'নিজের ফরম্যাটে' নিজের খেলা খেলেও আক্ষেপ সঙ্গী সাব্বিরের
“টি-টোয়েন্টি আমারই ফরম্যাট”, ক্যারিয়ারে একমাত্র সেঞ্চুরির পর বলেছিলেন সাব্বির রহমান।
ফরম্যাট যেটিই তার হোক না কেন, সাব্বির যে তাকে ঘিরে জমতে থাকা প্রত্যাশা সবসময় পূর্ণ করতে পেরেছেন, তেমন বলা যাবে না। মাঠে বা মাঠের বাইরের বিতর্ক বাদ দিলেও সাব্বিরকে ঘিরে তাই একটা আক্ষেপ থাকে। হয়তো তার মাঝে ‘ফিনিশার’টা পেতে পেতেও এখনও পায়নি বাংলাদেশ!
কুমিল্লারও আক্ষেপ ছিল। সাব্বির ঠিক ছন্দে ছিলেন না, আগের ম্যাচে তো বাদই পড়তে হলো তাকে। ম্যাচের পর অধিনায়ক ডাভিড মালান এসে বলেছিলেন, সাব্বিরের মতো কাউকে বাদ দেওয়া বেশ শক্ত ছিল তাদের, “এসব টুর্নামেন্টে হয় সময় আপনার পক্ষে যাবে, অথবা যাবে না। ব্যাপারটা কঠিন। আমরা বিদেশীরা এমন লিগে এসে হয়তো চার ম্যাচ খেলি, পরের তিন ম্যাচে বাদ পড়ি, আবার সুযোগ পেয়ে দুই-তিনটি ম্যাচ খেলি। তবে যারা স্থানীয়, তাদের জন্য ব্যাপারটি কঠিন। (সাব্বিরের জন্যও, কারণ) সে অনেক ভাল একজন ক্রিকেটার।”
“আশা করি, সে এর থেকে ভাল ক্রিকেটার হয়ে উঠবে। সে ভুল থেকে শিখবে। এমন না যে সে খারাপ খেলেছে, তবে স্কোরিংয়ের গতিটা ঠিক রাখতে তাকে একটু ভুগতে হয়েছে। এমন তো হয়ই। গত বছর এই সময় আমি রান করতে পারছিলাম না, ক্রিকেট এমনই।”
সাব্বিরকে অবশ্য ফেরানো হলো পরের ম্যাচেই। আগেরদিন চারজন বাঁহাতি ব্যাটসম্যানকে খেলিয়েছিল কুমিল্লা, ফলে তাদেরকে মুখোমুখি হতে হয়েছিল বেশ কিছু অফস্পিনের। শুরুতে তাই একজন ডানহাতিকে পাঠানোর পরিকল্পনা ছিল তাদের। মাহিদুল ইসলাম অঙ্কন বা সাব্বির- দুজনের মধ্য থেকে নির্বাচকরা বেছে নিয়েছিলেন সাব্বিরকে। উদ্দেশ্য- তাকে আরেকটু বেশি সময় দিয়ে আরেকটু স্বাধীনতা দেওয়া।
শুরুতেই ওপাশে দুজন সঙ্গীকে ফিরতে দেখে অবশ্য সাব্বিরের সেই স্বাধীনতায় একটু ছেদই পড়ার কথা। সৌম্য আসার পর যেন আবার ফিরে গেলে স্বরুপে। দারুণ সব ড্রাইভ, শট সিলেকশন বা প্লেসমেন্টের সঙ্গে টাইমিং- সাব্বির ছিলেন দারুণ। ৭ চারের সঙ্গে ২ ছয়, সাব্বির যেন আক্ষেপ ঘুচাচ্ছিলেন।
সৌম্য সরকারের সঙ্গে তার জুটি বেশ আশা জোগাচ্ছিল কুমিল্লাকে। সৌম্যর উইকেটে সাব্বিরের একটু ছন্দপতন হলো, ইয়াসিরের সঙ্গে আবার আরেকটি জুটি। তবে সাব্বির শেষ করতে পারলেন না। আবারও সেই আক্ষেপ সঙ্গী হলো তার।
মালান অবশ্য সাব্বিরের দায় দেখছেন না সেভাবে, “আমার মনে হয় সমালোচনা করা সহজ। গতকাল সে রান না করার জন্য বাদ পড়েছিল। আজ সে অবিশ্বাস্য এক ইনিংস খেলেছে। ব্যাটসম্যান হিসেবে আপনি ম্যাচ শেষ করতে চাইবেন, জিততে চাইবেন। এর ওপরই আপনার বিচার হবে। কতো রান করলেন সেটির ওপর নয়, জয়ের সংখ্যায়, জয়ে আপনার অবদানের ওপর। আমার ধারণা সে নিজেও হতাশ হবে, আরেকটু বেশি সময় ব্যাটিং না করার জন্য। তবে সে দুর্দান্ত এক ইনিংস খেলেছে।”
“সে বাদ পড়ার পর যেভাবে (ফিরে) এসেছে, পুরো টুর্নামেন্টে নিজের পজিশন থেকে ভিন্ন একটা পজিশনে ব্যাটিং করেছে। এরপর তার এমন ইনিংসের পুরো কৃতিত্বই তার।”
আপাতত সাব্বিরকে এই কৃতিত্ব নিয়েই সন্তুষ্ট থাকতে হচ্ছে। খুলনার সঙ্গে হারের পর কুমিল্লার শেষ চারে যাওয়ার সমীকরণ কঠিন হয়ে গেছে আরেকটু। টি-টোয়েন্টিকে নিজের ফরম্যাট মনে করলেও এই বিপিএলে আর কটি সুযোগ পাবেন, সেটি তাই এখনও অনিশ্চিত সাব্বিরের জন্য। সুযোগ পেলে হয়তো শেষ করে আসার সেই আক্ষেপটা মেটাতে আরেকবার চেষ্টা করবেন তিনি।