• আইপিএল ২০২০
  • " />

     

    উইলিয়ামসন-হোল্ডারে বেঙ্গালুরুকে বিদায় করে এগিয়ে গেল হায়দরাবাদ

    উইলিয়ামসন-হোল্ডারে বেঙ্গালুরুকে বিদায় করে এগিয়ে গেল হায়দরাবাদ    

    রয়্যাল চ্যালেঞ্জার্স বেঙ্গালুরু ১৩১/৭, ২০ ওভার (ডি ভিলিয়ার্স ৫৬, ফিঞ্চ ৩৬, হোল্ডার ৩/২৫, নটরাজন ২/৩৩)
    সানরাইজার্স হায়দরাবাদ ১৩২/৪, ১৯.৪ ওভার (উইলিয়ামসন ৫০*, হোল্ডার ২৪*, সিরাজ ২/২৮) 
    হায়দরাবাদ ৬ উইকেটে জয়ী 


     

    একজন এসেছেন ‘রিপ্লেসমেন্ট’ হিসেবে, এরপর হয়ে উঠেছেন দলের অন্যতম সেরা পারফর্মার। আরেকজন পরিচিত যে কোনো মুহুর্তে ‘স্থিতধী’ রূপ ধারণে। এলিমিনেটরে লো-স্কোরিং ম্যাচে সবকিছু এসে ঠেকলো ওয়েস্ট ইন্ডিজ ও নিউজিল্যান্ড অধিনায়ক জেসন হোল্ডার ও কেন উইলিয়ামসনের ওপর। দুজন হতাশ করলেন না তাদের ফ্র্যাঞ্চাইজিকে, নিজেদের জাত চেনালেন আরেকবার। হোল্ডারের দারুণ বোলিং সহায়তা করেছিল বেঙ্গালুরুকে ১৩১ রানে আটকে রাখতে, এরপর উইলিয়ামসনের ৪৪ বলে অপরাজিত ফিফটিতে ১ বল বাকি থাকতে সে লক্ষ্য পেরিয়ে গেল হায়দরাবাদ, জয় নিশ্চিত হলো হোল্ডারের টানা দুই চারে। এলিমিনেটরে বেঙ্গালুরুকে 'এলিমিনেট' করে দিয়ে ফাইনালের পথে এগিয়ে গেল তারা, এখন তাদের সামনে দ্বিতীয় কোয়ালিফায়ারে মুম্বাইয়ের কাছে হেরে অপেক্ষায় থাকা দিল্লি। 

    প্লে-অফের দ্বিতীয় ম্যাচে প্রথম দিনের চেয়ে বেশ ভিন্ন উইকেট ছিল ভিন্ন ভেন্যুতে। এখানে স্পিনারদের মূলত ভূমিকা ছিল লাইন-লেংথ ঠিক রেখে আঁটসাঁট বোলিং করে যাওয়া, সামনের ব্যাটসম্যানকে আগ্রাসী হয়ে উঠতে না দেওয়া। আর ‘হন্তারক’-এর মূল ভূমিকা পালন করছিলেন পেসাররা। রশিদ খান উইকেটশূন্য থাকলেন, তবে করলেন ইকোনমিক্যাল বোলিং। হোল্ডার আর নটরাজন মিলে চেপে ধরলেন বেঙ্গালুরুকে, গুরুত্বপূর্ণ সময়ে উইকেট নিয়ে। এরপর বোলিংয়ে বেঙ্গালুরুকে আশা জুগিয়েছিল অ্যাডাম জ্যাম্পা ও যুঝভেন্দ্র চেহেলের লেগস্পিন, তবে মোহাম্মদ সিরাজ শুরুতে যা করেছিলেন, শেষটা তেমন করতে পারলেন না নভদিপ সাইনি। অবশ্য ম্যাচশেষে কোহলি বললেন আরেকটা বাস্তবতাও, ‘কেন উইলিয়ামসন উইকেটে থাকলে ম্যাচের চিত্রটাই বদলে যায়!’ 

    উইলিয়ামসন যখন দৃশ্যপটে আসেন, তখন পাওয়ারপ্লেতে দ্বিতীয় উইকেট হারিয়েছে হায়দরাবাদ, টিভি আম্পায়ারের ক্লোজ-কলে কট-বিহাইন্ড হয়ে ফিরতে হয়েছিল ডেভিড ওয়ার্নারকে। সিরাজের বলে গ্লাভড হয়েছিলেন বলে সিদ্ধান্ত দিয়েছেন টিভি আম্পায়ার, বেঙ্গালুরুর রিভিউ তার কাছে যাওয়ার পর, যেটিতে ওয়ার্নারের অসন্তোষ ছিল স্পষ্টই। শুরুতে এই সিরাজের বলেই এজড হয়েছিলেন এ ম্যাচে ঋদ্ধিমান সাহার বদলে আসা শ্রীভাতস গোস্বামি। এরপর জ্যাম্পাকে কাট করতে গিয়ে এজড হলেন মনিশ পান্ডে, চেহেলকে তুলে মারতে গিয়ে জ্যাম্পার হাতে ধরা পড়লেন প্রিয়ম গার্গ। হায়দরাবাদের ক্ষেত্রে তখন ফিরে আসছিল পাঞ্জাবের বিপক্ষে সেই ম্যাচের স্মৃতি, ১২৭ রানতাড়ায় ১০০ রানে ৩ উইকেট থেকে যখন ১১৪ রানে অল-আউট হয়ে গিয়েছিল তারা। 


