এজিয়েস-বোউলের ক্ল্যাসিকে ব্ল্যাকউডের ৯৫-এ রোমাঞ্চকর জয় উইন্ডিজের
১ম টেস্ট, সাউদাম্পটন
ইংল্যান্ড ১ম ইনিংস ২০৪ (স্টোকস ৪৩, বাটলার ৩৫, হোল্ডার ৬/৪২, গ্যাব্রিয়েল ৪/৬২) ও ২য় ইনিংস ৩১৩ (ক্রলি ৭৬, সিবলি ৫০, গ্যাব্রিয়েল ৫/৭৫, জোসেফ ২/৪৫, চেজ ২/৭১)
ওয়েস্ট ইন্ডিজ ১ম ইনিংস ৩১৮ (ব্রাথওয়েট ৬৫, ডাওরিচ ৬১, চেজ ৪৭, স্টোকস ৪/৪৯, অ্যান্ডারসন ৩/৬২, বেস ২/৫১) ও ২য় ইনিংস ২০০/৬
ওয়েস্ট ইন্ডিজ ৪ উইকেটে জয়ী
ক্রিকেট মাঠে ফিরেছিল ৪ দিন আগেই। সাউদাম্পটন টেস্টের ৫ম দিনে এসে যেন সে ফেরা পেলো পূর্ণতা। এজিয়েস বোউলে নাইবা থাকলো দর্শক, বিশ্বজুড়ে ছড়িয়ে থাকা যারা টেলিভিশন বা কোনও ডিভাইসের সামনে নিজেকে আটকে রাখলেন, অথবা পরে খবরটা জানবেন উৎকন্ঠায়, তাদের জন্য সুখবর। ক্রিকেট তার ফেরা সম্পন্ন করেছে তার রূপেই। সাউদাম্পটন-ক্ল্যাসিকে ২০০ রানতাড়ায় ২৭ রানে ৩ উইকেট হারিয়েও জেরমাইন ক্যাম্পবেলের ৯৫ রানের ইনিংসে ভর করে ইংল্যান্ডকে হতাশ করেছে ওয়েস্ট ইন্ডিজ। করোনাভাইরাস মহামারির পর প্রথম টেস্টে তারা পেয়েছে দারুণ এক জয়, ৩ টেস্টের সিরিজে এগিয়ে গেছে ১-০তে।
এটি হতে পারত শুধুই ক্রিকেটের ফিরে আসার উপলক্ষ্য। তবে ৫ দিনের মাঝে বৃষ্টি, আলোক-স্বল্পতা, রিভিউ, দুই অধিনায়কের লড়াই, আগুনসম পেস, উইকেটের অসম বাউন্সে ব্যাটসম্যান-বোলারদের লড়াই, আর শেষদিনের রোমাঞ্চ- থাকলো সবকিছুই। শেষদিন রোমাঞ্চকর হবে, সেটির ইঙ্গিত পাওয়া গিয়েছিল আগেরদিনই। সব রকমের ফলের সম্ভাবনা ছিল, শেষ সেশনে গিয়ে মিললো সেটি। বারকয়েক এই টেস্ট যাওয়া-আসা করেছে দুইদিকেই।
রানতাড়ায় শুরুর ধাক্কা সামাল দিয়েছে ওয়েস্ট ইন্ডিজ ব্ল্যাকউডের সঙ্গে রসটন চেজ ও শেন ডাওরিচের ৭৩ ও ৬৮ রানের দুটি জুটিতে। ব্ল্যাকউড তার ভাগ্যকে সঙ্গে পেয়েছেন, ১৫ মিনিটের ভেতর তাকে ৩ বার আউট করার সুযোগ পেয়েও হারিয়েছে ইংল্যান্ড। তাকে যতক্ষণে আউট করতে পেরেছে তারা, ততক্ষণে জয় থেকে মাত্র ১১ রান দূরে উইন্ডিজ। ইংল্যান্ডের তখন প্রয়োজন মিরাকল, তবে স্টোকস তার অধিনায়কত্বের প্রথম ম্যাচে তেমন কিছু করতে পারলেন না, পারলেন না অন্য কেউও।
এজিয়েস বোউলে এই হতাশাই সঙ্গী ইংল্যান্ডের
আর্চার অবশ্য শুরুতে চড়াও হয়েছিলেন। তার প্রথম বলেই ইয়র্কারে পায়ে লেগেছিল জন ক্যাম্পবেলের, পরে যিনি উঠে গিয়েছিলেন। ক্রেইগ ব্রাথওয়েটকে ইনসাইড-এজের পর প্যাডে লেগে বোল্ড করে প্রথম উইকেট পেয়েছেন, পরের ওভার শামারহ ব্রুকসকে ইনফ্রন্টে আটকে রেখে করেছেন এলবিডব্লিউ। ৭ রানেই ২ উইকেট হারানো উইন্ডিজের দুর্দশা বেড়েছিল লাঞ্চের আগে মার্ক উড এসে ফুললেংথ থেকে ভেতরের দিকে ঢোকা বলে শেই হোপকে বোল্ড করলে।
