• চ্যাম্পিয়নস লিগ
  • " />

     

    রিয়ালের হাহাকার, টের স্টেগান নাম্বার ওয়ান- চ্যাম্পিয়নস লিগ যা শেখাল

    রিয়ালের হাহাকার, টের স্টেগান নাম্বার ওয়ান- চ্যাম্পিয়নস লিগ যা শেখাল    

    মিডফিল্ডের হাহাকার, নাজেহাল রিয়াল   

    রিয়াল মাদ্রিদের বিপক্ষে পিএসজির শেষ গোলটি দেখেছেন নিশ্চয়ই? রিয়াল মাদ্রিদের অসহায় ডিফেন্ডাররা কেবল তাড়া করে গেছেন। আর হুয়ান বের্নাট ও থমাস মুনিয়ের তাদের নিয়ে করেছেন ছেলে খেলা। এরও আগে অ্যানহেল ডি মারিয়া ম্যাচ থেকে ছিটকে দিয়েছিলেন রিয়ালকে। জিনেদিন জিদানের চ্যাম্পিয়নস লিগে ফেরাটা হয়েছে দুঃস্বপ্নের মতো।

    জিদান শেষ যখন রিয়ালকে নিয়ে চ্যাম্পিয়নস লিগের ডাগ আউটে ছিলেন, সেবার তৃতীয়বারের মতো ইউরোপ সেরা হয়েছিল রিয়াল। মাত্র বছর খানেকের খানিকটা বেশি আগের ঘটনা, অথচ এই রিয়ালকে দেখে সেটাই মনে হচ্ছে অতি অতীত ইতিহাস। 

    লা লিগায় চার ম্যাচে দুই জয় আর দুই ড্র রিয়ালের নড়বড়ে অবস্থান ইঙ্গিত দিয়ে রেখেছিল। পিএসজির বিপক্ষে নাজেহাল রিয়ালের প্রমাণ মিলেছে। জিদান দ্বিতীয় দফায় প্রায় ছয় মাসের মতো সময়ে এখনও স্থিতিশীলতা ফিরিয়ে আনতে পারেননি।

    ক্রিশ্চিয়ানো রোনালদো নেই। সে ধাক্কা রিয়াল এখনও সামলে উঠতে পারেনি। তবে রিয়ালের নাজেহাল দশার কারণ কি শুধু সেটাই? রিয়ালের টানা তিন চ্যাম্পিয়নস লিগ জয়ে রোনালদোর নেতৃত্ব দিয়েছেন। তবে রসদটা জুগিয়েছে মিডফিল্ড। পিএসজির বিপক্ষে গ্যারেথ বেল, এডেন হ্যাজার্ড করিম বেনজেমাদের নিষ্ক্রিয় থাকার কারণ রিয়ালের অকার্যকর মিডফিল্ড। টনি ক্রুস গত মৌসুম থেকেই নিজেকে হারিয়ে খুঁজছেন। লুকা মদ্রিচ ছিলেন না ইনজুরির কারণে। তিনি থাকলেও কতখানি হাল ধরতে পারতেন সেটা নিয়েও সংশয় আছে। তিনিও তো রাশিয়া বিশ্বকাপের পর থেকে নিজেকে হারিয়ে খুঁজছেন। কাসেমিরো, ক্রুসের সঙ্গে নেমেছিলেন হামেস রদ্রিগেজ। মার্কো ভেরাত্তি, ইদ্রিসা গায়া আর মার্কিনিয়োসের মিডফিল্ডের কাছে বড্ড সাদামাটা ছিলেন রিয়ালের তিন মিডফিল্ডার। রিয়াল ম্যাচটা হেরেছে এই জায়গাতেই।

    পিএসজি ম্যাচ নিয়ন্ত্রণ করেছে, রিয়াল পালন করেছে নীরব দর্শকের ভূমিকা। রক্ষণের সমস্যাটা আড়াল করাও সহজ নয়। অ্যানহেল ডি মারিয়া নিখুঁত শটে দ্বিতীয় গোলটি করেছেন। কিন্তু প্রশ্ন হচ্ছে ডিবক্সের সামনে অতোখানি জায়গা তিনি পেলেন কী করে? 

