর্টিং ফরোয়ার্ড। ৪-২-৩-১ ফর্মেশনের সেন্ট্রাল অ্যাটাকিং মিডফিল্ড পজিশনের মাঝখানে খেলেন তিনি। আলমাদা বল রিসিভ করার জন্য বাম দিকে ড্রিফ্ট করতে পছন্দ করেন এবং তার পছন্দসই ডান পায়ে কাটাতে পছন্দ করেন। ভেলেজ সার্সফিল্ডে থাকাকালীন আলমাদাকে ফ্রি রোল দেওয়া হত। অ্যাটাকিং থার্ডের ফাঁকা জায়গাগুলোকে খুব সুন্দরভাবে কাজে লাগাতেন তিনি। যদিও আটলান্টা ইউনাইটেডের ব্যাপারটা একেবারেই আলাদা।  আলমাদা কেবল হাফস্পেস এরিয়াগুলোতে অপারেট করে না, যদিও এটি তার পছন্দের এরিয়া। ২১ বছর বয়সী এই মিডফিল্ডার কখনো কখনো ডিপ মিডফিল্ডার হিসেবে বল সঞ্চালনে সহায়তা করে। তার চমৎকার দৃষ্টিভঙ্গি ব্যবহার করে প্রতিপক্ষের ব্লকে ফাঁক খুঁজে বের করতেই মূলত ডিপে ড্রপ করেন।  থিয়াগো আলমাদা একজন কুইক ফুটেড ও ফাস্ট থিংকিং প্লেয়ার। তিনি বল নিয়ে টাইট স্পেসগুলোকে সহজে ব্যবহার করতে পারেন। অন দ্য বলে তিনি সাধারণত প্লেমেকার রোল প্লে করেন এবং অফ দ্য বলে অ্যাটাকারদের মতো ফরোয়ার্ড রান নেন। অ্যাটাকার হিসাবে তার বহুমুখী দক্ষতার কারণে গোল তৈরি এবং গোল স্কোরিং দুটির মধ্যেই ভারসাম্য বজায় রাখতে পারেন। আলমাদা ডিপ মিডফিল্ড থেকে সাপোর্টিং ফরোয়ার্ড সব পজিশনেই খেলতে সক্ষম। আটলান্টা ইউনাইটেড তার এই ভার্সেটাইলিটিকেই ব্যবহার করছে। আলমাদা এখনও তার পজিশনের প্রকৃত সংজ্ঞা খুঁজে পাননি। তিনি প্রায়শই একজন ক্রিয়েটিভ মিডফিল্ডার এবং একজন গোলস্কোরার হওয়ার পরেও মাঝেমাঝেই লো ব্লক ডিফেন্সের বিপক্ষে ধরা পড়ে যান। তবে একটি বড় অংশ হিসেবে সেই সমস্যা সমাধানে পোটেনশিয়াল ও কোয়ালিটি অনুযায়ী তার সেই ক্যাপাবিলিটি রয়েছে। তবে সবচেয়ে চিত্তাকর্ষক ছিল আলমাদার সত্যিকারের নেতা হয়ে ওঠা। পরের দুই থেকে তিন বছরের মধ্যে, আলমাদা যদি আরও ম্যাচুরড হয় এবং মাঠে তার প্রতিভা ঠিকঠাক বিকশিত করতে পারে তাহলে অতি শীঘ্রই ইউরোপের বড় দলগুলো তাকে নেওয়ার জন্য উঠেপরে লাগবে যা উভয় পক্ষের জন্য আরও বেশি লাভবান হবে। আর্জেন্টিনা মিডফিল্ডেও প্রত্যাশিতভাবে আরও ভালো পারফর্ম করতে পারবে। আদৌও তার খেলায় আরও উন্নতি হবে কিনা সেটা নির্ভর করছে কোন ক্লাবের হয়ে কোন কোচের অধীনে খেলছেন। এই লেখায় আমরা আলমাদার ক্রিয়েটভ এবং অফেন্সিভ ক্যাপাবিলিটির রেঞ্জ দেখতে পাব। তারপর আপনারাই সিদ্ধান্ত নিবেন যে তিনি কোন ক্লাবে গেলে ভালো করবেন বা আদৌ সেরা খেলোয়াড় হতে পারবেন কিনা।

