এমবাপ্পে, স্টার্লিংয়ের হ্যাটট্রিকের রাতে গোলবন্যা চ্যাম্পিয়নস লিগে
চ্যাম্পিয়নস লিগের তৃতীয় ম্যাচ ডে দেখেছে মোট ৩৬ গোল। আরেকটু হলে এক রাতে সবচেয়ে বেশি ৪০ গোলের রেকর্ডটাও ছোঁয়া হয়ে যেত। পিএসজির হয়ে কিলিয়ান এমবাপ্পে ও ম্যানচেস্টার সিটির হয়ে রাহিম স্টার্লিং নিজ নিজ ম্যাচে করেছেন হ্যাটট্রিক। জোড়া গোল আছে পাউলো দিবালা, হ্যারি কেইন ও মাউরো ইকার্দির। পিএসজি, ম্যান সিটির মতো টটেনহাম হটস্পারও প্রতিপক্ষকে দিয়েছে মোট ৫ গোল।
আটালান্টাকে উড়িয়েও দুশ্চিন্তায় গার্দিওলা
ইতিহাদে ম্যান সিটিকে চমকে দিয়েছিল আটালান্টা। পেনাল্টি থেকে গোল করে ইতালিয়ান ক্লাবটিই আগে লিড নিয়েছিল। প্রিমিয়ার লিগের শেষ ম্যাচের মতো এদিনও তিনজনের ব্যাকলাইন খেলিয়েছিলেন পেপ গার্দিওলা। শুরু থেকেই সেটা নড়বড়ে মনে হচ্ছিল। পরে আটালান্টাকে পেনাল্টি উপহার দিয়ে বসেন ফার্নান্দিনহো।
এরপর সার্জিও আগুয়েরোর ৩৪ ও ৩৮ মিনিটের গোলে দ্রুতই ম্যাচে ফেরে ম্যান সিটি। প্রথম গোলটি স্টার্লিংয়ের ক্রস থেকে লাফিয়ে উঠে পা ছুঁয়ে ও পরের গোলটি স্পটকিক থেকে করেন আগুয়েরো। কিন্তু ৪১ মিনিটে রদ্রি হ্যামস্ট্রিং ইনজুরি নিয়ে মাঠ ছাড়ার পর হতাশ হতে হয় গার্দিওলাকে। সাইড বেঞ্চে গুঁতো দিয়ে নিজের হতাশা আড়াল করতে পারেননি স্প্যানিশ কোচ।
এমনিতেই আয়মেরিক লাপোর্তে নেই বহুদিনের জন্য। জন স্টোনস আর নিকোলাস অটামেন্ডি দুইজনের একজনের ওপরও যে তার ভরসা নেই সেটা বুঝিয়ে দিয়েছেন গত দুই ম্যাচের একাদশ দিয়ে। রদ্রির অনুপস্থিতিতে তাই ফার্নান্দিনহোকে সেন্টারব্যাকে খেলানোর অবস্থাও থাকছে না গার্দিওলার সামনে। রদ্রি মাঠ ছাড়ার পর তার বদলি হিসেবে স্টোনসকে নামিয়েছিলেন গার্দিওলা।
দ্বিতীয়ার্ধে নেমেছিলেন অটামেন্ডিও। তবে তার আগেই ম্যাচে পুরো নিয়ন্ত্রণ নেওয়া হয়ে গিয়েছিল সিটির। রাহিম স্টার্লিং হ্যাটট্রিক করেছেন ১১ মিনিটের ব্যবধানে। প্রথমটা ৫৮, পরেরটা ৬৪ আর শেষটি ৬৯ মিনিটে। তবে এই অর্ধের শেষদিকেও আরেকবার হতাশ হতে হয়েছে গার্দিওলাকে। নির্ধারিত সময়ের ৮ মিনিট বাকি থাকতে দ্বিতীয় হলুদ কার্ড দেখে মাঠ ছেড়েছেন ফিল ফোডেন। মাত্র দ্বিতীয়বারের মতো এই মৌসুমে গার্দিওলার একাদশে সুযোগ হয়েছিল তার। ৬ মিনিটের ব্যবধানে দুই হলুদ কার্ড দেখাটা তার নিজের জন্য অবশ্য আরও হতাশার।
অবশ্য বড় জয়ে দ্বিতীয় রাউন্ডের পথে অনেক দূর এগিয়ে গেছে সিটি। পরের ম্যাচে ইতালিতে আটালান্টার মাঠে জয় পেলেই টানা সপ্তমবারের মতো চ্যাম্পিয়নস লিগের দ্বিতীয়পর্বে উঠে যাবে ইংলিশ চ্যাম্পিয়নরা।
আরও পড়ুনঃ জোড়া গোলে জুভেন্টাসকে উদ্ধার করলেন দিবালা
এমবাপ্পের গোলের, ডি মারিয়ার অ্যাসিস্টের হ্যাটট্রিক
কিলিয়ান এমবাপ্পে একাদশেই ছিলেন না। নেমেছিলেন ৫২ মিনিটে। এরপর হ্যাটট্রিক পূরণ করেছেন তিনি। বদলি হিসেবে নেমে কোনো খেলোয়াড়ের হ্যাটট্রিক চ্যাম্পিয়নস লিগ দেখল ১১ বছর পর। শেষ হ্যাটট্রিক করা ফুটবলার অবশ্য বিখ্যাত কেউ নন। এমবাপ্পে চ্যাম্পিয়নস লিগে ১৫ গোলের মাইলফলক ছুঁয়ে ফেলেছেন ক্লাব ব্রুজের বিপক্ষে। তাতে পেছনে ফেলেছেন রথী-মহারথী কাতারের লোকদের। ১৫ গোলের হিসাবে এই মাইলফলক ছোঁয়া তরুণতম ফুটবলার এখন তিনি। পেছনে ফেলেছেন লিওনেল মেসি ও রাউল গঞ্জালেজকে।