    সার্জিও রামোস দলে ফিরলে হয়ত নেতৃত্বগুণেই আরও একবার দাপিয়ে নক আউট পর্বে উঠে যাবে রিয়াল। হ্যাজার্ড মানিয়ে নিলে আক্রমণেও ধার ফিরে আসবে। কিন্তু মিডফিল্ডে স্থিতিশীলতা না ফেরা পর্যন্ত আপাতত ভালো কিছুর স্বপ্ন দেখা রিয়ালের জন্য কঠিনই। 


    টের স্টেগান নাম্বার ওয়ান? 
    বরুশিয়া ডর্টমুন্ডের বিপক্ষে মার্ক আন্দ্রে টের স্টেগান একাই দেয়াল হয়ে দাঁড়িয়েছেন। সেটা পুঁজি করে জার্মানি থেকে এক পয়েন্ট নিয়ে ফিরেছে বার্সেলোনা। টের স্টেগানের জন্য অবশ্য এমন পারফরম্যান্স নতুন কিছু নয়। বার্সেলোনায় আসার পর থেকেই দলের অন্যতম সেরা পারফর্মার তিনি। যদিও লিওনেল মেসির ছায়ায় পড়ে বেশিরভাগ আলোচনায় আসা হয় জার্মান গোলরক্ষকের। ধরুন, মেসি বদলি হিসেবে নেমে শেষে গিয়ে গোলটি যদি করেই বসতেন সেক্ষেত্রেও হয়ত কিছুটা আড়াল হয়ে যেতেন টের স্টেগান। বাস্তবতা এটাই, মেসি-রোনালদোদের যুগে তাদের ছাপিয়ে দলের অন্য কারও আকর্ষণ কাড়া কঠিন।

    প্রাপ্য প্রশংসাটা এবার তাই পাচ্ছেন স্টেগান। গত কয়েক মৌসুম ধরেই স্টেগান অবিশ্বাস্য সব সেভ করে যাচ্ছেন। বার্সায় তার জায়গা নেওয়ার কেউ নেই। তবে স্টেগানের আফসোস অন্য জায়গায়। জার্মানিতে এখনও প্রথম পছন্দ নন তিনি। ম্যানুয়েল নয়্যারকেই পছন্দ ইউর্গি লাভের। এরপর প্রথম পছন্দের গোলরক্ষক হতে আর কি করতে পারেন স্টেগান?  

    নয়্যার স্টেগানের চেয়ে অভিজ্ঞতায় এগিয়ে অনেক। দলের অধিনায়কও তিনি। তারওপর বিশ্বকাপ জয়ী কিংবদন্তী। ইনজুরিতে কারণে তার খেলা না হলে সুযোগ পান স্টেগান। আপাতত ধৈর্য্য ধরা তাই আর তেমন উপায় নেই স্টেগানের। 
     

    এসেছে নতুন শিশু 
    বয়স ১৯। নিজেকে চিনিয়েছিলেন অনুর্ধ্ব ২০ বিশ্বকাপে।  এক ম্যাচে ৯ গোল করলে না চেনানোর কারণ নেই। বয়স যেহেতু কম ওখানেই আপাতত থামতে পারতেন। কিন্তু দুই মাস পর আবার এলেন আলোচনা। এবার চ্যাম্পিয়নস লিগ অভিষেকে হ্যাটট্রিক। সালজবুর্গের হয়ে গেঙ্কের বিপক্ষে হ্যাটট্রিক করেছেন প্রথমার্ধ শেষের আগেই। 