ড্রিবলিং এবং স্পেস চিহ্নিতকরণ-

থিয়াগো আলমাদা একজন হাই ভলিউম ও হাই অ্যাকুরেন্সিসম্পন্ন ড্রিবলার এবং তিনি যেভাবে ফাঁকা জায়গায় চলে যান এবং লাইন ব্রেক করেন তা স্বাভাবিকভাবেই টেকনিক্যাল অ্যানালাইসিস শুরু করার আগে একটি ভাল দিক। থিয়াগো আলমাদা দ্রুত গতিসম্পন্ন খেলোয়াড়। তিনি ছোট ছোট স্পেস দ্রুত কভার করতে পারেন। ৫'৭" (১৭১ সেমি) এর আলমাদা দ্রুত গতি এবং অপ্রত্যাশিত পজিশন পরিবর্তনের কারণে লো সেন্টার অফ গ্রাভিটি ব্যবহার করতে সক্ষম। বল ক্লোজ কন্ট্রোলের ক্ষেত্রে তিনি ছোট ছোট স্পর্শ ব্যবহার করেন । সংক্ষেপে, আলমাদা একজন চমৎকার ড্রিবলার। বলকে কার্যকরভাবে বহন করা তার একটি দক্ষতাই বলা চলে। গত তিন মৌসুমে প্রতি ৯০ মিনিটে ৫.৫ টি ড্রিবল অ্যাটেম্পট নিয়ে থিয়াগো আলমাদা তুলনামূলকভাবে হাই ভলিউম ড্রিবলার। যা তার মার্কার, ডিফেন্ডার বা ডিফেন্সিভ লাইন ভাঙার জন্য যথেষ্ট ছিল। এই আর্জেন্টাইন প্রতি ম্যাচে ৩.৬৪ টি রিকোভারি করেন যার ৬১ শতাংশ আসে প্রতিপক্ষের হাফে। তিনি প্রতি ৯০ মিনিটে ৪.৫১ টি ডিফেন্সিভ ডুয়েলে অংশ নিয়েছিলেন যার সাফল্যের হার ছিল ৫৩.৪ শতাংশ। এখানে যা আরও উল্লেখযোগ্য তা হ'ল সেই সময়ে তার ড্রিবলগুলির সাফল্যের হার ছিল ৫২%। তুলনার খাতিরে, লিওনেল মেসি প্রকৃত হাই ভলিউম ড্রিবলার (প্রতি ১০ এ ৯.৯০) তার প্রচেষ্টার ৫৫% সফল হয়েছেন। আলমাদা বিশ্বসেরা ব্যক্তিত্ব নয়। এমন খেলোয়াড় রয়েছে যারা গত ১২ মাসে তাদের প্রচেষ্টার ৭০% এরও বেশি ড্রিবল সম্পন্ন করেছে। এটা খুব ভালো ফিগার, বিশেষ করে এমন তরুণ খেলোয়াড়ের জন্য। থিয়াগো আলমাদার ড্রিবলিং ক্ষমতা সম্পর্কে যা সবচেয়ে চিত্তাকর্ষক তা হল সে যেভাবে তার ডিফেন্ডারদের বিট করে তা নয়, এটি যেভাবে সে স্পেস ক্রিয়েট করে এবং টাইট স্পেসে বল নিয়ন্ত্রণ করে। তিনি ফিজিক্যাল ড্রিবলার নন। তিনি অ্যাডভান্সড ওয়াইড ওপেন স্পেসগুলোকে তার শক্তি অথবা র পেস দিয়ে ব্যবহার করেন না। বরং থিয়াগো একজন টেকনিক্যাল  ড্রিবলার। তার শর্ট, শার্প এবং পিনপয়েন্ট টাচগুলো প্রমাণ করে যে তিনি দ্রুত এবং কার্যকরভাবে সিদ্ধান্ত নিতে এবং দিক পরিবর্তন করতে সক্ষম। যদি ফাইনাল থার্ডে হাই কোয়ালিটি, আনপ্রেডিক্টেবল ও টাইট স্পেস পাওয়া যায় তবে থিয়াগো আলমাদা তার গতিবিধি দিয়ে মানিয়ে নিতে পারে এবং তার ভারসাম্য পরিবর্তন করতে পারে। যদিও তার সাফল্যের হার ইউরোপের কিছু খেলোয়াড়ের মতো বেশি নয়। থিয়াগো আলমাদা এমনভাবে ড্রিবল করেন যা সম্ভবত আরও কিছু ফিজিক্যাল হাই ভলিউম, হাই অ্যাকুরেন্সিসম্পন্ন ড্রিবলারের চেয়ে ফলো-আপ অ্যাকশনের জন্য একটি ভাল সুযোগ তৈরি করতে পারে। বল খেলোয়াড়ের কাছাকাছি থাকলে দ্রুত সিদ্ধান্ত নেওয়া যায় এবং পরিস্থিতির সঙ্গে মানিয়ে নেওয়া যায়। যখন নিয়ন্ত্রণে থাকে বলটি আরও কার্যকরভাবে এবং ভাল আত্মবিশ্বাসের সাথে ব্যবহার করা যায়। আলমাদা কদাচিৎ বল নিয়ে স্প্রিন্ট করেন। সে আদামা ত্রাওরে এবং মেসির চেয়ে ভালো খেলোয়াড়, অন্তত ড্রিবলিং শৈলীর দিক থেকে।

