• চ্যাম্পিয়নস লিগ
  • " />

     

    মানে-সালাহর বোঝাপড়া ফিরে পাওয়ার রাতে ম্যারাডোনাকে টপকে গেলেন মার্টেন্স

    মানে-সালাহর বোঝাপড়া ফিরে পাওয়ার রাতে ম্যারাডোনাকে টপকে গেলেন মার্টেন্স    

    চ্যাম্পিয়নস লিগ ম্যাচডে ৩-এ রীতিমত গোলের বন্যা বইয়ে দিয়েছিল প্যারিস সেইন্ট জার্মেই, ম্যানচেস্টার সিটিরা। আগের দিনের মত গোলের ফুলঝুড়ি না ছুটলেও ম্যাচডে ৪-ও পিছিয়ে নেই খুব একটা। লিভারপুল, বার্সেলোনা, ইন্টার মিলান, নাপোলিদের ম্যাচের রাতে গোল হয়েছে ২৩টি। ইয়ুর্গেন ক্লপের দলের হয়ে গোল পেয়েছেন অ্যালেক্স অক্সলেড-চেম্বারলেইন, সাদিও মানেরা। ইন্টারের হয়ে জাল খুঁজে পেয়েছেন লাউতারো মার্টিনেজ, আন্তোনিও কান্দ্রেভা। সালজবুর্গের মাঠে নাপোলির হয়ে জয় ছিনিয়ে দ্রিস মার্টেন্স এবং লরেঞ্জো ইনসিনিয়েরা।

     

    মার্টিনেজ, কান্দ্রেভায় ডর্টমুন্ডকে হারাল ইন্টার

    ১৯৯৩-৯৪ মৌসুমে শেষবার দেখা হয়েছিল দুই দলের। বরুশিয়া ডর্টমুন্ডকে সেবার কোয়ার্টার ফাইনালে হারিয়ে ইউয়েফা কাপ ঘরে তুলেছিল ইন্টার মিলান। ২৫ বছর পর আবারও দেখা হল দু’দলের। গ্রুপপর্বের প্রথম ম্যাচে এবারও শেষ হাসি হাসল ‘নেরাজ্জুরি’রা। সান সিরোতে ২০১৯-২০ চ্যাম্পিয়নস লিগে ‘এফ’ গ্রুপের ম্যাচে মার্টিনেজ এবং কান্দ্রেভার গোলে ডর্টমুন্ডকে ২-০ গোলে হারিয়েছে আন্তোনিও কন্তের দল।

    নিজেদের মাঠে শেষ ছয় ম্যাচে জার্মান প্রতিপক্ষের বিপক্ষে জয়ের দেখা পায়নি ইন্টার। সান সিরোতে ম্যাচের শুরু থেকে আবারও সেই আশঙ্কাই জেঁকে বসেছিল কন্তের দলকে। তবে গোলরক্ষক সামির হান্দানোভিচ ছিলেন দুর্দান্ত ফর্মে। ডর্টমুন্ডের অন্তত দুটি নিশ্চিত গোল ফিরিয়ে দিয়েছেন তিনি। ডর্টমুন্ডের গোল মিসের সুযোগটা দারুণভাবে কাজে লাগায় ইন্টার। ২২ মিনিটে ডিফেন্ডার স্টিফেন দে ফ্রাইয়ের লম্বা পাস দুর্দান্তভাবে নিয়ন্ত্রণে এনে এগিয়ে আসা ডর্টমুন্ড গোলরক্ষক রোমান বুর্কিকে পরাস্ত করেন মার্টিনেজ। গত সপ্তাহে সাসুউলোর বিপক্ষে জোড়া গোলের পর আবারও গোল করলেন আর্জেন্টাইন স্ট্রাইকার। গোলের পরই ফর্মেশন বদলে ৩-৪-৩ ফর্মেশনে খেলতে থাকে ডর্টমুন্ড। কিন্তু তাতে কাজ হয়নি খুব একটা। দুই উইং দিয়ে কোয়াদো আসামোয়া এবং কান্দ্রেভা সুযোগ পাচ্ছিলেন বেশ। প্রথমার্ধের শেষদিকে আরেকটু হলেই ব্যবধান দ্বিগুণ করতে পারত ইন্টার, কিন্তু এবার লুকাকুকে ফিরিয়ে দেন বুর্কি।

     

     

