• আয়ারল্যান্ড ত্রিদেশীয় সিরিজ ২০১৯
  • " />

     

    ফাইনালের প্রস্তুতিতে প্রাপ্তি রাহী-লিটন-সাইফ, অস্বস্তি সাকিব

    ফাইনালের প্রস্তুতিতে প্রাপ্তি রাহী-লিটন-সাইফ, অস্বস্তি সাকিব    

    আয়ারল্যান্ড ৫০ ওভারে ২৯২/৮ (স্টার্লিং ১৩০, পোর্টারফিল্ড ৯৪; রাহী ৫/৫৮, সাইফ উদ্দিন ২/৪৩, রুবেল ১/৪১ )

    বাংলাদেশ ৪৩ ওভারে ২৯৪/৪ (লিটন ৭৬, তামিম ৫৭, সাকিব ৫০ আহত অবসর, মুশফিক ৩৫, মাহমুদউল্লাহ ৩৫*; র‍্যাঙ্কিন ২/৪৮)

    ফলঃ বাংলাদেশ ৬ উইকেটে জয়ী


    ক্লনটার্ফে সকালটা ছিল মেঘে ঢাকা। তবে একটু একটু দিন গড়িয়েছে, আর বাংলাদেশের দিনটা শুধু ভরে গেছে আলোয়। নিজেদের ইতিহাসের চতুর্থ সর্বোচ্চ রান তাড়া করে ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে ফাইনালের প্রস্তুতিটাও সেরে রেখেছে। এটাও আবার ৬ উইকেট আর ৪২ বল হাতে রেখেই। এত আলোর মধ্যে একটাই সংশয়ের মেঘ, চোট নিয়ে মাঠ ছেড়েছেন সাকিব আল হাসান। বিশ্বকাপের আর দুই সপ্তাহ বাকি, বাংলাদেশ আশা করবে তাঁর চোট গুরুতর কিছু হবে না।

    মাশরাফি বিন মুর্তজা এই ম্যাচ থেকেও অনেক প্রাপ্তি খুঁজে নিতে পারেন। নিয়মরক্ষার বলেই আজ বিশ্রাম পেয়েছিলেন সৌম্য, মিরাজ, মোস্তাফিজ ও মিঠুন। একাদশে সুযোগ পেয়ে সেটি সবচেয়ে বেশি কাজে লাগিয়েছেন রাহী আর লিটনই। ক্যারিয়ারের মাত্র দ্বিতীয় ওয়ানডে খেলতে নেমে ৫ উইকেট পেয়েছেন রাহী। লিটন দাস সাত ইনিংস পর পেয়েছেন ঝলমলে ফিফটি। সাইফ উদ্দিন দেখিয়েছেন ডেথে এখন বাংলাদেশের বড় ভরসা তিনি। তারপরও সাকিবের চোট ফিরে ফিরে আসবেই।

    ফিফটি পূর্ণ করার সময়েই টান পেয়েছিলেন কোমরের মাংসপেশীতে। ঔষধ খেয়ে কিছুক্ষণ চালিয়েও যাচ্ছিলেন, কিন্তু এরপর আর ব্যাট করেননি। সতর্কতা হিসেবেই মাঠ ছেড়েছেন, সেটাই আশা করবে বাংলাদেশ। অবশ্য কাজের কাজটা তার আগেই করে ফেলেছিলেন লিটন আর তামিম। সৌম্য না থাকায় আজ লিটনের সুযোগ ছিল টপ অর্ডারে নিজের দাবিটা জানান দেওয়ার। তামিমের সঙ্গে জুটিটাও জমে গিয়েছিল দ্রুত, প্রথম ১০ ওভারেই এলো ৫৩ রান। তামিম শুরুতে একটু বেশি আগ্রাসী ছিলেন, লিটনও এরপর খেলেছেন হাত খুলে। ১৫ ওভারের ভেতর দুজনের জুটিতে উঠে গেছে শত রান, এর মধ্যে ৪৬ বলে ফিফটি পেয়েছেন তামিম। লিটনও পেয়েছেন ৪৭ বলে, সাত ইনিংস পর ফিফটি পেলেন।

     

     

