হোল্ডারের দিন আর রিভিউ নাটক
১ম টেস্ট, সাউথাম্পটন
ইংল্যান্ড ১ম ইনিংস ২০৪ (স্টোকস ৪৩, বাটলার ৩৫, হোল্ডার ৬/৪২, গ্যাব্রিয়েল ৪/৬২)
ওয়েস্ট ইন্ডিজ ১ম ইনিংস ৫৭/১*
ওয়েস্ট ইন্ডিজ ১৪৭ রানে পিছিয়ে
আগেরদিন ১৭.৪ ওভার খেলা হয়েছিল, এদিন হলো ৭০ ওভার। আলোকস্বল্পতায় এদিনও খেলা শেষ হয়েছে নির্ধারিত সময়ের আগেই। তবে দিনের পুরোটাই ওয়েস্ট ইন্ডিজের। শুরু থেকেই কন্ডিশনের পুরো সুবিধা আদায় করে দারুণ বোলিং করে যাওয়া ওয়েস্ট ইন্ডিজের পেস আক্রমণের সামনে দাঁড়াতে পারেনি ইংল্যান্ডের ব্যাটিং লাইন-আপ। বেন স্টোকস ও জস বাটলারের ৬ষ্ঠ উইকেট জুটিতে উঠেছিল ৬৭ রান, তবে দুজনের প্রতি-আক্রমণ বেশিক্ষণ টেকেনি। বারদুয়েক জীবন পেয়েও বেশিদূর যাওয়া হয়নি স্টোকসের, হুট করে খোঁচা মেরে ফিরেছেন বাটলারও। জেসন হোল্ডারের সঙ্গে শ্যানন গ্যাব্রিয়েলের তোপে প্রথম ইনিংসে ২০৪ রানেই গুটিয়ে গেছে ইংল্যান্ড।
হোল্ডার-গ্যাব্রিয়েল যা করেছেন, জেমস অ্যান্ডারসন-জফরা আর্চাররা নতুন বলে ঠিক তেমন কিছু করতে পারেননি শুরুতে। অ্যান্ডারসন শেষ পর্যন্ত সফল হয়েছেন, আর মার্ক উড এসে গতির ঝলক দেখিয়েছিলেন। তবে ১ উইকেটে ৫৭ রান দিনশেষ করা ওয়েস্ট ইন্ডিজের সাফল্যে খুব একটা ভাগ বসানো হয়নি ইংলিশদের।
রিভিউয়ের দুই অঙ্ক, নায়ক ওয়েস্ট ইন্ডিজ
স্থানীয় আম্পায়ার দিয়ে ম্যাচ পরিচালনা করা হবে বলে ইনিংসপ্রতি ব্যর্থ রিভিউসংখ্যা একটি করে বাড়িয়েছে আইসিসি। প্রথম দিন প্রথম ওভারেই ররি বার্নসের বিপক্ষে শ্যানন গ্যাব্রিয়েলের বলে একটা রিভিউ নিয়েছিলেন জেসন হোল্ডার, তবে সেটি হয়েছিল আম্পায়ারস কল। এদিন সেই বার্নসের বিপক্ষেই আবারও রিভিউ নিলেন হোল্ডার, গ্যাব্রিয়েলের বলেই। সফল হলেন। এরপর জ্যাক ক্রলি ও জফরা আর্চারের উইকেট হোল্ডার পেলেন রিভিউ নিয়েই। প্রতিটিই এলবিডব্লিউ, প্রতিটি ক্ষেত্রেই আম্পায়ার ছিলেন রিচার্ড কেটেলবোরো।
ব্যাটিংয়ে রিভিউয়ের নাটক হলো জন ক্যাম্পবেল, জেমস অ্যান্ডারসন ও রিচার্ড ইলিংওর্থকে ঘিরে। ক্যাম্পবেলকে তিনবার অ্যান্ডারসনের বলে এলবিডব্লিউ দিলেন ইলিংওর্থ। প্রথমবার ৪ সেকেন্ড বাকি থাকতে রিভিউ নিলেন ক্যাম্পবেল, বল পড়েছিল লেগস্টাম্পের বাইরে। দ্বিতীয়বার বাঁচলেন বল স্টাম্পের ওপর দিয়ে যেতো বলে। তৃতীয়বার, দ্বিতীয়বারের ৩ বল পর, আর বাঁচলেন না ক্যাম্পবেল। এবার রাউন্ড দ্য উইকেট থেকে আসা অ্যান্ডারসনের বলে আটকে গেলেন ক্যাম্পবেল, ইলিংওর্থ আবারও তুললেন আঙুল। ইংল্যান্ডের পক্ষে দেওয়া ইংলিশ আম্পায়ারের ৬ সিদ্ধান্তের ৫টি নিজেদের দিকে টানলো ওয়েস্ট ইন্ডিজ, ওই শেষটি ছাড়া।
