• বিসিবি প্রেসিডেন্টস কাপ ২০২০
  • " />

     

    পেসারদের সঙ্গে ইরফানের সরব উপস্থিতি

    পেসারদের সঙ্গে ইরফানের সরব উপস্থিতি    

    প্রেসিডেন্টস কাপের মূল উপলক্ষ্য ছিল ক্রিকেটে ফেরা। শ্রীলঙ্কা সফর স্থগিত হওয়ার পর বিসিবি ঘরোয়া ক্রিকেটে ফেরার উদ্যোগ নিলে সামনে এসেছে এ টুর্নামেন্ট। প্রাইজমানি, লাইভ-স্ট্রিমিং-- বিসিবি আয়োজনে কমতি রাখেনি। ফাইনালশেষে বেশ কয়েকটি পুরস্কারের সঙ্গে যোগ হলো ‘প্রেসিডেন্টস স্পেশাল অ্যাওয়ার্ড’ও। খারাপ আবহাওয়ার কারণে ফাইনাল পিছিয়ে দেওয়া হলেও সে ম্যাচটিও হয়েছে ঠিকঠাকই। 

    ‘বিসিবির পারফরম্যান্স’ ছাড়াও ৭ ম্যাচের টুর্নামেন্টের দিকে ফিরে তাকালে আসবে যেসব দিক… 


    ইরফান আর ব্যাটিং অর্ডারের নিচের দিকের দৃঢ়তা 

    ইরফান শুক্কুর প্রথম শ্রেণি খেলছেন ২০০৯-১০ মৌসুম থেকে। তবে ঢাকা প্রিমিয়ার লিগে প্রথম খেলেছেন ২০১৪ সালে। বিপিএলে ২০১৫ সালে প্রথম খেললেও প্রথম ৪ মৌসুমে খেলেছিলেন মাত্র ৫ ম্যাচ। শেষ বঙ্গবন্ধু বিপিএলে চ্যাম্পিয়ন রাজশাহী রয়্যালসের হয়ে শেষ ২ ম্যাচে ঝলক দেখিয়েছিলেন, কোয়ালিফায়ারে ৪২ বলে ৪৫ এবং ফাইনালে ৩৫ বলে ৫২ রানের ইনিংসে। প্রেসিডেন্টস কাপে প্রথম ম্যাচেই তৌহিদ হৃদয়ের সঙ্গে ম্যাচজেতানো জুটির অংশ থাকার পর ফাইনালসহ পুরো টুর্নামেন্টেই নাজমুল একাদশের অন্যতম ভরসা ছিলেন তিনি ব্যাটিং অর্ডারের নিচের অংশে। এ উইকেটকিপার ব্যাটসম্যান সর্বোচ্চ রান-সংগ্রাহক মুশফিকের চেয়ে মাত্র ৫ রান কম করেছেন, ফাইনালেও খেলেছেন দারুণ এক ইনিংস। তার হিটিং-সামর্থ্য চোখে পড়ার মতোই, ম্যাচ পরিস্থিতি পড়ে ব্যাটিং করেছেন বেশ ভালভাবে। 


    ইরফান শুক্কুরের উপস্থিতি ছিল সরব


    এমনিতে সামগ্রিকভাবে টুর্নামেন্টে দলগুলির টপ অর্ডারের ব্যর্থতা চোখে লাগলেও জাতীয় দলের হেড কোচ রাসেল ডমিঙ্গো বলেছিলেন, এ টুর্নামেন্টকে অনুশীলন হিসেবেই দেখছেন তিনি, দীর্ঘদিন পর ম্যাচ খেলার সুযোগটিকেই বড় মনে করছেন। ফলে ব্যাটসম্যানদের পারফরম্যান্সকে তেমন তীক্ষ্ণ নজরে দেখতে চান না। 

    অবশ্য ফাইনালে মাহমুদউল্লাহ একাদশের রানতাড়া ছিল বেশ দাপুটে, সাদামাটা টুর্নামেন্ট কাটানো লিটন দাসের পর ইমরুল কায়েস করেছেন ফিফটি। তবে এ টুর্নামেন্টে শুক্কুর তো বটেই, নিচের দিকে ব্যাটসম্যানরা বেশ দৃঢ়তা দেখিয়েছেন। তিনি ছাড়াও তৌহিদ হৃদয়, মাহাদি হাসান, মাহিদুল হাসান অঙ্কন, নুরুল হাসান সোহান ওপরের দিকের বিপর্যয় সামাল দিয়েছেন ভালভাবে। সীমিত ওভারে যা আশাজাগানিয়াই বটে। 

