নতুন বলে ব্রডের তোপের পর নতুন আশা ইংল্যান্ডের
২য় টেস্ট, ওল্ড ট্রাফোর্ড
৪র্থ দিন, স্টাম্পস
ইংল্যান্ড ১ম ইনিংস ৪৬৯/৯ ডিক্লে. (স্টোকস ১৭৬, সিবলি ১২০, বাটলার ৪০, বেস ৩১, চেজ ৫/১৭২, রোচ ২/৫৮) ও ২য় ইনিংস ৩৭/২*
ওয়েস্ট ইন্ডিজ ১ম ইনিংস ২৮৭ (ব্রাথওয়েট ৭৫, ব্রুকস ৬৮, চেজ ৫১, ব্রড ৩/৬৬, ওকস ৩/৪২, কারান ২/৭০)
ইংল্যান্ড ২১৯ রানে এগিয়ে
বেন স্টোকস ও জস বাটলার ওপেনিংয়ে, বিশ্বকাপ ফাইনালের সুপার ওভার নয়, এমন দৃশ্য ওল্ড ট্রাফোর্ডে টেস্ট ম্যাচে। মানেটা পরিষ্কার, ইংল্যান্ডের প্রয়োজন দ্রুত রান তোলা। বাটলার অবশ্য টিকলেন ৩ বল, কেমার রোচ এরপর বোল্ড করলেন জ্যাক ক্রলিকেও। বিস্ফোরক ওপেনিং জুটি নামিয়ে খুব একটা সফল হয়নি ইংল্যান্ড, দিনের শেষবেলায় আরেকদফা ব্যাটিংয়ে নেমে লিডটা ২১৯ রান পর্যন্ত নিতে পেরেছে তারা। সিরিজ জয়ের আশা বাঁচিয়ে রাখতে জয়টা দরকার তাদের, সেজন্য এখন বেশ কিছু জুয়াই খেলতে হবে তাদের। তবে তাদেরকে আশা জোগাতে পারে চতুর্থ দিনে স্টুয়ার্ট ব্রডের নতুন বলের তোপই।
যে তোপে পরপর তিন ওভারে তিনি নিয়েছেন তিন উইকেট, ওয়েস্ট ইন্ডিজের ইনিংসে নেমেছে নাটকীয় ধস। ক্রেইগ ব্রাথওয়েট, শামারহ ব্রুকসের পর রসটন চেজের তিন ফিফটিতে ফলো-অন এড়াতে পারলেও ইংল্যান্ডের চেয়ে ১৮২ রানে পিছিয়ে থেকে থামতে হয়েছে তাদের।
অথচ একসময় ২৪২ রানে ৪ উইকেট, তাদের স্কোর ছিল এমন। ব্রাথওয়েট ফিরলেও ব্রুকসকে ভালই সঙ্গ দিচ্ছিলেন চেজ, এলেন ব্রড। এলো নতুন বল। ব্রুকস ক্রিজে আটকে থেকে এলবিডব্লিউ, ব্রড আবেদনের আগেই শুরু করলেন তার সহজাত উদযাপন। পরের ওভারে স্টাম্প হারালেন জেরমাইন ব্ল্যাকউড, এরপরের ওভারে আবার এলবিডব্লিউ শেন ডাওরিচ, বাঁচলেন না রিভিউ নিয়েও। ২৪২-৪ থেকে ব্রডের তিন ওভারে ওয়েস্ট ইন্ডিজ ২৫২-৭! ফলো-অনের শঙ্কা যখন মিলিয়ে গেছে বলে মনে হচ্ছিল একটু আগেও, ফিরে এলো সেটিই।
জেসন হোল্ডার ওকসকে খোঁচা মেরে এরপর স্লিপে ক্যাচ দিলেন, ফলো-অন এড়াতে তখনও ৯ রান প্রয়োজন তাদের। চেজ সেটি হতে দিলেন না, তবে ফিফটির পরপরই ওকসের বলে ফাঁদে পড়লেন তিনিও। ইংল্যান্ড অবশ্য এ উইকেট পেলো রিভিউ নিয়ে, দুই দলের ১০ম বারের চেষ্টায় অবশেষে নিজের অনফিল্ড সিদ্ধান্ত বদলাতে হলো আম্পায়ার মাইকেল গফকে। গ্যাব্রিয়েলকে এরপর বোল্ড করে স্টোকস-বাটলারের ওপেনিং জুটির মতো দৃশ্য দেখার সুযোগটা দ্রুতই করে দিলেন ওকস।
ইংল্যান্ডকে ম্যাচে ফিরিয়ে এনেছে ব্রডের ৩ ওভার/আইসিসি
বৃষ্টিতে ভেসে যাওয়া তৃতীয় দিনের পর ইংল্যান্ড হয়তো শুরুতেই আশা করেছিল এমন কিছু। তবে সাফল্যের জন্য বেশ অপেক্ষা করতে হয়েছে তাকে। আগেরদিন নাইটওয়াচম্যান হিসেবে নামা আলজারি জোসেফ পুরো একদিন অপরাজিত ছিলেন, ক্রিকেট ওয়েস্ট ইন্ডিজের এমন টুইটই কিনা জোসেফকে আরও উজ্জীবিত করলো। সব মিলিয়ে ৫২ বল খেললেন তিনি, ডম বেসের বলে শর্ট লেগে ধরা পড়ার আগে করলেন ৩২ রান।
হোপের সঙ্গে ব্রাথওয়েটের জুটি এরপর ফিফটি পেরিয়ে গেল, সে জুটি লাঞ্চেও গিয়েছিল অবিচ্ছিন্ন থেকেই। বিরতির পর সে জুটি ভাঙলেন স্যাম কারান, তার অফকাটারে হোপকে কট-বিহাইন্ড করে। ব্রাথওয়েট অবশ্য থাকলেন, তার জন্য প্রয়োজন হলো স্টোকসের বাম্পার। ক্রমাগত শর্ট অফ আ লেংথে বল করে যাচ্ছিলেন স্টোকস, অবশেষে বাউন্সে ভড়কে গিয়ে লিডিং-এজে ফিরতি ক্যাচ দিলেন ব্রাথওয়েট।
সহসাই অবশ্য ইংল্যান্ডের মুখে হাসি ফুটলো না, ব্রুকস-চেজের জুটি আরেকদফা হতাশ করলো তাদের। এরপরই দৃশ্যপটে হাজির হলেন ব্রড, দ্বিতীয় নতুন ডিউক হাতে।
সব মিলিয়ে দিনটা তাই ইংল্যান্ডের, তবে সিরিজের দ্বিতীয় টেস্টও রোমাঞ্চের হাতছানি দিচ্ছে পঞ্চম দিনের আগে, যেখানে সম্ভব সবরকমের ফলই। বোর্ডে কতো রান যথেষ্ট মনে করবে ইংল্যান্ড, সে প্রশ্নের জবাব পাওয়ার পর খুঁজতে হবে ওয়েস্ট ইন্ডিজের ব্যাটিংয়ের কৌশল। আগের সফরে হেডিংলিতে ৯১.২ ওভারে ৩২২ রান তাড়া করে ঐতিহাসিক জয় পেয়েছিল উইন্ডিজ, সে কথাটাও তাই মনে না এসে পারে না ইংল্যান্ডের।
চতুর্থ দিনের আগে তাদের প্রয়োজন ছিল ১৯ উইকেট, শেষদিন প্রয়োজন আরও ১০টি। আর উইন্ডিজের একটা দিন কাটানো। ওল্ড ট্রাফোর্ডে পঞ্চম দিনের জন্য প্রস্তুত থাকুন!