পাসিং, ক্রসিং, প্লেমেকিং-

থিয়াগো আলমাদা কীভাবে ফাঁকা স্পেসগুলো আইডেন্টিফাই করেন এবং অর্জন করেন তা দেখে আমরা তারপরে দেখব যে তিনি কীভাবে এটি ব্যবহার করেন।  যখন তিনি ক্রিয়েটিভ অ্যাটাকিং মিডফিল্ড জোনগুলির একটিতে বল রিসিভের জন্য ডিপে চলে আসেন তখন থিয়াগো আলমাদা থ্রু পাসের মাধ্যমে বিপক্ষ দলের ডিফেন্সলাইন ভেঙ্গে হাইরিক্স তৈরি করেন।  প্লেমেকিংয়ে আলমাদা যেমন অসাধারণ ঠিক তেমনি ডিফেন্ডারদের বিপক্ষে ১vs১ ব্যাটলগুলোতেও দারুণ। আলমাদার ফাইনাল থার্ডে পাসিং অ্যাকুরেসি হাই (শেষ তিন বছরে ৭৮%, ২০২২ সালে ৮৩%)। এমনকি প্রতিপক্ষের পেনাল্টি এরিয়ায় তার পাসিং অ্যাকুরেসি ৫৩%-৫৬%। আর্জেন্টাইন ক্লাব ইন্ডিপেনডেন্টের বিপক্ষে এক ম্যাচে আলমাদা ৫২টি পাসের মধ্যে মাত্র ৩টি ভুল পাস দিয়েছিলেন। সেই ম্যাচে ১০০% সফলতার সাথে লং বল, থ্রু বল, ফাইনাল থার্ড ও পেনাল্টি এরিয়ায় পাস দিয়েছিলেন। তিনি যদি অন্যান্য ক্ষেত্রগুলোতে ভালো না হতেন তাহলে আমরা সহজেই তাকে ন্যাচারাল প্লেমেকার বলতে পারতাম। আরও ডিফাইন করে বললে ট্র্যাডিশনাল নাম্বার টেন। বিটুইন দ্য লাইনে বল রিসিভ করে নিজের নিয়ন্ত্রণে নেওয়া, দ্রুত টার্গেট আইডেন্টিফাই করে বলকে সঠিক এবং কার্যকরভাবে এগিয়ে নেওয়া এইসব গুণই তার মধ্যে আছে। যখন বল তার পায়ে থাকে আলমাদা তখন ডিপ মিডফিল্ড পজিশন সঠিকভাবে ব্যবহারের জন্য তার ভিশন ও পাসিং রেঞ্জকে ব্যবহার করেন। ভেলেজ সার্সফিল্ডে থাকা অবস্থায় আমরা তাকে এই পজিশনে খেলতে দেখেছি। তবে তাকে এই পজিশনে নিয়মিত খেলালে সম্ভবত তার অন্যান্য গুণাবলীকে উপেক্ষা করা হবে।

