৮০০ রানের থ্রিলারে বাটলারে আড়াল গেইল
ইংল্যান্ড ৫০ ওভারে ৪১৮/৬ (বাটলার ১৫০, মরগান ১০৩, হেলস ৮২, ব্রাথওয়েট ২/৬৯)
ওয়েস্ট ইন্ডিজ ৪৮ ওভারে ৩৮৯ (গেইল ১৬২, ব্রাভো ৬১, গেইল ৫০; রশীদ ৫/৮৫, উড ৪/৬০)
ফলঃ ইংল্যান্ড ২৯ রানে জয়ী
একটা ওয়ানডে ম্যাচে কী কী হওয়া সম্ভব? লিস্ট করতে বসুন, গ্রেনাডার ম্যাচে তার প্রায় অনেকগুলোতেই টিক চিহ্ন পড়বে। ম্যাচে দুই দলের মিলে ৮০০ রান, এক ওয়ানডেতে সবচেয়ে বেশি ছয়, টান টান উত্তেজনার পর একজন লেগ স্পিনারের ম্যাচের মোড় ঘুরিয়ে দেওয়া- গ্রানাডায় কী ছিল না? ক্রিস গেইলের বিস্ফোরকই ইনিংসটা শেষ পর্যন্ত চাপা পড়ে গেছে জস বাটলারের ঝড়ে।
অথচ দিনটা গেইলের হতেই পারত। এই ম্যাচ যেন নিজের মাইলফলকের ম্যাচ বানানোর ছক কষছিলেন। ব্রায়ান লারার পর দ্বিতীয় ব্যাটসম্যান হিসেবে ১০ হাজার ওয়ানডে রান পেয়েছেন। আফ্রিদির পর দ্বিতীয় আন্তর্জাতিক ক্রিকেটার হিসেবে ৩০০ ওয়ানডে ছয় হয়েছে, আবার এই ম্যাচেই হয়েছে ৫০০ আন্তর্জাতিক ছয়। ওয়েস্ট ইন্ডিজে ৪ হাজার রান হয়েছে, আবার ইংল্যান্ডের বিপক্ষে প্রথম ওয়েস্ট ইন্ডিয়ান হিসেবে হয়েছে ৩ হাজার রান। এক সিরিজে, কোনো নির্দিষ্ট প্রতিপক্ষের বিরুদ্ধে আর একটি দেশে সবচেয়ে বেশি ছয়ও হয়েছে। কিন্তু ৯৭ বলে ১৬২ রানের অবিশ্বাস্য ইনিংসটাও তো পারল না ওয়েস্ট ইন্ডিজকে জেতাতে।
গেইল যতক্ষণ ছিলেন, ৪১৯ রানও খুব সম্ভব বলেই মনে হচ্ছিল। শুরুতে অবশ্য জোড়া ধাক্কা খায় স্বাগতিকেরা। ২৪ রানে জোয়েল ক্যাম্পবেলের উইকেট হারায় উইন্ডিজ, এরপর ৪৪ রানে ফিরে যান শেই হোপও। তবে গেইল তোপ শুরু করেছেন এর মধ্যেই। ১১.৪ ওভারের মধ্যে ১০০ রান উঠে যায় ওয়েস্ট ইন্ডিজের। তার আগে ৩২ বলে ৫০ রান করে ফেলেন গেইল। পরিস্থিতির দাবি মিটিয়ে আজ ঝড়টা একটু আগেই শুরু করেছিলেন, তাতেই খড়কুটোর মতো উড়ে যাচ্ছিলেন মঈন-ওকস-স্টোকসরা। অন্য পাশ থেকে ড্যারেন ব্রাভোও হাত খুলে খেলতে শুরু করেন। দুজনের জুটিতে ১০০ রান আসে ঠিক ৭২ বলে।
২১.২ ওভারে ২০০ করে ফেলে ওয়েস্ট ইন্ডিজ, গেইল আর ব্রাভোতে তখন চোখে সর্ষেফুল দেখছে ইংল্যান্ড। এর পরেই উডকে মারতে গিয়ে ৬১ রানে আউট ব্রাভো। হেটমেয়ার উডকে প্রথম বলে ছয় মারলেন, পরের বলেও সেটি করতে গিয়ে আউট। প্রথম চারটি উইকেই তাই উডের। তার আগেই অবশ্য ৫৫ বলে সেঞ্চুরি হয়ে গেছে গেইলের।
সেটি আরও বড় করবেন বলেই মনে হচ্ছিল। ৮৫ বলে পেয়ে গিয়েছিলেন ১৫০, হোল্ডারকে নিয়ে একটু একটু করে এগিয়ে নিয়ে যাচ্ছিলেন। কিন্তু স্টোকসের বলে ছত্রখান হয়ে গেল স্টাম্প। এক ওভার পর হোল্ডার হন রশীদের প্রথম শিকার। ম্যাচ যখন ইংল্যান্ডের দিকে হেলে পড়ছে, সেটি আবার নিজেদের দিকে নিয়ে এলেন ব্রাথওয়েট ও নার্স।
দুজন সপ্তম উইকেটে হাল ধরলেন। পাঁচ ওভার বাকি থাকতেও ওয়েস্ট ইন্ডিজের ওভারপ্রতি দশের নিচে দরকার ছিল। কিন্তু ৪৮তম ওভারে রশীদ একাই ম্যাচের মোড় ঘুরিয়ে দিলেন। প্রথম বলে নার্স ড্রপড, পরের বলেই আউট ৪৩ রানে। তৃতীয় বলে ব্রাথওয়েটও আউট ৫০ রানে, ইংল্যান্ডের আশা পুরোপুরি জ্বলে উঠল। শেষ দুই উইকেট নিয়ে ৫ উইকেট পেয়ে গেছেন রশীদ, রান দিয়েছেন ৮৫!
তার আগে ইংল্যান্ডের রান ৪০০ পার হয়েছে আসলে জস বাটলার আর অইন মরগানের জুটির জন্য। শেষ ১০ ওভারে ১৫৪ রান তুলেছে ইংল্যান্ড। মরগান ও বাটলারের চতুর্থ উইকেটে ২০০ রান এসেছে ১২২ বলে। বেইরস্টো ও হেলস শুরুতে ঠিক ১০০ রানের জুটি এনে দিয়েছিলেন। ৫৬ রানে বেইরস্টোর পর ৮২ রান করে ফিরে গেছেন হেলস। তারপরই মরগান আর বাটলারের ঝড়। মরগান ৮৮ বলে ১০৩ রান করে আউট হলেও শেষ ওভারে আউট হওয়ার আগে বাটলার খেলে গেছেন ৭৭ বলে ১৫০ রানের বিস্ফোরক একটা ইনিংস। যেটির জবাব দিতে দিতেও শেষ পর্যন্ত পারেননি গেইল।