হোল্ডারের দিন
ইংল্যান্ডের প্রথম তিনটি উইকেট নিয়েছিলেন গ্যাব্রিয়েল। এরপরই দৃশ্যপটে হাজির হলেন টেস্টের এক নম্বর অলরাউন্ডার, ওয়েস্ট ইন্ডিজ অধিনায়ক। দিনের দ্বিতীয় ওভারে বোলিং করতে এসেছিলেন, আঁটসাঁট করছিলেন বেশ। সফল হলেন অবশ্য দ্বিতীয় স্পেলে এসে। জ্যাক ক্রলিকে এলবিডব্লিউ দিয়ে শুরু, হোল্ডার একের পর এক নিলেন আরও ৫ উইকেট। থামলেন ৪২ রানে ৬ উইকেট নিয়ে। এ শতাব্দীতে অধিনায়ক হিসেবে এর চেয়ে ভাল বোলিং ফিগার আছে আর মাত্র তিনটি-- শ্রীলঙ্কার রঙ্গনা হেরাথ (৮-৬৩), দক্ষিণ আফ্রিকার শন পোলক (৬-৩০), বাংলাদেশের সাকিব আল হাসানের (৬-৩৩)।
অধিনায়ক হিসেবে কীর্তিটা এখানেই শেষ নয় হোল্ডারের। তার আগে ইংল্যান্ডের মাটিতে প্রতিপক্ষের অধিনায়ক হিসেবে ইনিংসে ৫ উইকেট ছিল আর ১১ জনের, শেষ ২০১০ সালে ওল্ড ট্রাফোর্ডে ১২১ রানে ৫ উইকেট নিয়েছিলেন সাকিব। হোল্ডারের এদিনের বোলিং ফিগারের চেয়ে ভাল আছে আর দুটি-- দুটিই পাকিস্তানের ইমরান খানের। ১৯৮২ সালে এজবাস্টন ও ১৯৮৭ সালে হেডিংলিতে ইমরান খান নিয়েছিলেন যথাক্রমে ৫২ ও ৪০ রানে ৭টি করে উইকেট।
এসব রেকর্ডে ভীড়ে হোল্ডারের এটি ব্যক্তিগত সেরা বোলিং ফিগারও। এর আগে ২০১৮ সালে বাংলাদেশের বিপক্ষে কিংস্টনে ৬ উইকেট নিয়েছিলেন তিনি ৫৯ রানে।
অবশেষে আরেকজন 'ইংলিশ ওপেনার'!
২০০৬ সালের ডিসেম্বরে অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে এমসিজিতে ক্যারিয়ারে ১০০০ রান পূর্ণ করেছিলেন অ্যালেস্টার কুক। এরপর ক্যারিয়ার শেষ করেছেন তিনি ১২৪৭২ রান নিয়ে। তার পর ইংল্যান্ডের হয়ে ওপেন করেছেন আরও ১৩ জন ব্যাটসম্যান। তবে ররি বার্নসের আগে ১০০০ রান ছোঁয়া হয়নি আর কারও।
দ্বিতীয় দিন ৯৯৯ রান নিয়ে মাঠ ছেড়েছিলেন বার্নস, আজ পূর্ণ করলেন মাইলফলক। ২০১৮ সালে অভিষেক করা সারে ওপেনারের এটি ১৬তম টেস্ট।
অবশ্য ক্যারিয়ারের এই মুহুর্তে ৩৩.৬৩ গড় নিয়ে ব্যাটিং করা বার্নসকে নিয়েও সেই প্রশ্নটাই আছে-- কতোদূর যেতে পারবেন তিনি?