ক্রসিং-

আলমাদার প্লেমেকিংয়ের একটি বড় অংশ সেন্ট্রাল চ্যানেলে সংঘটিত হয়। তিনি একজন ওয়াইড প্লেয়ার কিংবা উইঙ্গার নন। কিন্তু যেসব বিস্তৃত চ্যানেলে আলমাদা অপারেট করেন সেখান থেকে সফলতার সাথে ক্রস করতে সক্ষম তিনি। এরকম পারফরম্যান্স এর আগেও তিনি অনেকবার করেছেন। আলমাদা সম্প্রতি আটলান্টার নিয়মিত সেট-পিস টেকারদের একজন এবং বিশেষ করে তার কার্ভ ফ্রি-কিকগুলো বেশি বিপজ্জনক। আমি বলব না যে সে ডেড-বল ডেলিভারিতে পারদর্শী। তার বিশেষকরে ডেড-বল সিচুয়েশনে উন্নতির প্রয়োজন রয়েছে। তবে ডেড-বল সিচুয়েশনে তার বল স্ট্রাইকিং টেকনিক যথেষ্ট ভালো। আমরা ইতিমধ্যেই আলমাদাকে টাইট স্পেসগুলোতে দুর্দান্তভাবে বল নিয়ন্ত্রণ করতে দেখেছি। তিনি নিজেকে ঘুরিয়ে দ্রুত টার্গেট পিক করতে পারেন। তিনি পারফেক্ট অ্যাকুরেসির সাথে ডিরেক্ট থ্রু বল, শর্ট পাস ও লং বল দিতে সক্ষম। থিয়াগো আলমাদা খুব শক্তিশালী একজন প্লেমেকার। ভাবলেই অবাক লাগে যে এত কম বয়সী একজন খেলোয়াড়ের ফাইনাল থার্ডে টাইট, ডিফিকাল্ট ও হাই-ভেল্যু স্পেসে বল কার্যকরভাবে ব্যবহার করার জন্য অসাধারণ দক্ষতা রয়েছে। তিনি ডিপ লেফট হাফস্পেস থেকে সেন্ট্রাল চ্যানেলে বেশি ঘুরাঘুরি করেন যা তার প্লেয়িং স্টাইলের সাথে পারফেক্টলি ম্যাচ করে। যদি আলমাদা নিয়মিত নাম্বার টেন পজিশনে ড্রপ করেন এবং ডিফাইনড প্লেমকার হিসেবে খেলেন তবে ন্যাচারালি এই রোলে তিনি স্বাভাবিকভাবেই উপযুক্ত হবেন।

