গেইলের হাজারী-রেকর্ডের মঞ্চে নায়ক স্টোকস-স্যামসনরা
কিংস ইলেভেন পাঞ্জাব ২০ ওভারে ১৮৫/৪ (গেইল ৯৯, রাহুল ৪৬; আর্চার ২/২৬, স্টোকস ২/৩২)
রাজস্থান রয়্যালস ১৭.২ ওভারে ১৮৬/৩ (স্টোকস ৫০, স্যামসন ৪৮, স্মিথ ৩১*, উত্থাপ্পা ৩০; অশ্বিন ১/৪৩, জর্ডান ১/৪৪)
রাজস্থান ৭ উইকেটে জয়ী
ক্রিস গেইলের এরকম রূপটা ঠিক চেনা নয়। আউট হওয়ার পর রাগে ব্যাট ছুঁড়ে ফেলছেন, গেইলের এমন মেজাজ হারিয়ে ফেলার ঘটনা খুব নিয়মিত নয়। ৯৯ রানে আউট হওয়ার পর আর নিজেকে সংযত রাখতে পারেননি গেইল। তবে তার চেয়েও বেশি হতাশ হয়েছেন বোধ হয় ম্যাচ শেষ হওয়ার পর। রেকর্ড গড়ার এমন একটা দিনেও যে দারুণ গুরুত্বপূর্ণ ম্যাচটা হেরে গেছে তার দল কিংস ইলেভেন পাঞ্জাব। ম্যাচটা জিতে রাজস্থান রয়্যালস পাঞ্জাবের টানা পাঁচ ম্যাচের জয়রথই শুধু থামায়নি, উজ্জ্বল করে তুলেছে নিজেদের প্লে অফের আশাও। আইপিএলের প্লে-অফ নিয়ে লড়াইটা তাই রইল জমজমাটই।
অথচ এই ম্যাচে গল্প হওয়ার কথা ছিল শুধু গেইলকে নিয়ে। টি-টোয়েন্টিটা তার চেয়ে ভালো কেউ খেলতে পারে, সেটা নিয়ে খুব তর্ক থাকার কথা নয়। এবারের আইপিএলে শুরুতে বসেই থাকতে হচ্ছিল। কিন্তু সুযোগ পাওয়ার পর দেখাচ্ছেন, কেন তিনি টি-টোয়েন্টির ব্র্যাডম্যান। আজ ৯৯ রানে আউট হয়ে আইপিএলে প্রথম ব্যাটসম্যান হিসেবে দুবার এই অভিজ্ঞতা হয়েছে, সেটা ভুলে যাওয়াই উচিত। কিন্তু তার আগেই হয়েছে একটা কীর্তি। ইতিহাসের প্রথম ব্যাটসম্যান হিসেবে টি-টোয়েন্টিতে এক হাজার ছক্কা হয়েছে গেইলের।
অবশ্য যখন মাঠে নেমেছিলেন মায়াংক আগরওয়ালকে প্রথম ওভারেই হারিয়ে চাপে পাঞ্জাব। কেএল রাহুল আর গেইলের জন্য প্রথম ৬ ওভারে উঠল ৫৩ রান। গেইল এর মধ্যেই তেয়াগির ওভারে চার ছয় মেরে শুরু করে দিয়েছেন নিজের কাজটা। রাহুল চুপ থাকলেও গেইল তার কাজটা করে যাচ্ছিলেন। ৩৩ বলে পেলেন ফিফটি, এবারের আইপিএলে যা তার তৃতীয়। রাহুল অবশ্য রানটা বাড়াতে পারছিলেন না, শেষ পর্যন্ত স্টোকসের বলে ফিরে গেলেন ৪১ বলে ৪৬ রান করে। গেইল অবশ্য বাজে বলের ফায়দা নিচ্ছিলেন, স্টোকসকে মাঠের বাইরে আছড়ে ফেলেন পেলেন নিজের ৯৯৯তম ছয়। সেই ওভারেই আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ উইকেট পেল রাজস্থান। ১২ বলে ২২ রান করে ফিরে গেলেন বিপজ্জনক নিকোলাস পুরান। এবারও স্টোকস-তেওয়াটিয়া যুগলবন্দি, পুল করতে গিয়ে ক্যাচ দিয়েছেন ডিপ ফাইন লেগে। ।
গেইল অবশ্য ধৈর্য ধরে ছিলেন। পরের ওভারেই এলো সেই মুহূর্ত। তেওয়াটিয়াকে ছয় মেরে পেলেন টি-টোয়েন্টিতে নিজের ১ হাজার তম ছক্কা। ছয় মারায় গেইল কতটা এগিয়ে, সেটা বোঝা যাবে একটা দুইয়ে থাকা কাইরন পোলার্ডের ৬৯০টি ছয় মারার পরিসংখ্যান থেকে। নব্বইয়ে ঢুকে গেলেন সেই সঙ্গে, শেষ ওভারে রাজস্থানের সেরা বোলার জফরা আর্চারকে ছয় মেরে চলে গেলেন সেঞ্চুরির একদম কাছে। কিন্তু আর্চারের বলে লেগ স্টাম্পের ওপর ইয়র্কারেই ইনসাইড এজে আউট হয়ে গেলেন, পাওয়া হলো না টি-টোয়েন্টিতে নিজের আরেকটি সেঞ্চুরি। পাঞ্জাবের ১৮৫ রান তখন বেশ ভালোই মনে হচ্ছিল।
কিন্তু গেইলের মঞ্চটা নিজের করে নিলেন এরপর স্টোকসই। সেঞ্চুরি পেয়ে ফর্মে ফিরেছিলেন আগেই, আজ দেখালেন সেই ফর্মের ছটা। শুরু থেকেই ছিলেন ছয় মারার মেজাজে, অন্য পাশে রবিন উত্থাপ্পা ছিলেন দর্শক। ২৪ বলেই তুলে নিলেন ফিফটি। তবে জর্ডানের বলে ফিফতি আসার এক বল বলেই একটা শট চেক করতে গিয়ে ক্যাচ দিলেন মিড অফে। তবে স্টোকসের রেখে যাওয়া ভিতের ওপর দাঁড়িয়ে এরপর ব্যাট করেছেন বাকিরা। সঞ্জু স্যামসন খেলেছেন দারুণ কিছু শট, বদলি ফিল্ডার সুচিতের দুর্দান্ত এক থ্রোতে রান আউট হওয়ার আগে করেছেন ২৫ বলে ৪৮ রান। তখন রান আর বলের সমীকরণ সহজ হয়ে এসেছে রাজস্থানের জন্য। স্মিথ আর বাটলার মিলে বাকি কাজ সেরেছেন সহজেই। ২০ বলে ৩১ রান করে অপরাজিত ছিলেন স্মিথ, ১১ বলে ২২ রান করে শেষ করেছেন বাটলার। ১৫ বল বাকি থাকতেই তাই লক্ষ্যটা টপকে গেছে রাজস্থান।