• ওয়েস্ট ইন্ডিজের ইংল্যান্ড সফর ২০২০
  • " />

     

    স্টোকস-সিবলির ম্যারাথনে ক্লান্ত ওয়েস্ট ইন্ডিজ

    স্টোকস-সিবলির ম্যারাথনে ক্লান্ত ওয়েস্ট ইন্ডিজ    

    ২য় টেস্ট, ওল্ড ট্রাফোর্ড
    ২য় দিন, স্টাম্পস
    ইংল্যান্ড ১ম ইনিংস ৪৬৯/৯ ডিক্লে. (স্টোকস ১৭৬, সিবলি ১২০, বাটলার ৪০, বেস ৩১, চেজ ৫/১৭২, রোচ ২/৫৮)
    ওয়েস্ট ইন্ডিজ ১ম ইনিংস ৩২/১*
    ওয়েস্ট ইন্ডিজ ৪৩৭ রানে পিছিয়ে 


    রসটন চেজ হতাশায় শুয়েই পড়লেন। স্টোকসের বিপক্ষে আরেকটা আবেদন নাকচ করে দিয়েছেন আম্পায়ার, সেটা যেন মানতেই পারছিলেন না তিনি। দিনে ওয়েস্ট ইন্ডিজকেও বেশ ক্লান্ত করেই ছেড়েছে ইংল্যান্ড। চেজের ওই শুয়ে পড়ার কিছুক্ষণ পরই আউট হয়েছিলেন স্টোকস, তবে তার আগে পিষ্ট করেছেন ওয়েস্ট ইন্ডিজকে। তার ১৭৬ ও ডম সিবলির ১২০ রানের ম্যারাথন দুই সেঞ্চুরির পর শেষবেলায় স্যাম কারানের আঘাতে ওল্ড ট্রাফোর্ডে দিনটা স্বাগতিকদেরই। স্টোকস-সিবলির জুটি ভাঙতেই ৯৫ ওভার অপেক্ষা করতে হয়েছে দুই দিন মিলিয়ে সফরকারিদের। কেমার রোচের উইকেটখরা কাটার সঙ্গে রসটন চেজের ক্যারিয়ারের তৃতীয় পাঁচ উইকেটে শেষ পর্যন্ত ইংল্যান্ডকে প্রথম ইনিংসে থামাতে পেরেছে তারা, তবে এ টেস্টে ইংল্যান্ডকে থামাতে আবহাওয়ার সঙ্গে নিজেদেরকেও ছাড়িয়ে যেতে হবে তাদের। 

    আগেরদিনের অবিচ্ছিন স্টোকস-সিবলি জুটি এদিন শুরু করেছিলেন বেশ ধীরলয়ে। দিনের প্রথম ঘন্টায় ১৩ ওভারে মাত্র ২২ রান তুলেছিল ইংল্যান্ড, প্রথম সেশনে ২৬ ওভারে ৫৭। ৮০-এর ঘরে থেকে দিন শুরু করা সিবলির আগেই স্টোকসের সেঞ্চুরি হয়ে যাবে বলে মনে হচ্ছিল একসময়, তবে লাঞ্চের আগে ক্যারিয়ারে দ্বিতীয় সেঞ্চুরি সিবলি পেলেও স্টোকসের ছিল ১ রানের অপেক্ষা। সিবলির ৩ অঙ্কে যেতে লেগেছে ৩১২ বল, ১৯৯০ সালের পর এর চেয়ে ধীরগতির সেঞ্চুরি আছে ইংল্যান্ডের আর মাত্র দুজনের- মাইকেল আথারটন ও নাসের হুসেইন। 
     


    আগের ম্যাচে ফিফটির পর জীবন পেয়েও সেখানেই থেমেছিলেন, সে আক্ষেপ এবার ঘুচলো তার। আন-অর্থোডক্স টেকনিক নিয়ে সিবলি আলোচনায় আছেন আগে থেকেই, অ্যালেস্টার কুক অবসর নেওয়ার পর ররি বার্নসের সঙ্গে একটা দৃঢ় ওপেনিং জুটি সিবলি গড়বেন, সে আশা ইংল্যান্ডের আরও বাড়ালেন তিনি। সিবলি তার ইনিংসে খেলেছেন ৩৭২ বল, মেরেছেন মাত্র ৫টি চার। কুকের অভিষেকের পর থেকে তিনি ছাড়া সিবলির চেয়ে এক ইনিংসে বেশি বল আর কোনও ইংলিশ ওপেনার খেলেননি। কুকের অভিষেকের পর এত কম বাউন্ডারিতে এতো রানও করেননি আর কোনও ইংলিশ ব্যাটসম্যান। 

