ফরহাদ-ঝড়ের পরও চ্যাম্পিয়ন শেখ জামালই
শেখ জামাল ধানমন্ডি ২০ ওভারে ১৫৭/৭ (ইমতিয়াজ ৫৬, নুরুল ৩৩, তানভীর ৩১; ফরহাদ ৩/৩২)
প্রাইম দোলেশ্বর ২০ ওভারে ১৩৩/৮ (ফরহাদ ৪৫, আরাফাত ৩৩, সাইফ ২৬; শহীদুল ৪/১৯, শাকিল ২/৪১)
ফলঃ শেখ জামাল ২৪ রানে জয়ী
প্রচারণা হয়নি তেমন একটা। টিভিতে যে ফাইনাল হবে, সেটাই জানত না অনেকে। তারপরও মিরপুর শের-এ-বাংলা স্টেডিয়ামে প্রিমিয়ার লিগ টি-টোয়েন্টির ফাইনালে দর্শক মন্দ হলো না। হাজার পাঁচেকের সেই দর্শক মাতিয়েও রাখলে শহীদ জুয়েল গ্যালারির কিছুটা। তবে যে রোমাঞ্চের আশা নিয়ে এসেছিল, তা পূর্ন হলো কই? ফরহাদ রেজা শেষের দিকে যা একটু চেষ্টা করেছিলেন, তাতেই যা খানিকটা বিনোদন। তবে আক্ষরিক অর্থে রেজা আর শেখ জামালের হয়ে পড়া ম্যাচে শেষ রক্ষা হলো না রেজার। ২৪ রানের জয়ে প্রিমিয়ার লিগ টি-টোয়েন্টির শিরোপা পেল শেখ জামালই।
ব্যাট করতে নেমে শুরুটা ভালোই হয়েছিল শেখ জামালের। ইমতিয়াজ হোসেন তান্না শুরু থেকেই ছিলেন ছন্দে, পাওয়ারপ্লেতে ৫০ রান এলো জামাল। এর মধ্যে মোহাম্মদ আরাফাতের এক ওভার থেকেই ইমতিয়াজ নিয়েছেন ২০ রান। ফারদীন হাসান অনি বরং একটু সময় নিচ্ছিলেন। শেষ পর্যন্ত এই চাপটাই কাল হলো তাঁর, ২০ বলে ১৮ রান করে মানিক খানের বলে ক্যাচ তুলে দিলেন আকাশে। হাসানুজ্জামানও বেশিক্ষণ থাকলেন না, ৪ রান করে স্টাম্পড হয়ে গেলেন এনামুল হক জুনিয়রের বলে। খানিক পর নাসির হোসেনও যখন ৫ রান করে ফিরে গেলেন, ৭৬ রানে ৩ উইকেট হারিয়ে বসেছে শেখ জামাল।
তবে ইমতিয়াজ খেলছিলেন তাঁর মতোই। টি-টোয়েন্টিতে নিজের প্রথম ফিফটিও পেলেন ৪০ বলে। কিন্তু ইনিংসটা অবশ্য বড় করতে পারলেন না আর, ৪৪ বলে ৫৬ রান করে আলগা এক শটে বোল্ড হয়ে গেলেন আরাফাত সানির বলে। ১৪ ওভার শেষে শেখ জামালের রান তখন ৯৬।
সেই রান ১৫৭ পর্যন্ত যাওয়ার কৃতিত্ব নুরুল হাসান ও তানভীর হায়দারের। আগের ম্যাচের নায়ক জিয়াউর রহমান আজ কিছু করতে পারলেন না, আউট হয়ে গেলেন ২ রান করেই। ষষ্ঠ উইকেট জুটিতে এরপর ৪৯ রান যোগ করলেন তানভীর ও সোহান। তানভীরই ছিলেন বেশি আক্রমণাত্মক, ১৫ বলে ৩১ রানের ইনিংসে চারটি চারের সঙ্গে মেরেছেন একটি ছয়ও। শেষ ওভারে ফরহাদ রেজার বলে গিয়ে আউট হয়েছেন, পরের বলে ২৭ বলে ৩৩ রান করে স্কুপ করতে গিয়ে ক্যাচ দিয়েছেন সোহানও। হ্যাটট্রিকের সম্ভাবনা জাগিয়েও অবশ্য পারেননি ফরহাদ রেজা।
এই রান তাড়া করে শুরুটা একটু সতর্কই ছিল প্রাইম দোলেশ্বরের। দুই ওপেনার মোহাম্মদ আরাফাত ও সাইফ হাসান ৬ ওভারে তুললেন ৩৮ রান। সপ্তম ওভারে দুই ওপেনার সাইফ ও আরাফাত মারলেন দুই ছয়, রানের চাকাও ঘোরা শুরু করল দোলেশ্বরের। কিন্তু পরের ওভারেই একটা ঘটনা মোড় ঘুরিয়ে দিল ম্যাচের। ক্র্যাম্প হয়ে অনেকক্ষণ চেষ্টা করেও থাকতে পারেননি ক্রিজে, শেষ পর্যন্ত মাঠ ছাড়তে বাধ্য হয়েছেন আরাফাত।
এরপর সেই যে খেই হারাতে শুরু করল দোলেশ্বর, আর ম্যাচে ফিরতে পারেনি। ৩ রান করে আউট হলেন মার্শাল আইয়ুব, মাহমুদুল আহসানও তাই। ফরহাদ হোসেন যতক্ষণ খেলছিলেন, ধুঁকছিলেন। ১৫ বলের ৬ রানের দৃষ্টিকটু ইনিংসটা শেষ হলো তার চেয়েও দৃষ্টিকটু এক শটে আউট হয়ে। মিনহাজুল আবেদীন আফ্রিদির ৪ ওভারে ১০ দিয়ে উইকেট এই একটিই। ৮৮ রানে যখন সৈকত আলীও আউট হলেন, দোলেশ্বর আরও বিপদে।
এরপর ফরহাদ রেজা ঠিক করলেন, আরও একবার অসাধ্য সাধনের চেষ্টা করবেন। ১৯তম ওভারে সালাউদ্দিন শাকিলের বলে নিলেন ২০ রান, শেষ ওভারে সমীকরণটা নিয়ে এলেন ২৮ রানে। এর মধ্যে ডিপ মিড উইকেট আর ফাইন লেগের ওপর দিয়ে অবিশ্বাস্য কিছু শটও আছে। কিন্তু সব দিন কি আর শেষের ঝড়ে জেতানো যায়? ২০তম ওভারে শহীদুলের প্রথম বলে সোহানের দুর্দান্ত এক ক্যাচে আউট রেজা, ফিরলেন ২০ বলে ৪৫ রান করে। পরের বলে মানিককে ফেরালেন শহীদুল, উইকেট হলো চারটি। ম্যাচটা শেষ পর্যন্ত ২৪ রানেই হারল দোলেশ্বর।