রাবাদা বনাম বুমরাহ: ফাইনালে লড়াই তাদের মধ্যেও
প্রথমবারের মতো আইপিএল ফাইনালে দিল্লি ক্যাপিটালস। অন্যদিকে চারবারের চ্যাম্পিয়ন মুম্বাই ইন্ডিয়ানস এবার ফাইনালে ষষ্টবার। তবে লড়াইয়ের মধ্যেও আছে লড়াই। জাসপ্রিত বুমরাহ আর কাগিসো রাবাদা যে দুই দলের সম্ভবত সবচেয়ে বড় দুই অস্ত্র।
আরব আমিরাতের উইকেট, তার উপর মাত্র তিন মাঠে খেলা। এজন্য স্পিনসহায়ক উইকেটে স্পিনাররা সহায়তা পাবে বলেই ধারণা করা হচ্ছিল। কিন্তু সর্বোচ্চ উইকেট শিকারীর তালিকায় প্রথম তিনজনই পেসার। এবারের আইপিএলে ২৯ উইকেট নিয়ে সবার ওপরে থাকা কাগিসো রাবাদা অবশ্য একটি ম্যাচেও ম্যান অব দ্য ম্যাচ হতে পারেননি। রাবাদার দিল্লির বিপক্ষে কোয়ালিফায়ারে ১৪ রানে ৪ উইকেট নিয়ে একবারই তা হতে পেরেছেন জাসপ্রিত বুমরাহ। তবে সেটা দুজনের আসল অবদানের গল্পটা বলছে না। দলের মোট উইকেট শিকারের এক চতুর্থাংশের বেশি এসেছে তাদের বোলিং থেকে।
বুমরাহ পাওয়ারপ্লের পাশাপাশি মিডল ওভার ও ডেথ ওভারে দারুণ বোলিং করেছেন, রাবাদা পাওয়ারপ্লেতে একটু পিছিয়ে। ডেথ ওভারে বুমরাহ ইকোনমিকাল বোলিং করলেও রাবাদা উইকেট টেকিংয়ে এগিয়ে। তবে ইকোনমির দিক দিয়ে সব পর্যায়েই এগিয়ে রয়েছেন জাস্প্রিত বুমরাহ। পাওয়ারপ্লে ও মিডল ওভারে তাঁর ইকোনমি ৬ এর নিচে, ডেথ ওভারে ৮ এর কম। পাওয়ারপ্লে বাদে মিডল ও ডেথ ওভারে রাবাদার ইকোনমি ৮ বা তার উপরে।
পাওয়ারপ্লেতে ২২ ওভার বল করে ৭.৪৫ ইকোনমিতে ১৬৪ রান দিয়ে মাত্র ২ উইকেট শিকার করতে পেরেছেন রাবাদা। বুমরাহ মাত্র ৫.৯৪ ইকোনমিতে ১৬ ওভার বল করে ৯৫ রানের বিনিময়ে নিয়েছেন ৭টি উইকেট। পাওয়ারপ্লের পরের ৯ ওভারে রাবাদার শিকার ৮টি উইকেট, বুমরাহর ৬টি। ১৮ ওভার বোলিং করে রাবাদা ১৪৪ রান দিয়েছেন ৮ ইকোনমিতে। যেখানে বুমরাহ মাত্র ৫.৬৭ ইকোনমিতে ১৫ ওভারে দিয়েছেন ৮৫ রান।
ডেথ ওভারে বল করা টি-টোয়েন্টির সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ, তাতে বুমরাহ অনেক দিন ধরেই অনন্য। বুমরাহর ডেথ ওভার বোলিং ইকোনমি.৭.৮৪ , ২৫ ওভার বল করে ১৯৬ রান খরচায় তিনি ১৪টি উইকেট নিয়েছেন এ সময়ে। ডেথ ওভারে ওভারপ্রতি ৯,১৩ রান করে দিলেও বলকে শুন্য গ্যালারীতে পাঠাতে গিয়ে রাবাদার স্লোয়ার বাউন্সার, ইয়র্কারে কুপোকাত হয়েছেন বহু ব্যাটসম্যান। ডেথ ওভারে আফ্রিকান এই পেসার প্রায় প্রতি ৭ (৭.২) বলে নিয়েছেন একটি করে উইকেট, ২২.৪ ওভারে ২০৭ রান দিয়ে মোট নিয়েছেন ১৯ উইকেট।
২০০৮ সালে শুরু হওয়া আইপিএলে রাবাদা বাদে দুই মৌসুমে ২৫ উইকেট নিতে পেরেছেন শুধুই ডোয়াইন ব্রাভো। কিন্ত টানা দুই মৌসুমে কেউ পারেননি, পেরেছেন শুধুমাত্র কাগিসো রাবাদা। ২০১৯ সালে দিল্লির হয়ে স্বদেশী মরনে মরকেলের এক মৌসুমে সর্বোচ্চ ২৫ উইকেট নেওয়ার রেকর্ড ভাঙ্গার হাতছানি ছিল। সেবার না পারলেও এবার ইতিমধ্যেই ২৯টি উইকেট নিয়ে তা করে ফেলেছেন আফ্রিকান এই পেসার। আরেকটি রেকর্ডও তার সামনে উকি দিচ্ছে। এক মৌসুমে সবচেয়ে বেশি উইকেট শিকারের রেকর্ড, ১৮ ম্যাচে ৩২ উইকেট নিয়ে যে রেকর্ডটা ডোয়াইন ব্রাভোর দখলে। যদিও কাজটা হবে খুব কঠিন। বুমরাহ সেই রেকর্ড ভাঙতে না পারলেও ভারতের হয়ে এক মৌসুমে ২৬ উইকেট নিয়ে সবচে বেশি উইকেট নেওয়ার ভুবনেশ্বর কুমারের রেকর্ড এবার নিজের করে নিয়েছেন।
আইপিএলের ১২ আসরের মাঝে ৭টি আসরেই সর্বোচ্চ উইকেট শিকারী ছিলেন বিদেশী। পাকিস্তানকে নিয়ে একবারই হয়েছিল আইপিএল। ২০০৮ সালের সে আসরে সবচে বেশি উইকেট নিয়েছিলেন পাকিস্তানের সোহেল তানভীর। ভুবনেশ্বর কুমার ও ডোয়াইন ব্রাভোর হাতে দুইবার উঠেছিল পার্পল ক্যাপ। টানা দুই মৌসুমে এ পুরষ্কার পান ভুবনেশ্বর। ১২ আসরে মাত্র দুবারই স্পিনাররা পান পার্পল ক্যাপ। আইপিএলের তৃতীয় আসরে ২১ উইকেট নিয়ে উইকেট শিকারীর তালিকার শীর্ষে থাকেন প্রজ্ঞ্যান ওজা। ২০১৯ সালে আরেক স্পিনার ইমরান তাহির ১৭ ম্যাচে ৬.৬৯ ইকোনমিতে ২৬ উইকেট নিয়ে পান পার্পল ক্যাপ।
এবার অবশ্য দিন শেষে নির্ভর করতে হয়েছে পেসারদের ওপরেই। পার্পল ক্যাপের দৌড়ে রাবাদা কিছুটা এগিয়ে থাকলেও বুমরাহ তাকে ছুঁয়ে ফেলতে বা ছাড়িয়ে যেতেই পারেন। দিন শেষে সেটার ওপরেই নির্ভর করছে হয়তো ম্যাচের ভাগ্য।