রোমাঞ্চকর জয়ে সুপার লিগে মোহামেডান, আটকে গেল গাজী ও শাইনপুকুর
শেষদিনে ছয় দলের লড়াইয়ে চার দলেরই ভাগ্য ঝুলে ছিল তাদের ম্যাচের ওপর। গাজী গ্রুপ, মোহামেডান ও শাইনপুকুরের লড়াই ছিল সুপার লিগে যাওয়ার, বিকেএসপির ছিল রেলিগেশন লিগ আটকানো। জয় দরকার ছিল সবারই। তবে বিকেএসপির সঙ্গে মোহামেডানের ম্যাচই মূলত গড়ে দিয়েছে বাকি দলগুলোরও নিয়তি, সেখানে মোহামেডানের জয় নিশ্চিত করেছে তাদের সুপার লিগ, সঙ্গে বিকেএসপির রেলিগেশন লিগে খেলা। আর খেলাঘরের সঙ্গে জিতেও সুপার লিগের আগেই আটকে গেছে শাইনপুকুর, প্রাইম ব্যাংকের কাছে হেরে গাজী গ্রুপের আশা শেষ হয়ে গেছে আগেই।
রূপগঞ্জ, আবাহনী, দোলেশ্বর, প্রাইম ব্যাংকের সঙ্গে সুপার লিগে যাচ্ছে শেখ জামাল ও মোহামেডান। রেলিগেশন লিগ খেলতে হবে ব্রাদার্সের সঙ্গে এবারই প্রিমিয়ার লিগে উঠে আসা বিকেএসপি ও উত্তরাকে। আর সুপার ও রেলিগেশন লিগের মাঝে পড়ে লিগ শেষ হয়ে গেছে গতবারের আগের মৌসুমের চ্যাম্পিয়ন গাজী গ্রুপের, সঙ্গে শাইনপুকুর ও খেলাঘরের।
৬৫তম ম্যাচ, বিকেএসপি
প্রাইম ব্যাংক ক্রিকেট ক্লাব ২০১/৯, ৫০ ওভার
গাজী গ্রুপ ১৬৭ অল-আউট, ৪৫.২ ওভার
প্রাইম ব্যাংক ৩৪ রানে জয়ী
সনজিত সাহা ও নাসুম আহমেদের দারুণ বোলিংয়ে প্রাইম ব্যাংককে অল্পতেই বেঁধে ফেলেছিল গাজী গ্রুপ। তবে মাইশুকুর রহমানের ৭৪ রানের পরও গাজী গ্রুপ আটকে গেছে ১৬৭ রানেই।
টসে জিতে ব্যাটিংয়ে নেমে প্রাইম ব্যাংক ৯২ রানেই হারিয়েছিল ৬ উইকেট। এরপর নাঈম হাসান ও আরিফুলের হকের দুইটি ৩৪ রানের ইনিংসের সঙ্গে মনির হোসেনের অপরাজিত ২৫ রানে ২০১ পর্যন্ত গিয়েছিল প্রাইম ব্যাংক। তাদের মূল ক্ষতিটা করেছিলেন সনজিত, ১০ ওভারে মাত্র ৩০ রানে ৩ উইকেট নিয়েছিলেন এই অফস্পিনার। এ মৌসুমে তিনি খেললেন ৪ ম্যাচ, তাতেই তার উইকেটসংখ্যা ১৪টি।অবশ্য দল সুপার লিগে না যাওয়াই নিজেকে দুর্ভাগা ভাবতেই পারেন তিনি। সনজিত ছাড়াও উইকেট পেয়েছেন নাসুম ও কামরান দুটি করে, একটি করে আবু হায়দার ও কামরুল রাব্বি।
রানতাড়ায় ১৮ রানে ১ উইকেট হারালেও শুরুটা এরপর ভালই ছিল গাজীর। একসময় ১২৬ রানে ৩ উইকেট ছিল তাদের। তবে এরপরই নেমেছে ধস, ২২ রানের ব্যবধানে ৪ উইকেট হারিয়েছে তারা। ১৬১ রানের মাথায় চোট পেয়ে উঠে গেছেন মাইশুকুর, গাজীর আশাও মোটামুটি শেষ হয়ে গেছে তাতেই।
এ জয় দিয়ে সুপার লিগে প্রাইম ব্যাংক যাচ্ছে আবাহনীর সমান ১৬ পয়েন্ট নিয়ে।
