• ভারত-ওয়েস্ট ইন্ডিজ সিরিজ
  • " />

     

    ভারতের ক্রিকেট নিয়ে শঙ্কিত গাঙ্গুলি

    ভারতের ক্রিকেট নিয়ে শঙ্কিত গাঙ্গুলি    

     

    তাঁর হাত ধরেই নতুন এক ভারতের যাত্রা শুরু হয়েছিল। সৌরভ গাঙ্গুলির নেতৃত্বে দেশ-বিদেশে কম সাফল্য পায়নি ভারত। ক্রিকেট ছেড়েছেন অনেক আগেই, দায়িত্ব পালন করছেন ক্রিকেট অ্যাসোসিয়েশন অফ বেঙ্গলের প্রেসিডেন্ট হিসেবে। সাম্প্রতিক সময়ে ভারতীয় ক্রিকেট বোর্ডের বেশ কয়েকটি ব্যাপার কিছুতেই মানতে পারছেন না সৌরভ। বিসিসিআইয়ের কাছে লেখা এক খোলা চিঠিতে তিনি জানিয়েছেন, ভারতের ক্রিকেট নিয়ে ‘শঙ্কিত’ তিনি।

    অনিল কুম্বলের পর নতুন কোচ নির্বাচনের সময় পরামর্শক কমিটিতে ছিলেন গাঙ্গুলি। গাঙ্গুলির প্রথম অভিযোগটা কোচ নির্বাচন প্রক্রিয়া নিয়েই। বর্তমান কোচ রবি শাস্ত্রীই ছিলেন অধিনায়ক কোহলির প্রথম পছন্দ, এ কারো অজানা ছিল না। শাস্ত্রীদের সাক্ষাৎকার নেওয়ার পর কমিটির পক্ষ থেকে বলা হয়েছিল, কোহলি কোচ নির্বাচনের ব্যাপারে ভাবার জন্য আরও সময় পাচ্ছেন। তবে গাঙ্গুলিদের দেওয়া সময়ের আগেই শাস্ত্রীকে কোচ ঘোষণা করে বিসিসিআই। গাঙ্গুলি জানালেন, কোচ নির্বাচন করার সেই অভিজ্ঞতা ছিল ভয়াবহ, ‘ওই ব্যাপারে অভিজ্ঞতাটা রীতিমত ভয়াবহ ছিল। এটা নিয়ে যত কম বলা যায় ততোই ভালো!’

    সম্প্রতি ভারতে চলা ‘মি টু’ আন্দোলনের মাঝে নাম এসেছে বিসিসিআইয়ের প্রধান নির্বাহী রাহুল জোহরির। যদিও সেটা বোর্ডের দায়িত্ব পাওয়ার আগের ঘটনা, তাও যৌন হয়রানির সেই অভিযোগ নিয়ে তদন্ত করা হচ্ছে জোহরির বিরুদ্ধে। বিসিসিআইয়ের পরিচালনা পরিষদের দুইজন সদস্যের মাঝে এ নিয়ে দেখা দিয়েছে মতবিরোধ। ভিনোদ রায় চাইছেন, বাইরের লোক দিয়ে নতুন তদন্ত কমিটি করা হোক। অন্যদিকে ডায়না এডুলজি চাইছেন জহরির পদত্যাগ।

    গাঙ্গুলি মনে করেন, বোর্ডের প্রধান নির্বাহীর বিরুদ্ধে ওই অভিযোগ ও তদন্তের সময় দুই কর্মকর্তার বিরোধে বিসিসিআইয়ের সম্মানহানি হচ্ছে, ‘আমি জানি না ব্যাপারটা কতটুক সত্যি। তবে প্রধান নির্বাহীর বিরুদ্ধে এরকম অভিযোগ বিসিসিআইকে ছোট করে দিচ্ছে। এটা আরও বাড়ছে ব্যাপারটাকে যেভাবে সামলানো হচ্ছে। বিসিসিআইয়ের পরিচালনা পরিষদের সদস্য চার থেকে দুইয়ে নেমে এসেছে। এখন এই দুজনের মাঝেও মতবিরোধ দেখা দিয়েছে!’