    প্রথমার্ধে আক্রমণে একেবারেই সুবিধা না করতে পারা ডর্টমুন্ড অবশ্য জেগে ওঠে দ্বিতীয়ার্ধে। কিন্তু প্রথমার্ধের মত দ্বিতীয়ার্ধেও দুর্দান্ত ফর্মে ছিলেন হান্দানোভিচ। মার্কো রয়েস, পাকো আলকাসেরের অভাবটা একেবারেই বুঝতে দেননি জেডন সানচো, থরগান হ্যাজার্ডরা। হান্দানোভিচকে দুবার একাও পেয়ে গিয়েছিলেন সানচো, কিন্তু ইন্টার অধিনায়ক দুবারই ফিরিয়ে দিয়েছেন তাকে। দ্বিতীয়ার্ধের শেষদিকে জয় নিশ্চিত করার দারুণ সুযোগ পেয়েছিল ইন্টার; কিন্তু ১২ গজ থেকে এবার মার্টিনেজকে ফিরিয়ে দিয়েছেন বুর্কি। তবে দ্বিতীয়ার্ধের যোগ করা সময়ে প্রতি-আক্রমণে মার্সেল ব্রোজোভিচের থ্রু পাস থেকে ইন্টারের জয় নিশ্চিত করেন কান্দ্রেভা। ‘এফ’ গ্রুপে তিন ম্যাচ শেষে ডর্টমুন্ডের সমান ৪ পয়েন্ট হলেও হেড টু হেডে এগিয়ে থাকায় দুইয়ে আছে ইন্টার; তিন-এ থাকল ডর্টমুন্ড।

     


    আরও পড়ুন: কাঠ-খড় পুড়িয়ে প্রাগ থেকে জয় নিয়ে ফিরল বার্সেলোনা


     

    সালাহ-মানের দেওয়া নেওয়ার খেলায় বড় জয় লিভারপুলের

    বার্নলি ম্যাচে সাদিও মানেকে পাস না দেওয়ার পর থেকেই মোহামেদ সালাহর সাথে তার সম্পর্কের ব্যাপারে গুঞ্জন চলছিল বেশ। ক্লপ অবশ্য আগেই বলেছিলেন; কোনো ধরণের ব্যক্তিগত রেষারেষি নেই মানে-সালাহর মাঝে। গেঙ্কের মাঠে বড় জয়ে সেটাই যেন প্রমাণ করলেন তারা। মানে গোল করলেন সালাহর পাস থেকে, সালাহর গোল আসল মানের পাসে। গেঙ্কের মাঠে আক্রমণের দুই মূল কাণ্ডারির বোঝাপড়া ফিরে পাওয়ার দিনে ৪-১ গোলের বড় জয় পেয়েছে লিভারপুল।

    চ্যাম্পিয়নস লিগে প্রতিপক্ষের মাঠে শেষ ১০ ম্যাচে মাত্র একবার জয় পেয়েছিল ক্লপের দল। বেলজিয়ানদের বিপক্ষে ‘অল রেড’দের একাদশে ইনজুরি কাটিয়ে ফিরেছিলেন নাবি কেইটা; একাদশে ছিলেন চেম্বারলেইনও। ম্যাচের ২ মিনিটেই ফাবিনহোর লম্বা পাস ডিবক্সে নিয়ন্ত্রণে এনে লিভারপুলকে এগিয়ে নেন তিনি। প্রথমার্ধে গেঙ্ককে রীতিমত আক্রমণের জোয়ারে ভাসিয়েছে লিভারপুল। প্রথম ৪৫ মিনিটে গোলে ৮টি শট নিয়েছিলেন মানে-সালাহরা; কিন্তু গেঙ্ক গোলরক্ষক গায়তান কুচকা ছিলেন দুর্দান্ত।

     

     

    মানে-সালাহরা তিনবার একা পেয়ে গিয়েছিলেন তাকে; কিন্তু প্রতিবারই তাদের খালি হাতে ফিরিয়ে দিয়েছেন কুচকা। তবে দ্বিতীয়ার্ধে আর মানেদের আটকাতে পারেননি কুচকাও। ব্যবধান দ্বিগুণও করেছেন চেম্বারলেইনই। ৫৭ মিনিটে রবার্তো ফিরমিনোর পাস থেকে গোল করেন তিনি। দ্বিতীয়ার্ধে আরও দুই গোল করে লিভারপুল, তবে বড় ব্যবধানের জয়ের চেয়েও সালাহ-মানের বোঝাপড়াটাই হয়তো ম্যাচ থেকে ক্লপের সবচেয়ে বড় পাওয়া। দ্বিতীয়ার্ধের যোগ করা সময়ে রোমানিয়ান কিংবদন্তী গিওর্গি হাজির ছেলে ইয়ানিস হাজির গোলে ব্যবধান কমিয়েছে গেঙ্ক।

     


    আরও পড়ুন: দুই বদলির জাদুতে আয়াক্সকে হারিয়ে দিল ল্যাম্পার্ডের চেলসি


     

