রোনালদো ফিরলেন, পর্তুগালও সার্বিয়ায় পেল প্রথম জয়
যতবার ফিরে আসার চেষ্টা করেছে সার্বিয়া, ততোবারই আরও দূরে সরে গেছে পর্তুগাল। আর যতদূর গিয়েছে পর্তুগাল, জয় ততো কাছে এসেছে তাদের। বেলগ্রেডে ছয় গোলের ম্যাচে শেষে পর্যন্ত পর্তুগাল জিতেছে ৪-২ ব্যবধানে। ইউরো বাছাইপর্বে আগের দুই ম্যাচে ছিলেন না ক্রিশ্চিয়ানো রোনালদো। গ্রুপ 'বি'-তে নিজেদের তৃতীয় ম্যাচে এসে ইউরো জয়ী পর্তুগাল পেয়েছে প্রথম জয়। ৩ ম্যাচ শেষে ৫ পয়েন্ট নিয়ে তাদের অবস্থান দুইয়ে। পর্তুগালের চেয়ে দুই ম্যাচ বেশি খেলা ইউক্রেন সবার ওপরে ১৫ পয়েন্ট নিয়ে।
ঘরের মাঠে এই সার্বিয়ার সঙ্গে বাছাইপর্বের শেষ ম্যাচে ড্র করেছিল পর্তুগাল। সেই হিসাবে বেলগ্রেডে ম্যাচটা আরও প্রতিদ্বন্দ্বীতাপূর্ণ হওয়ার কথা ছিল পর্তুগালের জন্য। ৪-২ গোলের স্কোরলাইন দেখে অবশ্য বোঝার উপায় কম। তবে পর্তুগালের জয়টা একেবারে সহজও ছিল না।
পর্তুগালের চার গোলের একটি করেছেন ক্রিশ্চিয়ানো রোনালদো। ৮০ মিনিটে রোনালদোর গোলের আগে ম্যাচে গোল হয়েছে আরও তিনটি। প্রথমার্ধে রোনালদো অরোনালদো সুলভ দুইটি গোলের সুযোগ হাতছাড়া না করলে অবশ্য ৮০ মিনিটের গোলে হ্যাটট্রিকও পূরণ হতে পারত তার।
প্রথম গোলের জন্য পর্তুগালকে অপেক্ষা করতে হয়েছিল ৪২ মিনিট পর্যন্ত। ডানদিক থেকে উড়ে আসা ক্রস ধরতে সার্বিয়া গোলরক্ষক দৌড়ে গিয়েছিলেন গোলবার ছেড়ে। ডিফেন্ডার নিকোলা মিলিঙ্কোভিচের সঙ্গে সংঘর্ষের পর বলের নাগাল হারিয়েছিলেন তিনি। ভাগ্যক্রমে বল পেয়ে গিয়েছিলেন উইলিয়াম কারভালহো। এরপর ফাঁকা বারে বল ঠেলে দিয়ে পর্তুগালকে এগিয়ে নিয়েছিলেন তিনি।
এর আগে ২৮ ও ২৯ মিনিটে রোনালদো দুইটি সহজ সুযোগ হাতছাড়া করেন। প্রথমবার সিক্স ইয়ার্ড বক্সের ঠিক আগে বল পেয়ে মিলিঙ্কোভিচের ব্লকের কাছে হার মানেন। দ্বিতীয় দফায় বল পেয়েছিলেন গোলের একেবারে সামনে বল পেয়েছিলেন। পায়ে বল লাগাতে পারলেই হয়ত পেয়ে যেতেন গোল। কিন্তু ঠিকমতো সেটাই করতে পারেননি। তাই তখন আর এগিয়েও যাওয়া হয়নি পর্তুগালের।
বিরতির ঠিক পর পর অবশ্য গোলে দুইবার শট করেন রোনালদো। এর মধ্যে একবার ফ্রি কিক থেকে। তবে লক্ষ্যে শট রাখতে পারেননি একবারও। পরে ৫৮ মিনীটে গঞ্জালো গিদেস দারুণ এক গোল করে স্বস্তি এনে দেন ফার্নান্দো সান্তোসের দলকে। ডিবক্সের বাইরে বল রিসিভ করে এক টার্নে ছিটকে ফেলেছিলেন প্রতিপক্ষ ডিফেন্ডারকে, বল নিয়ে সামনে এগিয়ে কোণাকুণি দুর্দান্ত এক ফিনিশে গোল করেন ভ্যালেন্সিয়া ফরোয়ার্ড।
