• ওয়েস্ট ইন্ডিজের ইংল্যান্ড সফর ২০২০
  • " />

     

    ৬৫ মিনিটের ঝড়ে ইংল্যান্ডকে এলোমেলো করে এগিয়ে উইন্ডিজ

    ৬৫ মিনিটের ঝড়ে ইংল্যান্ডকে এলোমেলো করে এগিয়ে উইন্ডিজ    

    ১ম টেস্ট, সাউথাম্পটন
    চতুর্থ দিন, স্টাম্পস
    ইংল্যান্ড ১ম ইনিংস ২০৪ (স্টোকস ৪৩, বাটলার ৩৫, হোল্ডার ৬/৪২, গ্যাব্রিয়েল ৪/৬২) ও ২য় ইনিংস ২৮৪/৮ (ক্রলি ৭৬, সিবলি ৫০, গ্যাব্রিয়েল ৩/৬২, জোসেফ ২/৪০, চেজ ২/৭১)
    ওয়েস্ট ইন্ডিজ ১ম ইনিংস ৩১৮ (ব্রাথওয়েট ৬৫, ডাওরিচ ৬১, চেজ ৪৭, স্টোকস ৪/৪৯, অ্যান্ডারসন ৩/৬২, বেস ২/৫১) 
    ইংল্যান্ড ১৭০ রানে এগিয়ে


    আগেরদিনই রোমাঞ্চের আভাস দিয়ে রেখেছিল সাউথাম্পটন। চতুর্থ দিন শেষবেলা এসে সেদিকেই হাঁটলো এটি ওয়েস্ট ইন্ডিজের ভর করে। শ্যানন গ্যাব্রিয়েলের আগে জেসন হোল্ডার-আলজারি জোসেফে ভর করে ইংল্যান্ড ইনিংসে ধস নামিয়েছে ওয়েস্ট ইন্ডিজ। 

    এজিয়েস বোউলের উইকেট এদিন যেন পক্ষে ছিল না কারোরই, বোলারদের সঙ্গে ভুগেছেন ব্যাটসম্যানরাও। অসম বাউন্সের দেখা মিলেছে। পিচে টেস্ট ম্যাচের বয়সের ছাপটা স্পষ্ট। 

    শুরুতে ররি বার্নসকে ফিরিয়ে ক্যারিবীয়দের ব্রেকথ্রু এনে দিয়েছিলেন রসটন চেজ, পরে জো ডেনলির উইকেটও নিয়েছেন তিনি। সিবলির পর ক্রলির ফিফটি, সঙ্গে বেন স্টোকসের ব্যাটিং আশা জোগাচ্ছিল ইংল্যান্ডকে, হুট করেই আসা ঝড়ে এলোমেলো হয়ে গেছে তারা। 

    শেষদিনে সম্ভাবনা আছে সবরকম ফলেরই। তবে আগের কদিনের মতো এ দিন শেষেও এগিয়ে ওয়েস্ট ইন্ডিজই। 

    ৬৫ মিনিটের ঝড়

    স্থানীয় সময় ৫.৪৫। ৩ উইকেটে ২৪৯ রান ইংল্যান্ডের। লিড ১৩৫। 

    স্থানীয় সময় ৬.৫০। ৮ উইকেটে ২৭৯ রান ইংল্যান্ডের। লিড ১৬৫।

    ঘন্টাখানেকের ব্যবধানে, ৩০ রান তুলতে ৫ উইকেট নেই তাদের। ওয়েস্ট ইন্ডিজ ম্যাচে ফিরে এলো দারুণভাবে। চা-বিরতির পর জ্যাক ক্রলি ও বেন স্টোকস এগিয়ে নিচ্ছিলেন ইংল্যান্ডকে, তবে জেসন হোল্ডারের বলে স্টোকস ফেরার পরই শুরু হলো বিপত্তি। এরপর জ্যাক ক্রলি ফ্লিক করতে গিয়ে ফিরতি ক্যাচ দিলেন আলজারি জোসেফকে, যেটি জোসেফ নিলেন দারুণভাবে। জস বাটলার একই বোলারের বল ডেকে আনলেন স্টাম্পে। শেষবেলায় ডম বেস ও ওলি পোপ জবাব দিতে পারলেন না শ্যানন গ্যাব্রিয়েলের।   

    সিবলির তিন বলের স্মৃতি

    টেস্টে দ্বিতীয়বার ফিফটি ছুঁলেন ডম সিবলি, প্রথমবার যেটিকে রূপ দিয়েছিলেন সেঞ্চুরিতে। ঠিক পরের বলে শ্যানন গ্যাব্রিয়েলের বলে ইনসাইড-এজে বোল্ড। তবে গ্যাব্রিয়েলের পায়ের অতীত খুব একটা ভাল নয়, এবার রিপ্লে দেখালো, সূক্ষ্ণ ব্যবধানে সেটি পড়েছে দাগের ওপরই। সিবলি জীবন পেলেন। পরের বলটা অফস্টাম্পের বাইরে, ছেড়ে দিলেন তিনি। এরপরের বলটা আপাতদৃষ্টিতে নিরীহ, লেগসাইড দিয়ে বেরিয়ে যাওয়ার কথা। ব্যাট চালিয়েই ভুলটা করলেন সিবলি, বাকি কাজটা উইকেটের পেছনে সারতে ভুল হলো শেন ডাওরিচের। আনন্দ-দুঃখ-আশা-স্বস্তি-রোমাঞ্চ-স্বস্তি-তিক্ততা-হতাশার পথ ধরে ফিরে গেলেন সিবলি, ৫০ রান করেই। 

    'ডেন' নাকি 'ক্র', কোন 'লি'? 

