কেন পেরেরার ইনিংসটা সর্বকালের সেরা?
এখনো অনেকের চোখে লেগে আছে কুশাল সিলভার ১৫৩ রানের অবিশ্বাস্য ওই ইনিংস। ব্রায়ান লারার আরেকটি মহাকাব্যিক ১৫৩ রানের ইনিংসের সঙ্গে অদ্ভুত সব মিলের জন্য তুলনাও শুরু হয়ে গেছে এর মধ্যে। ক্রিকেট ইতিহাসে কুশালের ইনিংস কোথায় ঠাঁই পাবে, তা জানা যাবে সময় হলে। তবে নিরেট পরিসংখ্যান বলছে, কুশালের ওই ইনিংস লারার চেয়ে এগিয়ে তো বটেই, এমনকি সর্বকালের সেরা ইনিংস হিসেবে স্বীকৃতি দিচ্ছে।
প্রশ্ন উঠতে পারে, পরিসংখ্যান কীভাবে সেরা ইনিংসের স্বীকৃতি দেয়? ক্রিকেট পরিসংখ্যানবিদ অনন্ত নারায়ানান সেজন্য একটা ফর্মুলা বের করেছেন। এক নজরে তাঁর সেরা ইনিংস বিচার করার মানদণ্ড দশটি
১. মোট রান
২. প্রতিপক্ষ বোলারদের মান
৩. পিচের গুণগত মান (পিকিউআই ইনডেক্স)
৪. এইচএসআই (হাই স্কোরিং ইনডেক্স, দলের মোট রানের কত শতাংশ বা সতীর্থদের কাছ থেকে কতটা সহায়তা পাওয়া গেল)
৫.আইপিভি ইনডেক্স (ইনিংস পিয়ার ভ্যালু, দলের বাকি ১১ জন দুই ইনিংসে কত রান করল সেটার গড়ের অনুপাত)
৬. শেষদিকের ব্যাটসম্যানদের সঙ্গে মোট কত রান (শেষ দুই ব্যাটসম্যানের সঙ্গে এবং শেষ পাঁচ ব্যাটসম্যানের সঙ্গে)
৭. ব্যাটসম্যান যখন নামল তখন লক্ষ্য কত ছিল
৮. টিমের মোট পারফরম্যান্সে অবদান
৯. দুই দলের শক্তির ভারসাম্য
১০. ম্যাচটা কোথায় হচ্ছে
১১. ম্যাচের ফল
এখন দেখা যাক পেরেরার ইনিংস লারার ইনিংসের চেয়ে বেশি এগিয়ে আছে কোন হিসেবে।
১. ঘরের মাঠে ২০১৯ সালের দক্ষিণ আফ্রিকার বোলিং ১৯৯৯ সালে দেশের বাইরে অস্ট্রেলিয়ান বোলিংয়ের চেয়ে বেশি এগিয়ে
২. ডারবানের উইকেট ব্রিজটাউনের উইকেটের চেয়ে খারাপ ছিল। ব্রিজটাউনে চার ইনিংসে রান হয়েছিল ৪৯০, ৩২৯, ১৪৬ ও ৩১১। অন্যদিকে ডারবানে চার ইনিংসে রান হয়েছে ২৩৫, ১৯১, ২৫৯ ও ৩০৪/৯। পিচের গুণগত মানে ব্রিজটাউন যেখানে পেয়েছে ৫৪ পয়েন্ট, ডারবান সেখানে পেয়েছে ৪১ পয়েন্ট।
৩. পেরেরা ৩০৪ রানের মধ্যে শেষ ৫ উইকেটে যোগ করেছেন ১৯৪ রান, আর শেষ ২ উইকেটে ৮৯ রান। লারা ৩১১ রানের মধ্যে শেষ ৫ উইকেটে যোগ করেছেন ২০৬ রান আর শেষ দুই উইকেটে ৬৩ রান।
৪. সবচেয়ে বড় ব্যাপার, শ্রীলঙ্কা দক্ষিণ আফ্রিকাকে তাদের মাটিতে গিয়ে হারিয়েছে, অন্যদিকে ওয়েস্ট ইন্ডিজ অস্ট্রেলিয়াকে হারিয়েছিল নিজেদের মাটিতে।
৫. পেরেরার ইনিংসের আইপিভি (ইনিংস পিয়ার ভ্যালু) ফ্যাক্টর বেশি আবার লারার ইনিংসের এইচএসআই (হাই স্কোরিং ইনডেক্স) বেশি। এই দুই ফ্যাক্টর একটি আরেকটিতে কাটাকাটি গেছে।
সর্বকালের সেরা ইনিংসের এই তালিকায় সবার ওপরে আছে ১৯৯১ সালে হেডিংলিতে সেই সময়ের ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে গ্রাহাম গুচের অপরাজিত ১৫৪। কুশালের ইনিংসটা এখানেও জোর টক্কর দেবেন তাঁর সঙ্গে।
১. বিদেশে ওয়েস্ট ইন্ডিজ আর দেশে দক্ষিণ আফ্রিকা, এই দুই বোলিং আক্রমণ প্রায় কাছাকাছি
২. গুচ শেষ ৫ উইকেটে যোগ করেছেন ১৩৬ রান, আর শেষ ২ উইকেটে যোগ করেছেন ১৬ রান। এখানে এগিয়ে আছেন পেরেরা
৩. তৃতীয় ইনিংসে ২৫ রানের লিড নিয়ে নেমেছিলেন গুচ, তাঁর সামনে লক্ষ্য ছিল না। চতুর্থ ইনিংসের আনুপাতিক হিসেব করলে লক্ষ্যটা হয় ২৭৫, ইংল্যান্ড করতে পেরেছিল ২৫২। পেরেরাকে ব্যাট করতে হয়েছে চতুর্থ ইনিংসে, তাড়া করতে হয়েছে এর চেয়ে বেশি রান।
আবার গুচের ইনিংসটা এগিয়ে থাকবে অন্য জায়গায়
৪. হেডিংলির ওই উইকেটে চার ইনিংসে রান হয়েছিল (১৯৮, ১৭৩, ২৫২ ও ১৬২। হেডিংলির পিচ ডারবানের চেয়ে কিছুটা হলেও খারাপ ছিল)
৫. গুচের এইচএসআই ছিল ৩.৮, পেরেরার ক্ষেত্রে যা ১.৬৮
৬. গুচের আইপিভি ইনডেক্স ১২.৭, পেরেরার ক্ষেত্রে যা ১০
ইংল্যান্ড ম্যাচটা খেলেছিল নিজেদের মাটিতে, আর শ্রীলঙ্কা প্রতিপক্ষের মাটিতে বলে কুশাল এখানেও কিছুটা এগিয়ে যাচ্ছেন। এ অবশ্য নিরেট পরিসংখ্যানের হিসেব, শেষ পর্যন্ত সেরা বিচারের ভার তো দর্শকের হাতেই।