• চ্যাম্পিয়নস লিগ
  • " />

     

    'নতুন' জার্মানিতে ম্লান 'নতুন' নেদারল্যান্ডস

    'নতুন' জার্মানিতে ম্লান 'নতুন' নেদারল্যান্ডস    

    বিশ্বকাপের পর থেকেই চাপে ছিলেন জোয়াকিম লো। এরপর নেশনস লিগেও ব্যর্থ তিনি। ইউরোর বাছাইপর্ব শুরুর আগে তাই ঘোষণা দিয়ে শুরু করেছিলেন, এবার নতুন জার্মানিকে দেখা যাবে। নেদারল্যান্ডসের বিপক্ষে শুরুতে সেই দুর্দান্ত জার্মানির দেখা মিললেও, 'নতুন' নেদারল্যান্ডসে লোয়ের কথা ম্লান হতে বসেছিল। ২-২ গোলের ড্রটাও অবশ্য খুব খারাপ ফল হত না জার্মানদের জন্য। কিন্তু ডাচরা যেভাবে চোখ রাঙাচ্ছিল তাতে হেরেও বসতে পারত জার্মানি। ঘটল উল্টোটা। ৯০ মিনিটে নেদারল্যান্ডসকে চমকে দিয়ে জার্মানরাই হাসলো শেষ হাসি। ইউরোর বাছাইপর্বে গ্রুপ 'সি' এর জার্মানি-নেদারল্যান্ডস ম্যাচ তাই শেষ হলো ৩-২ গোলে।

    নেদারল্যান্ডসের মাঠে এর চেয়ে ভালো শুরুর আশা করতে পারত না জার্মানরা। ১৫ মিনিটে নিকো শুলজের ক্রস থেকে ডিবক্সের ভেতর বল পান লিরয় সানে। ডিফেন্ডার ম্যাথিয়াস ডি লিট অবশ্য জায়গামতোই ছিলেন, কিন্তু পিছলে পড়ে গেলেন মাটিতে। এরপর সানের সামনে ছিলেন কেবল জ্যাস্পার সিলেসেন। কোণাকুণি ফিনিশে সেখান থেকেই গোল করে জার্মানিকে দারুণ শুরু এনে দিয়েছিলেন সানে। জার্মানির আনন্দ দ্বিগুণ হতে এরপর আর বেশিক্ষণ সময়ও লাগেনি। সার্জ গ্যানাব্রি ভার্জিল ভ্যান ডাইককে ফাঁকি দিয়ে ডানদিক থেকে কাটিয়ে ঢুকে পড়েছিলেন ডিবক্সের মাথায়। সেখান থেকে দুর্দান্ত এক ফিনিশে গোল করে ৩৪ মিনিটেই জার্মানিকে জয়ের স্বপ্ন দেখাতে থাকেন তিনি। প্রথমার্ধে ডাচ গোলরক্ষক সিলেসেন আরও দুইবার সানেকে আটকে না দিলে বিরতিটা আরও অস্বস্তিকর হতে পারত ডাচদের জন্য।



    কেবল দুই গোল হজম করাই অবশ্য ডাচদের অস্বস্তির কারণ ছিল না, গোলের সামনে ব্যর্থতাও ছিল সমান দায়ী। রায়ান বাবেল বদলি হওয়ার আগ পর্যন্ত দুইবার গোলের সামনে থেকেও সুযোগ নষ্ট করেছেন, দুইবারই ম্যানুয়েল নয়্যার ঠেকিয়ে দিয়েছেন। দুই গোলে পিছিয়ে থাকা ম্যাচে জার্মানিকে ধরতে হলে তাই দ্বিতীয়ার্ধে পাহাড় অতিক্রম করতে হত নেদারল্যান্ডসকে।

    কীভাবে সেটা করতে হয় সেটা অবশ্য রোনাল্ড কোমেনের দলের জানাই ছিল। কয়েক মাস আগে এই দুইদলের শেষ দেখায় প্রথমার্ধে দুই গোলে পিছিয়ে পড়েও নেদারল্যান্ডস ২-২ গোলে ড্র করেছিল সেই ম্যাচ। দ্বিতীয়ার্ধে তাদের দরকার ছিল দ্রুত গোল। সেটাও হয়ে গেল ৪৮ মিনিটেই। মেম্ফিস ডিপাইয়ের ক্রস থেকে মাথা ছুঁয়ে গোল করে ডি লিট নিজের ভুল শুধরালেন। আর ডি লিটকে দিয়ে গোল করানোর পর ডিপাই নিজেও ৬৩ মিনিটে গোল করে স্কোরলাইন বানিয়ে ফেললেন ২-২!

    এক গোল হজমের পর থেকেই জার্মান রক্ষণকে চাপে রেখেছিল নেদারল্যান্ডস। দ্বিতীয় গোলটা সময়ের ব্যাপারই মনে হচ্ছিল। তবে জার্মান রক্ষণ দায় এড়াতে পারল না ডিপাইয়ের গোলে। বেশ কয়েকবার চেষ্টা করেও ডিবক্সের ভেতর থেকে বল ক্লিয়ার না করতে পারার খেসারত দিয়েই দুই গোলের লিড হারায় জার্মানরা।

    ভুলের মাশুলটা আরও বড় হতে পারত অবশ্য চারবারের বিশ্বচ্যাম্পিয়নদের। কিন্তু ডাচরা দ্বিতীয়ার্ধের প্রায় বেশিরভাগ সময় খেলা নিয়ন্ত্রণ করলেও আক্রমণে আর ধারালো হতে পারেনি দ্বিতীয় গোলের পর। শেষদিকে তাই জার্মানি না বরং নেদারল্যান্ডসই মূল্য দিল সুযোগ হারানোর।

    মার্কো রয়েসকে এই ম্যাচেও বেঞ্চে বসিয়ে রেখেছিলেন লো। বরুশিয়া ডর্টমুন্ডের অধিনায়ককে মাঠে নামিয়েছিলেন ৮৮ মিনিটে। তারও আগে নেমেছিলেন ইলকায় গুন্ডোয়ান। দুই বদলি মিলেই আক্রমণটা শুরু করেছিলেন। একটি কাউন্টার অ্যাটাক ধরে গুন্ডোয়ান বামদিকে পাঠিয়েছিলেন রয়েসকে। তিনি ডিবক্সের ভেতর করলেন নিচু ক্রস। নিকো শুলজ দৌড়ে গিয়ে পেনাল্টি স্পটের কাছাকাছি জায়গা থেকে বাম পায়ের শটে গোল করে ২৩ বছর পর নেদারল্যান্ডসের মাঠে জয় এনে দিলেন জার্মানিকে।

     

     

    ইয়োহান ক্রুইফ অ্যারেনাতে ম্যাচটা অবশ্য ছিল বিশেষ একটা দিনে। তিন বছর আগে এই নিয়ে অন্যলোকে পাড়ি জমিয়েছিলেন ডাচ কিংবদন্তী ইয়োহান ক্রুইফ। ওপর থেকে ডাচদের দ্বিতীয়ার্ধের লড়াইটা দেখে থাকলে স্বস্তিই পাওয়ার কথা তার, কিন্তু আরও একবার সেই জার্মানরাই তো স্বস্তিটা কেড়ে নিল শেষে। এই দিনটাই হয়ত ক্রুইফের নয়!