• শেখ কামাল ক্লাব কাপ
  • " />

     

    অতিরিক্ত সময়ের গোলে রোমাঞ্চকর ম্যাচ জিতে ফাইনালে চট্টগ্রাম আবাহনী

    অতিরিক্ত সময়ের গোলে রোমাঞ্চকর ম্যাচ জিতে ফাইনালে চট্টগ্রাম আবাহনী    

    রোমাঞ্চকর এক সেমিফাইনাল দেখল চট্টগ্রাম এমএ আজিজ স্টেডিয়াম। ঘরের মাঠে দুইবার পিছিয়ে পড়েও দুইবারই চার্লস দিদিয়েরের গোলে ফিরে এসে চট্টগ্রাম আবাহনী খেলা নিয়ে গিয়েছিল অতিরিক্ত সময়ে। এরপর ১০৫ মিনিটে চিনেদু ম্যাথুর গোলে ম্যাচে প্রথমবারের মতো এগিয়ে গিয়েছিল চট্টগ্রাম আবাহনী। গোকুলাম কেরালাকে এরপর আর ম্যাচে ফেরার সুযোগ দেয়নি তারা। অতিরিক্ত সময় শেষে ৩-২ ব্যবধানে জিতে শেখ কামাল আন্তর্জাতিক ক্লাব কাপের ফাইনালে উঠে গেছে চট্টগ্রাম আবাহনী। 

    ২-২ এ সমতায় থাকা ম্যাচে অতিরিক্ত সময়ে বাঁ দিক থেকে বদলি কাউসার রাব্বির ক্রস বক্সের ভেতর থেকে প্রথমে ভলি করেছিলেন চিনেদু ম্যাথু। গোলরক্ষক উবাইও দুর্দান্ত এক সেভ করে সেই ভলি আটকে দিলেও রিবাউন্ডে আবার হেড করে চিনেদুম্যাথু করেন ম্যাচের পঞ্চম গোলটি। অতরিক্ত সময়ের শেষদিকে গিয়ে চট্টগ্রাম আবাহনীর ডিফেন্ডার রহমত মিয়াও দুর্দান্ত এক ব্লক করে আর এগিয়ে যেতে দেননি গোকুলামকে। দুইবার পিছিয়ে পড়া ম্যাচ জিতে প্রথম আসরের পর আবারও এই টুর্নামেন্টের ফাইনাল নিশ্চিত করল চট্টগ্রাম আবাহনী।   

    টুর্নামেন্টের চমক ছিল গোকুলাম কেরালা। ঢাকা আবাহনী টুর্নামেন্ট শুরুর আগে নাম প্রত্যাহার করে নেওয়ায় দুই দিনের নোটিশে বাংলাদেশের এসেছিল ভারতের ক্লাবটি। এসেই ‘বি’ গ্রুপ থেকে বাংলাদেশ চ্যাম্পিয়ন বসুন্ধরা কিংস ও ভারত চ্যাম্পিয়ন চেন্নাই সিটিকে হারিয়ে তারা উঠে গিয়েছিল সেমিফাইনালে। চমক অবশ্য সেখানেই থেমেছে, তবে এর আগে চট্টগ্রাম আবাহনীকে ঘরের মাঠে কাঁপিয়ে গেছে তারা। 

    আগের ম্যাচে আনকোরা এক একাদশ নামালেও আবাহনী কোচ মারুফুল হক এদিন অনুমিতভাবেই পরীক্ষা-নিরীক্ষা করতে যাননি। জামাল ভুঁইয়া, চিনেদু ম্যাথুরা একাদশে ফিরেছিলেন। কিন্তু শুরুটা চট্টগ্রাম আবাহনী ভালো করলেও গোল পেয়ে যায় গোকুলাম। ২৯ মিনিট বক্সের ঠিক বাইরে বল রিসিভ করে গোলের সামনে চলে যান হেনরি কিসেকা। আবাহনী ডিফেন্ডার জন ইকবলকে আর রিয়াদুল হাসান দুইজনই আটকাতে পারতেন তাকে, একজনও পারেননি। কিসেকা ভুলের সুযোগ নিয়ে করেন ম্যাচের প্রথম গোল।

    দ্বিতীয়ার্ধে অবশ্য খুব বেশিক্ষণ আর পিছিয়ে থাকতে হয়নি আবাহনীকে। এবার রহমত মিয়ার নিজের রক্ষণ থেকে পাঠানো লং বল ক্লিয়ার করতে ভুল করেন গোকুলাম ডিফেন্ডার। সেখান থেকে বল পেয়ে আরিফুল ইসলামের থ্রু পাস ধরে বক্সের ভেতর এগিয়ে গিয়ে কোনাকুনি নিচু ফিনিশে গোল করেন দিদিয়ের। 

