• " />

     

    যেভাবে এলো ফ্রাঙ্ক ওরেল ট্রফি

    যেভাবে এলো ফ্রাঙ্ক ওরেল ট্রফি    

    ১৪ ডিসেম্বর, ১৯৬০ সাল। অস্ট্রেলিয়া ও ওয়েস্ট ইন্ডিজের ‘ফ্রাঙ্ক ওরেল ট্রফি’র প্রথম টেস্টের শেষ দিন। ক্যারিবিয়ান পেসার ওয়েস হল যখন ম্যাচের শেষ ওভারটি করতে প্রস্তুত, গ্যাবা’র অফিসিয়াল ঘড়িতে সময় তখন ৫:৫৬। অজিদের শেষ ওভারে ম্যাচ জিততে প্রয়োজন ছিল ৬ রান, হাতে তিন উইকেট। অস্ট্রেলিয়ায় তখন ওভার হতো আট বলে। ওয়েস হল তাঁর ওভারের দ্বিতীয় বলেই আউট করে দেন রিচি বেনোকে, রান প্রয়োজন পাঁচ। শেষ তিন বলে তখন তিন রান দরকার। ছয় নম্বর বলে তিন রান নিতে গিয়ে রান আউট হয়ে ফিরেন ওয়েলি গ্রাউট। ম্যাচ তখন টাই। সাত নম্বর বলে নতুন ব্যাটসম্যান লিন্ডসে ক্লাইন স্কয়ার লেগে বল ঠেলে দিয়েই দৌড় দেন। কিন্তু, ঐ প্রান্ত থেকে দৌড়ে আসা মেকিফ ক্রিজে পৌছানোর আগেই ১২ মিটার দূর থেকে অসাধারণ এক থ্রোতে স্টাম্প ভেঙে দেন ক্যারিবিয়ান জো সলোমন। ফলে ইতিহাসে প্রথমবারের মত কোন টেস্ট ম্যাচ টাই হয়ে যায়।

     

    ‘ফ্রাঙ্ক ওরেল ট্রফি’র লড়াইটা শুরু হয় ইতিহাসের সেই প্রথম ‘টাই’ ম্যাচ থেকেই। ক্রিকেট বোর্ড অব কন্ট্রোল এবং স্যার ডন ব্র্যাডমানের নির্দেশে অস্ট্রেলিয়া-ওয়েস্ট ইন্ডিজের দ্বৈরথের চিরস্থায়ী ট্রফি বানানোর দায়িত্ব দেয়া হয়েছিল সাবেক ক্রিকেটার ও মনিকার আর্নি ম্যাককর্মিককে। অ্যাশেজের মতই সম্মানজনক ‘ফ্রাঙ্ক ওরেল ট্রফি’তে যোগ করা হয়েছিল ইতিহাসের প্রথম টাই ম্যাচের বলটি। অজি ও ক্যারিবিয়ানদের দ্বৈরথের এই ট্রফিটির নামকরণ করা হয়েছিল ওয়েস্ট ইন্ডিজের প্রথম কৃষ্ণাঙ্গ অধিনায়ক স্যার ফ্রাঙ্ক ওরেলের নামে। এই ক্যারিবিয়ান ছিলেন ‘দ্য থ্রি ডব্লিউ’ এর অন্যতম একজন। তাছাড়া ইতিহাসের প্রথম ব্যক্তি হিসেবে প্রথম শ্রেণীর ক্রিকেটে ৫০০ রানের জুটি গড়েছিলেন। মজার ব্যাপার হলো নিজের নামে হওয়া ট্রফির প্রথম ম্যাচে খেলেছিলেন ফ্রাঙ্ক ওরেল। এমনকি সেই ম্যাচে ওয়েস্ট ইন্ডিজের দ্বিতীয় ইনিংসের সর্বোচ্চ রান সংগ্রাহকও তিনিই।

     

     বেনোর সাথে ফ্রাঙ্ক ওরেল

     

