মুম্বাই বোলারদের পর কিশানের তোপে সমীকরণ আরও কঠিন হয়ে গেল দিল্লির
দিল্লি ১১০/৯, ২০ ওভার (আইয়ার ২৫, পান্ট ২১, বুমরাহ ৩/১৭, বোল্ট ৩/২১)
মুম্বাই ১১১/১, ১৪.২ ওভার (কিশান ৭২*, ডি কক ২৬, নরকিয়া ১/২৫)
মুম্বাই ৯ উইকেটে জয়ী
মুম্বাই বোলারদের তোপের পর কুইন্টন ডি কক ও ইশান কিশানের ফিফটিতে দিল্লিকে উড়িয়ে দিয়েছে মুম্বাই, শীর্ষ দুইয়ে তাদের জায়গা নিশ্চিত হয়েছে এ জয়ে। তবে শীর্ষ দুইয়ের দৌড়ে থাকা দিল্লি এখন বাদ পড়ে যেতে পারে টুর্নামেন্ট থেকেই, শেষ ম্যাচে বেঙ্গালুরুর বিপক্ষে জিতলে দুই নাম্বারে আসবে তারা, কিন্তু সে ম্যাচে হারলে বাজে রান-রেটের খেসারত দিতে হবে তাদের, এ ম্যাচে বড় পরাজয় তাদের রানরেটের অবস্থার আরও বারোটা বাজিয়েছে। টানা চার হারের পর এখন কার্যত শেষ ম্যাচে জয়ের বিকল্প কম তাই শ্রেয়াস আইয়ারের দলের।
দুবাইয়ে প্রথমে ব্যাটিং করে ১১০ রানের বেশি তুলতে পারেনি দিল্লি, উইকেটই বুঝে উঠতে পারেননি তাদের ব্যাটসম্যানরা। সঙ্গে জাসপ্রিত বুমরাহ, ট্রেন্ট বোল্টের সঙ্গে মুম্বাইয়ের বাকি চার বোলার করেছেন দারুণ বোলিং। দিল্লির দেওয়া সে লক্ষ্য মুম্বাই ৩৪ বল থাকতেই পেরিয়ে গেছে কিশানের ৪৭ বলে ৭২ রানের ইনিংসে।
১৭ অক্টোবর পয়েন্ট টেবিলের শীর্ষে ছিল দিল্লি, মুম্বাই ইন্ডিয়ানসের সঙ্গে প্লে-অফে তাদের জায়গা মনে হচ্ছিল একরকম নিশ্চিতই। তবে এরপর থেকেই জয়খরা শুরু হলো দিল্লির, টানা তিন ম্যাচ হারকে সঙ্গী করে তারা এ ম্যাচে এসেছিল এমন সমীকরণ নিয়ে-- শেষ দুই ম্যাচে একটি জয় প্রয়োজন তাদের, নাহলে রান-রেট ঠিক বাঁচাতে পারবে না। মুম্বাইয়ের বিপক্ষে ম্যাচে দুবাইয়ে মোটামুটি কঠিন উইকেট ও বুমরাহ-বোল্টরা মিলে তাদের জীবন আরও দুর্বিষহ করে তুললেন শুধু।
আগেই প্লে-অফ নিশ্চিত করে ফেলা মুম্বাই নেট রান-রেটেও বেশ এগিয়ে, ফলে শীর্ষ দুইয়ে জায়গাও একরকম নিশ্চিত ছিল তাদের। হারদিক পান্ডিয়াকে তাই বিশ্রাম দিয়েছে তারা এই ম্যাচে, খেলিয়েছে ছয়জন স্পেশালিস্ট বোলারকে। টু-পেসড উইকেটে শুরু থেকেই দিল্লিকে চেপে ধরেছে তারা, বোল্টের সঙ্গে ক্রুনাল পান্ডিয়ার পেস-স্পিনের জুটিতে। বুমরাহকে ৯ম ওভারে এনেছিলেন পোলার্ড, এমন উইকেটে তার স্কিল একটু পর আরও কাজে লাগবে বলে। মাঝে রাহুল চাহার সেই চাপ আরও বাড়িয়েছেন, ন্যাথান কোল্টার-নাইলের সঙ্গে বুমরাহ-বোল্টের জুটি শেষ করেছেন সেটি। ইনিংসের কোনো পর্যায়েই কোনো নিয়ন্ত্রণ ছিল না দিল্লির, পাওয়ারপ্লেতে এ মৌসুমে দ্বিতীয় সর্বনিম্ন ২২ রান তুলেছিল তারা ২ উইকেট হারিয়ে, বোল্টের বলে ফিরেছিলেন শিখর ধাওয়ান ও পৃথ্বি শ। ৩-১০ ওভারের মাঝে হয়েছে শুধু একটি বাউন্ডারি, চাহারের বলে স্টাম্পড হয়ে ফিরেছেন অধিনায়ক আইয়ারও।
১৫০-৬০ এর স্কোর তখন দৃষ্টিসীমা থেকে মিলিয়ে গেছে দিল্লির, লড়াই করার মতো ১৩০-ধরনের কোনো স্কোরও শীঘ্রই হারিয়ে গেছে বুমরাহর করা ১১তম ওভারে। সে সময় তিনি বোলিং করেছেন টেস্ট ম্যাচে প্রথম ঘন্টার মতো করে। সিম, মুভমেন্ট, অ্যাংগেল-- কী ছিল না। প্রথমে শর্ট অফ আ লেংথে পড়া বলে এজড হয়েছেন মার্কাস স্টোইনিস, এরপর রাউন্ড দ্য উইকেট থেকে গিয়ে প্লাম্ব-ইন-ফ্রন্টে এলবিডব্লিউ করেছেন ঋষভ পান্টকে। নিজের পরের ওভারে বুমরাহ ফিরিয়েছেন হারশাল প্যাটেলকে, যদিও বল ট্র্যাকিং দেখিয়েছে সেটি যেতো স্টাম্পের ওপর দিয়ে, তবে পান্ট খরচ করে ফেলেছিলেন রিভিউটা। শেষদিকে আশ্বিন ও রাবাদা মিলে মেরেছিলেন একটি করে ছয়, তবে দিল্লির অল্প রানে আটকে যাওয়া নিশ্চিত হয়েছিল তার আগেই।
মুম্বাইকে এ রানে আটকে রাখতে হলে দুর্দান্ত কিছু করতে হতো রাবাদা-নরকিয়া-আশ্বিনদের, ডি কক ও কিশান শুরুতেই সে সম্ভাবনা নাকচ করে দিলেন। পাওয়ারপ্লেতে ৩৮ রান উঠলেও ধীরে ধীরে খোলস থেকে বেরিয়ে কিশান দেখিয়েছেন দারুণ হিটিং, নরকিয়ার বলে ইনসাইড-এজে ডি কক ২৬ রান করে বোল্ড হওয়ার পর তিনি ছিলেন শেষ পর্যন্ত।
অনসাইডে ইনফ্রন্ট অফ স্কয়ারে কিশান ছিলেন দারুণ, তার ৭২ রানের ইনিংসের মাঝে ৪২-ই এসেছে এই অঞ্চল দিয়ে। ৩৫ বলে ৪২ রানের পর প্রথম ছয় মেরেছেন তিনি, রাবাদাকে কাভার দিয়ে। ৩৭ বলে পূর্ণ করেছেন ফিফটি, এরপর দুবেকে স্কয়ার লেগে আরেকটি ছয়ের পর নরকিয়াকে আরেকটি মেরে শেষ করেছেন ম্যাচ। ৪৭ বলের ইনিংসে কিশান মেরেছেন ৮টি চার।