দুই গোলে পর্তুগাল এগিয়ে যাওয়ার পর সার্বিয়া ম্যাচে ফিরতে সময় নেয় আরও ১০ মিনিট। দুসান টাডিচের কর্নার থেকে লাফিয়ে উঠে হেডে গোল করেন মিলিঙ্কোভিচ। চুপ মেরে যাওয়া বেলগ্রেডে আবার ফেরে প্রাণের সঞ্চার। বদলি অ্যাডাম লিয়াইচ প্রায় ২৫ গজ দূর থেকে শট করে রুই প্যাট্রিসিওকে কাঁপিয়ে দিয়েছেন পরের মিনিটেই। তাতে দুই গোলে পিছিয়ে থাকা ম্যাচে সমতায় ফেরার আশাও দেখছিল সার্বিয়া।
সার্বিয়াকে আশাহত করেন পর্তুগাল অধিনায়ক। বের্নার্দো সিলভার থ্রু পাস রোনালদোকে ওয়ান অন ওয়ান পরিস্থিতিতে ফেলে দিয়েছিল। ডান পায়ের আউট সাইড অফ দ্য বুটে শুধু গোলরক্ষকের ওপর দিয়ে বলটা তুলে দিয়ে জালে পাঠিয়েছেন রোনালদো। এক গোল দিয়ে ফিরে আসার স্বপ্ন দেখতে থাকা সার্বরা এরপর পিছিয়ে যায় যোজন দূরে।
তবে সার্বিয়া নিজেদের কপালের দোষও ভাবতে পারে। সিলভা পাস দেওয়ার সময় রোনালদো অনসাইডে ছিলেন কী না সেটা নিয়ে বিতর্ক করার যথেষ্ট রসদ আছে তাদের কাছে। রোনালদোর গোলের পর সমর্থকেরা মাঠ ছাড়তেও শুরু করেছিলেন। তবে ম্যাচ শেষের ৫ মিনিট আগে অ্যালেক্সান্ডার মিত্রোভিচ গোলার মতো শটে আরেক গোল শোধ দিয়ে ফিরে যাওয়া সমর্থকদের আবার ফেরত আনেন মাঠে।
কিন্তু ম্যাচের গল্পটাই এমন, সার্বিয়ার দরকার যখন এক গোল তখনই যেন তারা খুব বেশি ভঙ্গুর। দুই গোলের লিড ফেরত পেতে তাই দুই মিনিট সময়ও লাগেনি পর্তুগালের। বের্নার্দো সিলভা দারুণ এক গোল করে ব্যবধান আবার ৪-২ করলেন। এরপর বাকি সময়ে ওই লিডটাই ধরে রেখছে পর্তুগাল।
পর্তুগাল কোচ দ্বিতীয়ার্ধে তিনটি বদলিই করিয়েছিলেন। নেলসন সেমেদো শুরু করেছিলেন, হুয়াও ক্যান্সেলো নেমেছিলেন তার জায়গায়। হোয়াও ফেলিক্স শেষ ২০ মিনিট সুযোগ পেয়েছেন। তবে ম্যাচে তেমন কিছু করার সুযোগ আসেনি তার সামনে। বাছাইপর্বে পর্তুগালের পরের প্রতিপক্ষ লিথুনিয়া।
ইউরো বাছাইয়ে একই সময়ে শুরু হওয়া গ্রুপ এইচের অন্য ম্যাচে ফ্রান্স জিতেছে ৪-১ গোলে। আলবেনিয়ার বিপক্ষে ঘরের মাঠে জোড়া গোল করেছেন কিংসে কোমান, অলিভিয়ের জিরু ও জোনাথন ইকোনে করেছেন বাকি দুই গোল। অ্যান্টোয়ান গ্রিযমান ৩৭ মিনিটে পেনাল্টি থেকে গোল করতে ব্যর্থ না হলে জয়ের ব্যবধান বাড়ত ফ্রান্সের। শেষে গিয়ে আলবেনিয়া পেনাল্টি থেকে শোধ করেছে এক গোল। ৫ ম্যাচ শেষে ১২ পয়েন্ট নিয়ে গ্রুপে সবার ওপরে ফ্রান্স। আর সমান পয়েন্ট নিয়ে গোলব্যবধানে পিছিয়ে থাক তুরস্ক ও আইসল্যান্ড আছে যথাক্রমে দুই ও তিন নম্বরে।