ক্লাব ব্রুজকে বেলজিয়ামে পিএসজি বিধ্বস্ত করেছে ৫-০ ব্যবধানে। নেইমার, এমবাপ্পে, এডিনসন কাভানিদের অনুপস্থিতিতে মাউরো ইকার্দি, অ্যানহেল ডি মারিয়ার সঙ্গে আক্রমণে ছিলেন চুপো মটিং। পাবলো সারাবিয়াও ছিলেন না। কিন্তু গোল পেতে কষ্ট হয়নি পিএসজির। ম্যাচের ৭ মিনিটে ডি মারিয়ার ক্রস থেকে গোল করেন ইকার্দি।
প্রথমার্ধে ১-০ ব্যবধানে শেষ হওয়ার পর চুপোর জায়গায় নামেন এমবাপ্পে। নেমে দশ মিনিটের মধ্যেই পেয়ে যান গোল। দুই মিনিট পর ইকার্দিকে দিয়ে করান আরেক গোল। তাতে পিএসজির জার্সিতে ইকার্দির গোল গিয়ে দাঁড়ায় পাঁচে। দলে নিয়মিত সুযোগ না পেলেও নিয়মিত গোল ঠিকই করে চলেছেন আর্জেন্টাইন স্ট্রাইকার। এরপর এমবাপ্পে হ্যাটট্রিক পূরণ করেছেন ডি মারিয়ার আরও দুইটি পাস থেকে।
টটেহামের পাঁচ, পাঁচ গোলের ম্যাচে বায়ার্নের জয়
সব হতাশা রেড স্টার বেলগ্রেডের ওপর ঝেড়েছে টটেনহাম হটস্পার। প্রায় এক মাস পর জয়ের স্বাদ পেয়েছে তারা। হ্যারি কেইন ও হিউ মিন সন করেছেন জোড়া গোল। এসব কিছু আপাতত মাউরিসিও পচেত্তিনোকে সাহস যোগাতে পারে। সমর্থকেরাও নিজেদের মাঠে গলা ছেড়ে পচেত্তিনোর প্রতি সমর্থন জানিয়ে গেছে। এমন রাত দরকার ছিল টটেনহামের।
অবশ্য রেড স্টারের দুর্বলতাগুলো টটেনহামকে বড় জয় পেতে সাহায্য করেছে কী না সেটা নিয়ে বিতর্ক থাকতে পারে। ম্যাচের মিনিটে এরিক লামেলার ক্রস থেকে হিউ মিন সন যখন টটেনহামের দ্বিতীয় গোল করলেন, তখনই একরকম খেলার ফল নির্ধারণ হয়ে গিয়েছিল। এর কিছুক্ষণ আগে লামেলার আরেকটি কর্নার থেকেই হেডে গোল করেছিলেন কেইন।
প্রথমার্ধে শেষের আগেই ব্যবধান ৩-০ করে টটেনহাম। সন পেয়ে যান দ্বিতীয় গোল। ৫৭ মিনিটে নিজের প্রাপ্য গোলটা পান লামেলাও। এরপর টাঙ্গুয়ে এনদম্বেলেও নিজের দ্বিতীয় অ্যাসিস্ট পান ম্যাচে। প্রথমটি গোলটি করিয়েছিলেন সনকে, শেষটি ৭২ মিনিটে কেইনকে দিয়ে।
আরও পড়ুনঃ তুরস্কে গ্যালাতাসারের বিপক্ষে রিয়ালের তুরুপের তাস ক্রুস
এই গ্রুপের অন্য ম্যাচে বায়ার্ন মিউনিখকে গ্রিসে জিততে কিছুটা লড়াই করতে হয়েছে। আগের ম্যাচে টটেনহামকে ৭-০ গোলে উড়িয়ে দেওয়ার পর অলিম্পিয়াকোসের সঙ্গে ৩-২ ব্যবধানে জিতেছে বায়ার্ন। ইউসুফ এল আরাবির গোলে এগিয়ে গিয়েছিল অলিম্পিয়াকোসই। কিন্তু এরপর রবার্ট লেভানডফস্কি দুই অর্ধে দুইবার গোল করে ম্যাচে ফেরান বায়ার্নকে। পরে কোরেন্তিন তোলিসোও আরেক গোল যোগ করেন। সেটা কতোখানি গুরুত্বপূর্ণ ছিল সেটা বোঝা গেছে শেষে। ৭৯ মিনিটে আরেক গোল শোধ দিয়ে বসেছিল অলিম্পিয়াকোস। তবে গ্রিসে আর জয় হাতছাড়া হয়নি ম্যানুয়েল নয়্যারের দলের। এই ম্যাচ দিয়ে জার্মান গোলরক্ষক হিসেবে চ্যাম্পিয়নস লিগে সর্বোচ্চ ম্যাচ খেলা অলিভার কানের রেকর্ডে ভাগ বসিয়েছেন নয়্যার।