• ইংলিশ প্রিমিয়ার লিগ
  • " />

     

    যে পাঁচ 'গার্ড অফ অনার' দিয়ে বুক ফেটে গিয়েছিল প্রতিপক্ষের

    যে পাঁচ 'গার্ড অফ অনার' দিয়ে বুক ফেটে গিয়েছিল প্রতিপক্ষের    

    শিরোপাজয়ী প্রতিপক্ষকে গার্ড অফ অনার জানাতেই হবে- এমন কোনো বাধ্যবাধকতা ফুটবলে নেই। রীতি থাকলেও নেই নিয়ম। কেউ কাউকে গার্ড অফ অনার দেবে কি না সেটাও ওই দলের ইচ্ছার ওপর নির্ভর করে। পেপ গার্দিওলা অবশ্য আগেই জানিয়েছেন লিভারপুলকে গার্ড অফ অনার দেবে তার দল। ইতিহাদে বৃহস্পতিবার রাতে চ্যাম্পিয়ন হওয়ার পর প্রথমবার মাঠে নামবে লিভারপুল। সে ম্যাচেই গতবারের চ্যাম্পিয়নদের শুভেচ্ছা নিয়ে মাঠে ঢুকবেন জর্ডান হেন্ডারসনরা।

    গার্দিওলা স্পষ্ট করে জানিয়ে দেওয়ার পর গার্ড অফ অনার নিয়ে রসালো আলোচনার পথ আগেই বন্ধ হয়ে গেছে। তবে পুরোনো গল্পে 'রসের' অভাব নেই। সেটা প্রিমিয়ার লিগের গার্ড অফ অনার হলে একরকম, লা লিগার ক্ষেত্রে অন্যরকম। তবে ঝাঁঝ আর তিক্ততা আছে সবখানেই।  

    ৫. মরিনহোর চেলসিকে ইউনাইটেডের কুর্নিশ (২০০৪-০৫)



    হোসে মরিনহো সেবার ইংল্যান্ডে এসেছেন কেবল। প্রথম মৌসুমেই স্বঘোষিত স্পেশাল ওয়ানের স্পেশাল কীর্তি। ৫০ বছর পর চেলসিকে লিগ জিতিয়ে দিলেন মরিনহো। চেলসির প্রিমিয়ার লিগ জয় নিশ্চিত হওয়ার পর মৌসুমে ম্যাচ বাকি ছিল দুইটি। এর ভেতর একটি আবার ওল্ড ট্রাফোর্ডে, ম্যানচেস্টার ইউনাইটেডের বিপক্ষে।

    ইংল্যান্ডে নতুন লড়াই শুরু হয়েছিল ওইদিনই। স্ট্রেটফোর্ড এন্ডের দুয়ো  শুনলেও গ্যারি নেভিল, ক্রিশ্চিয়ানো রোনালদোদের গার্ড অফ অনার পেয়েই মাঠে ঢুকেছিলেন ফ্রাঙ্ক ল্যাম্পার্ডরা। পরে ওই ম্যাচ জিতে মৌসুমে ইউনাইটেডের বিপক্ষে ‘ডাবলস’ ও পূরণ করেছিল চেলসি।


    ৪. ইউনাইটেডের প্রতিশোধ (২০০৬-০৭)


    চেলসিকে গার্ড  অফ অনার জানানোর পর স্যার অ্যালেক ফার্গুসনকে আরেকটি শিরোপা জিততে অপেক্ষা করতে হয়েছিল আরও দুই বছর। কাকতালীয়ভাবে স্ট্যামফোর্ড ব্রিজে চেলসির বিপক্ষে ফিক্সচারের আগেই শিরোপা নিশ্চিত করে ফেলেছিল ইউনাইটেড।

    ওল্ড ট্রাফোর্ডে গার্ড অফ অনার পাওয়ার দুই বছরের মাথায় নিজেদের মাঠে ইউনাইটেডকে ‘প্রাপ্য সম্মানটা’ ফিরিয়ে দিয়েছিল চেলসি। ফার্গুসন অবশ্য চেলসির অস্বস্তি বাড়িয়ে দিয়েছিলেন ‘দ্বিতীয় একাদশ’ নামিয়ে। গ্যাব্রিয়েল হাইঞ্জা ছিলেন সেই দলের অধিনায়ক। এছাড়া মোটামুটিভাবে নিয়মিতদের ভেতর ছিলেন এখনকার ম্যানেজার ওলে গানার সোলশারসহ অ্যালান স্মিথ, ওয়েস ব্রাউন আর ড্যারেন ফ্লেচাররা। বাকিরা কালেভদ্রে সুযোগ পেতেন দলে। ক্রিস ইগলস, ডং ফাংজহুর মতো খেলোয়াড়রা সেদিন চেলসির কাছ থেকে গার্ড অফ অনার পেয়েছিলেন। ওই দল নিয়েও গোলশূন্য ড্র নিয়ে ফিরেছিল ইউনাইটেড।