    এরপরেই র‍্যাঙ্কিনের বলে প্লেড অন হয়ে গেলেন তামিম, তবে সাকিব আর লিটন গিয়ার বদলাতে দিলেন না। আইরিশদের বাজে বোলিং আর ফিল্ডিংয়ের ফায়দাটা ভালোমতোই নিচ্ছিলেন দুজন, লিটন একটু একটু করে সেঞ্চুরির দিকে এগিয়ে যাচ্ছিলেন। কিন্তু এরপরেই মনযোগ হারিয়ে ফেললেন, ৬৭ বলে ৭৬ রান করে বোল্ড হয়ে গেলেন ম্যাকার্থির বলে। মুশফিক প্রথম বলেই মারলেন চার, রান রেট সাতের কাছাকাছিই রাখছিলেন। সাকিবের সঙ্গে জুটিতে ৬৪ রানও যোগ করে ফেলেছিলেন। মাত্র পঞ্চম উইকেটকিপার হিসেবে ওয়ানডেতে ৫ হাজার রানও হয়ে গেল চার মেরে। কিন্তু পরের বলেই লেগ সাইডে খেলতে গিয়ে ক্যাচ তুলে দিলেন, উইলসন নিলেন দারুণ একটা ক্যাচ। ৩৩ বলে ৩৫ রান করেই ফিরে গেলেন।

    সাকিব আর মাহমুদউল্লাহ ম্যাচটা শেষ করে আসবেন বলেই মনে হচ্ছিল। কিতু এরপর সাকিবের চোটে মাঠ ছাড়া, মোসাদ্দেকও পারলেন না ম্যাচ শেষ করে আসতে। সেই সুযোগটা পেলেন সাব্বির, আর অন্য পাশে ২৯ বলে ৩৫ রান করে মাহমুদউল্লাহ নিজেকে ঝালিয়ে নিলেন ফিনিশারের ভূমিকায়।

    তার আগে রাহীর জন্য দিনটা ছিল অন্যরকম। বিশ্বকাপ দলে সুযোগ পেয়েও বাদ পড়ে যাওয়ার একটা গুঞ্জন ছিল, খানিকটা অপ্রত্যাশিতভাবেই আজ সুযোগ মিলে গেল প্রথম একাদশে। আজও শুরু থেকে সুইং পাচ্ছিলেন, আউটের সুযোগও তৈরি করেছিলেন। তবে প্রথম ব্রেক থ্রু দিলেন রুবেল হোসেনই, ফেরালেন ম্যাকুলামকে। শেষ পর্যন্ত আগের ম্যাচের সেঞ্চুরিয়ান বালবির্নিকে আউট করে নিজের প্রথম ওয়ানডে উইকেট পেলেন রাহী।

    এরপরের গল্পটা শুধু স্টার্লিং আর পোর্টারফিল্ডের। শুরুতে একটু স্লথ হলেও পরে সেটা পুষিয়ে দিয়েছেন দুজন। তৃতীয় উইকেটে দুজন যোগ করেছেন ১৭৪ রান, পোর্টারফিল্ডকে ৯৪ রানে ফিরিয়ে জুটিটা ভেঙেছেন রাহীই। স্টার্লিং অবশ্য অন্য প্রান্তে রুদ্রমূর্তিতে, সাকিবের এক ওভার থেকে ২৩ রান নিয়েছেন। নিজের ক্যারিয়ারেই এক ওভারে কখনো এত রান দেননি সাকিব!

    আয়ারল্যান্ড যখন ৩০০র পথে, সেখান থেকে টেনে ধরার কাজ শুরু করলেন রাহী। এক ওভারে ফেরালেন ও ব্রায়েন ও স্টার্লিংকে। ১৪১ বলে ১৩০ রানের দারুণ একটা ইনিংস খেলে স্টার্লিং অবশ্য এর মধ্যেই ক্লনটার্ফকে দেখাচ্ছিলেন আশা। তবে রাহী পরের ওভারে ফেরালেন উইলসনকে। শেষ ওভারে দুই উইকেট আর দুই রান দিয়ে ৩০০র নিচে আটকানোর কাজটা করে ফেলেছেন সাইফ উদ্দিন। তখনও কে জানত, ৩৫০ দিলেও হয়তো সেটি অনায়াসেই পেরিয়ে যেত বাংলাদেশ!