• ওয়েস্ট ইন্ডিজের ইংল্যান্ড সফর ২০২০
  • " />

     

    'সাদাদের জীবনের মূল্য আছে, সেটা সবাই জানে। কালোদের মূল্য আছে, এটা জানে না।'

    'সাদাদের জীবনের মূল্য আছে, সেটা সবাই জানে। কালোদের মূল্য আছে, এটা জানে না।'    

    “লোকে যখন বলে যে ‘অল লাইভস ম্যাটার’ বা ‘হোয়াইট লাইভস ম্যাটার’, আমি বলি, দয়া করে (এসব বলবেন না)। আমরা কালোরা জানি, ‘হোয়াইট লাইভস ম্যাটার’। তবে আমার মনে হয় না, আপনারা এটা জানেন যে ‘ব্ল্যাক লাইভস ম্যাটার’। 

    “আমাদের দিকে কথা ফেরাবেন না, যে সব জীবনেরই দাম আছে, সাদাদের জীবনের দাম আছে, এটা অবশ্যই আছে, এটা পরিষ্কার। আমরা চাই, কালোদের জীবনেরও দাম থাকুক। সহজ কথা।” 

    বর্ণবাদ নিয়ে নিজের পরিষ্কার ও শক্ত অবস্থান জানিয়েছেন সাবেক ওয়েস্ট ইন্ডিয়ান ফাস্ট বোলার ও কমেন্টেটর মাইকেল হোল্ডিং। স্কাই স্পোর্টসকে আলাদা দুটি সাক্ষাতকারে কেন বর্ণবাদবিরোধী আন্দোলন গুরুত্বপূর্ণ, সেটি তুলে ধরেছেন তিনি। হোল্ডিংয়ের সঙ্গে নিজের অভিজ্ঞতার কথা জানিয়েছেন সাবেক ইংল্যান্ড ক্রিকেটার এবোনি রেইনফোর্ড-ব্রেন্ট। দুজনের কথা প্রচারিত হওয়ার পর সামাজিক যোগাযোগ-মাধ্যমে এ দুজনসহ স্কাইয়ের প্রশংসা করছেন ক্রিকেট-সংশ্লিষ্ট অনেকেই। তারা বলছেন, এটা সাহসী এবং উপযুক্ত পদক্ষেপ। 

    হোল্ডিংয়ের মতে, বর্ণবাদ নিয়ে কেউ জন্মায় না, বরং বর্ণবাদের শিক্ষা দেওয়া হয়। 

    “বর্ণবাদের শিক্ষা দেওয়া হয়। কেউ বর্ণবাদী হয়ে জন্মায় না। যে পরিবেশে আপনার বেড়ে ওঠা, যে সমাজে আপনি বাস করেন, সেখানেই বর্ণবাদের শিক্ষা দেওয়া হয়, উৎসাহিত করা হয়।” 

    “শতবছর ধরে হয়ে আসছে এসব। কৃষ্ণাঙ্গদের সঙ্গে অমানবিক আচরণ দিয়ে শুরু হয়েছে এসব। লোকে বলবে, অনেক দিন হয়ে গেছে, মেনে নাও। না। আমরা এসব মেনে নিতে পারি না। সমাজ এমন করেনি।

    জ্যামাইকায় বেড়ে উঠে নিজে বর্ণবাদের শিকার হননি, তবে ইংল্যান্ড ও অস্ট্রেলিয়ায় খেলতে গিয়ে টের পেয়েছেন, এমন বলেছেন হোল্ডিং। তার মতে, তিনি এসব এড়িয়ে চলার চেষ্টা করতেন সবসময়ই। 
     


    “আমি উঠতি বয়সে বুঝিনি, ব্রেনওয়াশ বা মগজধোলাই কী। এখন বুঝি, মগজধোলাই মানে কী। আমাদের মগজ ধোলাই করা হয়েছে।

    “ধর্মের দিকে তাকান। যীশুখ্রিষ্টের যে প্রতিচ্ছবি দেখানো হয়, সেটির দিকে তাকান। সাদা গায়ের রঙ, সাদা চুল, নীল চোখ। যীশুখ্রিষ্ট কোথা থেকে এলেন? কোথায় লোকের চেহারা এমন। এটাই মগজধোলাই, আপনাকে দেখানো হয়, ‘পারফেকশন’ কেমন। 

    “এই যে বাল্বগুলি আলো দিচ্ছে আমাদের, আপনি আমাকে বলতে পারবেন নিশ্চয়ই কে বাল্ব আবিষ্কার করেছিলেন? সবাই জানে, টমাস আলভা এডিসন করেছিলেন। তবে টমাস এডিসন লাইট বাল্ব আবিষ্কার করেছিলেন কাগজের ফিলামেন্ট থেকে, যেটা ক্ষণিকের মাঝেই পুড়ে যায়। 

