• আইপিএল ২০২০
  • " />

     

    সুযোগ পেয়ে আইপিএলে বাজিমাত করেছেন যে চার ক্রিকেটার

    সুযোগ পেয়ে আইপিএলে বাজিমাত করেছেন যে চার ক্রিকেটার    

    জমে উঠেছে আইপিএলের প্লে অফের দৌড়। শুরুর দিকে উড়লেও টানা তিন ম্যাচ হেরে ধুঁকছে দিল্লি, অন্যদিকে পাঞ্জাব, বেঙ্গালুরু, কলকাতারা টুর্নামেন্টের যতটা সময় গড়িয়েছে ততটা স্বরূপে ফেরার ইঙ্গিত দিচ্ছে। এই দলগুলোকে বদলে দিয়েছেন টুর্নামেন্টের মাঝপথে ড্রেসিং রুমে যোগ দেওয়া বেশ কয়েকজন। তারা জাদুর কাঠির হয়ে বদলে দিয়েছেন দলের ভাগ্য।

    ক্রিস গেইল - কিংস ইলেভেন পাঞ্জাব

    এবারের আসরে প্রথম সাত ম্যাচ খেলে পাঞ্জাব মাত্র এক ম্যাচে জয় পেয়েছিল। টুর্নামেন্টের মাঝপথে পাঞ্জাবের সঙ্গে যোগ দিয়ে ক্রিস গেইল শেষ দুটি ম্যাচ মিস করেছিলেন পাকস্থলীর সমস্যা নিয়ে। তবে এরপর দলে ফিরেই বাজিমাত করেন ‘ইউনিভার্স বস।’ গেইল এখন পর্যন্ত পাঁচ ম্যাচে মাঠে নেমেছেন, পাঁচটিতেই জিতেছে পাঞ্জাব। পয়েন্ট টেবিলের তলানি থেকে চারে উঠে এসেছে। নিজের প্রথম ম্যাচেই ৫ ছয়ে ৫৩ রানের দুর্দান্ত ইনিংস খেলেছিলেন, এরপর থেকে ব্যাটকে খাপখোলা তলোয়ারের মতোই চালিয়েছেন।

    এখন পর্যন্ত পাঁচ ম্যাচে ১৩৮.৮ স্ট্রাইক রেটে ১৭৭ রান করেছেন এই উইন্ডিজ কিংবদন্তি। টি-টোয়েন্টি ক্রিকেটে সবচেয়ে বেশি ছক্কার মালিক গেইল ১৭৭ রান করতে ছক্কা মেরেছেন ১৫ টি। সাধারণত গেইল উদ্বোধনী ব্যাটসম্যান হিসেবে খেললেও পাঞ্জাবের হয়ে এবার তিন নম্বরে খেলছেন তিনি। গেইলবিহীন সাত ম্যাচে পাঞ্জাব অকার্যকর মিডল অর্ডার নিয়ে সমস্যায় ভুগছিল, গেইল তিনে নেমে সেই সমস্যার সমাধান করেছেন। দুই সুপার ওভারের ম্যাচেও গেইলের ব্যাটিং নৈপুণ্যেই পয়েন্ট পেয়েছিল পাঞ্জাব। এককথায়, টুর্নামেন্টের মাঝপথে যোগ দিয়েও পাঞ্জাবের চেহারা পাল্টে দিয়েছেন ইউনিভার্স বস।

     

     

    জেসন হোল্ডার - সানরাইজার্স হায়দরাবাদ

    মিচেল মার্শের বদলি হিসেবে আইপিএল এসেছেন। কেন উইলিয়ামসনের ইনজুরির পর একাদশে সুযোগ পেয়েছেন। আর সুযোগ পেয়ে প্রথম দুই ম্যাচেই নিজের জাত চিনিয়েছেন উইন্ডিজ অধিনায়ক জেসন হোল্ডার। ক্রিকেট মাঠে তার পরিচিত অলরাউন্ডার হিসেবে, শেষের দিকে নেমে মারকাটারি ব্যাটিং আর গুরুত্বপূর্ণ সময় স্লোয়ার, বাউন্সারের বিচিত্র ব্যবহারে ব্যাটসম্যানদের কাবু করতে পারেন তিনি।

    আইপিএলে তার বোলিং সত্ত্বাটাই হায়দরাবাদের বেশি কাজে লাগছে। বিশেষ করে পাওয়ার প্লে এবং ডেথ ওভারে তার বৈচিত্র্যপূর্ণ বোলিং হায়দরাবাদকে দারুণ কার্যকরী পঞ্চম বোলিং অপশন দিয়েছে। ভুবনেশ্বর কুমারের অনুপস্থিতিতে এমন একজন বোলারের খোঁজেই ছিল তারা।

