• শেখ কামাল ক্লাব কাপ
  • " />

     

    ৫ গোল, ৪ লাল কার্ডের ম্যাচে চেন্নাইকে হারাল বসুন্ধরা কিংস

    ৫ গোল, ৪ লাল কার্ডের ম্যাচে চেন্নাইকে হারাল বসুন্ধরা কিংস    

    দুই দেশের দুই চ্যাম্পিয়ন। বাংলাদেশের বসুন্ধরা কিংস আর ভারতের চেন্নাই সিটি। দুইদলের ম্যাচটা জমজমাট হওয়ারই কথা ছিল। কিন্তু মাঠে লড়াই পরিণত হলো যুদ্ধে। রেফারি মোট চারবার দেখিয়েছেন লাল কার্ড। দুই দলের দুই কোচকে ডাগ আউট ছাড়তে হয়েছে তাতে। আরও দুই লাল কার্ড দেখেছেন চেন্নাই সিটির দুইজন। নয় জনের চেন্নাইও কিংসকে হতাশ করে যাচ্ছিল পুরো সময়। রোমাঞ্চকর ম্যাচ শেষে দেখল আরও এক গোল। ৮৮ মিনিটে  জালাল কেদুর সেই গোলে হাঁফ ছেড়ে বেঁচেছে কিংসরা। ৩-২ গোলে জিতে টুর্নামেন্টের প্রথম জয় পেয়েছে বাংলাদেশ চ্যাম্পিয়নরা।  

    শেখ কামাল ক্লাব কাপে 'বি' গ্রুপের দ্বিতীয় ম্যাচে জয় পেয়ে তাই সেমিফাইনালের আশা টিকে থাকল বসুন্ধরা কিংসের। আর টানা দুই ম্যাচ হেরে চেন্নাইয়ের সেই সম্ভাবনা শেষ হয়ে গেছে। গ্রুপের শেষ ম্যাচে কিংসদের প্রতিপক্ষ মালয়েশিয়ার তেরেঙ্গানু এফসি। 

    বসুন্ধরাকে স্বস্তির জয় এনে দেওয়ায় সবচেয়ে বড় অবদান লেবানিজ স্ট্রাইকার জালাল কেদুর। জোড়া গোল করেছেন তিনি। ম্যাচের একেবারে শুরুতেও দলকে এগিয়ে নেওয়ার কাজটা করেছিলেন কেদু। মাত্র ৬ মিনিটে বাম দিক থেকে চেন্নাইয়ের বক্সের ভেতর পড়া ক্রস বখতিয়ার হেডে ফ্লিক করেন। পেনাল্টি স্পটের কাছাকাছি জায়গায় ছিলেন কেদু, ছিলেন ফাঁকায়ও। এক টাচে বল নিয়ন্ত্রণ নিয়ে বাম পায়ের দুর্দান্ত ভলিতে গোল করেন তিনি।

    ম্যাচের তালগোল পাকিয়ে যায় এরপর থেকেই। ২৩ মিনিটে মিডফিল্ডে দুই দলের বল কাড়াকাড়ি নিয়ে ফাউল ডেকেছিলেন শ্রীলঙ্কার রেফারি লাকমাল উইরাকদি। সেটা নিয়েই ঝামেলা কি না সেটা অবশ্য নিশ্চিত হওয়া যায়নি।  চেন্নাইয়ের জাপানিজ ফুটবলার কাতসুমি ইউসা এরপর রেগেমেগে মাঠ থেকে বেরিয়ে যান। একবার ফিরে এসে মারতেও গিয়েছিলেন রেফারিকে। এরপর ১২ মিনিট খেলা বন্ধ রাখতে হয় রেফারিকে। কাতসুমি অনুমিতভাবেই দেখেন লাল কার্ড। 

    বসুন্ধরা কিংসের খেলোয়াড়রা অবশ্য এই ঘটনায় ছিলেন নীরব দর্শক। বরং চেন্নাইকে বুঝিয়ে-শুনিয়ে এরপর মাঠে ফিরিয়ে আনতেও সাহায্য করেন তারা। কিন্তু এরপর মেজাজের সঙ্গে মাঠের খেলায় চেন্নাই ফুটবলারদের বড় পরিবর্তনও দেখা যায়। তাতে বসুন্ধরাই উলটো চাপে পড়ে গোল খেয়ে বসে। 

