• মেয়েদের টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপ
  • " />

     

    লরা উলভার্ট: মেয়েদের ডি ভিলিয়ার্স

    লরা উলভার্ট: মেয়েদের ডি ভিলিয়ার্স    

    তাঁকে নিয়ে একটা সময় মিথের শেষ ছিল না। ফুটবল, ব্যাডমিন্টন, রাগবি, টেনিস, সাঁতার এসবের যে কোনোটিই নাকি বেছে নিতে পারতেন। দক্ষিণ আফ্রিকার অনূর্ধ্ব ১৯ ব্যান্ডমিন্টন চ্যাম্পিয়ন ছিলেন, জুনিয়র হকি টিমেও ছিলেন, অধিনায়ক ছিলেন জুনিয়র রাগবি দলের, বয়সভিত্তিক সাঁতারে ভেঙেছেন ছয়টি জাতীয় রেকর্ড; তাঁকে নিয়ে প্রশংসার শেষ নেই। তবে এবি ডি ভিলিয়ার্স নিজের আত্মজীবনীতে জানিয়েছেন, সবই বাড়িয়ে বলা, অতিরঞ্জন। তবে ডি ভিলিয়ার্সের ব্যাপারে বাড়িয়ে বলা হলেও লরা উলভার্টের ক্ষেত্রে কিন্তু সেটা প্রযোজ্য হবে না। মাত্র ১৯ বছর বয়সেই দক্ষিণ আফ্রিকার হয়ে যা করেছেন, তাতে উলভার্টের সামনে অনন্ত সম্ভাবনা। তার চেয়েও বড় কথা, চাইলে চিকিৎসা পেশা বা সংগীত, এসবের কোনোটিতেও বেছে নিতে পারেন ক্যারিয়ার হিসেবে!

    মেয়েদের ক্রিকেট বলেই নামটা আপনি হয়তো শোনেননি। নইলে উলভার্টের এমন কিছু রেকর্ড আছে, ছেলেদের ক্রিকেটেও যা নেই। ওয়ানডেতে ছেলেদের ও মেয়েদের ক্রিকেট মিলে দক্ষিণ আফ্রিকার হয়ে সবচেয়ে কম বয়সে সেঞ্চুরি করার কীর্তি তাঁর। মেয়েদের ক্রিকেটে সবচেয়ে কম বয়সে উলভার্টই পৌঁছেছেন এক হাজার রানে। অথচ আন্তর্জাতিক অভিষেক হয়েছে মাত্র দুই বছর হলো, সেটাও মাত্র ১৬ বছর বয়সেই। কিন্তু এখনই এই ওপেনার হয়ে গেছেন প্রোটিয়া মেয়েদের দলের বড় ভরসা।

    ২০১৬ সালে উলভার্টের অভিষেক হয়েছিল ইংল্যান্ডের বিপক্ষে। এক ম্যাচ পরেই পেলেন নিজের প্রথম আন্তর্জাতিক ফিফটি। সেই ইংল্যান্ডই পরের বছর জিতেছিল বিশ্বকাপ। উলভার্ট আবার এর মধ্যেই থিতু করে ফেলেছেন জাতীয় দলে। ২০১৭ মৌসুমে তাঁর চেয়ে বেশি রান আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে আছে শুধু তিন জনের, ভারতের সেই তিন জনই আবার তাঁর চেয়ে পাঁচটি ম্যাচ বেশি খেলেছেন। এই বিশ্বকাপে এখন পর্যন্ত দুই ম্যাচে তেমন কিছু করতে পারেননি বটে, তবে তাঁর জ্বলে ওঠা শুধুই সময়ের ব্যাপার।

     

    অথচ ক্রিকেট ছাড়া তাঁর সামনে আরও অন্তত দুইটি দরজা খোলাই। হাই স্কুলের গন্ডি পেরিয়েছেন খুব ভালোভাবেই, কেপটাউনের পার্কল্যান্ড কলেজ থেকে আট বিষয়ের সাতটিতে পেয়েছেন ডিসটিংশন। এরপর স্টেলেনবশ বিশ্ববিদ্যালয়ে চিকিৎসাবিদ্যায় ভর্তি হয়েছেন। এখন পর্যন্ত বেশি চাপ আসেনি, তবে উলভার্ট জানেন এমন বিষয়ে পড়ালেখা করার সঙ্গে পেশাদার ক্রিকেট চালিয়ে যাওয়া বেশ কঠিন হবে। তবে উলভার্ট নিজেও এখনো জানেন না শেষ পর্যন্ত কোন রাস্তায় হাঁটবেন, ‘বছর দুয়েক আগেও আসলে পরিস্থিতিটা এমন ছিল না। তখন চিকিৎসাবিদ্যার মতো বিষয়ে পড়াটা অনেক বেশি নিরাপদ সিদ্ধান্ত ছিল। তবে এখন অবস্থাটা বদলেছে, ক্রিকেট আমাকে গত দুই বছর অনেক কিছুর সুযোগ এনে দিয়েছে। আমি এখন জানি মেয়েদের ক্রিকেটের ভবিষ্যত অনেক বড়। সিদ্ধান্তটা নেওয়া আমার জন্য কঠিন থেকে আরও কঠিন হচ্ছে।’

    তবে পথ শুধু ক্রিকেট আর পড়াশোনা- এই দুইয় শেষ হয়ে গেলেই ভালো হতো। উলভার্টের সামনে যে আরও একটা রাস্তা খোলা! গান গাইতে পছন্দ করেন ছোটবেলা থেকেই, গিটারও বাজাতে পারেন বেশ। হাইস্কুলে দেখা গেল, গানের গলাটা তাঁর ভালো। এতোটাই ভালো, স্কুল কর্তৃপক্ষ তাঁর গান নিয়ে একটা মিউজিক ভিডিওই বানিয়ে ফেলল। ক্রিকেট আর পড়াশোনার জন্য অবশ্য গানকে আপাতত ক্যারিয়ার হিসেবে নেওয়ার পরিকল্পনা নেই উলভার্টের। আপাতত শখের বশেই গান করতে চান, অ্যালবাম বের করার ইচ্ছাটা অবশ্য গোপন করলেন না।

    আপাতত অবশ্য উলভার্টের সব মনযোগ ক্রিকেটেই। আজ ইংল্যাণ্ডের সঙ্গে ম্যাচের দুই দিন পরেই আবার দক্ষিণ আফ্রিকা খেলবে বাংলাদেশের বিপক্ষে। উলভার্টের ব্যাটের আগুনে নিশ্চয় পুড়তে চাইবেন না সালমারা!