• বাংলাদেশের নিউজিল্যান্ড সফর ২০২১
  • " />

     

    বাংলাদেশের সুযোগ হাতছাড়ার মহড়ায় ল্যাথামের সেঞ্চুরিতে সিরিজ নিউজিল্যান্ডের

    বাংলাদেশের সুযোগ হাতছাড়ার মহড়ায় ল্যাথামের সেঞ্চুরিতে সিরিজ নিউজিল্যান্ডের    

    ২য় ওয়ানডে, ক্রাইস্টচার্চ
    টস- নিউজিল্যান্ড (ফিল্ডিং) 
    বাংলাদেশ ২৭১/৬, ৫০ ওভার (তামিম ৭৮, মিঠুন ৭৩, মুশফিক ৩৪, সৌম্য ৩১, স্যান্টনার ২/৫১, জেমিসন ১/৩৬, হেনরি ১/৪৮, বোল্ট ১/৪৯) 
    নিউজিল্যান্ড ২৭৫/৫, ৪৮.২ ওভার (ল্যাথাম ১১০*, কনওয়ে ৭২, নিশাম ৩০, মোস্তাফিজুর ২/৬২, মাহাদি ২/৪২) 
    নিউজিল্যান্ড ৫ উইকেটে জয়ী ও সিরিজে ২-০তে এগিয়ে


     ৩ ওভার, অগুণিত সুযোগ। তাসকিন আহমেদের বলে জেমস নিশামের আউটসাইড-এজে পাওয়া সহজ সুযোগ হাতছাড়া করলেন যখন মুশফিকুর রহিম, ব্যাপারটা ছিল ট্র্যাজেডি। একটু পর বাংলাদেশ সেটিকে বানিয়ে ফেললো অদ্ভুত। এরপর কমেডি। সহজ ক্যাচ মিস হলো, কঠিন ক্যাচ মিস হলো, মিসফিল্ড হলো, ইনসাইড-এজ ফাঁকি দিয়ে গেল স্টাম্প-- মুষড়ে গেল বাংলাদেশ। নিউজিল্যান্ডকে বাগে পেয়েও সুযোগ মিসের মহড়ার বড়সড় মাশুল গুণলো তারা, সেসবের সঙ্গে ক্রাইস্টচার্চে টম ল্যাথামের সেঞ্চুরিতে ভর করে ৫ উইকেটের জয়ে ১ ম্যাচ বাকি থাকতেই সিরিজ জয় নিশ্চিত করলো নিউজিল্যান্ড। 

    ২৭২ রানতাড়ায় এদিন সতর্ক শুরু করা নিউজিল্যান্ডকে শুরুতেই চাপে ফেলে দিয়েছিলেন মোস্তাফিজুর রহমান, তার দারুণ স্লোয়ারে ক্যাচ তুলেছিলেন মার্টিন গাপটিল। টম ল্যাথাম ও হেনরি নিকোলসের জুটি পরের কিছু সময় পার করেছিলেন, মাহাদি হাসানের স্পিন-জাদু হাজির হওয়ার আগে। প্রথম ওভারে এসেই সোজা হওয়া বলে নিকোলসকে বোল্ড করলেন মাহাদি, এক ওভার পর উইল ইয়াং লেগস্টাম্প হারালেন সুইপ করতে গিয়ে। নিউজিল্যান্ডকে তখন পেয়ে বসলো বাংলাদেশ। তামিম দুই বাঁহাতির বিপক্ষে আনলেন দুই অফস্পিনার-- মাহাদি ও মেহেদি হাসান মিরাজকে। 
     