অবশ্য দ্বিতীয় সেশনে দাপট ছিল উইন্ডিজেরই, ১ উইকেট হারিয়ে ১০৮ রান তুলেছিল তারা। তবে এ চিত্রটা ভিন্ন হতে পারত। ব্ল্যাকউড তিনবার জীবন পেলেন, প্রথমে স্টোকসের বলে ডাউন দ্য লেগে ক্যাচ ফেললেন জস বাটলার, এরপর কাভারে রান-আউটের সহজ সুযোগ মিস করলেন জ্যাক ক্রলি, আর সর্বশেষ ররি বার্নস দেখতেই পেলেন না গালিতে ক্যাচটা। অবশ্য শেষটি আবার স্টোকস করেছিলেন নো-বলও। ব্ল্যাকউডকে এর আগে আরেকবার আউটের সুযোগ পেয়েছিল ইংল্যান্ড, তবে স্লিপে আগে থেকেই ব্ল্যাকউডে শট আঁচ করতে পারলেও ভুলপথে সরে গিয়ে ক্যাচ নিতে পারেননি স্টোকস।
দারুণ শর্ট বলে রসটন চেজকে গ্লাভড করে ক্যাচ বানিয়ে ব্ল্যাকউডের সঙ্গে তার জুটি ভেঙেছিলেন আর্চার। এরপর ডাওরিচকে সঙ্গে নিয়ে এগিয়েছেন ব্ল্যাকউড। জয় থেকে ৩২ রান দূরে থাকতে ডাওরিচ এজড হয়েছেন স্টোকসের বলে, অবশ্য এর আগের বলে আরেকবার ক্যাচ দিয়েও বেঁচে গিয়েছিলেন তিনি স্টোকস ওভারস্টেপিং করায়। অবশ্য সুযোগ মিসের সঙ্গে ভাগ্যের সুদৃষ্টিও পায়নি ইংল্যান্ড, বারদুয়েক তাদের রিভিউ ব্যর্থ হয়েছে আম্পায়ারস কলে।
জেরমাইন ব্ল্যাকউড বিহাইন্ড দ্য স্কয়ারে ছিলেন দারুণ
ডাওরিচের উইকেট ইংল্যান্ডকে হয়তো আশা জুগিয়েছিল, তবে ব্ল্যাকউডকে সময়মতো টলাতে পারেনি তারা। ব্ল্যাকউড এদিন ছিলেন দারুণ কার্যকর। শুরুতে বিহাইন্ড দ্য স্কয়ারে খেলেছেন দাপটের সঙ্গে, ক্রিজের ডিপে গিয়ে। আর সুযোগ পেলেই খেলেছেন শট। পরে ড্রাইভও করেছেন, ইনফ্রন্ট অফ স্কয়ারেও পুষিয়ে দিয়েছেন। তাকে আউট করতে একসময় মরিয়া হয়েই রিভিউও নিয়েছে ইংল্যান্ড।
শেষ পর্যন্ত ক্যারিয়ারের দ্বিতীয় সেঞ্চুরি থেকে ৫ রান দূরে থাকতে স্টোকসকে মিড-অফ দিয়ে তুলে মারতে গিয়ে ধরা পড়েছেন তিনি জেমস অ্যান্ডারসনের হাতে, প্রথম ইনিংসেও আউট হয়েছিলেন এভাবেই। এ ইনিংসেও এর আগে এমন শট খেলেছেন, একবার অ্যান্ডারসনের নাগালের একটু বাইরে দিয়েও গিয়েছিল যেটি।
টেস্টে হোল্ডারের সঙ্গে একটা দ্বৈরথ ছিল স্টোকসের, এর আগে স্টোকসকে দুবার ফিরিয়েছিলেন হোল্ডার, হোল্ডারকে একবার স্টোকস। তবে এবার আর পারলেন না ইংল্যান্ড অধিনায়ক। ব্ল্যাকউডের উইকেটের পর জন ক্যাম্পবেল নামলেন আবারও, তাকে নিয়েই দারুণ এক জয়ে উইন্ডিজকে পৌঁছে দিলেন হোল্ডার।
এর আগে দিনের শুরুতে জফরা আর্চারের গুরুত্বপূর্ণ ২৩ রানে উইন্ডিজকে ঠিক ২০০ রানের লক্ষ্য দিতে পেরছিল ইংল্যান্ড। অ্যান্ডারসন ও আর্চারকে ফিরিয়ে ইনিংসে ৫ উইকেট পূর্ণ হয়ে গিয়েছিল শ্যানন গ্যাব্রিয়েলের, ১ম ইনিংসে ৪টি উইকেট দিয়ে এটি তার ক্যারিয়ারের তৃতীয় সেরা ম্যাচ ফিগার।
হয়তো টসে জেতার পর এমন লক্ষ্য স্টোকসকে বললে সেটা নিতে চাইতেন না তিনি, তবে ৪র্থ দিন শেষবেলায় ঝড়ে হুট করেই ৮ উইকেট হারিয়ে ফেলে এই সংগ্রহটাও তাদের জন্য ছিল লড়াই করার মতোই।
ইংল্যান্ড লড়াই করলো। তবে ওয়েস্ট ইন্ডিজের মতো নয়।