    জো ডেনলি আবারও খেললেন তার মতোই এক ইনিংস। শুরুতে নড়বড়ে, এরপর দেখতে বিপজ্জনক হলেও আত্মবিশ্বাসী কিছু শট, এরপর উইকেট বিলিয়ে দিয়ে আসা। তার টেকনিক নিয়ে আলোচনা চলেছে শীর্ষ পর্যায়ের ক্রিকেটে প্রত্যাবর্তনের পর থেকেই, সেটিই জোর পাচ্ছে আরও। প্রথম ইনিংসে ১৮ রানের পর এবার ডেনলি ফিরলেন ২৯ রানে। 

    প্রথম ইনিংসে ব্যর্থ হয়েছিলেন জ্যাক ক্রলিও, আউট হয়েছিলেন ১০ রানে। এবার করলেন ৭৬। ফিফটির পরও বেশ একটা সময়জুড়ে দৃঢ় দেখাচ্ছিল তাকে, তবে জোসেফের বলে হুট করেই যেন থমকে গেলেন তিনি। ইংল্যান্ডের শীর্ষ চার অবশ্য দ্বিতীয় ইনিংসে বেশ উন্নতিই করলো বলতে হবে, প্রথম ইনিংসের ৫৮ রানের বিপরীতে এবার তাদের সংগ্রহ ১৯৭। এখন পর্যন্ত দুটি ফিফটিই এসেছে এখান থেকেই।

    ওল্ড ট্রাফোর্ডে ফেরার কথা অধিনায়ক জো রুটের। তিনি ফিরলে তাকে শেষ পর্যন্ত জায়গা করে দেবেন কে? ডেনলি, নাকি ক্রলি? 
     


    হোল্ডার ২-১ স্টোকস

    প্রথম ইনিংসে স্টোকসকে আউট করেছিলেন হোল্ডার। দ্বিতীয় ইনিংসে হোল্ডারকে স্টোকস। এবার হোল্ডার দ্বৈরথে এগিয়ে গেলেন। স্টোকসের উইকেটেও থাকলো বুদ্ধিদীপ্ত বোলিংয়ের সঙ্গে তার দারুণ নেতৃত্বের ছোঁয়া। অফস্টাম্পের বাইরে করেছিলেন, স্টোকস সরে গিয়ে খেলতে গিয়ে এজড হয়ে ধরা পড়লেন দুটি গালি রাখা একটিতে। নিজের এ উইকেট ছাড়াও হোল্ডার ইনিংসে রসটন চেজকে দারুণভাবে ব্যবহার করেছেন, আলজারি জোসেফ ও শ্যানন গ্যাব্রিয়েলকে নিয়ে পরিকল্পনার ছাপও ছিল স্পষ্ট। স্টোকস পরের ইনিংসে ছাপিয়ে যেতে পারবেন তাকে? 

    দুই অলরাউন্ডার অধিনায়কের দ্বৈরথে অবশ্য ম্যাচের ফলও এনে দিতে পারে ম্যাচ-পয়েন্ট। 

    রিভিউ-রথের উলটো পথে উইন্ডিজ 

    আগের তিনদিনই রিভিউ ছিল আলোচনায়। এদিনও চাইলেই আলোচনায় আনা যায় এটিকে। তবে রিভিউয়ের সঙ্গে ওয়েস্ট ইন্ডিজের সাফল্যের সম্পর্কটা ব্যস্তানুপাতিক হয়ে পড়ছে সাফল্যের হারে। এদিন প্রথমে জো ডেনলির বিপক্ষে রিভিউ নিলেন হোল্ডার, বল স্লিপে গেলেও বল লেগেছিল ডেনলির কাঁধের কাছে। বেন স্টোকসের বিপক্ষেও ক্যাচেরই রিভিউ নিলেন তারা, এবারও স্লিপেই গিয়েছিল বল। তবে স্টোকসের ব্যাটটাই শুধু মাটিতে লেগেছিল, বলের সঙ্গে সংযোগ ঘটেনি সেটির। রিভিউয়ের উলটা দিকেও থাকলো ক্যারিবীয়রা, বাটলার একবার রিভিউ নিয়ে বাঁচলেন এলবিডব্লিউ থেকে। শেষদিকে ডম বেসের বিপক্ষে নিজেদের ‘শেষ’ রিভিউটা নিলেন তারা, এবার অবশ্য হলো আম্পায়ারস কল। ফলে শেষ রিভিউটা থাকলো অক্ষতই। 

    রিভিউ মিসের চেয়েও অবশ্য উইন্ডিজকে ভুগিয়েছে ক্যাচ মিস, ডাওরিচের হাত ছিল পিচ্ছিল।