    দুজন মিলে পরের ১০ ওভারে দিলেন ৩৬ রান। অবশ্য সে সময়ে ল্যাথাম-কনওয়ে আগলে রাখলেন উইকেট, দুজনের জুটি ফিফটি পেরিয়ে গেল, এরপর নিজের ফিফটি পেয়ে গেলেন কনওয়ে। বাংলাদেশের আশা তখন ঝুলছিল সে জুটি ভাঙার ওপর, মরিয়া হয়েই কিনা এর আগে ১৫১টি লিস্ট ‘এ’ ম্যাচে কখনোই বোলিং না করা মোহাম্মদ মিঠুনকেও আনলেন তামিম। অবশ্য কোভিড-১৯ পরবর্তী সময়ে তখন স্থগিত হয়ে যাওয়া শ্রীলঙ্কা সফরের আগে আন্তঃস্কোয়াড ম্যাচে একের পর এক উইকেট নিয়ে আলোচনায় এসেছিলেন মিঠুন। মিঠুন এবার তেমন কিছু করতে পারলেন না ঠিক। 

    সে জুটি ভাঙলো তামিমের দুর্দান্ত থ্রো-তে। মিড-অফ থেকে সিঙ্গেল চুরি করতে গিয়ে বাংলাদেশ অধিনায়কের ডিরেক্ট থ্রোয়ের শিকার হলেন ৯৩ বলে ৭২ রান করা কনওয়ে। দারুণ একটা সুযোগের দুয়ার খলে গেল বাংলাদেশের, যে দুয়ার দিয়ে হাজির হলো নিশামের উইকেটের সুযোগটা। তাসকিনের বলে সহজ সে সুযোগ হাতছাড়া করলেন মুশফিক। এক বল পর শর্ট কাভারে মিঠুনের একটু সামনে পড়লো ল্যাথামের ক্যাচ। সেই শুরু। 

    পরের ওভারে ল্যাথাম আবারও সুযোগ দিলেন, এবার ফিরতি লোপ্পা ক্যাচটা ফেলে দিলেন মাহাদি। পরের বলে তার নাগালের বাইরে দিয়ে গেল আরেকটি। তাসকিনের পরের ওভারে ল্যাথামের তিন চারে ভর করে এলো ১৮ রান-- তবে এর মাঝে একটা পয়েন্টে একটুর জন্য নাগালের বাইরে দিয়ে গেল মিরাজের, ইনসাইড-এজ ফাঁকি দিল স্টাম্পকে, একটিতে ডিপ মিডউইকেটে গড়বড় করে ফেললেন মাহাদি। মোমেন্টাম ততক্ষণে ক্রাইস্টচার্চ থেকে অনেকদূরে পালিয়েছে বাংলাদেশের কাছ থেকে। সেখান থেকে এ ম্যাচে ফিরতে মিরাকল দরকার হতো বাংলাদেশের, অন্তত শরীরী ভাষা বলছিল তেমনই। সে মিরাকল হয়নি, ল্যাথাম পেয়েছেন ক্যারিয়ারের পঞ্চম সেঞ্চুরি, ১০ বল বাকি থাকতেই ম্যাচ জিতেছে নিউজিল্যান্ড। ডানেডিনের একপেশে লড়াইয়ের হিসেবে এবার বেশ উন্নতিই বাংলাদেশের, অথচ এটা শুধু উন্নতি নয়, ছিল বাংলাদেশের জেতার ম্যাচই!  

    যে সম্ভাবনা তৈরি হয়েছিল প্রথম ইনিংসে তামিম ইকবালের ১০৮ বলে ৭৮ রানের ইনিংসে পাওয়া ভিতে দাঁড়িয়ে মোহাম্মদ মিঠুনের ৫৭ বলে ৭৩ রানের দারুণ ইনিংসে। শুরুতে রান করার জন্য ব্যাটসম্যানদের বেশ ভুগতে হলেও মিঠুনের ইনিংসে বেশ ভাল একটা লাফ দিয়েছে বাংলাদেশ, শেষ ১০ ওভারে উঠেছে ৮৮ রান। 

    টসে হেরে এদিনও আগে ব্যাটিং করতে হয়েছে বাংলাদেশকে, দিবা-রাত্রির ম্যাচে শুরুটা ছিল আগের দিনের মতোই বীভৎস। ম্যাচের দ্বিতীয় ও ম্যাট হেনরির প্রথম ওভারে পুল করতে গিয়ে স্কয়ার লেগের হাতে সরাসরি ক্যাচ দিয়েছিলেন লিটন দাস। সৌম্য সরকারকে নিয়ে তামিম এরপর যেন টিকে থাকার লড়াইটাই করেছেন শুধু, প্রথম ৭ ওভারে বাংলাদেশ তুলেছিল মাত্র ১৪ রান, প্রথম পাওয়ারপ্লেতে ২৬। সে সময়ে আসা চার বাউন্ডারির সবকটিই এসেছিল তামিমের ব্যাটে। 
     