    রাজস্থানের বিপক্ষে পাওয়ার প্লে-তে বোলিংয়ে এসে প্রথম রানআউট করে রবিন উথাপ্পাকে ফিরিয়েছেন, এরপর ডেথ ওভারে সানজু স্যামসন, স্টিভেন স্মিথ এবং রিয়ান পরাগকে ফিরিয়েছেন তিনি। একইভাবে পাঞ্জাবের বিপক্ষে প্রতিপক্ষের সবচেয়ে ভয়ংকর উইলোবাজ ক্রিস গেইলকে ফিরিয়েছেন, সঙ্গে শেষের দিকে ক্রিস জর্ডানের গুরুত্বপূর্ণ উইকেটটিও ঝুলিতে পুরেছেন। দুই ম্যাচ থেকে সাড়ে সাত গড়ে পাঁচ উইকেট নিয়ে একাদশে নিজের জায়গাটা পাকাপোক্ত করে নিয়েছেন তিনি।

    ক্রিস মরিস - রয়্যাল চ্যালেঞ্জার্স বেঙ্গালুরু

    দলের অলরাউন্ডারদের ঠিকঠাক ব্যবহার করার দিক দিয়ে খ্যাতি নেই বেঙ্গালুরুর। আর সেজন্যই দক্ষিণ আফ্রিকান পেস বোলিং অলরাউন্ডার ক্রিস মরিসের জন্য যখন নিলামে ১০ কোটি রুপি খরচ করল বেঙ্গালুরু, তখন সবার একটাই প্রশ্ন ছিল, এত পরিমাণ অর্থ বুঝে খুঁজে খরচ করল তো তারা? পেশীর টান নিয়ে মৌসুমের প্রথম কয়েক ম্যাচ ডাগআউটে বসেই কেটেছিল তার। তবে মাঠে ফিরেই বেঙ্গালুরুর সবচেয়ে বড় সমস্যার প্রতিষেধক হয়ে উঠলেন তিনি, আর তা হচ্ছে ডেথ বোলিং।

     

     

    দুর্দান্ত ব্যাটিং অর্ডারের গড়া বেঙ্গালুরুর রানের পাহাড় প্রতিপক্ষ এই দুর্বলতার কারণেই বারবার অতিক্রম করে যেত। তবে মরিস আসার পর সেই চিত্র পাল্টে গেল। পাওয়ার প্লে এবং ম্যাচের অন্তিম ওভারগুলোতে অবিশ্বাস্য ৫.৭৪ গড়ে বোলিং করে তিনি তুড়িতেই বেঙ্গালুরুর সবচেয়ে বড় সমস্যার সমাধান করেছেন। এখন পর্যন্ত ছয় ম্যাচ খেলে উইকেট পেয়েছেন দশটি, সেটাও আবার দুর্দান্ত সব স্পেলের মাধ্যমে, ১৯ রানে ৩ উইকেট, ১৭ রানে ২ উইকেট এবং নিজের টুর্নামেন্ট সেরা ২৬ রানে ৪ উইকেট।

    এবারের আইপিএলের সবচেয়ে কিপটে বলার হচ্ছেন মরিস। ১৪২ টি বল করে মাত্র ১৩৬ রান দিয়েছেন তিনি। প্রতি ১৪.১ বলে উইকেটের দেখা পেয়েছেন এই প্রোটিয়া পেসার। এছাড়া নিয়মিত ১৪০ কিলোমিটার বা তার বেশি গতিতে বোলিং করে নবদীপ সাইনির ওপর ফাস্ট বোলিংয়ের চাপ কমিয়েছেন।

    লকি ফার্গুসন - কলকাতা নাইট রাইডার্স

    কলকাতার বেঞ্চে বসেই দিন কাটছিল পেসার লকি ফার্গুসনের। সুনীল নারাইন এবং আন্দ্রে রাসেলের ইনজুরিতে ভাগ্য খুলে গিয়েছে তার। একাদশে সুযোগ পেয়ে প্রথম ম্যাচেই হায়দরাবাদের বিপক্ষে জ্বলে উঠেছেন এই কিউই পেসার। প্রথমে চার ওভারের স্পেলে ১৫ রান দিয়ে ৩ উইকেট তুলে নিয়েছিলেন, এরপর সুপার ওভারে তার গতিময় বোলিংয়ে ম্যাচ জিততে মাত্র তিন বল প্রয়োজন হয়েছে কলকাতার।

    উইকেট পাওয়ার দিক দিয়ে ধারাবাহিক হতে না পারলেও গতিময় ইয়র্কার আর কিপটে বোলিং দিয়ে নজর কেড়েছেন এই পেসার।