    ১৯৬০ সালে ক্রিকেটে নতুন এক দ্বৈরথ শুরু হওয়ার পর পেরিয়ে গেছে প্রায় ৪৫ বছর। এই দীর্ঘ সময়ে অস্ট্রেলিয়া-ওয়েস্ট ইন্ডিজের মধ্যকার এই ঐতিহাসিক লড়াইয়ে ক্রিকেটপ্রেমীরা সুযোগ পেয়েছে ম্যাকগ্রা-লারা, ওয়ালশ-ওয়াহ কিংবা চ্যাপেল-হোল্ডিং দ্বৈরথ দেখার। এখন পর্যন্ত ‘ফ্রাঙ্ক ওরেল ট্রফি’র সিরিজ হয়েছে মোট ২৩ টি। এর মধ্যে সবচেয়ে বেশি ১৩ বার কাপ জিতেছে অস্ট্রেলিয়া। অন্যদিকে ক্যারিবিয়ানদের হাতে শিরোপা উঠেছে ৮ বার, বাকি দুইবার সিরিজ ড্র। অজি ও ক্যারিবিয়ানদের এই দ্বৈরথে দলগত অর্জনে পিছিয়ে থাকলেও ব্যক্তিগত অর্জনে এগিয়ে আছে ক্যারিবিয়ানরাই। ‘ফ্রাঙ্ক ওরেল ট্রফি’র লড়াইয়ে রান সংগ্রাহকদের তালিকার প্রথম চারজনই ওয়েস্ট ইন্ডিজের। সবার উপরে থাকা ব্রায়ান লারার রান ২৮১৫। তাঁর পরে রয়েছেন ভিভি রিচার্ডস, হেইন্স, ক্লাইভ লয়েড এবং পাঁচ নম্বরে স্টিভ ওয়াহ। ব্যাটিংয়ের মত বোলিংয়েও এগিয়ে ওয়ালশ-অ্যামব্রোসরা। প্রথমে অবস্থান করা ওয়ালশের উইকেট সংখ্যা ১৩৫ আর ২য়তে থাকা অ্যামব্রোসের শিকার ১২৮ টি। এই তালিকায় ১১০ উইকেট নিয়ে তিন নম্বর অবস্থানে আছেন গ্লেন ম্যাকগ্রা। মজার ব্যাপার হলো, ব্যাটসম্যানদের সেরা পঞ্চাশ জনের তালিকায় বর্তমান অজি ও ক্যারিবিয়ান দলের কোন খেলোয়াড়ই নেই। অন্যদিকে বোলারদের তালিকার শেষ দিকে নাম রয়েছে শুধু কেমার রোচ ও ন্যাথান লায়নের।

     

    ‘ফ্রাঙ্ক ওরেল ট্রফি’র ইতিহাসে নাম জুড়ে আছে অনেক বিখ্যাত ক্রিকেটারের। সোবার্স, লয়েড, বেনো, চ্যাপেল ও বর্ডারদের হাত ধরে ক্রিকেটের ঐতিহাসিক এই লড়াইয়ে মাঠে নেমেছেন ওয়ালশ, অ্যামব্রোস, ম্যাকগ্রা, লারা কিংবা স্টিভ ওয়াহরাও। ৪৫ বছর পুরনো এই দ্বৈরথের এখন দায়িত্ব এখন স্মিথ-হোল্ডারদের উপর। বলা যায়, ‘ফ্রাঙ্ক ওরেল ট্রফি’র ইতিহাসে সবচেয়ে আনাড়ি দল হিসেবেই ডিসেম্বরের ১০ তারিখে মাঠে নামবে অস্ট্রেলিয়া ও ওয়েস্ট ইন্ডিজের নতুন প্রজন্ম।

     

    অজিদের নেতৃত্বে থাকা স্টিভ স্মিথ অধিনায়ক হিসেবে তাঁর দ্বিতীয় সিরিজ খেলতে নামবেন ‘ফ্রাঙ্ক ওরেল ট্রফি’তে। যখন শেষবারের মত ‘ফ্রাঙ্ক ওরেল ট্রফি’র হাতবদল হয়েছিল, এখন পর্যন্ত অধিনায়ক হিসেবে অপরাজিত স্মিথের বয়স  পাঁচ ছিল । অন্যদিকে এখন টেস্ট ম্যাচ তো দূরে থাক কোন ম্যাচের টস জিততে না পারা ক্যারিবিয়ান অধিনায়ক হোল্ডারের বয়সও চারের বেশি ছিল না যখন তাঁরা অজিদের কাছে ‘ফ্রাঙ্ক ওরেল ট্রফি’র রাজত্ব হারিয়েছিল। এরপর গত ২০ বছরে আর ঐতিহাসিক এই ট্রফি নিয়ে উল্লাস করা হয় নি ক্যারিবিয়ানদের। আর তাই হোল্ডার ও তাঁর দলের উপর দায়িত্ব পড়েছে সেই ট্রফি পুনরুদ্ধারের। কিন্তু যেই দলের নির্বাচিত খেলোয়াড়দের থেকে তাঁদের বাদ খেলোয়াড়রাও বেশি জনপ্রিয় সেই দল অজিদের মাঠে কতটা লড়াই করতে পারে সেটাই এখন দেখার বিষয়!