    এরপর বাংলাদেশ রান-স্কোরিংয়ে তেমন না হলেও সময়টা পক্ষে ছিল, হেনরি নিকোলসের দারুণ এক চেষ্টা বৃথা গেছে সৌম্যর তোলা ক্যাচে। আর তামিম বেঁচেছেন টিভি আম্পায়ারের সিদ্ধান্তে। কাইল জেমিসনের বলে স্ট্রেইট ড্রাইভে তার হাতেই ধরা পড়েছিলেন বাংলাদেশ অধিনায়ক, তবে টিভি আম্পায়ার মাঠের সফট সিগন্যালকেও নাকচ করেছেন জেমিসনের ক্যাচের ওপর নিয়ন্ত্রণ ছিল না সিদ্ধান্তে এসে। 

    তামিম-সৌম্যর জুটি ফিফটি ছুঁয়েছে ৮৬ বলে, সৌম্য এরপর একটু খোলস ছেড়ে বেরিয়ে আসার ইঙ্গিত দিয়েছিলেন ড্যারিল মিচেলকে ডাউন দ্য গ্রাউন্ডে এসে ছয় মেরে। তবে স্যান্টনারের টার্নিং বলে বোকা বনতে হয়েছে তার, তাকে ডাউন দ্য গ্রাউন্ডে এসে আসতে দেখে শেষ মুহুর্তে লাইন অ্যাডজাস্ট করেছেন স্যান্টনার, সৌম্য সেটি মিস করে হয়েছেন স্টাম্পড। এর আগে করেছেন ৪৬ বলে ৩২ রান। 

    তামিম ভাগ্যকে পাশে পেয়েছেন, সুযোগ কাজেও লাগিয়েছেন। বাংলাদেশ ইনিংসের মোমেন্টামটা ধরে রেখেছিলেন তিনিই, একপাশে মুশফিক নেমে সিঙ্গেল নেওয়ার জন্যই ভুগছিলেন রীতিমতো। ৮৪ বলে ফিফটি করার পর তামিম পরের ২৮ রান করেছিলেন ২৪ বলে। তবে মুশফিকের কলে সাড়া দিয়ে সিঙ্গেল নিতে গিয়ে জিমি নিশামের দারুণ ফুটওয়ার্কের শিকার তিনি, এর আগে ৭৮ রানের ইনিংসে মেরেছেন ১১টি চার। 

    মিঠুন নেমেই চলে গেছেন ফাস্ট-ফরোয়ার্ড মোডে, মুশফিকের সঙ্গে ফিফটি জুটিও হয়ে গেছে শীঘ্রই। অবশ্য মুশফিক আর গিয়ার বদলাতে পারেননি, স্যান্টনারকে তুলে মারতে গিয়ে ক্যাচ দেওয়ার আগে ৫৯ বলে করেছেন ৩৪ রান। মিঠুন অবশ্য থামেননি তাতে। 

    ৪৩ বলে পূর্ণ করেছেন ক্যারিয়ারের ৬ষ্ঠ ফিফটি, সেটি পূর্ণ করেছিলেন জিমি নিশামকে ছয় মেরে, এর পরের বলেই আবারও ইনসাইড-আউটে মেরেছিলেন চার। তার সঙ্গে ৬৩ রানের জুটিতে মাহমুদউল্লাহ করেছেন ১৮ বলে ১৬। শেষদিকে মাহাদি হাসান ও সাইফউদ্দিন একেবারে নিরাশ করেননি, আর ইনিংসের শেষ বলে চার মেরে আরও আশা জুগিয়েছেন মিঠুন নিজেই। 

    তবে দিনশেষে সে আশায় শেষ পর্যন্ত সুযোগ মিসের গুড়েবালিই।