    এর্লিং ব্রুট হালান্ড। নামটা এবার মনে রাখুন। চ্যাম্পিয়নস লিগে যারা এমন কীর্তি গড়েছেন তাদের নাম আপনার জানাই আছে। অভিষেকে হ্যাটট্রিক করা দ্বিতীয় ফুটবলার হালান্ড, আরেকজন ওয়েন রুনি। আর টিনএজার হয়ে চ্যাম্পিয়নস লিগে হ্যাটট্রিক করা ফুটবলার এর আগে ছিলেন দুইজন। একজন রুনি, আরেকজন রাউল গঞ্জালেজ। নরওয়েজিয়ান ফুবটলারকে মনে না রাখার কোনো কারণ নেই আপনার।  

    ইংলিশ দুর্যোগ
    গতবার চ্যাম্পিয়নস লিগের ফাইনাল খেলেছে ইংলিশ দুইদল। নতুন মৌসুমটা ইংলিশ ক্লাবগুলোর জন্য শুরু হলো ব্যর্থতা দিয়ে। একমাত্র ম্যানচেস্টার সিটি জিতেছে নিজেদের ম্যাচে। লিভারপুল নাপোলির কাছে হেরেছে, চেলসি ঘরের মাঠে হেরেছে ভ্যালেন্সিয়ার কাছে। আর অলিম্পিয়াকোসের মাঠে দুই গোলের লিড হাতছাড়া করে ড্র করেছে গতবারের রানার আপ টটেনহাম হটস্পার। শুরুটা মোটেই সুবিধার হয়নি ইংলিশ ক্লাবগুলোর জন্য। 

    ডি মারিয়াকে নিয়ে কথা হোক 
    রিয়াল মাদ্রিদের বিপক্ষে জোড়া গোল করে  অনন্য এক রেকর্ড গড়ে ফেলেছেন আর্জেন্টাইন ফরোয়ারর্ড। চ্যাম্পিয়নস লিগের ইতিহাসে রিয়াল মাদ্রিদ ও বার্সেলোনা দুই ক্লাবের বিপক্ষেই জোড়া করা গোল মাত্র দ্বিতীয় খেলোয়াড় তিনি। প্যারিসে বার্সেলোনাকে ৪-০ গোলে হারানোর স্মৃতিটা বেশিদিন সুখ যোগায়নি পিএসজিকে। ডি মারিয়ার ওই পারফরম্যান্স হারিয়ে গেছে তাই। রিয়ালের বিপক্ষে হ্যাটট্রিকও পেতে পারতেন। অল্পের জন্য মিস করেছেন। পিএসজির তৃতীয় গোলেও তার অবদান ছিল তার। 

    নেইমার নেই, কিলিয়ান এমবাপ্পে নেই। এডিনসন কাভানিও ছিলেন না। দলের মূল তিন খেলোয়াড়কে যে পিএসজি মিস করেনি তার একমাত্র কারণ ডি মারিয়া। বার্সেলোনার বিপক্ষে  ২০১৭ সালে দ্বিতীয় রাউন্ডে  সেই জোড়া গোল। এর দুই বছর পর ম্যানচেস্টার ইউনাইটেডের বিপক্ষে প্রথম লেগে আবারও ডি মারিয়ায় উজ্জ্বল ছিল পিএসজি। সেবারও দ্বিতীয় লেগে হেরে স্মৃতি ভোলার চেষ্টা প্যারিসিয়ানদের। কিন্তু দুঃসহ স্মৃতিতে বারবার আড়াল হবেন কেন ডি মারিয়া?

    গতবার নেইমার ইনজুরিতে পড়ার পর তার জায়গায় নেমে ডি মারিয়া বড় ভূমিকা পালন করেছিলেন। শেষ গিয়ে লিগ আনের সেরা খেলোয়াড় নির্বাচিত হয়েছিলেন তিনি। অথচ নেইমার, এমবাপ্পেরা ফিরলে একাদশে তার জায়গাটাই হয়ে যায় নড়বড়ে। ওই তিনজন থাকলে রিয়ালের বিপক্ষেও হয়ত বেঞ্চেই থাকতে হত। কিন্তু ডি মারিয়া তো বারবার প্রমাণ করছেন নিজেকে। এবার তাকে নিয়েও একটু কথা হোক।