    আশার নাম পেস

    পেসারদের নিয়ে আলোচনা হয়েছে আগেই। ফাইনালেও তার ব্যতিক্রম হলো না। এবার দৃশ্যপটে হাজির হলেন সুমন খান। ফাইনাল ছিল টুর্নামেন্টে তার তৃতীয় ম্যাচ, সেখানে নিলেন ৫ উইকেট। ফাইনালে সর্বোচ্চ রান-সংগ্রাহক মুশফিককে এলবিডব্লিউ করলেন দারুণ এক নিপড-ব্যাক ডেলিভারিতে। অথচ এ টুর্নামেন্টে তিনি শুরুতে ছিলেন মুশফিকদের দলেরই স্ট্যান্ড-বাই হিসেবে। তবে মাহমুদউল্লাহ একাদশের দুই পেসার-- মৃত্যুঞ্জয় চৌধুরি ও হাসান মাহমুদের চোটের কারণে তিনি খেলেছেন সেই দলে। পুরো টুর্নামেন্টে পেসাররা যে দাপট দেখিয়েছেন, সুমন যেন সেটিরই অ্যালব্যামে আরেকটা ট্র্যাক যোগ করলেন। 


    সঙ্গে তাসকিনদের... 


    শুধু উইকেটসংখ্যা নয়, টুর্নামেন্টে পেসাররা মুগ্ধ করেছেন প্রায় সবকটি দিক দিয়েই। লাইন, লেংথ, ডিসিপ্লিন, ফিটনেস, পরিস্থিতি বুঝে আঁটসাঁট বোলিং, ব্রেকথ্রু এনে দেওয়া, ডেথ ওভারের বোলিং-- প্রায় সবকটি বক্সেই টিকচিহ্ন দিয়েছেন তারা। কোভিড-১৯ পরিস্থিতির লকডাউনের পর তাদের উপস্থিতি ছিল বেশ সরব। 

    ফাইনালের আগের ম্যাচেই সাইফউদ্দিন নিয়েছিলেন ৫ উইকেট, রুবেল হোসেন পুরো টুর্নামেন্টেই ছিলেন দারুণ। তাসকিন আহমেদের ছন্দ চোখে পড়েছে আলাদা করে, মোস্তাফিজুর রহমান নতুন করে আশা জুগিয়েছেন আবারও। আল-আমিন হোসেন জাতীয় দলে নিজের প্রত্যাবর্তন ভোলেননি, মনে হয়েছে এমনই। এছাড়া ‘লাল বলের জন্য বেশি উপযোগী’ মনে করা এবাদত হোসেন, আবু জায়েদ রাহি কিংবা চোট থেকে ফেরা খালেদ আহমেদও নিজেদের উপস্থিতি জানান দিয়েছেন ভালভাবেই। 


    তাদের আরেক ধাপ

    বিশ্বকাপ জয়ের পর থেকেই তাদের দিকে বাড়তি নজর ছিল, তবে কোভিড-১৯-এ ঢাকা প্রিমিয়ার লিগ থমকে যাওয়াতে ‘তরুণ’দের ‘পরিণত’ হয়ে ওঠার ধাপ দেখা সম্পন্ন হয়নি ঠিক। এ টুর্নামেন্ট সীমিত পরিসরে হলেও সে সুযোগটা করে দিয়েছে। 

    তিন স্কোয়াডে সব মিলিয়ে অ-১৯ বিশ্বকাপজয়ী দলের ৯ জন ছিলেন শুরুতে, তবে চোটে থাকা মৃত্যুঞ্জয় প্রথম ম্যাচের আগেই ছিটকে গেছেন, যিনি বিশ্বকাপ থেকেও ফিরেছিলেন চোট নিয়ে। বাকি ৮ জনের প্রত্যেকেই অন্তত দুটি করে ম্যাচ খেলেছেন, সর্বোচ্চ ৫টি ম্যাচ খেলেছেন নাজমুল একাদশের তৌহিদ হৃদয়, প্রথম ম্যাচেই যিনি ফিফটি পেয়েছিলেন। মাহমুদুল হাসান জয় রানতাড়ায় দারুণ ধৈর্য্যের পরিচয় দিয়ে করেছিলেন ফিফটি। 