    বিশ্বনাথ ঘোষ ভুলটা করেছিলেন। বাংলাদেশের বক্সের সামনে তার কাছ  থেকে বল ছিনিয়ে নিয়ে যান মাশুর শেরিফ। এরপর পেদ্রো মানজিকে দিয়ে গোল করান তিনি। প্রথমার্ধ এরপর শেষ ১-১ সমতায়। অবশ্য বিরতির আগেই একটি পেনাল্টি পেতে পারত বসুন্ধরা কিংস। কলিনদ্রেসকে বক্সের ভেতর ফাউল করেও অবশ্য পার পেয়ে গেছেন চেন্নাই ডিফেন্ডার। রেফারির চোখ এড়িয়ে গেছে ঘটনা।   

    প্রথমার্ধে আরেকটি লাল কার্ড দেখতে পারত চেন্নাই। পেছন থেকে শেরিফ ভয়াবহ এক ট্যাকেল করেছিলেন কিংসে মিডফিল্ডার বখতিয়ারকে। সেই ফাউল কেন্দ্র করে ডাগ আউটে উত্তপ্ত বাক্য বিনিময়ের পর উলটো লাল কার্ড দেখেছেন অস্কার ব্রুজোন ও মোহাম্মদ আকবর। 

    দশ জনের চেন্নাইয়ের বিপক্ষে দ্বিতীয়ার্ধে অবশ্য শুরু থেকে চড়াও হয়নি বসুন্ধরা কিংস। এলিটা কিংসলে বদলি হয়ে মাঠে নেমেছিলেন আক্রমণে ধার বাড়াতে। তিনি অবশ্য প্রভাব ফেলেননি তেমন। তবে এরপরই দ্বিতীয় গোলটি পেয়ে যায় বসুন্ধরা কিংস। দানিয়েল কলিনদ্রেসের ডান দিক থেকে করা করা দূরের পোস্টে ক্রস চেন্নাইয়ের ফাঁকা জালে ঢুকিয়ে দেন বখতিয়ার। 

    কিন্তু এরপর আবার চিত্রনাট্য প্রথমার্ধের মতোই। ৬৯ মিনিটে রবার্তো সুয়ারেজ, কলিনদ্রেসকে ফাউল করে দ্বিতীয় হলুদ কার্ড দেখে মাঠ ছাড়েন। এর কিছুক্ষণ পর আবার নিজেদের ভুলে গোল খেয়ে বসে বসুন্ধরা কিংস। গোলরক্ষক আনিসুর রহমান জিকো ও ডিফেন্ডার একই বল লুফে নিতে এগিয়ে গিয়েছিলেন। যার মাঠে থাকার কথা ছিল না সেই শেরিফই এরপর দুর্দান্ত এক ভলিতে ফাঁকা বারে গোল করে আবার ম্যাচে ফিরিয়ে আনেন চেন্নাইকে।   

    ১০ জনের পর ৯ জনেরও চেন্নাইও সমতায় ফিরে চমকে দিয়েছিল কিংসদের। অথচ এর আগে জালাল নিজে দারুণ এক গোলের সুযোগ হাতছাড়া না করলে তখনই জয়টা নিশ্চিত হয়ে যেতে পারত তার দলের। সমতায় ফেরার পরও বেশ কয়েকটি সুযোগ তৈরি করেও বসুন্ধরাকে ফিরতে হচ্ছিল খালি হাতে। বদলি রবিউল হাসানেরও অবদান আছে বসুন্ধরার তিন পয়েন্টে। প্রায় ২৫ গজ দূর থেকে গোলে শট নিয়েছিলেন তিনি, গোলরক্ষক নাউজেত গার্সিয়া এর আগে ভালো একটি সেভ করলেও রবিউলের শট ঠেকাতে পারেননি ভালোভাবে। ফলোথ্রুতে এগিয়ে গিয়েছিলেন কেদু, সেখান থেকে আর ভুল করেননি তিনি। নয় জনের দলের বিপক্ষে জিততে না পারার হতাশা তাই আর সঙ্গী হয়নি বসুন্ধরা কিংসের।