ইউরোর ভাইদের গল্প
দুই ভাইয়ের মধ্যে বয়সের পার্থক্য দেড় বছরের। তবে ছোটবেলা থেকেই শাকা ভাইদের একইরকমের জামা পড়াতেন তাঁদের বাবা-মা; ফলে তাঁদের জমজ ভেবে বিভ্রমে পড়ে যেতেন অনেকেই। কিন্তু, এবার তাঁদের দুইজনকে আলাদা করে খুঁজে নিতে কষ্ট হবে না ফুটবল বিশ্বের। কারণ, দুই ভাইয়ের জার্সির রঙটা এখানে ভিন্ন। ইউরো’১৬ এর আসরে শাকা ভাইয়েরা খেলতে নেমেছেন ভিন্ন দুইদেশের হয়ে! বড়ভাই তোলান্ত শাকার আলবেনিয়া খেলছে ছোটভাই গ্রানিত শাকার সুইজারল্যান্ডের বিপক্ষে।
আরো পড়ুনঃ ভাই যখন 'শত্রু'
বর্তমান ক্রীড়াজগতে সহোদরদের একে অপরের বিপক্ষে প্রতিযোগিতাটা নতুন কিছু নয়। টেনিসে উইলিয়ামস বোনেরা বেশ কয়েকবার লড়েছেন গ্রান্ডস্লামের জন্য, ফর্মুলা ওয়ানের ট্র্যাকে শুমাখার ভাইদের গতির লড়াই দেখেছে বিশ্ব আর গতবছর এনবিএ তে পাও এবং মার্স গ্যাসল ভাইয়েরা খেলেছেন প্রতিপক্ষ হয়ে। ফুটবলেও ঘটনাটি প্রথম নয়, বিশ্বকাপের মঞ্চেই জার্মানি ও ঘানার হয়ে খেলতে নেমেছিলেন বোয়েটেং ভ্রাতৃযুগল। ক্লাব পর্যায়ে জ্যাক ও ববি চার্লটন কিংবা গ্যারি ও ফিল নেভিল ভাইদের লড়াইয়ের সাক্ষীও হয়েছে ফুটবল বিশ্ব। তবে ইউরোর আসরে এমন ঘটনা এটাই প্রথম।
গ্রানিত ও তোলান্ত শাকা ভ্রাতৃদ্বয়ের মত আরো চারজোড়া সহোদর খেলছেন এবারের ইউরো চ্যাম্পিয়নশিপে। তবে অন্য চারজোড়ার জন্য তাঁদের পরিবারের সমর্থনটা থাকছে একই দলে। টুর্নামেন্টের অন্যতম ফেবারিট বেলজিয়াম জাতীয় দলের স্ট্রাইকার রোমেলু লুকাকুর সাথে দেশের হয়ে প্রথম ইউরো জিততে লড়বেন ছোটভাই জর্ডান লুকাকু। তবে বড় ভাই যখন আক্রমনভাগে ব্যস্ত থাকবেন জর্ডানের দায়িত্ব তখন বেলজিয়ামের রক্ষণভাগ সামলানো।
লুকাকুভ্রাতাদের মত এখনো ততটা সৌভাগ্যবান বলা যাচ্ছে না বেলজিয়ামের আরেকজোড়া সহোদরকে। চেলসি তারকা এডেন হ্যাজার্ড দলের মূল কাণ্ডারি হলেও ছোটভাই থরগ্যান হ্যাজার্ড রয়েছেন স্ট্যান্ডবাই লিস্টে।
অন্যদিকে উত্তর আয়ারল্যান্ডের অন্যতম সেরা তারকা জনি ইভানস তাঁদের ইউরো মিশনে সঙ্গী হিসেবে পাচ্ছেন ছোটভাই কোরি ইভানসকে। ওয়েস্ট ব্রুমউইচের খেলোয়াড় জনি ইভানসের চেয়ে তিন বছরের ছোট কোরি। আইরিশদের রক্ষণভাগের দায়িত্বটা মূলত থাকছে জনি ইভানসের কাঁধেই। আর ব্ল্যাকবার্ন রোভার্সের হয়ে খেলা কোরি ইভানসের দায়িত্ব থাকছে ক্রিস ব্রান্ট, স্টুয়ার্ট ডালাসদের সাথে মাঝমাঠ সামলানো।
উত্তর আয়ারল্যান্ডের দুই 'ইভান্স'
লুকাকু কিংবা ইভানস ভ্রাতৃদ্বয়দের চিনতে খুব একটা ঝামেলা না হলেও রাশিয়ার বেরেজুতস্কি ভ্রাতাদের আলাদা করে চিহ্নিত করার কাজটা সহজ হবে না ধারাভাষ্যকারদের জন্য! ভাসিলি এবং অ্যালেকসেই ভাইদের দুইজনের বয়সই তেত্রিশ। তাছাড়া দুইভাই-ই খেলেন রক্ষণভাগে! সিএসকেএ মস্কোর এই দুই সহোদর এর আগে ২০০৮ ইউরো চ্যাম্পিয়নশিপেও খেলেছিলেন একসাথে। বলা হয়, রাশিয়ার সাবেক কোচ গাস হিডিংক নাকি অ্যালেকসেইকে অধিনায়কের আর্মব্যান্ড দিয়েছিলেন দুইজনকে পৃথক করার উদ্দেশ্যে। এবারের ইউরোতে অবশ্য ভাসিলিই অধিনায়ক।
রাশিয়ান ভাতৃদ্বয়!