    জোড়া গোলে সালজবুর্গকে হারানোর রাতে ম্যারাডোনাকে ধরে ফেললেন মার্টেন্স

    ‘ই’ গ্রুপে অন্য ম্যাচে সালজবুর্গের মাঠ থেকে অল্পের জন্য পূর্ণ তিন পয়েন্ট নিয়ে ফিরেছে নাপোলি, ৩-২ গোলের জয় পেয়েছে তারা। জোড়া গোল করে নাপোলি সর্বোচ্চ গোলদাতাদের তালিকায় ডিয়েগো ম্যারাডোনাকে (১১৫) ছাড়িয়ে গেলেন দ্রিস মার্টেন্স (১১৬), আর ৬ গোল করলেই মারেক হামসিককে (১২১) টপকে বনে যাবেন নাপোলির সর্বোচ্চ গোলদাতা। আগের ম্যাচে অ্যানফিল্ডে আরেকটু হলেই দুর্দান্ত এক প্রত্যাবর্তনের গল্প নিয়ে ফিরতে পারত সালজবুর্গ। রেডবুল অ্যারেনাতে আবারও নিজেদের সামর্থ্যের জানান দিয়েছে অস্ট্রিয়ান ক্লাবটি। নিজেদের মাঠে শুরুতেই নাপোলির জালে বল পাঠিয়েছিলেন আর্লিং ব্রাউট হালান্ড, কিন্তু ‘ভিএআর’-এ অফসাইডের কারণে বাতিল হয় তার গোল। তবে ১৭ মিনিটে হোসে মারিয়া কায়েহনের থ্রু পাস থেকে কার্লো আনচেলত্তির দলকে এগিয়ে নেন দ্রিস মার্টেন্স।

    গোল বাতিল হলেও দমে যায়নি সালজবুর্গ, আবারও অস্ট্রিয়ানদের আক্রমণভাগের নেতৃত্ব দিয়েছেন হালান্ড। কিন্তু নাপোলি গোলরক্ষক অ্যালেক্স মেরেট ছিলেন দারুণ ফর্মে। শুধু হালান্ডেরই দুটি নিশ্চিত গোল প্রথমার্ধে ফিরিয়ে দিয়েছেন তিনি। তবে ৪০ মিনিটে আর নরওয়ের স্ট্রাইকারকে ফেরাতে পারেননি মেরেট, অবশ্য সেজন্য তার চেয়ে রাইটব্যাক মালকুইটের ভুলটাই ভুগিয়েছে নাপোলিকে। হোয়াংকে ডিবক্সে ফেলে দিয়ে সালজবুর্গকে পেনাল্টি উপহার দেন মালকুইট, ১২ গজ থেকে দলকে সমতায় ফেরান হালান্ড। প্রথমার্ধে তার ভুলে সালজবুর্গ সমতায় ফিরলেও দ্বিতীয়ার্ধে মালকুইটের ক্রসেই লিড ফিরে পায় নাপোলি। দুর্দান্ত এক সোলো রানে সালজবুর্গের তিন ডিফেন্ডারকে কাটিয়ে ডিবক্সে মার্টেন্সকে খুঁজে পান তিনি, গোল করতে ভুল করেননি বেলজিয়ান ফরোয়ার্ডও।

     

     

    তবে প্রথমার্ধের মত দ্বিতীয়ার্ধেও সালজবুর্গের হয়ে মার্টেন্সের জবাবটা দেন হালান্ডই। জুনুজোভিচের ক্রস থেকে হেডে মেরেটকে দ্বিতীয়বারের মত পরাস্ত করেন তিনি। ৩ ম্যাচে ৬ গোল করে ২০১৯-২০ চ্যাম্পিয়নস লিগে আপাতত সর্বোচ্চ গোলদাতা হালান্ডই। নরওয়ের স্ট্রাইকারের সাথে দ্বৈরথটা নিজে জিততে না পারলেও সালজবুর্গ থেকে নাপোলির জয় নিশ্চিত করেছেন মার্টেন্সই। হালান্ডের গোলের মিনিটখানেক পরই তার পাস থেকে ব্যবধান ৩-২ করেন লরেঞ্জো ইনসিনিয়ে। ‘ই’ গ্রুপে তিন ম্যাচ শেষে ৭ পয়েন্ট নিয়ে লিভারপুলকে (৬) টপকে শীর্ষে উঠে গেল আনচেলত্তির দল। ৩ পয়েন্ট নিয়ে তিন-এ থাকল হালান্ডের সালজবুর্গ।

    রাতের অন্যান্য ম্যাচে ‘জি’ গ্রুপে জেনিত সেইন্ট পিটার্সবুর্গকে ২-১ গোলে হারিয়েছে আরবি লাইপজিগ। একই গ্রুপে একই ব্যবধানে লিঁওকে হারিয়েছে বেনফিকা। ‘এইচ’ গ্রুপে লিলের সাথে ১-১ গোলে ড্র করেছে ভ্যালেন্সিয়া।