    লিগ শেষে এই দুইল মুখোমুখি হয়েছিল এফএ কাপের ফাইনালেও। ওই ম্যাচে চেলসি জিতলেও, ইউনাইটেডের প্রতিশোধ নেওয়া হয়ে গিয়েছিল আরও আগেই।  


    ৩. রবিন ফন পার্সি, ঘর ছেড়ে শত্রু (২০১২-১৩)


    আর্সেনাল ভক্ত হয়ে থাকলে এই ছবির দিকে একটানা বেশিক্ষণ তাকিয়ে থাকতে পারার কথা নয়। এতে কোনো সাইকেডেলিক ইফেক্ট নেই, ভূত প্রেতও নেই। কিন্তু এই ছবি তবুও ভয়ঙ্কর গানারদের জন্য।

    ২০১২-১৩ মৌসুমে ইংল্যান্ড কাঁপিয়ে দিয়ে আর্সেনাল থেকে ম্যান ইউনাইটেডে যোগ দিয়েছিলেন রবিন ফন পার্সি। লিগ জিততে চান তিনি। শেষ পর্যন্ত ইউনাইটেডকেই লিগ জিতিয়ে গিয়েছিলেন ফন পার্সি। দুর্দান্ত এক মৌসুমে ২৬ গোল করে হয়েছিলেন লিগের সর্বোচ্চ গোলদাতা। লিগ জয় নিশ্চিত হওয়ার পর এমিরেটেসে ফিরেছিলেন পার্সি। গার্ড অফ অনার পেয়েছিলেন সাবেক সতীর্থদের কাছ থেকে, বাকিটা সময় সর্বশক্তি দিয়ে তাকে দুয়ো দিয়ে গেছেন আর্সেনাল সমর্থকেরা।


    ২. পিছলে যাওয়ার পর গার্ড অফ অনার (২০১৪-১৫)


    আগের মৌসুমে বিখ্যাত সেই স্টিভেন জেরার্ড স্লিপ দেখেছিল লিভারপুল-চেলসি ম্যাচ। সেবার শেষ পর্যন্ত সিটি জিতেছিল লিগ। পরের মৌসুমেও কাটেনি জেরার্ডদের চেলসি হতাশা।

    ততোদিনে মরিনহো দ্বিতীয়বারের মতো ফিরেছেন চেলসির ডাগ আউটে। তৃতীয় লিগ শিরোপাও জিতিয়েছেন চেলসিকে। আর লিভারপুল আগের মৌসুমে দ্বিতীয় হওয়ার পর এবার চ্যাম্পিয়নস লিগের জায়গাতেও নেই লিভারপুল। চেলসিকে গার্ড অফ অনার জানাতে খুব বেশি আত্মদহন হয়ত হয়নি লিভারপুলের। তবে জেরার্ডের মনে নিশ্চয় নাড়া দিয়েছিলেন আগের মৌসুমের ঘটনাটা?


    ১. রিয়াল মাদ্রিদকে বার্সেলোনার শুভেচ্ছা (২০০৭-০৮)



    ফ্রাঙ্ক রাইকার্ডের অধীনে বার্সেলোনার শেষ মৌসুম। ওতে একটা অধ্যায়েরও শেষ হয়েছিল বার্সেলোনায়। তবে শেষটা এর চেয়ে খারাপ হতে পারত না বোধ হয়! রিয়াল মাদ্রিদের চেয়ে রেকর্ড ১৮ পয়েন্ট পিছিয়ে সেবার লিগ শেষ করেছিল রাইকার্ডের দল। সান্তিয়াগো বার্নাব্যুতে লিগের দ্বিতীয় এল ক্লাসিকোর আগেই রিয়ালের শিরোপা নিশ্চিত। কার্লোস পুয়োল, লিওনেল মেসি, জাভিরা সেদিন বার্নাব্যুতে দুই পাশে সারিবদ্ধভাবে দাঁড়িয়েছিলেন। সার্জিও রামোস, রাউলরা মাঝ দিয়ে হেঁটে গেছেন!

    ওই ম্যাচে পরে ৪-১ গোলে বিধ্বস্ত হয়েছিল বার্সেলোনা। মৌসুম শেষে পেপ গার্দিওলা পরে বার্সার নতুন কোচ হয়ে এলেন। পরের গল্পটা তো বার্সার নতুন উত্থানের। তবে বার্সার সমর্থকেরা একটা জায়গায় অভিযোগ করেন  এখনও! বার্নাব্যুতে রিয়ালকে গার্ড অফ অনার জানানোর ঠিক ১০ বছর পর পাশার দান উলটে গিয়েছিল। বার্সা দ্বিতীয় ক্লাসিকোর আগেই লিগ জিতেছিল। তবে সেবার বার্সাকে গার্ড অফ অনার জানাতে অস্বীকৃতি জানায় জিনেদিন জিদানের রিয়াল মাদ্রিদ!

    বার্সেলোনা সমর্থকদের তাই পালটা জবাব দেওয়ার ছবিটি আর পাওয়া হয়নি।