এর আগেও বেশ কিছু সহোদরদের খেলতে দেখা গেছে ইউরোর আসরে। জার্মানির হয়ে দুইটি ইউরো চ্যাম্পিয়নশিপে খেলেছিলেন বার্ন্ড এবং কার্লহেইঞ্জ ফ্রস্টার। ১৯৮০ ইউরো জয়ী দলের সদস্য ছিলেন ফ্রস্টার ভ্রাতৃযুগল। ফাইনালে কার্লহেইঞ্জ শুরু থেকে খেললেও বার্ন্ড নেমেছিলেন বদলি হিসেবে। দুই বছর পর বিশ্বকাপের মঞ্চেও জার্মান রক্ষণভাগের মূল দায়িত্ব ছিল এই দুই ভাইয়ের উপর।
তাছাড়া ‘৮৪ ইউরোতেও খেলেছিলেন বার্ন্ড ও কার্লহেইঞ্জ। তবে নেদারল্যান্ডের কোয়ম্যান ভাইয়েরা ফ্রস্টারভ্রাতাদের থেকে একদিক থেকে ভিন্ন। ১৯৮৮ সালে ডাচদের প্রথম ইউরো জয়ের ফাইনালে দুইজনই খেলেছিলেন শুরু থেকে। তাছাড়া সাউদাম্পটনের কোচ ছোটভাই রোনাল্ডের সহকারী হিসেবেও দুই বছর কাজ করেছেন আরউইন কোয়ম্যান।
ইংল্যান্ডের গ্যারি ও ফিল 'নেভিল'
ইউরো চ্যাম্পিয়নশিপে ভ্রাতৃযুগলের কথা উঠলে ইংল্যান্ডের নেভিল ভাইদের কথা আলাদা করেই উল্লেখ করতে হবে। গ্যারি এবং ফিলের মত এতবার ইউরো খেলেন নি অন্যকোন সহোদরেরাই। এই দুই ভাই ইংলিশদের হয়ে ইউরো খেলেছেন মোট তিন আসরে। ১৯৯৬ এর আসরে গ্যারি শুরু থেকে খেললেও কোনোম্যাচই খেলেননি ফিল নেভিল।
তবে ২০০০ সালের ইউরোতে গ্যারি রাইটব্যাক এবং ফিল লেফটব্যাক হিসেবে খেলেছিলেন নিয়মিত; যদিও সেবার গ্রুপ পর্বই পার হতে পারে নি ইংল্যান্ড! আর চারবছর পর পর্তুগালের কাছে হেরে নেভিল ভাইদের ইউরো মিশন শেষ হয়েছিল কোয়ার্টার ফাইনালে।
তাছাড়া ‘৯৮ বিশ্বকাপের অলস্টার দলে থাকা ডেনমার্কের মাইকেল এবং ব্রায়ান লাউড্রপ ভাইয়েরা একসাথে ইউরো খেলেছিলেন ১৯৯৬ সালে। যদিও সেবার নকআউট পর্বের আগেই বিদায় নিতে হয়েছিল ডেনমার্ককে। তবে এর আগের আসরের ডেনমার্ক রূপকথার সাথে জড়িয়ে আছে ব্রায়ান লাউড্রপের নাম।
ইউরোর আসরে খেলা আরেক আলোচিত সহোদর ছিলেন নেদারল্যান্ডের রোনাল্ড এবং ফ্র্যাঙ্ক ডি বোয়্যে। এই দুই জমজ ভাই প্রথম সহোদর ছিলেন যারা চ্যাম্পিয়নস লিগ জিতেছিল; ‘৯৫ তে আয়াক্সের হয়ে। তবে ২০০০ সালের ইউরোর আসর হতাশাজনক ছিল ডি বোয়্যে ভ্রাতাদের জন্য, বিশেষ করে ফ্র্যাঙ্কের জন্য। সেমিফাইনালে ১০ জনের ইতালির বিপক্ষে ম্যাচে নিয়মিত সময়ে এবং ট্রাইব্রেকারে দুই জায়গাতেই পেনাল্টি মিস করেছিলেন ফ্র্যাঙ্ক।
এযাবৎকালে ১২ জোড়া সহোদর খেলেছেন ইউরোপ সেরার লড়াইয়ে। এবারের আসরেই খেলছেন চারজোড়া। গ্রানিত এবং তোল্যান্ট শাকার লক্ষ্য ভিন্ন হলেও বাকিদের উদ্দেশ্য অভিন্ন। প্রত্যেকেই হয়ত চাইবেন ফ্রস্টার কিংবা কোয়ম্যান ভ্রাতাদের মতই নিজেদের নামকে অমর করতে!