    সিবলির মতো না হলেও ধীরগতির ছিলেন স্টোকসও। ক্যারিয়ারের দ্বিতীয় সর্বোচ্চ এই ইনিংসে ৩৫৬ বল খেলেছেন স্টোকস, এখন পর্যন্ত একমাত্র ডাবল সেঞ্চুরি ২৫৮-এর ইনিংসেও তিনি খেলেছিলেন মাত্র ১৯৮ বল। স্টোকস অবশ্য ইনিংসের পরের ধাপে ছিলেন বেশ দ্রুতগতির, ২৫৫ বলে সেঞ্চুরি পূর্ণ করার পর পরের ফিফটি করতে তার লেগেছিল মাত্র ৪৬ বল। তবে তিনি ঝুঁকি নিয়েছেন বেশ হিসাব করে, সুযোগ পেলে ফলো-থ্রু ছাড়াই চেক শটে মেরেছেন ছয়, করেছেন রিভার্স-সুইপ। 

    স্টোকস গিয়ার বদলানো শুরু করেছিলেন আগেই, সিবলি শুরুতে তাকে স্ট্রাইক দেওয়ার চেষ্টার পর নিজেও সামিল হতে গিয়ে ফিরেছেন চেজকে ডাউন দ্য গ্রাউন্ডে এসে খেলে ডিপ-মিডউইকেটে ধরা পড়ে। ৯৫ ওভার অপেক্ষার পর ওলি পোপ নেমে টিকেছেন মাত্র ৮ বল, চেজের বলে একদম প্লাম্ব ইনফ্রন্ট হয়েছেন তিনি। 

    স্টোকস আউট হয়েছেন কেমার রোচকে রিভার্স সুইপ করতে গিয়ে, উইকেটকিপার শেন ডাওরিচের কাছে। এ উইকেট দিয়ে ৫২১ বল ও ৩২১ দিনের উইকেটখরা কেটেছে রোচের। এ উইকেটের আগে বারকয়েক রিভিউ নিয়েও সফল হতে পারেননি তিনি, ওয়েস্ট ইন্ডিজ এ ইনিংসে মাইকেল গফের দেওয়া ৬টি সিদ্ধান্ত চ্যালেঞ্জ করে বদলাতে পারেনি একটিও। 
     


    রোচের খরা কাটার পরই যেন নামলো একপশলা বৃষ্টি, স্টোকসের উইকেটের ঠিক পরের বলেই স্লিপে ক্যাচ দিলেন ক্রিস ওকস। এরপর জস বাটলারের ৪০, স্যাম কারানের ১৭, ডম বেসের ২৬ বলে ৩১ ও স্টুয়ার্ট ব্রডের ১৪ বলে ১১ রানের অবদানে ৪৬৯ পর্যন্ত গিয়ে ইনিংস ঘোষণা করেছেন জো রুট। ইংল্যান্ড ইনিংস অবশ্য শেষ হতে পারতো ৪৩৯ রানেই, সহজ রান-আউটের সুযোগ অদ্ভুতভাবে মিস করেছিলেন শ্যানন গ্যাব্রিয়েল। 

    প্রায় সারাদিনই মুভমেন্ট পেয়েছেন অবশ্য উইন্ডিজ পেসাররা, তবে আগেরদিন গ্যাব্রিয়েলের পর এদিন জোসেফের চোট ভুগিয়েছে তাদের। হোল্ডাররা চেষ্টা করে গেছেন, সফল হতে সময় লেগেছে তাদের। চেজ বেশ ভাল সার্ভিস দিয়ে গেছেন হোল্ডারকে, করেছেন ৪৪ ওভার বোলিং। কারানের উইকেট দিয়ে পাঁচ পূর্ণ হয়েছে তার। 

    ১৬২ ওভার ফিল্ডিংয়ের পর শেষবেলায় খেলাটা দারুণ চ্যালেঞ্জ ছিল ওয়েস্ট ইন্ডিজের। তবে সফল হতে কারান পর্যন্ত অপেক্ষা করতে হয়েছে ইংল্যান্ডকে, লেংথ থেকে একটু মুভ করা বলে এলবিডব্লিউ হয়েছেন জন ক্যাম্পবেল, সে উইকেট অবশ্য রিভিউ নিয়ে পেয়েছে ইংল্যান্ড। ইংল্যান্ড পেতে পারতো নাইটওয়াচম্যান আলজারি জোসেফের উইকেটও, কিন্তু কারানের ফুললেংথের বলে রিভিউটা নেননি শেষ পর্যন্ত রুট। 

    ইংল্যান্ডের জন্য দিনের আক্ষেপ হিসেবে থাকতে পারে সেটিই, আর ওয়েস্ট ইন্ডিজের জন্যও সাফল্য হিসেবে ধরা যায় ওই ১ উইকেট হারানোই শুধু। তৃতীয় দিন পূর্বাভাসে আছে বৃষ্টির সম্ভাবনা। তবুও ইংল্যান্ডকে এ টেস্টে চ্যালেঞ্জ জানাতে বেশ লম্বা পথ পাড়ি দিতে হবে উইন্ডিজকে, সেটা নিশ্চিতই।