৪ ম্যাচে ১৪ উইকেট নিয়েছেন সনজিত, তবে সুপার লিগে খেলা হচ্ছে না তার দল গাজী গ্রুপের/প্রাইম ব্যাংক
৬৬তম ম্যাচ, ফতুল্লা
বিকেএসপি ২৪৯/৭, ৫০ ওভার
মোহামেডান স্পোর্টিং ক্লাব ২৫২/৯, ৪৯.৫ ওভার
মোহামেডান ১ উইকেটে জয়ী
ফতুল্লায় মোহামেডানকে প্রায় ভড়কে দিয়েছিল বিকেএসপি। রোমাঞ্চকর ম্যাচে ১ বল বাকি থাকতে জয় নিশ্চিত করেছে মোহামেডান, নিশ্চিত হয়েছে সুপার লিগ। শেষ ওভারে ১ উইকেট নিয়ে মোহামেডানের প্রয়োজন ছিল ৯ রান, মাসুম খানকে কাজি অনিক ও সাকলাইন সজিবের দুই বাউন্ডারিতে সেটা পেয়ে গেছে তারা। এর আগে ফিফটি করেছেন দুজন- লিটন দাস ৫৩ ও অভিষেক মিত্র ৬৫। সঙ্গে ছিল ইরফান শুক্কুরের ৪১ ও রকিবুল হাসানের ৩৫ রান। বিকেএসপির হাসান মুরাদ ৪ উইকেট নিয়েছেন ৩০ রানে।
টসে জিতে ব্যাটিংয়ে নামা বিকেএসপি মৌসুমে নিজেদের দ্বিতীয় সর্বোচ্চ স্কোর গড়েছিল আমিনুল ইসলামের ৬০, শামিম হোসেনের ৪৯ রানের পর আকবর আলি ও পারভেজ হোসেনের ৩৮ রানের দুটি ইনিংসে। শেষ ১০ ওভারে বিকেএসপি তুলেছিল ৮৫ রান। মোহামেডানের রাহাতুল ফেরদৌস ৩৭ রানে নিয়েছেন ৩ উইকেট।
৬৪তম ম্যাচ, মিরপুর
খেলাঘর সমাজকল্যাণ সমিতি ১৯০ অল-আউট, ৪৮.২ ওভার
শাইনপুকুর ক্রিকেট ক্লাব ১৬৫/৬, ৪১ ওভার (লক্ষ্য ৪১ ওভারে ১৫৬)
শাইনপুকুর ডিএল পদ্ধতিতে ১৫ রানে জয়ী
ওপাশে মোহামেডানের ম্যাচ যখন গড়িয়েছে শেষ ওভারে, এদিকে বৃষ্টিবাধায় আটকে আছে শাইনপুকুর। অবশ্য ডিএল পদ্ধতিতে এগিয়ে ছিল বলে নিজেদের কাজটা করে রেখেছিল তারা, মোহামেডান হারলেই সুপার লিগে চলে যাওয়ার সুযোগ ছিল তাদের। তা হয়নি, খেলাঘরের বিপক্ষে জয়টাই সান্ত্বনা হয়ে থাকলো তাদের।
মিরপুরে টসে হেরে ব্যাটিংয়ে নেমে খেলাঘরের কেউই সে অর্থে ইনিংস বড় করতে পারেননি, হয়নি বড় কোনও জুটিও। চারে নামা অমিত মজুমদারের ৩৭ রানের পর আটে নামা মাসুম খানের ৪০ রানে ভর করে ১৯০ পর্যন্ত গিয়েছিল তারা। ১০ ওভারে ২৭ রানে ৩ উইকেট নিয়ে শাইনপুকুরের সেরা বোলার দেলোয়ার হোসেন, ২টি করে নিয়েছেন আফিফ হোসেন ও হামিদুল ইসলাম।
শাইনপুকুরকে রানতাড়ায় ৫৪ রানের ওপেনিং জুটিতে ভাল শুরু এনে দিয়েছিলেন সাদমান ইসলাম ও উন্মুক্ত চাঁদ। পরের জন ৩৪ রানে ফিরলেও সাদমান শেষ পর্যন্ত করেছেন ৬৪ রান। মাঝে একদফা বৃষ্টিবাধায় বন্ধ ছিল খেলা, ৪৭ ওভারে শাইনপুকুরের লক্ষ্য নেমে এসেছিল ১৮৪ রানে। এরপর দ্বিতীয়দফা বৃষ্টি- যা শেষ পর্যন্ত আর খেলাই হতে দেয়নি- নামার আগে ধীমান ঘোষের ৩১ রানের ইনিংসে ডিএল পদ্ধতিতে এগিয়ে গিয়েছিল শাইনপুকুর।