'দিল্লি হু?', ফাইনালে যাওয়ার আগে বলে গেল মুম্বাই
মুম্বাই ইন্ডিয়ানস ২০০/৫, ২০ ওভার (কিষান ৫৫*, সূর্যকুমার ৫১, ডি কক ৪০, হারদিক পান্ডিয়া ৩৭*, আশ্বিন ৩/২৯)
দিল্লি ক্যাপিটালস ১৪৩/৮, ২০ ওভার (স্টোইনিস ৬৫, প্যাটেল ৪২, বুমরাহ ৪/১৪, বোল্ট ২/৯)
মুম্বাই ৫৭ রানে জয়ী
সবার আগে প্লে-অফ নিশ্চিত করা দলটা গ্রুপপর্বের শেষ ম্যাচে হায়দরাবাদের কাছে হারলো বাজেভাবে, আত্মবিশ্বাসে একটু ঘাটতি থাকারই কথা তাদের। তবে প্লে-অফে তাদের পাওয়ার-হিটিং আর আগুনে বোলিং স্বরুপে ফিরল। যেখানে রোহিত শর্মা বা কাইরন পোলার্ড ডাক মারলেও কিছু যায় আসে না, ট্রেন্ট বোল্ট ২ ওভার করে উঠে গেলেও ঝামেলা হয় না, জাসপ্রিত বুমরাহ সব পুষিয়ে দেন। একজন না ধরলে আরেকজন ধরবেন-- মুম্বাইয়ের বিপক্ষে খেলতে গেলে হয়তো এমন মানসিকতা রাখতে হবে, এর আগে না বুঝলেও আজ বুঝল দিল্লি। শেষ ৬ ওভারে ৯২ রানের ঝড়ে ২০০ ছোঁয়ার পর দিল্লিকে একসময় ০ রানে ৩ উইকেটে পরিণত করেছিল মুম্বাই, মার্কাস স্টোইনিস বা আক্সার প্যাটেলও সে ক্ষতি পোষাতে পারেননি। দাপুটে জয়ে ফাইনালে চলে গেছে মুম্বাই, দিল্লিকে এখন খেলতে হবে দ্বিতীয় কোয়ালিফায়ারে-- বেঙ্গালুরু ও হায়দরাবাদের ম্যাচে জয়ীদের বিপক্ষে।
তবে সে ম্যাচে যাওয়ার আগে দিল্লিকে ভাবতে হবে অনেক কিছু, গ্রুপপর্বে শীর্ষ দুইয়ে থাকার ফলে আরেকটি সুযোগ পাচ্ছে তারা, তবে সে ম্যাচে তারা যাবে ৬ ম্যাচে ৫ হার সঙ্গী করে। কাগিসো রাবাদা-আনরিখ নরকিয়ার পর তৃতীয় পেসার নিয়ে ঝামেলা আছে তাদের, টপ অর্ডারও তাদের চিন্তার কারণ। তবে দুবাইয়ের এ রাতটা দিল্লির সেসব ঝামেলা ছাপিয়ে মুম্বাইয়ের দাপটেরই।
ব্যাটিংয়ের জন্য দারুণ উইকেটে টসে জিতে ফিল্ডিং নিয়েছিল দিল্লি, হয়তো ব্যাটসম্যানদের আগে বোলারদের ওপর ভরসা করেছিল তারা। প্রথম ওভারে তিন চার মেরে শুরু করেছিলেন কুইন্টন ডি কক, পরের ওভারে আশ্বিন এসে ফেরালেন রোহিত শর্মাকে। তবে সে উইকেটও মুম্বাইকে ঠিক দমাতে পারেনি শুরুতে, ডি ককের সঙ্গে সূর্যকুমার যাদবের জুটি টানছিল তাদের। পাওয়ারপ্লেতে উঠেছিল ৬৩ রান, দুজনের ৬২ রানের জুটি ভেঙেছেন আবারও আশ্বিন। যাদব ফিরেছেন নরকিয়ার বলে, ৩৮ রানে ৫১ করার পর। এরপর একটু ধীরলয়ে এগিয়েছে মুম্বাইয়ের ইনিংস, ১৪ ওভার শেষে তাদের রান ছিল ১০৮।
তবে মুম্বাইয়ের ‘পাওয়ার হাউস’-এর একটা অংশ তখনও আসতে বাকি, সঙ্গে ইশান কিষান অপরাজিত। ১৫তম ওভারে রাবাদাকে চার-ছয়ে শুরুটা করলেন তিনিই। এরপর শুরু হলো ধ্বংসযজ্ঞ। ক্রুনাল পান্ডিয়া এক ছয় মেরেই ফিরলেন, তবে তার ভাই হারদিক এসে করলেন ১৪ বলে ৩৭, ৫টি ছয়ই মেরেছেন তিনি। ওপাশে কিষান অপরাজিত থাকলেন ৩০ বলে ৫৫ রানে, ৪টি চারের সঙ্গে মেরেছেন ৩টি ছয়।
ব্যাটিংয়ে মুম্বাই যেখান থেকে শেষ করলো, বোলিংয়ে শুরু করলো যেন সেখান থেকেই। দ্বিতীয় বলে বোল্টের বলে এজড পৃথ্বি শ, এক বল পর তার চিরায়ত ইনসুইংয়ে এলবিডব্লিউ রাহানে। পরের ওভারে বুমরাহর ইয়র্কারের কোনো জবাব ছিল না শিখর ধাওয়ানের কাছে। দিল্লির বোর্ডে কোনো রান নেই, উইকেট নেই ৩টি। শ্রেয়াস আইয়ারের দারুণ ৩টি চার শুধু ক্ষণিকের শো হয়েই থাকলো বুমরাহর কাছে।
চোট নিয়ে বোল্ট দুই ওভার করে উঠে গেলেন, ফাইনালের আগে মুম্বাইয়ের দুশ্চিন্তা থাকতে পারে সেটি নিয়েই। এ ম্যাচে অবশ্য স্টোইনিসের ৪৬ বলে ৬৫ বা আক্সার প্যাটেলের ৩৩ বলে ৪২ রানের ইনিংস তেমন পার্থক্য গড়তে পারলো না, দুজনের ৭১ রানের জুটিও তাই। বুমরাহ ফিরলেন, স্টোইনিসকে বোল্ড করে ভাঙলেন সে জুটি, পরের বলে ড্যানিয়েল সামস বাউন্সারে বেসামাল। বুমরাহ শেষ পর্যন্ত ফিরলেন টি-টোয়েন্টিতে তার সেরা বোলিং ফিগার নিয়ে-- ১৪ রানে ৪ উইকেট।
শেষ ওভারে গিয়ে পোলার্ডের বলে ক্যাচ দিলেন প্যাটেল, সে ক্যাচ চারবারের চেষ্টায় নিলেন রাহুল চাহার। তবে এদিন মুম্বাইয়ের পারফরম্যান্স যে দাপুটে ছিল, তাতে দিল্লির মতো দ্বিতীয়বার চেষ্টার অপেক্ষা না করেই ফাইনালে চলে গেল তারা। আর বলে গেল, “দিল্লি, হু?”