পোর্ট এলিজাবেথেও ডাকছে রোমাঞ্চ
দ্বিতীয় টেস্ট, পোর্ট এলিজাবেথ
দক্ষিণ আফ্রিকা ২২২ ও ১২৮ (ডু প্লেসি ৫০*, লাকমাল ৪/৩৯, ডি সিলভা ৩/৩৬)
শ্রীলঙ্কা ১৫৪ ও ৬০/২* (ওশাদা ১৭*, অলিভিয়ার ১/১০)
জয়ের জন্য শ্রীলঙ্কার ৮ উইকেটে প্রয়োজন ১৩৭ রান
সমীকরণটা এমন- দ্বিতীয় দিনশেষেই পোর্ট এলিজাবেথ টেস্টে একদিকে বাকি ৮ উইকেট, অন্যদিকে ১৩৭ রান। ঘটনাবহুল ১৯ উইকেটের দিনশেষে সিরিজের দ্বিতীয় টেস্ট ঝুলছে সুতোর ওপর। ১৩৭ রান করতে পারলে শ্রীলঙ্কা দক্ষিণ আফ্রিকাকে প্রথমবারের মতো তাদের মাটিতে সিরিজ হারাবে, আর ৮ উইকেট নিলে ঘরে-বাইরে টানা শ্রীলঙ্কার সঙ্গে টানা দ্বিতীয় সিরিজ হার থেকে বাঁচবে স্বাগতিকরা।
অবশ্য দ্বিতীয় দিনশেষেও যে শ্রীলঙ্কা এ টেস্টে দক্ষিণ আফ্রিকার সঙ্গে সমতায়, তার মূল কৃতিত্ব তাদের বোলারদের, এমনকি সেটা ধনঞ্জয়া ডি সিলভার মতো এই টেস্টের আগে ২৪ টেস্টে ১০ উইকেট নেওয়া বোলার হলেও। ১৫৪ রানে প্রথম ইনিংসে গুটিয়ে গিয়ে ৬৮ রানের লিড গোণার পরও দক্ষিণ আফ্রিকাকে শ্রীলঙ্কা দ্বিতীয় ইনিংসে গুটিয়ে দিয়েছে মাত্র ১২৮ রানে। তাও আবার একসময় ৩ উইকেটে ৯০ রান ছিল দক্ষিণ আফ্রিকার, এরপর এসেছে আরেকটি ধস!
এইডেন মার্করাম ও হাশিম আমলা ভাল কিছুর ইঙ্গিত দিলেও শেষ করতে পারেননি, ফাফ ডু প্লেসির অপরাজিত ফিফটিতেই যতখানি গিয়েছে দক্ষিণ আফ্রিকা। এই তিনজন ছাড়া দক্ষিণ আফ্রিকার আর কেউই পারেননি দুই অঙ্ক ছুঁতে! আমলা, মুলডার ও স্টেইনকে ফিরিয়েছেন ডি সিলভা, শেষে এসে ৪ উইকেট নিয়ে দক্ষিণ আফ্রিকার লেজ ছেঁটে দিয়েছিলেন সুরাঙ্গা লাকমাল।
প্রথম ইনিংসে ৬০ রানে ৩ উইকেট নিয়ে দ্বিতীয় দিন শুরু করেছিল শ্রীলঙ্কা। ডুয়ান অলিভিয়ার শুরুতেই ভেঙেছেন শ্রীলঙ্কার প্রতিরোধ, লাহিরু থিরিমান্নের দারুণ ফিরতি ক্যাচ নিয়ে। নাইটওয়াচম্যান কাশুন রাজিথাকে বোল্ড করে এরপর শ্রীলঙ্কাকে আরও খোঁড়া করে দিয়েছিলেন কাগিসো রাবাদা, ৬৬ রানেই শ্রীলঙ্কা হারিয়েছে ৫ উইকেট। কুশাল পেরেরা ও নিরোশান ডিকওয়েলার সঙ্গে ৩১ রানের দুইটি জুটি গড়েছেন এরপর ডি সিলভা, মুলডারের বলে ডি কককে ক্যাচ দেওয়ার আগে। ২০ রান করে পেরেরা ও ৪১ রান করে ডিকওয়েলা শিকার রাবাদার। ডিকওয়েলা আউট হয়েছেন শেষ ব্যাটসম্যান হিসেবে। এর আগে ফিরেছেন লাকমাল, মহারাজের একমাত্র উইকেট হিসেবে। আগেরদিনই চোট পেয়ে উঠে গিয়েছিলেন স্পিনার লাসিথ এমবুলদেনিয়া, আঙুলে অস্ত্রোপচার লাগবে তার।
তবে তার অভাবটা যেন টেরই পেতে দিলেন না ডি সিলভা। শুরুর কাজটা করে রেখেছিলেন শ্রীলঙ্কার দুই নতুন পেসার, রাজিথা ও বিশ্ব ফার্নান্ডো। মার্করাম ও টেমবা বাভুমা রাজিথার শিকার, আর লাঞ্চের ঠিক আগে ডিন এলগারকে আউটসাইড-এজড করে ব্রেকথ্রুটা দিয়েছিলেন বিশ্ব ফার্নান্ডো। পাঁচে নামা ডু প্লেসি এরপর একপাশ থেকে শুধু চেয়ে চেয়ে দেখলেন শুধু, সঙ্গ আর পেলেন না তেমন কারও কাছ থেকে। লাকমালের বলে অলিভিয়ার এলবিডব্লিউ হওয়ার সময় তাই দক্ষিণ আফ্রিকা শ্রীলঙ্কাকে লক্ষ্য দিতে পারলো ১৯৭ রান। ডি সিলভা ৩ উইকেট নিয়েছেন ৩৮ রানে, যা তার ক্যারিয়ারসেরা বোলিং। লাকমাল ৪ উইকেট নিতে খরচ করেছেন ৩৯ রান।
ইতিহাসের লক্ষ্যে শুরুটা দৃঢ়ই হয়েছিল শ্রীলঙ্কার দুই ওপেনারের। অবশ্য ৬ বলের ব্যবধানে ফিরলেন দুজন- রাবাদার বলে লাহিরু থিরিমান্নের পর অলিভিয়ারের বলে দিমুথ করুনারত্নে দিলেন কুইন্টন ডি কককে ক্যাচ। ওশানদা ফার্নান্ডো ও কুশাল মেন্ডিসের জুটি অবিচ্ছিন্ন ২৮ রানে।এবং হ্যাঁ, এখনও শ্রীলঙ্কার হয়ে নামতে বাকি কুশাল পেরেরার। অথবা, যখন হাতছানি ইতিহাসের, তখন তো নায়ক হয়ে উঠতে পারেন যে কেউই!
শ্রীলঙ্কার সেই ইতিহাস আটকাতে পারবে দক্ষিণ আফ্রিকা?