অফেন্সিভ মুভমেন্ট, শুটিং ও স্কোরিং গোল'স-

থিয়াগো আলমাদা গোল করার সুযোগ তৈরিতে যতটা ভালো এবং যতটা কার্যকর তর্কাতীতভাবে সে নিজে গোল করার ক্ষেত্রে আরও ভালো। ১৭ বছর বয়সে সিনিয়র ক্যারিয়ারে অভিষেকের পর থেকে গত তিন মৌসুমে আলমাদা ২৭টি গোল করেছেন। এই মৌসুমে আটলান্টার হয়ে চার ম্যাচে করেছেন চার গোল ও চার অ্যাসিস্ট। বিগত তিন মৌসুমে  তার সম্মিলিত xG হল ২০.১। এই সময়ে তিনি ১৮০টি শট নিয়েছেন যার মধ্যে ৪০% শট অন টার্গেটে রাখতে সক্ষম হয়েছেন। থিয়াগো আলমাদা যখন হাই কোয়ালিটি গোল-স্কোরিং পজিশনে যাবার সিদ্ধান্ত নেন তখন একজন শার্প ও ফোকাসড অ্যাটাকারের মতো ফিনিশিং দেওয়ার চেষ্টা করেন। তিনি এমন এরিয়ায় চলে যান যেখানে তিনি স্কোর করার জায়গা খুঁজে পেতে সক্ষম হন। কখনও কখনও এটি একই অ্যাটাকিং মিডফিল্ড জোন থাকে যেখানে তিনি এত ভাল ক্রিয়েটিভিটি শো করতে পারেন, তবে সবসময় নয়। এছাড়াও সে তার ফরোয়ার্ড লাইনের সামনে দৌড়ায় এবং লাইন ব্রেক করে সেন্টার ফরোয়ার্ডদের রান নিতে সুযোগ করে দেয়। এতে করেই বোঝা যায় থিয়াগো আলমাদা একজন সাপোর্টিং ফরোয়ার্ড। আলমাদা ফরোয়ার্ড লাইনের সামনে ডিফেন্ডারদের মাঝে থেকে দৌড়ে গোলকিপার এবং ডিফেন্সিভ লাইনের মধ্যেবর্তী অ্যাডভান্সড পজিশনে চলে যান, ঠিক একজন সেন্টার ফরোয়ার্ডের মতো। আলমাদা তার রান ধরে রাখে এবং সেন্ট্রাল জোন ১৪, অ্যাটাকিং মিডফিল্ড স্পেস-এ নেমে যায় এবং ডিফেন্সিভ লাইনের পিছনে থেকে পেনাল্টি এরিয়ার একটু বাইরে থেকে শট নেয়ার চেষ্টা করেন। আলমাদা তার পছন্দের লেফট হাফস্পেসে ডিফেন্সিভ লাইনের সামনে থেকে বল রিসিভ করেন। তিনি ডিফেন্ডারদের দিকে ড্রাইভ করে সেন্ট্রাল চ্যানেল দিয়ে বল ক্লোজ কন্ট্রোল করেন এবং তাদের মাঝখানের স্পেসকে আইডেন্টিফাই করেন। শুটিং এঙ্গেল তৈরি করার জন্য দ্রুত সেই স্পেস কভার দেয়ার চেষ্টা করেন। আলমাদা লংরেঞ্জ থেকে নির্ভুলভাবে শট নিতে পারেন। তিনি সাধারণত ওয়ান অন ওয়ান সিচুয়েশনে দূরপাল্লার শট নিয়ে থাকেন। সে অনেক পাওয়ার জেনারেট করে অ্যাকুরেসির সাথে শট নেয়। এতে প্রমাণ হয় যে থিয়াগো আলমাদা একজন ন্যাচারল ফরোয়ার্ড এবং স্ট্রং ফিনিশার। সম্প্রতি পেনাল্টি নেওয়া শুরু করেছেন তিনি এবং দারুণ আত্মবিশ্বাসের সাথে এই গুরুদায়িত্ব পালন করছেন। আলমাদার অনেক শট লেফট হাফস্পেস এবং সেন্ট্রাল চ্যানেলের মধ্য থেকে আসে। ২০-২৫ গজের মধ্যে সচরাচর তাকে শট নিতে দেখা যায়। যেহেতু আলমাদা বিভিন্ন অ্যাটাকিং পর্যায়ে খেলতে সক্ষম এবং বিভিন্ন ধরণের অ্যাটাকিং ফেসগুলোতে  কার্যকরভাবে জড়িত সেহেতু তার শট ম্যাপ অনেকটাই আনপ্রেডিক্টেবল। তিনি আনপ্রেডিক্টেবল ও বহুমুখী খেলোয়াড়দের মধ্যে একজন।

থিয়াগো আলমাদার ট্রান্সফার নিউজ-

ইউরোপিয়ান লিগে খেলার জন্য আলমাদা যথেষ্ট ভালো। তিনি প্রিমিয়ার লিগ বা লা লিগা বা সিরি এ এর মতো লিগে খেলতে এখনো প্রস্তুত নন, তবে অবশ্যই এরেডিভাইস, লিগা নসের মতো হাই-প্রোফাইল লিগে সম্ভাব্য ভালো করতে পারবেন বলে আশা করছি। তো আর্জেন্টিনার এই প্রতিভাবানের পরবর্তী গন্তব্য কোথায় হবে?? তার সাম্প্রতিক ফর্ম এবং গোলস্কোরিং রেট ভালো হওয়ায় এবং লো-সেন্টার অফ গ্রাভিটি অ্যাটাকিং মিডফিল্ডার হবার কারণে গত কয়েক মৌসুমে ট্রান্সফার মার্কেটে বেশ কয়েকটি হাই-প্রোফাইল দলের মনোযোগ আকর্ষণ করেছিলেন। তিনি আর্জেন্টিনার বিশ্বকাপ জয়ী দলের একজন সদস্য। মার্চ মাসের ইন্টারন্যাশনাল ব্রেকে পানামার বিপক্ষে  ম্যাচে আর্জেন্টিনার জার্সি গায়ে প্রথম গোল করেন। তাই আসন্ন সামার ট্রান্সফারে বড় কোনো ক্লাবে মুভ করলে অবাক হবার কিছু থাকবে না।