    এছাড়া এই গ্রুপ একমাত্র পেসার হিসেবে খেলা শরিফুল হাসান, একমাত্র স্পিনার হিসেবে খেলা রাকিবুল হাসান বোলিংয়ের সঙ্গে ফিল্ডিংয়েও ছিলেন বেশ ভাল। 

    আপাতত তারা ফিরবেন এইচপির ক্যাম্পে, বিসিবির পরিকল্পনা অনুযায়ী, তাদের নিয়ে অ-২১ আরেকটি গ্রুপ তৈরির কথা। প্রেসিডেন্টস কাপ সেখানে তাদের জন্য আরেকটি ধাপ হয়েই থাকবে। 


    অ-১৯ বিশ্বকাপজয়ীদের মাঝে সবচেয়ে বেশি ম্যাচ খেলেছেন তৌহিদ হৃদয়


    স্পিন যখন আড়ালে 

    উইকেটশিকারির শীর্ষ দশে আছেন দুজন স্পিনার-- নাসুম আহমেদ ও রিশাদ আহমেদ। এমনিতে প্রতিটি স্কোয়াডেই ছিলেন একজন করে লেগস্পিনার। সবচেয়ে বেশি ৪টি ম্যাচ খেলেছেন তাদের মাঝে রিশাদ, টুর্নামেন্টের সেরা উদীয়মান ক্রিকেটারের পুরস্কারও পেয়েছেন তিনি। রিশাদ ঝলক দেখিয়েছেন তার ফিল্ডিং-সামর্থ্যেও। 

    নাসুম সুযোগ কাজে লাগানোর চেষ্টা করেছেন, নতুন অ্যাকশনে এখনও একটু কাজ বাকি তাইজুল ইসলামের-- সেটি মনে করিয়ে দিয়েছিলেন ডমিঙ্গো। সদ্য বাবা হওয়া মেহেদি হাসান মিরাজ টুর্নামেন্টে যোগ দিয়েছিলেন একটু পরে। 

    এখন পর্যন্ত শুধু দীর্ঘ সংস্করণেই আন্তর্জাতিক ক্রিকেট খেলা নাঈম হাসান অবশ্য সাদা বলেও নিজের অ্যাকুরেসি আর ধারাবাহিকতার ইঙ্গিত দিয়েছেন। 
     


    এবং তামিমের অধিনায়কত্ব 

    ফাইনালে ওঠার বেশ ভাল সুযোগ ছিল তার দলের, তবে হুট করে নেমে আসা ধসে তা হয়নি। যেদিন এ সুযোগ হারালেন তামিম ইকবালরা, সেদিনই টুর্নামেন্টের একমাত্র ফিফটি পেয়েছিলেন তিনি। এমনিতে ৪ ম্যাচ, তাও আবার এমন আবহের ম্যাচ অধিনায়কত্ব বিচারের জন্য ঠিক যুতসই নয়। তবে তামিম তার অধিনায়কত্ব নিয়ে নিজেই বলেছেন, তিনি আরও শিখতে চান, ধারাবাহিকভাবে সে প্রক্রিয়ার ভেতরই আছেন। 

    ডমিঙ্গোর আশা তামিম একজন ভাল অধিনায়কই হবেন সামনের দিনগুলিতে, “তার অধিনায়কত্ব এবং নেতৃত্বের ধরন নিয়ে কথা হয়েছে আমার সঙ্গে। আমাদের এখনও কিছু কাজ করতে হবে। অবশ্যই এ কয়েকটি ম্যাচ দিয়ে বিচার করা কঠিন। সে এমন কয়েকজন বোলারকে ব্যবহার করছে, যাদেরকে সে চেনে না, এবং এমন কয়েকজন ব্যাটসম্যানের সঙ্গে ব্যাটিং করছে, যাদের সঙ্গে আগে খেলেনি। 

    “সে অভিজ্ঞ ক্রিকেটার। খেলাটা ভালভাবে বুঝার সামর্থ্য আছে তার। অন্যরা তাকে সম্মানও করে। পরের কয়েক মাসে আমি আশা করছি সে ভাল একজন নেতা হয়ে উঠবে।”