    এদিকে এই মৌসুমে ঘরোয়া লিগের মাঝপথেই বদলানো হয়েছে খেলার নিয়মকানুন। গাঙ্গুলি নিজেও অবশ্য বিসিসিআইয়ের টেকনিক্যাল কমিটিতে ছিলেন, যারা নিয়মকানুন নিয়ে আলোচনা করে সিদ্ধান্ত নিয়েছে। বোর্ডের চূড়ান্ত এই সিদ্ধান্তে যারপরনাই অখুশি গাঙ্গুলি, ‘মৌসুমের মাঝপথে নিয়মকানুন বদলে যাচ্ছে, এরকমটা কখনোই শুনিনি! কমিটি যেসব সিদ্ধান্ত নিয়েছে সেটা খুবই অসম্মানজনক।’ এই ঘটনায় গাঙ্গুলি ছাড়াও নিজেদের অসন্তুষ্টির কথা জানিয়েছেন বিসিসিআইয়ের ক্রিকেট অপারেশনসের প্রধান রত্নাকর শেঠি ও বিহার ক্রিকেট অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি আদিত্য বর্মা। বর্মাও বিসিসিআইয়ের পরিচালনা পরিষদের কাছে এই ব্যাপারে চিঠি লিখেছিলেন এই বলে যে, বোর্ড আসলে নিয়ম বদলাচ্ছে একটি বিশেষ রাজ্যের সুবিধার জন্যই।

    সবকিছু মিলিয়ে হতাশ গাঙ্গুলি বিসিসিআইকে লেখা চিঠিতে আরও বলছেন, ভারতীয় ক্রিকেট নিয়ে দুশ্চিন্তায় আছেন তিনি, ‘আমি এই মেইলটা লিখছি ভারতীয় ক্রিকেট যেদিকে যাচ্ছে সেটা নিয়ে শঙ্কিত হয়েই। দীর্ঘদিন ধরে আমরা ক্রিকেট খেলেছি, হার-জিতের পাশাপাশি ভারতীয় ক্রিকেটের সম্মানটা আমাদের কাছে গুরুত্বপূর্ণ ছিল। এখনও আমরা সেটা নিয়ে ভাবি। কিন্তু খুব শঙ্কা জানিয়ে বলছি, গত কয়েক বছরে বোর্ড যেদিকে যাচ্ছে, এটা কোটি ভারতীয় সমর্থককে শুধু হতাশই করছে।’

    তার ভয়টা আমলে নেবে বিসিসিআই, এটাই প্রত্যাশা গাঙ্গুলির, ‘বহু বছরের কঠোর পরিশ্রম ও দারুণ সাংগঠনিক দক্ষতার কারণেই ভারতীয় ক্রিকেটের এত বড় সমর্থক গোষ্ঠী, এত মানুষ মাঠে আসে খেলা দেখতে। আমার মনে হচ্ছে এটা এখন শঙ্কায় পড়েছে। আশা করি বোর্ড কর্মকর্তারা আমার কথাগুলো শুনছেন।’

    গতকাল বিসিসিআইয়ের পরিচালনা কমিটি ভারতের সুপ্রিম কোর্টের কাছে দেওয়া এক রিপোর্টে বলেছিল, গাঙ্গুলির পশ্চিমবঙ্গ ক্রিকেট অ্যাসোসিয়েশনসহ আরও দশটি রাজ্য বিসিসিআইয়ের সব নিয়ম পুরোপুরি মানছে না। একদমই নিয়ম মানছে না সাতটি রাজ্য, সব নিয়ম মেনে চলছে ১৭টি রাজ্য। বিসিসিআইয়ের এই রিপোর্ট দেওয়ার পরদিনই তাদের কাছে খোলা চিঠিটি লিখলেন গাঙ্গুলি।