নাটকীয় শুরুর পর সিবলি-স্টোকসের দেয়ালে আটকে গেল উইন্ডিজ
২য় টেস্ট, ওল্ড ট্রাফোর্ড
১ম দিন, স্টাম্পস
ইংল্যান্ড ২০৭/৩* (সিবলি ৮৬*, স্টোকস ৫৯*, চেজ ২/৫৩, জোসেফ ১/৪১)
ডম সিবলির ২৫৩ বলে অপরাজিত ৮৬ ও বেন স্টোকসের ১৫৯ বলে অপরাজিত ৫৯ রান, দুজনের ওল্ড স্কুল ব্যাটিংয়ে অবিচ্ছিন্ন ১২৬ রানের জুটিতে ওল্ড ট্রাফোর্ডে এজিয়েস বোউলের হারের ক্ষতে ওল্ড ট্রাফোর্ডে প্রথম দিন ভাল একটা প্রলেপ দিয়েছে ইংল্যান্ড। অবশ্য দিনের শুরুতে চিত্রটা ভিন্ন ছিল, ইংল্যান্ডের জন্য সবকিছুই চলে যেতে পারতো বিপক্ষে। জফরা আর্চারকে নাটকীয়ভাবে হারিয়ে ফেলার পর রসটন চেজের ২ বলে ২ উইকেট, আলজারি জোসেফের জো রুটকে ‘বানি’ বানানোর পথে আরেকধাপ এগিয়ে যাওয়া ইঙ্গিত দিচ্ছিল ইংল্যান্ডের বিপর্যয়ের। সিবলি-স্টোকস হতে দেননি সেটি। এজিয়েস বোউলে হারের পর সিরিজে ফিরে আসতে এমন একটা প্রথম দিনই হয়তো দরকার ছিল ইংল্যান্ডের।
প্রথম টেস্টের মতো এই টেস্টেরও প্রথম দিন বৃষ্টির কারণে দেরিতে শুরু হয়েছে খেলা, তবে খেলা হয়েছে ৮২ ওভার। মেঘাচ্ছন্ন কন্ডিশনে ফিল্ডিং নিয়ে জেসন হোল্ডার আরেকদফা চ্যালেঞ্জ জানিয়েছিলেন ইংল্যান্ডকে, টসে জিতে ফিল্ডিং নেওয়ার পর সংক্ষিপ্ত প্রথম সেশনে ১৪তম ওভারেই স্পিন লেলিয়ে দিয়েছিলেন তিনি। চেজ নিজের দ্বিতীয় বলে সফলও হলেন, তার সোজা হওয়া বলে এলবিডব্লিউ ররি বার্নস। তার উইকেট দিয়েই লাঞ্চে গেল দুই দল, ফিরে এসে প্রথম বলেই ডাউন দ্য লেগে ব্যাট চালিয়ে লেগস্লিপে হোল্ডারের হাতে ধরা পড়লেন জ্যাক ক্রলি। চেজ হ্যাটট্রিকের সামনে, ইংল্যান্ড দেখছে অন্ধকার।
জো রুট এলেন, স্যাঁতসেঁতে ওল্ড ট্রাফোর্ডের উইকেটে স্পিন আদায় করতে থাকলেন চেজ। তবে হোল্ডার শুরুতেই যেন হারিয়ে ফেললেন তার মূল অস্ত্র শ্যানন গ্যাব্রিয়েলকে। শুরু থেকেই অস্বস্তিতে ছিলেন তিনি, প্রথম বল আলগা করার পর দ্বিতীয় বলটাই করলেন এমন ওয়াইড, যা গেল ডাওরিচের নাগালের বাইরে লেগসাইড দিয়ে, মনে করিয়ে দিল ২০০৬-০৭ অ্যাশেজের স্টিভেন হার্মিসনকে। প্রথম সেশনে ৩ ওভারের পর দ্বিতীয় সেশনে ৪ ওভারের একটি স্পেল করে উঠেই গেলেন তিনি। প্রথম টেস্টের ম্যাচসেরা গ্যাব্রিয়েল সিরিজের দলে জায়গা করে নিয়েছিলেন ফিটনেস টেস্ট দিয়ে, তবে এদিন তাকে ফিট মনে হয়নি সেভাবে।
গ্যাব্রিয়েলের মুখচ্ছবিই বলে দেয় অনেককিছু
এর মাঝে সিবলিকে নিয়ে জো রুট নিজের ফিরে আসার ম্যাচে খেলছিলেন ভালই, দুজনের জুটি ফিফটিও হয়েছিল। তবে দিনের সেরা পেসার জোসেফের শেষমুহুর্ত মুভ করে বেরিয়ে যাওয়া ফুললেংথের বলে ড্রাইভ করতে গিয়ে হোল্ডারের হাতে ধরা পড়লেন তিনি। আগের ম্যাচে ইংল্যান্ড অধিনায়ককে নিজের বোলিংয়ে ফিরিয়েছিলেন হোল্ডার, এবার ফেরালেন ক্যাচ নিয়ে। রুট জোসেফের মুখোমুখি হওয়া ৬ ইনিংসে ৪ বারই আউট হলেন তার বলে।
স্টোকস এলেন। ওয়েস্ট ইন্ডিজও যেন চলে গেল ব্যাকফুটে। ডম সিবলি সব মিলিয়ে বারদুয়েক জীবন পেলেন শর্ট লেগ ও স্লিপে, এলবিডব্লিউ থেকে বাঁচলেন আম্পায়ারস কলে। তবে দুজন মিলে করলেন দারুণ সতর্ক ব্যাটিং, হতাশ করলেন উইন্ডিজকে। চা-বিরতির পর টেস্ট ক্যারিয়ারের তৃতীয় ফিফটি ছুঁলেন সিবলি, ১৬৪ বলে। এরপর বেন স্টোকস মাইলফলকে গেলেন ১১৯ বলে। চা-বিরতির আগে সিরিজের প্রথম ছয়টা মেরেছেন স্টোকস, চেজকে ক্রিজ থেকে বেরিয়ে এসে। এই ছয়ের বিপরীতে স্টোকস চার মেরেছেন এখন পর্যন্ত চারটি, সিবলিও তাই।
জোসেফের মতো আঁটসাঁট বোলিং করেছেন রোচ-হোল্ডারও, তবে ‘মারণাস্ত্র’ ধরনের কিছু বের করতে পারেননি তারা। চেজও পরে গিয়ে আর সেভাবে প্রতি-আক্রমণ করতে পারেননি। দিনটা স্বস্তি নিয়েই শেষ করেছেন স্টোকস-সিবলি।
দিনের শুরুটা অবশ্য হয়েছিল তাদের বিপরীত। ‘বায়ো-সিকিউরিটি’ প্রটোকল ভেঙে টেস্ট শুরুর কয়েকঘন্টা আগে স্কোয়াড থেকে ইংল্যান্ড বাদ দিয়েছে জফরা আর্চারকে। তিনটি পরিবর্তন অনুমিতই ছিল, আর্চারকে সহ তাদের আনতে হয়েছে চারটি পরিবর্তন। ওয়েস্ট ইন্ডিজ ছিল অপরিবর্তিত। এরপর টসে জিতে নেওয়া সিদ্ধান্তেও তাদের আত্মবিশ্বাসেরই ছাপ ছিল।
দিনশেষে সেটি থাকলো না অবশ্য। দ্বিতীয় দিন ঘুরে দাঁড়াতে তাই খুব বেশি সময় থাকবে না তাদের হাতে। লম্বা তালিকার প্রথমে থাকবে স্টোকস-সিবলির জুটি ভাঙা।