    “আপনি বলতে পারবেন, এই ফিলামেন্ট কে আবিষ্কার করেছিলেন? কেউ জানে না। কারণ একজন কালো মানুষ ছিলেন তিনি, এটা স্কুলে পড়ানো হয় না যে লুইস হাওয়ার্ড লাটিমার কার্বন ফিলামেন্ট আবিষ্কার করেছিলেন, যার মাধ্যমে এই বাল্ব সবসময় জ্বলে।” 

    যুক্তরাষ্ট্রে পুলিশের নির্যাতনে কৃষ্ণাঙ্গ জর্জ ফ্লয়েড মারা যাওয়ার পর নতুন করে শুরু হয়েছিল ‘ব্ল্যাক লাইভস ম্যাটার’ নামে বর্ণবাদবিরোধী আন্দোলন। ইংল্যান্ড-ওয়েস্ট ইন্ডিজ টেস্ট শুরুর আগে সব ক্রিকেটার, সাপোর্ট স্টাফ, ম্যাচ অফিশিয়ালরা হাঁটু গেঁড়ে বসে অফিশিয়ালি একাত্মতা প্রকাশ করেছেন সে আন্দোলনের সঙ্গে। দুই দলই শার্টের কলারে ‘ব্ল্যাক লাইভস ম্যাটার’ লোগো পরে নেমেছে। 


    রেইনফোর্ড-ব্রেন্টের মতে, সমাজকে অবশ্যই গোড়া থেকে বদলানোর জন্য এগিয়ে আসতে হবে। 

    “আমার মনে হয়, আমাদের স্বচ্ছ হতে হবে। আমরা এখন এসব আলোচনা করছি। যদি ক্ষমতার কেন্দ্রিবিন্দুর সঙ্গে এসবের যোগসূত্র স্থাপন করা না যায় যে, সীমিত ক্ষমতা নিয়ে কাজ করতে কেমন লাগে, সুযোগ না পেলে কেমন লাগে, আপনাকে নেওয়া হবে না-- এটা জানতে কেমন লাগে, আপনাকে শোষণ করা হবে, তাহলে আমরা এগুতে পারব না। 

    “এটা শুধু কালো মানুষের সমস্যা হতে পারে না। এটা সবার সমস্যা হতে হবে। আমরা এমন একটা সমাজ চাই, যেখানে সবার প্রতিনিধিত্ব থাকবে।” 

    জর্জ ফ্লয়েডের মৃত্যুর খবর পাওয়ার অভিজ্ঞতাও শেয়ার করেছেন সারের ডিরেক্টর অফ ক্রিকেটের একজন রেইনফোর্ড-বেন্ট। সে ভিডিও দেখার পর কান্নায় ভেঙে পড়েছিলেন তিনি। 

    “যে যন্ত্রণা আমি অনুভব করেছি, যেন আমার হৃদয় টুকরো টুকরো হয়ে গেছে। কারণ আমরা জানি, কতোদিন ধরে এই বৈষম্য, এই অনাচার চলছে। শুধু যুক্তরাষ্ট্র না, এখানেও (ইংল্যান্ড) হয়। আমার মনে হয়েছিল, আমাকে কেউ কুঁড়ে কুঁড়ে খাচ্ছে। আমি ইন্সটাগ্রামে খারাপ কথা লিখি না। কিন্তু সেদিন লিখতে বাধ্য হয়েছিলাম, কারও কি কিছু যায় আসে না কালো মানুষকে মারতে দেখলে!” 

    “৪০০ বছর ধরে আমাদের সমাজে এই ভাইরাস আছে। আমি জানতাম, আমাকে এই আন্দোলনে অংশ নিতে হবে। আমি তিনটি আন্দোলনে যোগ দিয়েছিলাম।” 

    “আমরা এটাকে মেনে নিয়ে বেঁচে থাকতে পারি না। প্রতিদিন মানুষ মরছে, যাদের রক্ষা করার কথা, তারাই মারছে।” 

    এই আন্দোলনে অবশ্য পার্থক্য খুঁজে পেয়েছেন হোল্ডিং, “আগে এমন আন্দোলনে যা হতো, মার্টিন লুথার কিং যখন পদযাত্রা করছিলেন, আশেপাশে প্রচুর কালো মুখ ছিল, সাদা ছিল খুবই কম। তবে এখন প্রচুর সাদা মানুষ দেখেছি আমি, এটাই পার্থক্য।” 

    “তারা সবাই দেখেছে এই জঘন্য ব্যাপারটা (জর্জ ফ্লয়েডের সঙ্গে হতে)। এবং লোকে ভেবেছে, যথেষ্ট হয়েছে। সবাই বুঝছে। সামনে আসছে। 

    “আমরা সবাই মানুষ। আমি আশা করব সবাই ব্ল্যাক লাইভস ম্যাটার আন্দোলনের গুরুত্বটা বুঝবে। এটা কালো মানুষদের সাদাদের ওপরে তোলার জন্য নয়, এটা সাম্যের জন্য”, বলেছেন হোল্ডিং।