    অবশ্য তখনও প্রয়োজনীয় রান-রেট তেমন ইস্যু ছিল না, তবে কার্যত টুর্নামেন্টের প্রথম নক-আউট ম্যাচে চাপের তো খেলা করার কথা ছিল। এই চাপের ব্যাপারটিতেই উইলিয়ামসন কেন আরও অনেকের চেয়ে আলাদা, সেটি দেখালেন আরেকবার। সঙ্গে পেলেন হোল্ডারকে। চেহেলের করা ম্যাচের শেষ বলটিতে গিয়ে স্লগ করে ছয় মারলেন উইলিয়ামসন, পুরো স্পেলে এই একটি বলই অতো লেগস্টাম্প-ঘেঁষা লাইনে করেছিলেন চেহেল। 

    চেহেল ও জ্যাম্পা মিলে ৮ ওভারে দিলেন মাত্র ৩৬ রান, নিলেন ২ উইকেট। এরপর ছিল পেসারদের পালা, তবে ১৬তম ওভারে কোহলি আনলেন শিভাম দুবেকে, এর আগে যিনি বোলিং করেননি। দুবের সেই ওভারের পর নভদিপ সাইনি ও সিরাজের করা ওভারেও একটি করে চার মেরে লক্ষ্যমাত্রা নাগালের বাইরে যেতে দিলেন না উইলিয়ামসন-হোল্ডার। শেষ ওভারে প্রয়োজন ছিল ৯, প্রথম ২ বলে ১ রান এলেও এরপর সাইনির অফস্টাম্পের বাইরের দুই বলে সুযোগ কাজে লাগাতে ভুল করলেন না হোল্ডার, ফিল্ড-সেটিংয়ের সঙ্গে যে দুটি ডেলিভারি ছিল বেশ সামঞ্জস্যহীন। 

    আবুধাবির এ উইকেটে বেঙ্গালুরুর ব্যাটিংয়েও ঠিক সামঞ্জস্য পাওয়া গেল না, এক এবি ডি ভিলিয়ার্স ছাড়া। বেশ কয়েকটি পরিবর্তন নিয়ে নেমেছিল তারা, ওপেনিংয়ে উঠে এসেছিলেন কোহলি। ইনিংসের দ্বিতীয় ওভারে হোল্ডারের লেগসাইড দিয়ে বেরিয়ে যাওয়া বলে গ্লাভড হয়ে ফিরলেন তিনি, পরের ওভারে দেবদূত পাড্ডিকাল দিলেন ক্যাচ। পাওয়ারপ্লেতে ২ উইকেটে ৩২ রান তুলেছিল বেঙ্গালুরু, মেরেছিল মাত্র ৩টি চার। অ্যারন ফিঞ্চ ও ডি ভিলিয়ার্স এরপর চেষ্টা করলেন, শাহবাজ নাদিমের বলে ক্যাচ তোলার আগে ফিঞ্চ করেছেন ৩০ বলে ৩২। সে ওভারে নাদিম একটা নো-বল করলেন, তবে স্পিনার হয়েও তার ওভার-স্টেপিং সে ওভারের সবচেয়ে বড় নাটকীয় ঘটনা নয়। ফ্রি হিটে যে এরপর রান-আউট হয়ে গেলেন মইন আলি, গোল্ডেন ডাক মেরে। 

    অফিসিয়ালি এরপর সব চাপ গিয়ে পড়লো ডি ভিলিয়ার্সের ওপর। ১৮তম ওভারে নটরাজনের দারুণ ইয়র্কারে বোল্ড হওয়ার আগে তিনি করলেন ৪৩ বলে ৫৬, শেষ ওভারে সাইনি ও সিরাজের মারা দুই চারে শেষ পর্যন্ত ১৩০ পেরুলো বেঙ্গালুরু। পুরো টুর্নামেন্টেই কোহলি ও ডি ভিলিয়ার্সের ওপর বেঙ্গালুরুর ব্যাটিংয়ের অতি-নির্ভরতা দৃশ্যমান ছিল, এদিনও সেটির ব্যতিক্রম হলো না। এর আগে টানা চার ম্যাচ হারের পর এমন স্কোর, তবুও বেশ খানিকটা সময় লড়াই করলেন কোহলিরা। 

    তবে ওই যে, উইলিয়ামসন থাকলে খেলার চিত্র বদলে যায়। সঙ্গে ম্যাচে তো ছিল হোল্ডার-ফ্যাক্টর।