    দিদিয়ের দলকে আরও একবার প্রাণ ফিরিয়ে দিয়েছেন একেবারে শেষে গিয়ে। এর আগে দারুণ সব সুযোগ তৈরি করেও এগিয়ে যাওয়া হয়নি চট্টগ্রাম আবাহনীর। স্ট্রাইকার লুকা রতকোভিচ বদলি হয়ে মাঠ ছাড়ার আগ পর্যন্ত দলকে হতাশ করে গেছেন বারবার। ৭১ মিনিটে একবার পেনাল্টির আবেদনও করেছিল চট্টগ্রাম আবাহনী। তবে দুই ডিফেন্ডার কাটিয়ে বক্সের ঢুকতে চাওয়া চিনেদু ম্যাথু পড়ে গেলেও তার আবেদনে সাড়া মেলেনি রেফারির।

    দ্বিতীয়ার্ধে বেশিরভাগ সময়ই আক্রমণ চলেছে চট্টগ্রাম আবাহনীর। এর ভেতর গোকুলাম একবার কঠিন অ্যাঙ্গেল থেকে হসট করেছিল, মোহাম্মদ নেহাল তখন কাছের পোস্টে ছিলেন সতর্ক। কিন্তু ৮০ মিনিটে সেই কাজটা আরেকবার করতে পারেননি নেহাল। সেই মার্কস জোসেফ এবার অন্যপ্রান্তে বক্সের ভেতর থেকে কাছের পোস্টে জোরালো শট করে সফল হয়ে গেলেন। ম্যাচের ১০ মিনিট বাকি থাকতে চট্টগ্রাম আবাহনীও তাই পিছিয়ে পড়ল আরেকবার। 

    মারুফুল হক এর আগেই বদলি হিসেবে একসঙ্গে নামিয়েছিলেন কাউসার রাব্বি ও সোহেল রানাকে। আবাহনীর জয়ে এরপর বড় অবদান রেখেছেন দুইজনই। আবাহনীর শেষ দুইটি গোলের প্রথমটি এসেছে সোহেলের কাটব্যাক থেকে। আরেকটি রাব্বির ক্রস থেকে। শেষদিকে টুর্নামেন্ট থেকে আবাহনীর বিদায় যখন চোখ রাঙাচ্ছিল তখন সুবর্ণ এক সুযোগ হাতছাড়া করেন দিদিয়ের। কিন্তু মিনিট খানেক পরই সেই আফসোস আবার ভুলিয়ে দেন তিনি। বাম প্রান্ত দিয়ে দৌড়ে গিয়ে বাইলাইনের কাছ থেকে বক্সের ভেতর নিখুঁত এক কাটব্যাক করেছিলেন সোহেল রানা। দিদিয়ের এরপর ডান পায়ের শটে গোল করে ৮৯ মিনিটে দলকে সমতায় ফেরান আবারও।

    এমএ আজিজ স্টেডিয়ামকে প্রাণ ফিরিয়ে দেওয়ার পর সেই প্রেরণার সবটুকু আবাহনী কাজে লাগিয়েছে অতিরিক্ত সময়ে গিয়ে। গোকুলামকে এরপর আর সুযোগ দেয়নি আবাহনী। একের পর এক আক্রমণ করে জয়সূচক গোলটাও আদায় করে নেয় তারা। আবারও রাব্বির বাম দিক থেকে ক্রস পরিণত হয় গোলে। আর দিদিয়েরের সঙ্গে চিনেদু ম্যাথুও হয়ে যান ম্যাচের নায়ক। একজন নেতৃত্ব দিয়েছেন ফিরে আসার লড়াই, আরেকজন দলকে নিয়ে গেছেন জয়ের পথে। বাকি সময়ে রক্ষণে মনোযোগী হয়ে চট্টগ্রাম আবাহনী আর গোকুলামকে এগুতে দেয়নি টুর্নামেন্টে।  অতরিক্ত সময়ের দ্বিতীয়ার্ধে গোকুলামের কিসেকা দ্বিতীয় হলুদ কার্ড দেখে মাঠ ছাড়লে কাজটা আরও সহজ হয়ে গিয়েছিল চট্টগ্রাম আবাহনীর জন্য। 

    ঘরের মাঠের টুর্নামেন্টে তাই ২০১৫ সালের পর আবার ফাইনালে চট্টগ্রাম আবাহনী। ৩০ অক্টোবর ফাইনালে তাদের প্রতিপক্ষ কে হবে সেটা জানা যাবে দ্বিতীয় সেমিফাইনালের পর। আরেক সেমিফাইনালে আগামীকাল খেলবে তেরেঙ্গানু এফসি ও মোহনবাগান।